"ছোটগল্প" লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
"ছোটগল্প" লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

রাতপরী

              পঁচিশ বছর আগেকার কথা । মামাবাড়িতে ঘুরতে বোলপুরে এসেছি । অবশ্য এখানে আসার সেটাই একমাত্র কারণ নয় , হাতে কিছু কাজও আছে । আর সেগুলো নিয়েই খুব ছোটাছুটি করতে করতেই দু’তিন দিন কোথা দিয়ে যে বেরিয়ে গেল , টেরই পেলাম না । যাইহোক নির্দিষ্ট দিনে ফেরার জন্য রাতের খাওয়া সেরে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়ালাম । আমার সঙ্গে আছে একটা সুটকেস আর একটা শান্তিনিকেতনী ঝোলা ব্যাগ । খোঁজ নিয়ে জেনেছি , ট্রেন বেশ খানিকটা লেটে চলছে । প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী । আমি একমনে উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মের দেওয়ালে বহুবার দেখা বিরাট টাইলসের ম্যুরালটা দেখছি । কতক্ষণ এভাবে তাকিয়েছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ বাঁদিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম , গেট পেরিয়ে স্টেশনে ঢুকছে এক ক্ষীণকায়া তরুণী । চোখে চশমা , চলাফেরার ভঙ্গী খুব চটপটে । পরনে একখানা বাটিক প্রিন্টের লাল রঙা সালোয়ার-কামিজ । একই রঙের ওড়নাখানা গলার দু’পাশ দিয়ে নেমে গেছে পিঠের দিকে । আমার দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে আসাতে দেখলাম , দু’গালে বেশ কিছু ব্রণের দাগ আছে । মেয়েটি আহামরি কিছু সুন্দরী নয় , তবে চেহারায় সজীবতা আছে , স্নিগ্ধতা আছে । চোখের ভাষায় স্পষ্ট পড়া যায় বুদ্ধির ছাপ । মেয়েটির দু’হাতে দু’টি ব্যাগ । সঙ্গে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এসেছেন ।

            কিছুক্ষণ বাদে ট্রেন এলো । সঙ্গের ভদ্রলোকটির তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও দেখলাম , মেয়েটি নিজেই ভারী ব্যাগ দু’টো বয়ে কামরায় উঠল । আমার সাথে , একই কামরায় । বোলপুরে দার্জিলিং মেল খুব অল্প সময় দাঁড়ায় । মেয়েটির সাথে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন , তিনি ব্যস্তভাবে মেয়েটির বার্থ নম্বর খুঁজতে লাগলেন । আর আমি তাঁর পেছন পেছন ধীরে ধীরে, ইতি-উতি তাকাতে তাকাতে এগোতে লাগলাম । শেষে দেখা গেল , একই কুপেতে প্যাসেজের মধ্যে আমার আপার বার্থ , বিপরীত দিকে লোয়ার বার্থটি সেই মেয়েটির । ট্রেন হুইসল দিচ্ছে এবার । আমি তখনও ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে । আমার বার্থটা ফাঁকা পেয়ে একজন মোটাসোটা ভদ্রলোক সেটার দখল নিয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছেন । তাঁর নিদ্রাভঙ্গের জন্য খুব গলা ফাটাচ্ছি – এমন সময়ে পাশ দিয়ে দরজার দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে যেতে , সেই মেয়েটিকে ট্রেনে তুলে দিতে যিনি এসেছিলেন , তিনি বেশ জোরেই বললেন --- “রাতের গাড়ি… … …একসঙ্গেই যখন যাচ্ছ ভাই… … একটু দেখো ।“ ঘাড় নেড়ে সম্মতিসূচক ভঙ্গী করতে গিয়ে মেয়েটির দিকে চোখ পড়ল । ভ্রূকুটি দেখে বুঝলাম , ভদ্রলোকের এই অনুরোধটি মেয়েটিকে বিশেষ সন্তুষ্ট করতে পারেনি । এটাই তো স্বাভাবিক । প্রত্যেকটা মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে ভালবাসে । মেয়ে হলেই যে নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে পারবেনা --- এরকম একটা ধারণা করা তো ভুল । ভদ্রলোক এরপর তাড়াতাড়ি টা – টা গুডবাই করে নেমে পড়লেন । ট্রেন দুলকি চালে চলতে শুরু করল । এতক্ষণ খেয়াল করিনি , কিন্তু এবার মনে হল মেয়েটি বোধহয় আমার সমবয়সীই হবে । কিছুক্ষণ পরে যখন চেকার এলেন , তখন সব সংশয়ের অবসান হল । আমি চেকারের পাশে ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়েছিলাম , টিকিটের মধ্যে বয়সের অঙ্কটা স্পষ্ট চোখে পড়ল । নীচের সিটে মেয়েটির একখানা সুটকেস তখনও খাড়াভাবে রাখা ছিল । তাতে দেখলাম বড় বড় করে ইংরেজি হরফে লেখা একটি নাম --- মৌমিতা চ্যাটার্জি । চটপট সঙ্গের জিনিসপত্র ঠিকঠাক মত গুছিয়ে রেখে শোওয়ার ব্যবস্থা করে , যে যার জায়গায় চলে গেলাম । ঝড়ের বেগে ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে । কামরার ভেতরটা নীল আলোয় প্রায়ান্ধকার ।  

