আমি এখন একটা প্রজাপতি হয়ে অরণ্যের লিভিং রুমে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছি। আমি রোজ রাতেই এরকম কিছু একটা হয়ে যাই, হয় হামিং বার্ড, নয় রোলি পোলি অথবা হানি বি। এই আমেরিকার পোকা মাকড় গুলো বাচ্চাদের খুব প্রিয়, কেউ এদের মারে না, আলতো করে হাতে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাদের চাল চলন দেখে। তাই আমিও যখন খুশী এই সব রূপ ধারণ করি, খুন হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। আমার নাম সিক্তা।
শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২
স্বপ্নে প্রতিদিন । কল্যাণী মিত্র ঘোষ । প্রেমের গল্প । ভালবাসার গল্প ।
রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০
মাটির গন্ধ
মাটির গন্ধ
(১)
গিটারটা মাথার ওপর দিয়ে খুলতে খুলতে সৌরীশ
বলল --- “নাহ , উই আর মিসিং সামথিং ইয়ার ! হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন , প্রবাল
?”
--- “ঈপ্সিতারা কমন রুমে গেছে । কিন্তু
তুই জিমনাসিয়ামের বারান্দায় বসে , একা একা কাকে গান শোনাচ্ছিলি ?”
--- “বলছি , এই মিঠুন , ডান দিকে সর তো
একটু । এখানে বসলে মেন গেটের দিকে নজর রাখা যাবে । মনীষা আসলে দেখতে পাব । এবার তোর
কথার উত্তর দিই । ওখানে গিয়ে একা একা বসে গান গাইছিলাম , কারণ আমি একটু একা থাকতে চাইছিলাম
। ডু ইউ নট থিঙ্ক , আমরা আজকাল বড় বেশি কথা বলছি , সরবে এবং নীরবে , ফোনে এবং ফেসবুকে
? এত কথা শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে বড্ড হাঁপিয়ে উঠি । আজকাল সন্ধেবেলার দিকে কখনও কখনও
রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম গিয়ে গর্ভগৃহের পিছনের দিকে চুপচাপ ঘণ্টাখানেক চোখ বন্ধ করে বসে
থাকি । সন্ধ্যারতি হয়ে যাওয়ার পর , ওই যে পিন ড্রপ সাইলেন্স --- ওটা মন আর মগজের পক্ষে
বড্ড আরামদায়ক , কপালে মায়ের হাত বোলানোর মতন । আচ্ছা মিঠুন , তোরও কী মনে হয় না ,
আমাদের বন্ধু-বান্ধবীদের চোখের তারাগুলো আজকাল কেমন অস্বাভাবিকরকম চঞ্চল ?”
--- “আমি তোর মত ভাবুক নই । আর তোর মত
ইন্টেলেক্টও আমার চোয়ালে এসে জমা হয়নি , অতয়েব আমি ইন্টেলেকচুয়ালও নই । তবে হ্যাঁ
, দ্য ফার্স্ট পার্ট অব ইওর স্পিচ ইজ কোয়ায়েট রেলেভ্যান্ট । ইয়েস , উই আর মিসিং সামথিং
। কী যেন একটা , খুব কাছাকাছিই আছে , কিন্তু ধরতে পারছিনা , বুঝতে পারছিনা । মনের ভিতর
কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা আছে আর সেটাকে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মত খুঁজতে খুঁজতেই
আইপডে শ’য়ে শ’য়ে গান শোনা , গার্লফ্রেন্ডের সাথে তিস্তার স্পারে বসা আর সারাদিন ধরে
ঘরে-বাইরে প্রচুর অদরকারি কাজে ডুবে থাকা আছে । এই আমাদের কথাই ধর , দু’দিন বাদে থার্ড
ইয়ারের রেজাল্ট বেরোবে , আস্তে আস্তে আমরা কাজের জগতে হারিয়ে যাব , হয়তো বা নিজের মধ্যে
থেকেও হারিয়ে যাব । এ সি কলেজের আনাচকানাচে এভাবে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ানোটাকে
মিস করব ভীষণভাবে । অথচ দেখ , এখনও পর্যন্ত আমরা রিয়েলাইজই করে উঠতে পারছিনা , আল্টিমেট
সুখটা ঠিক কোথায় পাওয়া যাবে , কিসে পাওয়া যাবে !”
