বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

নিশীথে

                     অফিস থেকে বেরোতে আজ বড্ড দেরী হয়ে গেছে রাপ্তীর । মেন লাইনে এই সময়ে , এত রাতে লেডিজ কম্পার্ট্মেন্ট প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় । সেক্টর ফাইভ থেকে যখন বেরোল , তখন ভেবেছিল শেষ ট্রেনটাও বোধহয় মিস হয়ে যাবে । ক্যাব ড্রাইভারের সৌজন্যে তা হয়নি । ভদ্রলোক প্রায় ফাঁকা রাস্তায় যেন পক্ষীরাজ ঘোড়া ছুটিয়েছিলেন । কিন্তু পড়িমরি করে , ঘেমেনেয়ে কামরায় একটু থিতু হয়ে বসার পর, যখন ট্রেন চলতে শুরু করল , তখন রাপ্তী বুঝল জেনারেল কম্পার্ট্মেন্টে ওঠাই উচিত ছিল । কামরায় মাত্র দু’জন মহিলা তাকে নিয়ে । সন্ধে থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে আজ । দমকা ভেজা হাওয়ায় হঠাৎ রাপ্তীর সারা শরীর জুড়ে এক অজানা ভয়ে, শিহরণ খেলে গেল । ভয় কাটাতে কামরার আরেক প্রান্তে বসে থাকা সেই বিবাহিত , প্রায় সমবয়সী মেয়েটির কাছে গিয়ে বসে ,তার সাথে আলাপ জুড়ল রাপ্তী । কথায় কথায় জানা গেল , ওদের দু’জনেরই গন্তব্য একই --- শ্যামনগর । মেয়েটিকে খুব অস্থির লাগছিল । কিসের ভয়ে যেন ভীষণ সন্ত্রস্ত । একথা সেকথার পরে রাপ্তী তাকে সরাসরি জিজ্ঞেসই করে ফেলল , কী কারণে তার এত দুশ্চিন্তা । খুব ব্যক্তিগত কিছু না হলে , যদি কোনও সাহায্য করা যায় । হাজার হোক একই শহরের বাসিন্দা দু’জন ।

           জানা গেল, মেয়েটি কলকাতা হাইকোর্টের এক উকিলবাবুর ফার্মে সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করে । উকিলবাবু অতি সজ্জন মানুষ । কিন্তু তবু সন্দেহবাতিকগ্রস্ত স্বামী বাড়ি ফেরার সময়ের সামান্য এদিকওদিক হলেই অকথ্য শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে । এক বড় মক্কেলের জরুরি মামলার ডিকটেশন নিতে গিয়ে আজ বেরোতে বেরোতে অনেক দেরী হয়ে গেছে । মেয়েটি ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে , বাড়ি ঢুকলে কী হবে, সেই কথা ভেবে । হঠাৎ রাপ্তীর হাত দু’টো চেপে ধরে , কতকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই মেয়েটি অনুরোধ করল যে , যদি একটু কষ্ট করে রাপ্তী বাড়ি পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দেয় এবং তার স্বামীকে জানায় যে , দু’জন একসাথে এসেছে , তবে খুব উপকার হয় । খুব সহজ প্রস্তাব নয় এই সময়ে । শ্যামনগরে আজকাল অলিগলিতেও বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে , একা বাড়ি ফিরতে গিয়ে বিপদ হতেই পারে । তবু কেন যেন রাপ্তী কিছুতেই মেয়েটির অনুরোধে সাড়া না দিয়ে পারল না । স্বাগত এইসময়ে বাড়িতেই থাকে । মেয়েটির বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফোনে ওকে ডেকে নেবে বরং , মনে মনে ঠিক করল রাপ্তী । সৌভাগ্যক্রমে স্টেশন থেকে বেরিয়েই একটা রিক্সা পাওয়া গেল । খানিক বেশি ভাড়া চাইল অবশ্য । তা হোক , যেতে রাজি , এই ঢের । এতক্ষণে বলা হয়নি , মেয়েটির নাম তিয়াশা । রিক্সাওয়ালার গাঁইগুঁইতে দিব্যি বোঝা গেল , তিয়াশা যে ঠিকানায় যাবে বলল , তা স্টেশন থেকে বেশ দূরে । রাপ্তী ওদিকটাতে কোনওদিন গিয়েছে কিনা , মনে করতে পারল না ।  রিক্সা যতই ওর বাড়ির দিকে এগোতে লাগল , আতঙ্কের ছাপ ততই স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে লাগল তিয়াশার চোখেমুখে । ওর হাত-পা মড়ার মত ঠাণ্ডা । পাশে বসে রাপ্তী খুব ভাল করে টের পেল তিয়াশা কাঁপছে । কষ্ট হল খুউব । স্বাগতর সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে হবে । প্রয়োজনে থানা-পুলিশও করতে হবে । এভাবে চলতে থাকলে তো একদিন না একদিন মরেই যাবে মেয়েটা ।

