সোমবার, ২৫ মে, ২০২০

শতবর্ষে সত্যজিৎ ---- একটি জীবন , একটি প্রতিষ্ঠান

শতবর্ষে সত্যজিৎ ---- একটি জীবন , একটি প্রতিষ্ঠান

       সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ২ মে ১৯২১ সালে এবং মৃত্যু ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ – এ । ছ‘ফুট চার ইঞ্চির মানুষটি লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য অস্কার পেয়েছিলেন । তাঁর আগে এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন গ্রেটা গার্বো , ক্যারি গ্রান্ট , সোফিয়া লোরেন , স্যর চার্লি চ্যাপলিন এবং আকিরা কুরোসাওয়া । উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি , বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকা , নামাঙ্কন , সুরসৃষ্টি , গান লেখা , এবং বইয়ের প্রচ্ছদ নির্মাণেও তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন আজীবন । কার্যত , যখন যে কাজে হাত দিয়েছেন , তাতেই সোনা ফলেছে । যদিও ‘আমাদের কথা’য় বিজয়া রায় স্পষ্ট লিখেছেন যে , সংসার চলত মূলত লেখার টাকায় । সঙ্গে এটাও লিখেছেন , দৈনন্দিন সাংসারিক বিষয়ে কোনও দিন মাথা ঘামাননি সত্যজিৎ । ভাগ্যিস ঘামাননি ! তাই শতবর্ষে পৌঁছে তিনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান । ১/১, বিশপ লেফ্রয় রোডের বাসিন্দার মত শিক্ষক কোটিকে গুটিক । তাঁর চলে যাওয়ার এতগুলো বছর পরে , আমরা যদি আর একবার , সারা জীবনে যত পুরস্কার পেয়েছেন তিনি , তার একটা কালানুক্রমিক তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিই , তবে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার বিস্তার ও গভীরতা সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা আছে , তা খানিকটা পুষ্ট হয় । তাঁর কাজ থেকে আমরা যদি অনুপ্রেরণা খুঁজে নিই , লাভ আমাদেরই ।
         জীবনের প্রথম স্বীকৃতি যে কোনও মানুষের জীবনেই অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠে । সত্যজিতের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি । জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মনে রেখেছিলেন , ১৯৩৬ সালে ভয়েটল্যান্ডার ক্যমেরায় ছবি তুলে বিলেতের ‘বয়েজ ওন পেপার’ পত্রিকায় প্রথম পুরস্কার পাওয়ার কথা । ১৯৫৫ সালের ২৬ অগাস্ট তাঁর তৈরি প্রথম কাহিনিচিত্র ‘পথের পাঁচালি’ মুক্তি পায় । দেশে, এই বছরেই ছবিটি রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ ও রৌপ্য পদকে সম্মানিত হয় । এই বিন্দু থেকেই ‘পথের পাঁচালি’র জয়যাত্রা শুরু হয় ও সত্যজিতের সৃষ্টিশীল জীবনের অভিমুখ নির্দিষ্ট হয়ে যায় । ১৯৫৬ সালে তিনি দিল্লিতে আন্তর্জাতিক প্রচ্ছদ প্রদর্শনীতে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘সংবর্ত’ বইটির প্রচ্ছদ অঙ্কনের জন্য স্বর্ণপদক পান । এই বছরেই ১১ অক্টোবর ‘অপরাজিত’ মুক্তি পায় । ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পথের পাঁচালি’, ‘শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল’ হিসেবে পুরস্কৃত হয় । এছাড়াও ছবিটি, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ডিপ্লোমা অব মেরিট’ , ফিলিপিন্সের ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন ক্যারবাও’ এবং রোম চলচ্চিত্র উৎসবে ভ্যাটিকান পুরস্কার লাভ করে । ১৯৫৭ সালে সানফ্রান্সিস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পথের পাঁচালি’, শ্রেষ্ঠ ছবি ও শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেলজনিক গোল্ডেন লরেল’ পুরস্কার পায় । এই বছরেই ‘অপরাজিত’ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে ‘গোল্ডেন লায়ন অব সেন্ট মার্ক’ , ‘সিনেমা ন্যুভো’ পুরস্কার পায় ও সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয় । ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় , ইডেন গার্ডেনসে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয় । ১৯৫৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘পরশ পাথর’ ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পায় । ১০ অক্টোবর মুক্তি পায় ‘জলসাঘর’ । এই বছরেই ‘পথের পাঁচালি’ কানাডার ভ্যাঙ্কুবার চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি নির্বাচিত হয় এবং স্ট্রাটফোর্ড চলচ্চিত্র উৎসবে চিত্র সমালোচকদের বিচারে সেরা ছবি হিসেবে নির্বাচিত হয় । ‘অপরাজিত’ এই বছরে সানফ্রান্সিস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ ছবি ও শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য পুরস্কৃত হয় । এই বছরেই সত্যজিৎ ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত হন । ‘জলসাঘর’ , জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি ও রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক পায় । ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ , ‘সঙ্গীত নাটক আকাদেমি’র বিশেষ সম্মান পান । ‘অপুর সংসার’ জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক লাভ করে । ‘জলসাঘর’ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত বিভাগে পুরস্কৃত হয় । ‘পথের পাঁচালি’ নিউ ইয়র্কে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি হিসেবে সাংস্কৃতিক পুরস্কার পায় এবং ‘অপরাজিত’ ১৯৫৮ – ’৫৯ সালের শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি হিসেবে ‘গোল্ডেন লরেল’ পুরস্কার পায় । ১৯৬০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ‘অপুর সংসার’ এবং কয়েকটিতে ‘দেবী’ মুক্তি পায় । ‘অপরাজিত’ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেলজনিক গোল্ডেন লরেল’ পুরস্কার পায় । ‘অপুর সংসার’ লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট অরিজিনাল অ্যান্ড ইমাজিনেটিভ ফিল্ম’ হিসেবে সাদারল্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ট্রফি , এডিনবার্গ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ডিপ্লোমা অব মেরিট’ , এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ অব মোশন পিকচার্স’ থেকে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবির পুরস্কার পায় । অপু ট্রিলজি লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিটি ছবির জন্য ‘উইংটন’ পুরস্কার পায় । ‘দেবী’ ছবিটি দেশে সেরা ছবি নির্বাচিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পায় ।  সত্যজিৎ ভিয়েনা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে মনোনীত হন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ সম্মান পান । ১৯৬১ সালের ৫ মে ‘তিনকন্যা’ মুক্তি পায় । এই বছরেই ন্যাশনাল ফিল্মস ডিভিশনের প্রযোজনায় সত্যজিতের নিজের ভয়েস ওভার , চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় তৈরি হয় তথ্যচিত্র ‘রবীন্দ্রনাথ’ । ‘তিনকন্যা’র ‘সমাপ্তি’ ছবিটির জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক পান । ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রটি দেশে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক এবং লোকার্নো (সুইৎজারল্যান্ড) চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার --- ‘গোল্ডেন শিল’ পায় । সত্যজিৎ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে , বিচারক মণ্ডলীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জার্মানির বেটা ফিল্মসের মতে বিশ্বের ছয়জন সেরা পরিচালকের অন্যতম বিবেচিত হন । আত্মপ্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই যে তিনি সিনেমা জগতের সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছিলেন , এই তথ্য থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যায় ।
       ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ১৯৬২ সালের ১৯ মে মুক্তি পায় । ওই বছরেই ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ‘অভিযান’ । এই বছরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ‘সমাপ্তি’ ও ‘পোস্টমাস্টার’ শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে মেলবোর্ন ট্রফি – ‘গোল্ডেন বুমেরাং’ পায় । ‘অভিযান’ দেশে রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক এবং ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রটি উরুগুয়ের মন্টেভিডোতে তথ্যচিত্র ও পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র’ হিসেবে পুরস্কৃত হয় । ১৯৬৩ সালে মার্কিন টাইম পত্রিকার মতে সত্যজিৎ বিশ্বের সেরা এগারোজন চলচ্চিত্র পরিচালকের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হন এবং মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি নির্বাচিত হন । ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়  ‘মহানগর’ । ‘তিনকন্যা’ এ বছর বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেলজনিক গোল্ডেন লরেল’ পুরস্কার এবং ‘মহানগর’ রাষ্ট্রীয় মানপত্র পায় । ১৯৬৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ‘চারুলতা’ । এই বছরে দূরদর্শন চিত্র ‘টু’ নির্মিত হয় এসো ওয়ার্ল্ড থিয়েটারের প্রযোজনায় , সত্যজিতের কাহিনি – চিত্রনাট্য – সঙ্গীত ও পরিচালনায় । বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মহানগর’ সেরা পরিচালকের পুরস্কার – ‘সিল্ভার বিয়ার’ এনে দেয় সত্যজিতের হাতে । ‘চারুলতা’ ছবিটির জন্য সত্যজিৎ রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পান । পরে একাধিক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ আত্মসমীক্ষা করে বলেছেন যে , তিনি নিজে মনে করেন, ‘চারুলতা’ ছবিতে তিনি সবচেয়ে কম ভুল করেছেন ।  ১৯৬৫ তে সত্যজিৎ ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার পান এবং দিল্লি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন । এই বছরে ৭ মে ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ মুক্তি পায় । ‘চারুলতা’ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার --- ‘সিলভার বিয়ার’ ও বিশেষ ক্যাথলিক পুরস্কার পায় এবং মেক্সিকোর আকাপুলকা চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবি হিসেবে বিবেচিত হয় । ১৯৬৬ সালের ৬ মে মুক্তি পায় ‘নায়ক’ । ‘পথের পাঁচালি’ ডেনমার্কের চলচ্চিত্র সম্পাদক সমিতি কর্তৃক সেরা বিদেশি ছবি হিসেবে ‘বোডিল’ পুরস্কার এবং জাপানে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি হিসেবে ‘কিনিমা জামপো’ পুরস্কার পায় । ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ - এর , ‘কাপুরুষ’-- বিশেষ পুরস্কার পায় ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে । ‘নায়ক’ দেশে দ্বিতীয় সেরা ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক পায় শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও কাহিনি বিভাগে । এছাড়াও এই ছবি বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার এবং সিনেমা সমালোচক সঙ্ঘ থেকে ‘ইউনিক্রিট’ পুরস্কার পায় । ১৯৬৭ সালে ‘প্রফেসর শঙ্কু’ , বছরের শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্য গ্রন্থ হিসেবে অ্যাকাডেমি পুরস্কার পায় । সত্যজিৎ ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক মনোনীত হন । ২৯ সেপ্টেম্বর ‘চিড়িয়াখানা’ মুক্তি পায় । ‘অপরাজিত’ ডেনমার্কে বছরের শ্রেষ্ঠ অ – ইউরোপীয় ছবি হিসেবে বোডিল পুরস্কার পায় এবং ‘চিড়িয়াখানা’ শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পায় এবং মহানায়ক উত্তমকুমার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান ।  ১৯৬৮ সালে মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন সত্যজিৎ । ১৯৬৯ – এ আংশিক রঙিন ছবি গুপি গায়েন বাঘা বায়েন মুক্তি পায় ৮ মে । এই ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে বাণিজ্য – সফল ছবি । এই ছবিটি দেশে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক এবং সেরা পরিচালক বিভাগে রৌপ্যপদক পায় । অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড চলচ্চিত্র উৎসবে অসাধারণ গুণসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র হিসেবে ‘সিলভার সাদার্ন ক্রস’ এবং নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ মৌলিক ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার এনে দেয় । ১৯৭০ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে পরপর দু’টি   ছবি মুক্তি পায় । ১৬ জানুয়ারি ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ২৯ অক্টোবর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় । গুগাবাবা টোকিও চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ এবং মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয় । ১৯৭১ সালে যুগোস্লাভিয়া সরকার কর্তৃক সত্যজিৎ ‘স্টার অব যুগোস্লাভিয়া’ সম্মানে ভূষিত হন । এই বছরেই তিনি সাহিত্যে ‘আনন্দ পুরস্কার’ (সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার) পান । এছাড়াও তেহরান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক মনোনীত হন ।  ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক পায় এবং সত্যজিৎ দেশের সেরা পরিচালক হিসেবে পুরস্কৃত হন । এই বছরেই সিকিমের রাজার উদ্যোগে , সত্যজিতের পরিচালনায় রঙিন তথ্যচিত্র ‘সিকিম’ তৈরি হয় । আংশিক রঙিন চলচ্চিত্র ‘সীমাবদ্ধ’ মুক্তি পায় ২৪ সেপ্টেম্বর । ১৯৭২ সালে ‘সীমাবদ্ধ’ শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পায় । এছাড়া ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে , চলচ্চিত্র সমালোচক সঙ্ঘ ‘FIPRESCI’ কর্তৃক পুরস্কৃত হয় । এ বছর ‘দ্য ইনার আই’ তথ্যচিত্রটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পায় । এই বছরেই কানাডার টরেন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ বিচারক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব লেটারস’ শিরোপা পান । শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন হুগো’ খেতাব পান । সম্পূর্ণ রঙিন ছবি ‘অশনি সঙ্কেত’ ১৫ অগাস্ট করমুক্ত ছবি হিসেবে মুক্তি পায় । ছবিটি দেশে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পায় এবং শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীতের জন্যও পুরস্কৃত হয় । এছাড়াও ছবিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ বিভাগে পুরস্কার পায় । ১৯৭৪ সালে সত্যজিতের নিজের কাহিনি অবলম্বনে রঙিন ছবি ‘সোনার কেল্লা’ করমুক্ত ছবি হিসেবে মুক্তি পায় ২৭ ডিসেম্বর । ‘অশনি সঙ্কেত’ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ‘গোল্ডেন বিয়ার’ পায় এবং ‘সোনার কেল্লা’ দেশে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক  পায় । ‘সোনার কেল্লা’ শ্রেষ্ঠ পরিচালক – শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য – এবং শ্রেষ্ঠ রঙিন ছবির খেতাব জেতে । পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ছবিটি শ্রেষ্ঠ ছবি ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মানে ভূষিত হয় । সত্যজিৎ লন্ডনের রয়াল কলেজ অব আর্টস থেকে ডক্টরেট উপাধি পান । এই বছরে বিশ্বকোষ --- ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’তে তাঁর নাম নথিভুক্ত হয় । ১৯৭৫ সালে ‘সোনার কেল্লা’ ইরানের তেহরান চলচ্চিত্র উৎসবে – কিশোর ও তরুণদের জন্য নির্মিত শ্রেষ্ঠ প্রাণবন্ত কাহিনিচিত্র হিসেবে ‘গোল্ডেন স্ট্যাচুয়েট’ পুরস্কার পায় । মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত ‘জন – অরণ্য’ ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পায় । এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে শ্রেষ্ঠ ছবি – শ্রেষ্ঠ পরিচালক – শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার পায় । সত্যজিৎ দিল্লি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি হন । ‘ব্রিটিশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটি’ তাঁকে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের শ্রেষ্ঠ চিত্র পরিচালক হিসেবে সম্মান জানায় । মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয় ।  ১৯৭৬ সালে পদ্মবিভূষণ পান সত্যজিৎ । ‘জন-অরণ্য’ ছবিটি মুক্তি পায় ২০ ফেব্রুয়ারী । তৈরি হয় রঙিন তথ্যচিত্র ‘বালা’ । ‘জন-অরণ্য’ ছবিটি চেকোস্লোভাকিয়ার কার্লোভি ভ্যারি চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ পুরস্কার পায় । ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ দিল্লি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নর্টন লেকচারস’ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন । এই বছরে শতরঞ্জ কে খিলাড়ি ছবিটি ভারতে শ্রেষ্ঠ হিন্দি ছবি এবং শ্রেষ্ঠ রঙিন চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায় । ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি-লিট’ খেতাব পান । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ‘দেশিকোত্তম’ । বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি তাঁকে ‘সর্বকালের তিনজন সেরা চিত্রপরিচালকের অন্যতম’ আখ্যা দেয় । অপর দু’জন হলেন চার্লি চ্যাপলিন এবং ইঙ্গমার বার্গম্যান । এই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে মুক্তি পায় রঙিন ছবি ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ । ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ শ্রেষ্ঠ শিশু-চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পায় । ১৯৭৯ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে মুক্তি পায় রঙিন ছবি ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ । হংকং চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয় ছবিটি । এই বছরই সাইপ্রাস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হীরক রাজার দেশে’ বিশেষ পুরস্কার পায় । সত্যজিৎ রায় ‘বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্ব – চলচ্চিত্রে সেরা ন’জন চিত্রপরিচালকের অন্যতম’ হিসেবে সম্মানিত হন মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে । ১৯৮০ সালে সত্যজিৎ বর্ধমান ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি-লিট’ খেতাব পান । এছাড়া ‘পথের পাঁচালি’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে DAVP-র উদ্যোগে বর্ষব্যাপী ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় বেঙ্গালুরু চলচ্চিত্র উৎসবে এবং ভারতীয় ডাক বিভাগ বিশেষ ক্যান্সেলেশন প্রকাশ করে । এই বছরে ১৯ ডিসেম্বর করমুক্ত ছবি হিসেবে মুক্তি পায় ‘হীরক রাজার দেশে’ । শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ গীতরচনার জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় ছবিটি । প্রসঙ্গত , এই ছবিটি তৈরি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনায় । ১৯৮১ সালে সত্যজিৎ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট পান । তিনি শিশিরকুমার সাহিত্য পুরস্কারও পান এবছর । এছাড়া ‘একেই বলে শুটিং’ বইটির জন্য শিশু সাহিত্য পরিষদ থেকে পান বছরের শ্রেষ্ঠ শিশু সাহিত্যিক হিসেবে