--- “ঠিক তাই ।“ মিঠুনের কথার সূত্র ধরে
প্রবাল বলল --- “অ্যাপারেন্টলি আমাদের কোনও অভাব নেই । আমাদের বাবা-মা’দের যে প্রজন্ম
তাঁরা এত নিরুদ্বেগে-নিশ্চিন্তে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ পাননি , সেদিক থেকে তো আমরা সৌভাগ্যবান
। অথচ বুকের ভিতর কখনও কখনও ডিপলি ফিল করি , কোথায় যেন একটা নোঙর ফেলা বাকি । বুকের
ভেতর থেকে কে যেন মাঝরাতে ফিসফিস করে বলে যায় , এই বেলা খুঁজে নাও , এই জীবন থেকে পরিপূর্ণভাবে
তুমি ঠিক কী চাও । জীবনটাকে তুমি চালাবে , না জীবন তোমাকে । রাশ তোমার হাতে থাকবে
, নাকি জীবনের গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে , অসহায়ভাবে মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা
দিতে থাকবে যে , যাক , জীবন যেমন চায় , যেদিকে চায় , আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক । জীবন
হোক বেলাগাম ।“
--- “এই , আমরা বড্ড বেশি দার্শনিকের
মত কথা বলছি । ছাড় তো । জাঁকিয়ে শীত পড়েছে কিন্তু আজ । টেম্পারেচার কততে নামল আজকে
? শিলিগুড়িতে তো চার না পাঁচ বলল খবরে ।“ উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করেই মিঠুন আবার
বলল --- “কালই তো বড়দিন । আচ্ছা , থার্টি ফার্স্টে পিকনিক করতে গেলে হয়না মূর্তি কিংবা
রোহিণীতে ?” ওর গলায় আনন্দ মেশানো উত্তেজনার ছোঁয়া ।
--- “বাস পাওয়া যাবে ভেবেছিস ! কুট্টিরা
কালীঝোরা যাবে বলে একমাস আগে থেকে কালুসাহেবের একটা বাস বুক করে রেখেছে । তাছাড়া এত
তাড়াতাড়ি সবকিছু অরগানাইজ করা যাবেনা । চাঁদা তোলার ব্যাপার আছে , মেয়েদের বাড়িতে কনভিন্স
করানোর ব্যাপার আছে । তার চেয়ে বরং কাছেপিঠে কোথাও চল । লাল মন্দির গেলে হয়না ? নদী
আছে , চা বাগান আছে , দারুণ জায়গা” --- বলল শুভার্থী । এতক্ষণ ও চুপচাপ বসে বাকিদের
কথা শুনছিল ।
--- “ঠেলা ভাড়া করতে হবে , বাসনকোসন
, চ্যালা কাঠ আর রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য । ঠেলাওয়ালা এই সময়ে সুযোগ বুঝে
অনেক টাকা ভাড়া হাঁকবে । তাছাড়া যেতেও অনেক সময় লাগবে । তার চেয়ে বরং করলা ভ্যালি চা
বাগানটা সিলেক্ট কর । কলেজের কাছেই হবে । আমরা সবাই সুবোধদার দোকানের সামনে সকালে মিট
করব , তারপর একসঙ্গে যাব । এগ্রিড ?” বলল সৌরীশ ।
ওর অকাট্য যুক্তি মেনে নিয়ে সবাই মিলে
করলা ভ্যালি চা বাগানেই পিকনিক করতে যাওয়া স্থির হল । কিছুক্ষণ পর নবনীতা , ঈপ্সিতা
, মনামিরা কমনরুম থেকে ফিরলে ওদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট আর মেনুও ঠিক হয়ে গেল । চাঁদা
ও পিকনিক স্পট নিয়ে বান্ধবীরা ওদের সঙ্গে সহমত । কেবল একটাই শর্ত , রান্নার দায়িত্ব
একা মেয়েরা নেবে না , ছেলেদেরও হাত লাগাতে হবে । ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কেবল ফটো
তুললেই চলবে না । হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হবে না , এই-ই ঢের । এই শর্তে কেউ অরাজি হয় ! ছেলেরা
সমস্বরে বলল --- তথাস্তু !