             ওই যে দূরে একটা বাড়ির বারান্দায় হলুদ আলো জ্বলছে । তিয়াশার নির্দেশমত রিক্সা সে দিকে আরও একটু এগোতেই, একটি পুরুষ মানুষের অবয়ব অন্ধকারে আবছা ফুটে উঠল । পাশে তাকিয়ে রাপ্তী দেখল তিয়াশার মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেছে । তিয়াশার স্বামী কিন্তু আশ্চর্য নরম সুরে রাপ্তীর সাথে কথা বললেন , ধন্যবাদ জানালেন বারবার । সৌজন্যের কোনও খামতি নেই কোথাও । চেহারা-ব্যবহারে , শিক্ষা ও পরিশীলিত রুচির ছাপ পড়ে ফেলা যায় । তবে কি ট্রেনে আসতে আসতে তিয়াশা যা বলল , সবটাই মিথ্যে ? কে জানে ! চেহারা দেখে মানুষ বোঝা দায় আজকাল ।

            ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে স্বাগতকে ফোন করার জন্য সাইড ব্যাগে হাত দিতেই একটা আর্ত চিৎকার ভেসে এল ওদের বাড়ি থেকে । প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কেউ কাঁদছে । গলাটা চিনতে অসুবিধে হলনা । হঠাৎ ভীষণ ভয় পেল রাপ্তী । গা ছমছম করে উঠল ওর । স্বাগতকে বাইক নিয়ে তাড়াতাড়ি আসতে বলে, অনেকটা আলো আছে এমন একফালি জায়গা খুঁজে দাঁড়িয়ে পড়ল রাস্তায় । জনবিরল রাস্তায় হঠাৎ হঠাৎ কুকুরের ডাকে চমকে চমকে উঠতে লাগল ও । বারবার কানে বাজতে লাগল তিয়াশার কান্নাভেজা গলার আওয়াজ । নাহ , আর দেরী নয় । ও কালকেই স্বাগতকে নিয়ে আবার আসবে এই বাড়িতে । এভাবে একজন মানুষকে তিলে তিলে মরতে দেওয়া যায়না । দূরে বাইকে স্বাগতকে আসতে দেখে, ধড়ে প্রাণ ফিরে পেল রাপ্তী ।