              চুপচাপ শুয়ে আছি , বেশ গরম লাগছে । জামার উপরের দু’টো বোতাম খুলে দিলাম । কিছুটা সময় কাটল , কিন্তু কেন জানিনা কিছুতেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিনা । ডানদিকে কাত হয়ে নীচের দিকে তাকালাম । চুম্বকের মত চোখ টানছে একটি নারী শরীর । মেয়েটি বুক পর্যন্ত একটা পাতলা চাদর টেনে , ডানহাতটা চোখের ওপর আড়াআড়িভাবে রেখে চিত হয়ে শুয়ে রয়েছে । জানলা দিয়ে আসা দমকা হাওয়ায় মাঝেমধ্যেই সরে যাচ্ছে আবরণ । একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির ফর্সা মুখের দিকে । মেয়েটিকে পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী বলা যেতেই পারে । বারে বারে চোখ যেতে লাগল অল্প ফাঁক করা , যেন তৃষ্ণার্ত ঠোঁট দু’টোর দিকে । এ মুখ আমার যেন খুব চেনা , এমনটা মনে হতে লাগল বারবার । আমি কোনও মহাপুরুষ নই যে চোখ ফিরিয়ে নেব , তবু একভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় মনে হল , এভাবে তাকিয়ে থাকাটা উচিত হচ্ছেনা । আচমকা চোখে চোখ পড়ে গেলে , সেটা দু’জনের পক্ষেই চরম অস্বস্তির ব্যাপার হবে । পাশ ফিরে শুলাম কিছুটা অনিচ্ছা নিয়েই । নিজের অজান্তে কখন যেন ঘুমে দু’চোখ জড়িয়ে এল ।