(২)
ঠিক ছিল সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সবাই
কলেজের মেন গেটের সামনে সাইকেলে পৌঁছবে । রান্নার জিনিসপত্র কলেজপাড়ার এক বন্ধুর বাড়িতে
রাখা থাকবে । একটা ঠেলা জোগাড় করা হয়েছে । ঠেলাওয়ালা নয় , ওরাই কলেজ থেকে করলা ভ্যালি
পর্যন্ত সেটাকে ঠেলেঠুলে চালিয়ে নিয়ে যাবে ঠিক হয়েছে । ওইটুকু তো মাত্র পথ । কথামত
আগে-পরে সবাই পৌঁছে গেল । স্নান করে আসতে হয়েছে বলে সবাই অল্পবিস্তর কাঁপছে । কাঁধ
উঁচু করে হাতের চেটো ঘষছে । চারদিকে ঘন কুয়াশা । কথা বলতে গেলেই মুখ দিয়ে সবার ধোঁয়ামত
বেরোচ্ছে । সবার মুখে হাসি । ওরা অপেক্ষা করছে উত্তমের জন্য । ওদের মুরগির ফার্ম আছে
। মাংসের ব্যবস্থাটা ও-ই করবে । ছাড়িয়ে-কাটিয়ে আনতে হবে বলেই সম্ভবত ওর একটু দেরী হচ্ছে
। সব রেডি , ও আসলেই সবাই বেরিয়ে পড়বে ।
সাড়ে আটটা নাগাদ একটা বাজারের ব্যাগ সাইকেলের
হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে উত্তম যখন হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির হল , তখনও আকাশের মুখ ভার । দেখেই
বোঝা যায় , আজ রোদ ওঠা মুশকিল আছে । পিকনিকের পক্ষে একেবারে আদর্শ দিন ! একটু পরে কুয়াশা
কেটে যাবে কিন্তু হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাটা কমবে না । রান্না বসিয়ে , সেই আগুনেই হাত সেঁকে
নেওয়া যাবে । পরপর গোল করে সাজিয়ে উনুন তৈরি করার জন্য মেন গেটের উল্টোদিকে সুবোধদার
দোকানের সামনে কিছু ইট এনে রাখা ছিল । দোকানটা জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি মেন রোড থেকে একটু
নীচুতে । ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে হিম ভেজা ঘাসে দু’একজনের পা পিছলে গেল । মনীষা গলা ছেড়ে
গাইছে --- “দো নয়না অর এক কাহানি / থোড়া সা বাদল , থোড়া সা পানি / অর এক কাহানি ।”
আরতি মুখার্জির এই গানটা সত্যিই মনির গলায় খোলে ভাল , মনে মনে ভাবল সৌরীশ । মিঠুন ডাকল
--- “এই শুভার্থী , এদিকে আয় , জলের ড্রামটা একটু ধর , ঠেলায় তুলে দিই । সবাই যখন এসে
গেছে , তখন আর দেরী করে লাভ নেই । ওখানে গিয়ে মাংসটা ধোওয়া আছে । তাছাড়া মাঝেমাঝেই
যেরকম দমকা হাওয়া দিচ্ছে , তাতে উনুন জ্বালিয়ে রাখা কঠিন হবে । আয় আয় , দেরী করিস না
। অ্যাই দীপঙ্কর , একদম ইয়ার ফোন বের করবি না । আরে ইয়ার , দিনটা এনজয় কর , গাছের থেকে
নীচের শুকনো পাতাগুলোতে টুপটুপ করে ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ শোন । আজকে প্লিজ কানে ওটা
গুঁজে রাখিস না । জিনিসটা বড্ড ইরিটেটিং বাড়ির বাইরে এলে ।“ দীপঙ্কর জিন্সের প্যান্টের
ডান পকেট থেকে ইয়ার ফোনটা বের করতে গিয়েও মিঠুনের ধমক খেয়ে বাধ্য ছেলের মত সেটা আবার
স্বস্থানে ঢুকিয়ে রাখল !