           পরদিন সকালে আবার ওরা ফিরে আসল তিয়াশার পাড়ায় । আসার আগে স্বাগত এক উকিল বন্ধুর সাথে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আগাম কথা বলে এসেছে । গোলমাল বুঝলে আইনি সাহায্য নিতে দেরী করা চলবে না আর । ঝলমলে রোদ উঠেছে আজ । পাড়ায় ঢুকে কিছুতেই তিয়াশাদের বাড়িটা খুঁজে পাচ্ছিল না ওরা । অথচ রাস্তা চিনতে কোনও ভুল হয়নি । ওই তো একটু ফাঁকা জায়গায় , সামনের ওই মাঠের একপাশে --- ওখানেই তো দেখেছিল বাড়িটা । একটা আস্ত বাড়ি ভোজবাজির মত উবে গেল নাকি ! দিশেহারা হয়ে ওরা একজন স্থানীয় বয়স্ক মানুষকে ওদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে যা শুনল , তাতে দিনের আলোতেও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল দু’জনের । হ্যাঁ, ওখানেই বাড়ি ছিল ওদের । দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত । পারিবারিক ব্যাপার বলে , সব দেখে-শুনে-বুঝেও ওদের ব্যাপারে কোনও প্রতিবেশী বা আত্মীয়-পরিজন নাক গলাতেন না বিশেষ । তিয়াশার স্বামী শিক্ষক , তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপত্তিও যথেষ্ট । সে ব্যাপারটা ভদ্রলোক পরিচিত মহলে বেশ জাহিরও করতেন । রোজ রাতে মদ্য পান করা এবং কারণে-অকারণে স্ত্রীকে নির্যাতনের ব্যাপারটাতে আশপাশের মানুষেরা একরকম অভ্যস্তই হয়ে গিয়েছিলেন বলা চলে । যেচে এই ধরণের দাম্পত্য-ঝামেলায় আজকাল আর কে-ই বা জড়াতে চায় । স্ত্রীকে জড়িয়ে যে কোনও কাউকে সন্দেহ করার অভ্যেসটা, মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল তিয়াশার স্বামীর । তাই পরিচিতজনেরাও ইদানীং ওঁদের যতটা সম্ভব এড়িয়েই চলতেন দুর্নামের ভয়ে ।

        এর ফল যা হওয়ার তা-ই হল একদিন । ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা । নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই মানুষটি তিয়াশার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন বলেই স্থানীয় মানুষের দাবি । দাউ দাউ করে জ্বলতে জ্বলতে , মৃত্যুযন্ত্রণায় ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে করতে তিয়াশা কোনওমতে সে রাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতেই, ওকে প্রাণে বাঁচাতে ছুটে যান পাড়ার কয়েকজন । কিন্তু দুর্ভাগ্য , হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ওকে আর বাঁচানো যায়নি । তিয়াশার শরীরের বেশিরভাগটাই পুড়ে গেছিল বলে জানিয়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা । এদিকে , স্ত্রীর এই পরিণতিতে , গণপিটুনির ভয়ে তিয়াশার স্বামীও বাথরুমের দরজা এঁটে অ্যাসিড খেয়ে আত্মঘাতী হন । আসবাবপত্রে আগুন লেগে বাড়িটাও পুড়ে গিয়েছিল একেবারে । এই ঘটনার পর থেকে প্রতি বছরই ওই বিশেষ দিনটিতে , সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় । এমন অভিজ্ঞতা আরও কয়েকজনের হয়েছে ।

         তাহলে গতকাল , অমাবস্যার রাতে , ট্রেনে যার পাশে বসে এতটা পথ এল রাপ্তী --- সে কে ? তিয়াশা কি কিছু বোঝাতে চেয়েছিল তাকে ? এটা কী রাপ্তীর প্রতি তিয়াশার একটা অব্যক্ত বার্তা , যে এমনটা তোমার জীবনেও ঘটতে পারে , নাকি অন্যকিছু ? আর ভাবতে পারল না রাপ্তী ।

         জ্ঞান হারিয়ে রাপ্তীর শরীরটা কাটা কলা গাছের মত সশব্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই স্বাগতর দু’টো বলিষ্ঠ হাত শেষ মুহূর্তে ওকে ধরে ফেলল ।

                                     -------------------

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/04/pub-9792609886530610_57.html

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_15.html





ভয়ংকর ভূতের গল্প বাংলায়


ভূতের গল্প বাংলাতে



ভয়ানক ভূতের গল্প



ভয়ংকর ভূতের গল্প


সত্য ভূতের গল্প

ভূতের গল্প বাংলায়


ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প

সত্য ভূতের গল্প

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প বলো

ভয়াবহ ভূতের গল্প

একটি ভূতের গল্প

একটা ভূতের গল্প বলো

একটি ভূতের গল্প শোনাও

ভূতের গল্প pdf



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...