আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থনা
করে নিয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ(ARCHAEOLOGICAL SURVEY OF
INDIA / A.S.I) সম্পর্কে আমার খুব একটা শ্রদ্ধামিশ্রিত ধারণা নেই । আমার মনে হয় এটি
একটি সাইনবোর্ডসর্বস্ব সংস্থা । আগ্রা কেল্লা দেখতে গিয়ে দেওয়ান-ই-আম , দেওয়ান-ই-খাস
এমনকি অন্দরমহলের দেওয়ালে পর্যন্ত অমুক প্লাস অমুক , তমুক প্লাস তমুক লেখা ইট দিয়ে
। অথচ পর্যটকদের হাতে কিছু নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়না , ভেতরে নজরদারিও করা হয় ।
প্রশ্ন হল , তাহলে এগুলো লেখে কে ? ওড়িশায় উদয়গিরি-খণ্ডগিরির গুহাতেও একই চিত্র । ঘরের
কাছে , মায়াপুরে একটি পূতিগন্ধময় বস্তির পিছনে খুঁজতে খুঁজতে বল্লাল সেনের ঢিপি বা
স্থানীয়দের ভাষায় বল্লাল ঢিপি খুঁজে পাওয়া যায় । সেখানে এ এস আই-এর একটি বড়সড় সাইনবোর্ড
আছে বটে , কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ বলতে কিচ্ছু নেই । চোখের সামনে বহু পর্যটককে ভ্রমণের
স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বল্লাল ঢিপির ইট বা ইটের টুকরো সংগ্রহ করতে দেখেছি । মুর্শিদাবাদে
সিরাজের পারিবারিক সমাধিক্ষেত্র খোশবাগে গেলেও একই অভিজ্ঞতা হয় । জায়গাটি আগাছায় ভরা
তো বটেই , কোনটি কার সমাধি , তা-ও আলাদাভাবে চিহ্নিত নেই । ব্যারাকপুরে বেশ কিছু পোড়োবাড়ির
ভিতরের মন্দিরে পোড়ামাটির কারুকাজ ছিল । ভগ্নস্তূপ হলেও মন্দিরের গায়ের সূক্ষ্ম কাজ
বোঝা যেত । বহু পোড়োবাড়িতে আমি নিজেই ইংরেজ মালিকের নামের ফলক দেখেছি , সে ছবিও আমার
কাছে আছে । হঠাৎ কী কারণে কে জানে , দেখছি এই ধরণের স্মৃতিচিহ্ন গুলি ভেঙে , গুঁড়িয়ে
দিয়ে এলাকাগুলি লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে । হয়ত জবরদখল হওয়ার ভয়ে বা সমাজবিরোধীদের
আনাগোনা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ । কিন্তু এমন কাজে হাত দেওয়ার আগে সতর্ক থাকা দরকার
, যাতে দেশের প্রাচীনতম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ঐতিহাসিক স্মারকগুলি মুছে না যায় । দৃষ্টান্ত
হিসেবে এ তল্লাটের , সম্ভবত এই জেলারও প্রথম রেল স্টেশনটির কথা বলা যায় , যেখানে কলকাতা
থেকে সরাসরি সেনা শিবিরে রসদ নিয়ে যাওয়া হত । সেই কাজ করতে গিয়ে প্রথম উত্তর চব্বিশ
পরগনায় রেল লাইন পাতা হয় । ক্যান্টনমেন্টের একেবারে কোর এরিয়ায় সেই স্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত
হয়েও বহু ইতিহাসের সাক্ষী এবং সেই কারণেই স্টেশনটিকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার । এখনকার ব্যারাকপুর
স্টেশনের নির্মাণশৈলীই বলে দেয় , যে এটি হেরিটেজ স্টেশন । এই ঐতিহ্যবাহী নির্মাণটিও
কিন্তু ওই পরিত্যক্ত স্টেশনটির অনেক পরে তৈরি । ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভিতরে ঘোরাফেরা
– ছবি তোলায় এখন বজ্র আঁটুনি । তাই এ বিষয়ে স্থানীয় ইতিহাদবিদ এবং এ এস আই কর্তৃপক্ষের
সরব হওয়া দরকার ।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.