ওরা রওনা দিল । ঠেলা সঙ্গে থাকবে , তাই সবাইকে
সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতে হবে । উত্তম আস্তে আস্তে ঠেলার প্যাডেলে চাপ দিচ্ছে । সৌরীশ
গিটার বাজিয়ে কবীর সুমনের একটা গান ধরল --- ‘কতটা পথ পেরোলে, তবে পথিক বলা যায়’ । সৌরীশ
গলা ছেড়ে গাইছে , সবাই চুপ । দু’একজন মাঝে মাঝে ঠোঁট নাড়িয়ে কথাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে
শুধু । মোহিতনগরের দিক থেকে শহরে কাজের খোঁজে ঢুকছে যে লোকগুলো , তারা সৌরীশের দিকে
তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে যাচ্ছে । জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের বাসের জানলা দিয়ে মুখ
বার করে অনেকে কৌতূহলী চোখে দেখছে ছেলেমেয়েগুলোকে ।সৌরীশ সে সব কিছুই খেয়াল করছে না
। নিজের মনে গাইতে শুরু করলে , বিশ্বচরাচরের সব কিছু ওর চোখের সামনে থেকে মুছে যায়
।
একটু পরে , ওরা যখন ঢুকছে করলা ভ্যালি চা
বাগানে , তখন কুয়াশা অনেকটাই কেটেছে । হাওয়ার দাপটও কমেছে খানিকটা । সামনের দিকে আদিগন্ত
তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় । চারদিকে উঁচু-নীচু ঢেউ খেলানো চা বাগান ধীরে ধীরে নেমে গেছে
করলা নদীর খাতের দিকে । নদী পেরিয়ে ওপারে আবার সবুজ ঢেউয়ের বিস্তার । মাঝখান দিয়ে চা
বাগানের বুক চিরে এঁকেবেঁকে অল্প গভীর খাতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে করলা নদী । নদীর
দু’পাশে বেশ খানিকটা জায়গা পর্যন্ত বালি জমে আছে । বর্ষাকালে নদী এই পর্যন্ত উঠে আসে
দিব্যি বোঝা যায় বালির ওপর পড়ে থাকা বড় গাছের
শুকনো ডাল আর ছোট ছোট বোল্ডার দেখলে । নদীর তীরে বালির ওপর এখানেই ওদের রান্নার ব্যবস্থা
হবে । দু’পাশে চা গাছের সারি , আর তার মাঝে চাপা রাস্তা দিয়ে এগোতে এগোতে ওরা দেখল
, প্রায় প্রতিটি চা পাতার বেঁকে আসা শীর্ষবিন্দুটিতে মুক্তোর মত জমে রয়েছে শিশিরের
কণা । নদীর দু’পাশেই চা বাগানের মধ্যে কিছুটা দূরে দূরে চা গাছগুলির মাথায় ছাতা ধরার
মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় মোটা গুঁড়ির গাছ ।
প্রবালের ফটোগ্রাফির শখ আছে , ওর ডি এস এল
আর ক্যামেরা সচল হয়ে উঠেছে । তাই ও একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছে ওদের দল থেকে । সেটা
লক্ষ্য করে ঈপ্সিতা গলা তুলে ওকে ডাকল --- অ্যাই প্রবাল , তাড়াতাড়ি আয় , পরে ছবি তুলিস
। আয় এখন একসঙ্গে যাই । আজ বিকেল পর্যন্ত আমরা সবাই একসাথে থাকব , একা ঘোরাঘুরি চলবে