             যখন ঘুম ভাঙল , তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে । রিস্টওয়াচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পৌনে আটটা বাজে । অর্থাৎ নিউ-জলপাইগুড়ি পৌঁছোবার আর বেশি দেরী নেই । নেমে এসে চোখ-মুখে জল দিয়ে এসে জানলার ধারে মেয়েটির মুখোমুখি বসলাম । জানলা দিয়ে আসা হাওয়ার ঝাপটা ধীরে ধীরে দূর করে দিচ্ছে আমার শরীর ও মনের সমস্ত জড়তা । জানলার বাইরে প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট । কিছুক্ষণ বাদে , পাশে বসা সেই মোটামত ভদ্রলোকটি নিজে থেকেই আলাপ জমালেন । বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা চলতে লাগল তার সাথে । মেয়েটি বাবু হয়ে বসে একখানা পেপারব্যাক ইংরেজি গল্পের বই পড়ছিল সিডনি শেলডনের । হঠাৎ বই থেকে মুখ তুলে কয়েক মুহূর্ত সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে , আমার বকবকানি শুনতে লাগল । তারপর উপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁট চেপে গম্ভীরভাবে জানলার দিকে একপলক তাকিয়ে , আবার বইয়ে মনোনিবেশ করল । আরও কিছুক্ষণ বাদে , নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা পরে ট্রেন এন জে পি পৌঁছল । আমি হেলতে –দুলতে ট্রেন থেকে নেমে এসে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালাম । জিনিসপত্র নিয়ে মেয়েটিও এগিয়ে এলো আমার দিকে । তারপর ব্যস্তভাবে বলল ---“চার নম্বরে লোকাল ট্রেনটা এখনও আছে বোধহয় । তাড়াতাড়ি চল , না হলে আর জায়গা পাব না । জলপাইগুড়ি পর্যন্ত দাঁড়িয়েই যেতে হবে ।“

               আমরা দু’জনে একসাথে ওভারব্রিজের দিকে এগিয়ে গেলাম !





প্রেমের গল্প বাংলা


প্রেমের গল্প রোমান্টিক

প্রেমের গল্প প্রেমের গল্প

প্রেমের গল্প লাভ স্টরি




রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০

রাজযোটক

 

            বেশ কিছুদিন হল একটা বাঙালি ঘটকালির ওয়েবসাইটে নাম লিখিয়েছে অমিতাভ । এখনও পর্যন্ত পাত্রী জোটেনি , তাই অমিতাভ ভেতরে ভেতরে একটু অস্থির হয়ে আছে , একটু রেগে আছে । তবে উপকারও হয়েছে কিছু । বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে গেছে । সমাজটা  যে অনেকটা পাল্টে গেছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে অমিতাভ । যে বয়স পেরোলে চালসে ধরে , সে সেই বয়স পেরিয়ে এসেছে । তার স্কুল-কলেজের বান্ধবীরা একেকজন এখন পাক্কা গৃহিণী , টিনএজার ছেলেমেয়ের মা । কথায় বলে মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি । সেই ধারণাটা যে সামাজিক ভাবে একদম পাল্টে গেছে , সেটা বেশ বোঝা যায় এই সাইটে চোখ বোলালে । যাঁদের বয়স পঁয়ত্রিশের ওপরে এবং যাঁরা স্বাবলম্বী বা কিছু করেন না , তাঁদেরও যেন বিয়ে করার বিশেষ তাড়া নেই , পাত্রের বয়স চল্লিশের ওপর হলেও দিব্যি চলবে । বোঝা যায় পাত্রী এবং তাঁদের বাবা-মাদের চিন্তাধারা অনেক পাল্টেছে । পাত্রস্থ হওয়া বা করাতেই মোক্ষলাভ , এমনটা আর ভাবছেন না সকলে । অনেক পাত্রীই আবার নিজের চেয়ে বয়সে ছোট পাত্র চাইছেন , এটা অমিতাভের বিয়ে সম্পর্কে ধারণায় একটা বড়সড় ধাক্কা ! অনেক বাবা-মা আবার ঘরজামাই পাত্র চাইছেন , কিন্তু কেউ কী রাজি হবে ? নিশ্চয়ই হবে , এবং হচ্ছে আজকাল ! অমিতাভ ভেবেছিল তার জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও পাত্রী আর বসে নেই , কিন্তু দেখল দিনকাল পাল্টেছে । অনেক দুই কুড়ি পাত্রী আছেন । তবে, বেশ ভাল লাগছে এটা দেখে যে গোত্র-রাশি-জাত নিয়ে অনেকেরই আর মাথাব্যথা নেই । এক ভদ্রমহিলার ছবি দেখেছে অমিতাভ যিনি পেশায় শিক্ষিকা । বাড়ি কলকাতায় , কর্মসূত্রে থাকেন বহরমপুরে । তিনি নিজের জন্য পাত্র চাইছেন এটা জানিয়ে যে তাঁর আগে কখনও বিয়ে হয়নি , কিন্তু তাঁর পুরনো সম্পর্কের চিহ্নস্বরূপ একটি তিন বছরের সন্তান আছে । অমিতাভ বুঝছে সমাজ মেনে নিতে , মানিয়ে নিতে শিখেছে অনেকখানি , নইলে ওই ভদ্রমহিলা প্রকাশ্যে এত কথা বলতে পারতেন না । অমিতাভ দেখেছে  অ্যাসিড আক্রান্ত পাত্রীরা নিজেদের ছবি দিতে দ্বিধা করছেন না । এমনকি পাত্রী হিসেবে ছবি আপলোড করেছেন সমকামীরাও । এগুলো পর্যবেক্ষণ করে ওর ভাল লেগেছে ।