ফটিক স্মৃতি পুরস্কার । ১৯৮২ সালে ম্যানিলা চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি মনোনীত হন । কান চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি তাঁকে বিশ্ব চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘হেডলেস অ্যাঞ্জেল ট্রফি’ দিয়ে সম্মান জানায় । এই বছরই তিনি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে যোগ দেন । ওই উৎসবে তাঁকে বিশ্বের সেরা দশজন চিত্র পরিচালকের অন্যতমরূপে ‘গোল্ডেন লায়ন অব সেন্ট মার্ক’ প্রদান করা হয় । রোম চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি ‘ভিসকান্তি’ পুরস্কার পান । শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিদ্যাসাগর পুরস্কার দেয় । ২৫ এপ্রিল ভারতীয় দূরদর্শন প্রযোজিত ‘সদ্গতি’ টেলিফিল্মটি প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতীয় টিভি চ্যানেলে রঙিন ছবির সম্প্রচার শুরু হয় । এই টেলিফিল্মটি জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায় । এই বছরই সত্যজিৎ আরও একটি রঙিন টেলিছবি ‘পিকু’ তৈরি করেন । ১৯৮৩ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে তিনি বিশেষ ফেলোশিপ পান । ১৯৮৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর লন্ডনে মুক্তি পায় ‘ঘরে-বাইরে’ । রঙিন ছবিটি পরের বছর ৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় কলকাতায় । ছবিটি এ বছর জাতীয় পুরস্কার পায় শ্রেষ্ঠ ছবি , শ্রেষ্ঠ পোশাক পরিকল্পনা ও শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতা , এই তিনটি বিভাগে । ১৯৮৫ সালে সত্যজিৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট পান । এই বছরেই দেশের চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে বড় সরকারি সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ পান । এছাড়া এই বছর ‘সোভিয়েত দেশ নেহ্রু পুরস্কার’ পান । ‘ঘরে বাইরে’ সিরিয়ার দামাস্কাস চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ স্বর্ণপদক পায় । ১৯৮৬ --- এ বছর সত্যজিৎ সঙ্গীত নাটক আকাদেমির বিশেষ ফেলোশিপ পান । ১৯৮৭ তে ফরাসি সরকার থেকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান ‘লিজিয়ন অব অনার’ পান । এই বছরেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট পান । পান দাদাভাই নওরোজি স্মৃতি পুরস্কার । ফেলুদা কাহিনি ‘টিনটোরেটোর যিশু’ বইটির জন্য ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং থেকে শিশু সাহিত্যের পুরস্কার পান । সত্যজিৎ এ বছর তাঁর বাবা সুকুমার রায়কে নিয়ে একটি রঙিন তথ্যচিত্র তৈরি করেন । ১৯৮৮ – নেই । ১৯৮৯ সালে প্যারিসে ২৮ জুন এবং লন্ডনে ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায় ‘গণশত্রু’ । ছবিটি পরের বছর ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পায় কলকাতায় । ছবিটি শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক ছবি হিসেবে এ বছর জাতীয় পুরস্কার পায় । সত্যজিৎ অসম সরকার থেকে শঙ্করদেব বঁটা পুরস্কার এবং ফ্রান্সে সেরা বিদেশি গ্রন্থের জন্য বিশেষ পুরস্কার পান । এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরসন ওয়ালেস পুরস্কার পান । ১৯৯০ সালে এশিয়ান পেন্টস শিরোমণি পুরস্কার পান । ১৯৯১ সালে প্যারিসে ‘শাখা-প্রশাখা’ মুক্তি পায় ২১ অগাস্ট , জাতীয় টিভি চ্যানেলে প্রদর্শিত হয় ৫ মে । ‘আগন্তুক’ মুম্বইয়ে মুক্তি পায় ২০ ডিসেম্বর । এই ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার পায় । টোকিও চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি থেকে বিশেষ সম্মান পান সত্যজিৎ । কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সত্যজিৎ রায় রেট্রোস্পেক্টিভ’ এবং সত্যজিৎ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । ১৯৯২ তে নিউ ইয়র্কের অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স থেকে সত্যজিৎ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য ‘অস্কার পুরস্কার’ পান , যা তিনি অসুস্থ অবস্থায় কলকাতার বেল্ভিউ নার্সিংহোমের শয্যায় শুয়ে গ্রহণ করেন । এ বছরই তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক সম্মান জ্ঞাপন করা হয় ।
                                  
তথ্যসূত্র : বিশেষ সত্যজিৎ সংখ্যা , দেশ পত্রিকা , ২৮ মার্চ ১৯৯২     






www.httpssankhamanigoswami.xyz







Satyajit Ray

Indian film director


https://g.co/kgs/xd7Hdf



satyajit ray awards


satyajit ray movies



ফিচার প্রতিবেদন


ফিচার সংবাদ

ফিচার নিউজ


ফিচার পাতা

ফিচার লেখা


news feature article


news feature story


news feature example



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...