না ।
--- “যথা আজ্ঞা ম্যাডাম !” প্রবাল পিঠের
ব্যাগে ক্যামেরা পুরে ফেলল । নদীর পাড়ে পৌঁছে একটু পরিষ্কার মত একটা জায়গা বেছে নিয়ে
রান্নার তোড়জোড় শুরু হল । ওরা তিনটে দলে ভাগ হয়ে গেল । এক দল গেল নদীর পাড়ে মাংস ধুতে
, একদল ইট সাজিয়ে পাশাপাশি দু’টো উনুন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । আর মেয়েরা বালির ওপর
চাদর পেতে বসলো ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করতে । সঙ্গে ফ্লাস্কে করে সবার জন্য চা বানিয়ে
এনেছে নবনীতা । সবার জন্য ডিম-পাউরুটি-মাখন আর কলা আনা হয়েছে । রান্নাটা চাপিয়ে দিয়েই
জঠরাগ্নি কিছুটা প্রশমনের ব্যবস্থা করতে হবে । কেউই অত সকালে খেয়ে আসেনি , তাই সকলের
পেটেই ছুঁচো দৌড়চ্ছে !
(৩)
উনুন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে ।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাইকে উঠতেই হল । আলু-ফুলকপি কেটেকুটে আনাই হয়েছে , কলেজ পাড়ার বন্ধুটির
বাড়িতে বসে মেয়েরা এসব করেছে কাল সন্ধেবেলায় । এতগুলো মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর
দায়িত্ব নিয়েছে বলে ঈপ্সিতা –নবনীতারাও আজ যেন একটু বেশি বড় বড় ভাব করছে ! রান্নাবান্নার
ব্যাপারটা যত এগোবে , ছেলেরা জানে , এই ভাব তত বাড়বে ! কিন্তু আজ আর এসব নিয়ে মেয়েদের
কেউ ঘাঁটাবে না । দীপঙ্কর , ঈপ্সিতাকে শুধু বলতে গিয়েছিল , বকফুল আর চাটনিটা শেষে করার
কথা । ওরা ওকে ব্যসন ফেটিয়ে দেওয়ার কথা বলাতে আমতা আমতা করছে দেখে মজা পেয়ে বাঁ হাতটা
তুলে মিঠুন বলল --- “চিন্তা করিস না , আমি ওটা করে দেব । এবার আয় , সবাই ব্রেকফাস্টটা
সেরে নিই । প্রায় সাড়ে দশটা বাজে ।“
(৪)
খাওয়াদাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় সওয়া তিনটে
বাজল । ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার ঘর পেরোলেই ঝুপ করে অন্ধকার নামবে , তাই ওরা সবাই মিলে এবার
ঘুরতে বেরোল । কাছাকাছি একটা চায়ের কারখানা আছে , সেটা দেখে ওরা নদীর কোল ঘেঁষে হাঁটবে
কিছু দূর অব্দি , এমনটাই ঠিক হয়েছে । এসব জায়গায় তো আর একা একা চট করে আসা হয়না , তাই
যতটা পারা যায় সবাই ঘুরে দেখে নিতে চাইছে । স্থানীয় দু’জন লোক , ওরা যখন খাচ্ছিল এক
পঙক্তিতে বসে , তখন দূরে বসে জুলুজুলু চোখে তাকিয়েছিল । ওদের ডেকে পেট পুরে খাইয়ে সঙ্গের
জিনিসপত্র আর সাইকেল পাহারায় বসিয়ে আসা হয়েছে । এইসব আদিবাসীরা খুব বিশ্বাসী হয় , তাই
জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । হাঁটতে হাঁটতে সবাই রান্নার প্রশংসা করছে
। করবেই , কারণ প্রত্যেকেই কব্জি ডুবিয়ে আঙুল চেটে খেয়েছে । মেয়েরা বাড়িতে কত রান্না
করে , সবাই জানে ! কিন্তু আজকের পরীক্ষায় ওরা একেবারে ডিসটিঙ্কশন পেয়ে পাশ করেছে ।
সঠিক স্বাদ বজায় রেখে এতগুলো মানুষের জন্য রান্না করা কি চাট্টিখানি কথা ! আসলে মনটা
আনন্দে থাকলে , তাজা থাকলে , সব কাজই ভালভাবে উতরে যায় । চায়ের কারখানায় কাণ্ড-কারখানা
দেখে ওদের তাক লেগে গেল । এক জায়গায় ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত স্তূপ করে রাখা বাগান
থেকে আনা চা পাতা , আর এক জায়গায় ওরা দেখল একটা কনভেয়ার বেল্টের উপর দিয়ে চা পাতা পাঠিয়ে
দেওয়া হচ্ছে একটা বাক্স মতন যন্ত্রে । পাতাগুলো সেখান থেকে কুচিকুচি হয়ে বেরিয়ে আসছে
। ওদের সবার গায়ে গরম জামা , সোয়েটার , চাদর । অথচ ওদের দেখে খারাপ লাগল , যারা কারখানায়
কাজ করছে , তারা প্রত্যেকেই পাতলা-শতচ্ছিন্ন জামাকাপড় পরে রয়েছে । অথচ লোকগুলো এত পরিশ্রম
আর কষ্টের মধ্যেও হাসতে ভোলেনি । কাজ করতে করতেই রসিকতা করছে পরস্পরের সাথে । সকালবেলা
ঘুম ঘুম চোখে যে উষ্ণ তরলে সবাই সরু করে ঠোঁট ছোঁয়ায় , সেটা গৃহস্থের ঘরে ঘরে পৌঁছে
দেওয়ার পথে যে কত মানুষের শ্রম লুকিয়ে থাকে !
কারখানা থেকে বেরিয়ে ওরা নদীর ধারে বালির
ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় একটা সরু বাঁকে , নদীর জল একটু কম দেখে , নদী পেরিয়ে
গেল ওপারে । বাঁ হাতে চটিজোড়া নিয়ে পায়ের পাতা ডোবা , হাড় হিম করা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে
দিয়ে নদী পেরোতে গিয়ে ওদের সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল । এ পাশটায় লোকজনের যাতায়াত
আরও কম , তাই পাখির সমাবেশ আরও বেশি । চা-বাগানের মাঝে বড় গাছগুলিতে শ’য়ে শ’য়ে পাখির
কলরবে জায়গাটা ভরে আছে । এত সুরেলা , এত মধুর সিম্ফনি ওরা কেউ আগে শোনেনি । প্রবাল
চা-গাছগুলোর মাথায় বসে থাকা ছোট ছোট নানা রঙের পাখির ছবি তুলতে তুলতে ভাবছিল , প্রকৃতিতে
যে এত রঙ আছে , রঙের এত বৈচিত্র্য আছে , তা-ই তো জানা ছিলনা এতদিন । সেই লাইনটা মনে
পড়ে যায় --- দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া , ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া , একটি ধানের…
, থুড়ি চা পাতার ওপর , একটি শিশিরবিন্দু !