               কিন্তু ভেতরে যে অদম্য পুরুষ সত্তাটি রয়েছে , সেটি ঘুণ পোকার কুরে কুরে খাওয়ার মত অমিতাভকে সমানে খেপিয়ে চলেছে । কারণটা আর কিছুই নয় , অমিতাভর প্রস্তাবকে অনেক পছন্দের পাত্রী বাতিল করেছে । কেউ ভদ্রতা বজায় রেখে , কেউ একেবারে মাছি তাড়াবার ভঙ্গীতে । এটা অমিতাভর একেবারে সহ্য হচ্ছে না । সত্যজিৎ রায়ের 'গুপী গায়েন বাঘা বায়েন' ছবির ক্লাইম্যাক্সে গুপীর বিয়ে পছন্দের রাজকন্যার সাথে ঠিক হয়ে যেতে দেখে , যেমনভাবে বাঘা ফুঁসে উঠেছিল এই বলে যে ---- "কেন , আমি কম কীসে ?" --- সেই প্রশ্নটা অমিতাভরও পাত্রীদের খোলাখুলি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে খুব , কিন্তু পারেনা । গুপীর মত পত্রপাঠ কেউ জবাব দেয়নি বটে --- "এই অ্যাত্তোখানি !" --- কিন্তু অমিতাভর কেন যেন মনে হয় পাত্রীরা নীরবে সেই কথাটাই বলতে চায় , এবং এটাই ওর একেবারে অসহ্য লাগে । তাই অমিতাভ রাগের চোটে বিবাহোন্মুখ পাত্রীদের কিছু খামতি খুঁজে বের করেছে । যেমন এক , মদ্যপান করেন কিনা , সেই প্রশ্নের জবাবে অনেক পাত্রীই লিখেছেন --- "সোশ্যালি ইয়েস ।"  সোশ্যালি ইয়েস ! কোন সোসাইটির কথা বলতে চাইছেন ওঁরা ? মদ খেয়ে রাস্তায় আছড়ে পড়লে, যে সোসাইটি ফিরেও তাকাবে না , সেই সোসাইটি ? সোসাইটি ! মাই ফুট ! কিছুদিন আগে কাগজে একটা খবর পড়েছিল অমিতাভ এবং স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল । সম্ভবত খবরটা তাকে আমৃত্যু তাড়া করবে । কলকাতার রাজপথে একজন যুবক গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন , রাজধানী শহরে প্রতিদিনই অনেকে এভাবে প্রাণ হারান । ওসব কেউ ধর্তব্যের মধ্যে আনেনা । দুর্ঘটনার খবরটা অমিতাভর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল খবরের আসল অংশটা পড়ে । ভদ্রলোক শুধু গাড়িতে পিষ্ট হননি , তার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার পর, একের পর এক গাড়ি অবলীলায় চলে গেছে তাঁর দেহাবশেষের ওপর দিয়ে , যেমন ছুঁচো, মেঠো ইঁদুর , কুকুর , বেড়ালের দেহের ওপর দিয়ে যায় । কেউ থামেনি । একসময় ওঁর শরীরের অবশেষ বলেও আর কিছু রাস্তায় পড়ে থাকেনি রক্ত ছাড়া । তবু এক মুহূর্তের জন্যও সদাব্যস্ত কলকাতা শহর ওঁকে চিঁড়েচ্যাপটা করে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি । মৃতের মায়ের আকুল প্রশ্ন ছিল --- "কেউ কি একবারও একটা আস্ত মানুষকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলেন না , একবারও ভাবলেন না , আগামীকাল তাঁরও ওই হাল হতে পারে ?" এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে সো কলড সোসাইটি , যেখানে কারও কারও মদ্যপান --- ইয়েস ! 


