অনিরুদ্ধ , মানে আমাদের অনির বাবা ডব্লিউ বি সি এস অফিসার ছিলেন , মা স্কুল শিক্ষিকা । অনিও লেখাপড়ায় ভালই ছিল , কিন্তু বেশ কয়েকবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পায়নি । অনির ছোট থেকেই ছবি তোলার হাত ভাল , তাই ওর মা ওকে একটা ডি এস এল আর ক্যামেরা কিনে দিয়েছেন । অনি কিছুকাল শখে ছবি তোলার পর ঠিক করে নিয়েছে ও কমার্শিয়াল ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করবে । পরিচিত মহলে বলা আছে , বিয়েবাড়ি , কোম্পানির মিটিং , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য অনি এখন নিয়মিত ডাক পায় ।
একজন পরিচিতের মাধ্যমেই প্রস্তাবটা এল ।
শব ব্যবচ্ছেদের , গোদা বাংলায় বললে ময়না তদন্তের ভিডিওগ্রাফি করতে হবে । মোটা টাকা
পাওয়া যাবে । একটা খুনের কেসে কোর্ট ময়না তদন্তের ভিডিও কোর্টে পেশ করতে বলেছে । তাই
ফরেন্সিক তদন্তের খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ক্যামেরায় ধরে রাখতে হবে । অনি ভাবল,
এ আর কী এমন শক্ত কাজ , পরিশ্রম কম , পারিশ্রমিক বেশি । যেটা অনি ভাবল না , সেটা হল
পারিশ্রমিকটা কেন বেশি । তো, একদিন সকালবেলা অনির ডাক পড়ল মর্গে । ট্রাইপড মানে স্ট্যান্ড
আর ক্যামেরা নিয়ে যথাসময়ে অনি হাজির । উদ্দেশ্য সব সেট করে , ক্যামেরা চালু করে অন্য
দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবে । কিন্তু কাটাছেঁড়া শুরু হওয়ার পর বুঝল , কাজটা এতটা সহজ
হবে না । দু’মিনিট পরপর নির্দেশ আসছে ফোকাস পরিবর্তন করবার , জুম ইন করবার , এমনকি
একেবারে কাছে এসে ছবি তোলার । কিছুক্ষণ এভাবে কাজ চলার পরেই অনির মুখে যেন অন্নপ্রাশনের
ভাত উঠে এল । কিন্তু পুলিশ কেস , ও সব জেনেবুঝেই কাজটা নিয়েছে । শেষ করতেই হবে , পালাবার
উপায় নেই । এইজন্যই বোধহয় ডোম-সহ উপস্থিত সকলে আকণ্ঠ মদ খেয়ে আছে , মনে হল অনির । সেদিন
মুখে রুমাল বেঁধে , বমি চাপতে চাপতে কোনওমতে কাজটা শেষ করে , অনি টলতে টলতে বাড়ি ফিরে
এসেছিল । দু’দিন খেতে পারেনি , রাতে দুঃস্বপ্নে বারবার ঘুম ভেঙে গেছে । এক সপ্তাহ বাদে
কোনওমতে নিজেকে সামলে , নাকে খত দিয়ে অনি প্রতিজ্ঞা করেছে , আর কোনওদিন ময়না তদন্তের
ভিডিওগ্রাফি করবে না ।