এর মধ্যে কখন যে দিনের আলো নিভে এসেছে
কেউই খেয়াল করেনি । এখনই কালো পর্দার মত অন্ধকার নেমে আসবে আর চা-গাছগুলোকে ঘিরে এল
ই ডি আলোর মত থোকায় থোকায় জোনাকি জ্বলে উঠবে । এই জায়গাটা তখন সেজে উঠবে অন্য এক রূপে
। দু’একটা জোনাকি ইতিমধ্যেই এদিক-ওদিক থেকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে
। তার সঙ্গেই খুব মৃদু হলেও শুরু হয়েছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক । এবার ওদের ফিরতে হবে । আবার
সেই বাগানের ঢাল বেয়ে নেমে আসা , আবার সেই নদী পেরনো । এপারে এসে ওরা বালির ওপরে চটি
হাতে খালি পায়েই হাঁটছিল । ভিজে পায়ে চটি পরে বালির ওপর দিয়ে হাঁটা যায়না । টুকটাক
কথা বলতে বলতে ওরা বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে , চিন্তা করছে ওই লোক দু’টো এখনও ওদের জিনিসপত্রের
কাছে বসে আছে কিনা তাই নিয়ে । এমন সময় সৌরীশ হঠাৎ পিছন ফিরে দৌড়ে গেল নদীর দিকে । ডান
হাত দিয়ে জলের সামনে থেকে কী যেন একটা খামচে তুলে নিয়ে , দৌড়েই ফিরে এল আবার । সৌরীশ
অল্প হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের সামনে এসে মুঠো খুলল । বন্ধুরা দেখল সৌরীশের হাতে এক তাল
ভেজা মাটি । কেউ কোনও প্রশ্ন করার আগেই ও হাতের মুঠো মুখের খুব কাছে এনে, চোখ বন্ধ
করে জোরে একবার শ্বাস নিল । তারপর বলে উঠল --- “এই গন্ধটাই তো হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম
এতদিন ধরে ।“ সৌরীশের কথায় এক অদ্ভুত তৃপ্তির
সুর ফুটে উঠল, যা ওর বন্ধুরা আগে কোনওদিন শোনেনি । অথচ সবাই নিমেষে অনুভব করল , সৌরীশের
কথাটা কোথায় যেন লুকিয়ে ছিল সবার বুকের ভিতরে ।
----------------
কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport
### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...
-
" ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প সে অনেকদিন আগের কথা ----- ১৯৫৫ - ৫৬ সাল হবে । আমি সে সময় কলেজের ছাত্র । তখন জলপাইগুড়ি বাবু পাড়া পাঠাগারের ...
-
তনয়ের জন্য পাত্রী দেখছেন তার বাবা । রোববার কাগজ এলে গোটা সকালবেলাটা তার কেটে যায় পুত্রের জন্য সম্ভাব্য পাত্রী নির্বাচনে ...
-
Thinking aloud --- উচ্চস্বরে ভাবা । কানে, প্রায় অদৃশ্য হেডফোন গুঁজে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে চলার কথা বা মোবাইলের পর্দায় নিমগ...
-
পুষ্পাঞ্জলি ট্র্যাভেলস ডুয়ার্সে এখন পর্যটকদের যে দলটা আসে কলকাতা থেকে, তাঁদেরকে নিয়ে ঘোরেন সৈকত । পরিভাষায় তিনি ট্যুর অপারেট...
-
ট্রিপল টি --- টি , টিম্বার আর টোব্যাকো জলপাইগুড়ি জেলা তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির অভিজ্ঞান ছিল একসময় । সে রাম নেই...
-
অফিস থেকে বেরোতে আজ বড্ড দেরী হয়ে গেছে রাপ্তীর । মেন লাইনে এই সময়ে , এত রাতে লেডিজ কম্পার্ট্মেন্ট প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় ...
-
শিমুল ফুলের উপকারিতা,শিমুল গাছের ফুল,bombax ceiba,red cotton tree,cotton tree,shimul flower,shimul flower drawing,shimul flower in bengali,s...
-
আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ(ARCHAEOLOGICAL SURVEY OF INDIA / A.S.I) সম্পর্কে আমার খুব এক...
-
শতবর্ষে সত্যজিৎ ---- একটি জীবন , একটি প্রতিষ্ঠান সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ২ মে ১৯২১ সালে এবং মৃত্যু ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ – এ । ছ...
-
Graffiti Visual art genre https://g.co/kgs/2181h1 graffiti art graffiti art drawings graffiti drawings graffiti artist Barrackpor...