                   আরও একটা দিক অমিতাভকে ভাবিয়েছে । ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত , স্বাবলম্বী , সরকারি বা বেসরকারি মোটা মাইনের চাকুরে পাত্রীরা তো বটেই , এমনকি যারা উপার্জন করেন না তাঁরাও অনেকে চান পাত্রের আয় যেন ছয় লাখ থেকে শুরু হয় , তারপর যত ওঠা যায় , ততটাই উঠতে চান প্রায় সকলে । ছয় লাখ ! মানে, মাসে নগদে পঞ্চাশ হাজার ! পশ্চিমবঙ্গের ক'টা লোক রোজগার করে মামণি ? পয়সা কী গাছে ফলে ? নাকি, অনেক ছেলেরা যেমন তোমাদের শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মনে করে , পাল্টা তোমরাও তেমনি ছেলেদের কলুর বলদ নয়ত টাকা উৎপাদনের যন্ত্র মনে করো ? সংসারে টাকা উৎপাদন আর ব্যয় ছাড়া তাদের আর কোনও জীবন নেই ? থাকতেও নেই ? টাকার ট্যাঁকে ছেলেরা পোরা , খুচরো ছেলে খরচ হয় ? 

                   অমিতাভ সঠিক পাত্রীর সন্ধানে আছে । আপনাদের জানাশোনা কেউ থাকলে জানাবেন , নইলে সে পাড়ার ল্যাম্পপোস্টে পাত্রীর জন্য বিজ্ঞাপন দেবে ! কী বললেন ? অবাস্তব ? আজ্ঞে না , এমনটাও দেখা যাচ্ছে অতিমারির বাজারে । একসময় আপনাদের সামনে সচিত্র প্রমাণ উপস্থিত করা যাবে 'খন ! 

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_65.html 



পাত্রী চাই সরাসরি 2021

হিন্দু পাত্র চাই সরাসরি

পাত্র পাত্রী চাই আনন্দবাজার






হিন্দু পাত্রী চাই 2020

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন 2020

        

হঠাৎ বিয়ে ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক প্রেমের গল্প ১৮+

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

বিয়ের পর ভালোবাসার গল্প






রোমান্টিক গল্পের লিংক

খুনসুটি ভালবাসার গল্প

প্রতিশোধের বিয়ে

রোমান্টিক স্ট্যাটাস       


ভালোবাসার গল্প ২০২০

আবেগি ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প কাহিনী

খুব কষ্টের ভালোবাসার গল্প





ভালোবাসার গল্প 2020

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প ছবি

বিয়ের পর ভালোবাসার গল্প


আপনারা কী রাজযোটক!



রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০

মাটির গন্ধ

 মাটির গন্ধ

 

                                         (১)

            গিটারটা মাথার ওপর দিয়ে খুলতে খুলতে সৌরীশ বলল --- “নাহ , উই আর মিসিং সামথিং ইয়ার ! হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন , প্রবাল ?”

--- “ঈপ্সিতারা কমন রুমে গেছে । কিন্তু তুই জিমনাসিয়ামের বারান্দায় বসে , একা একা কাকে গান শোনাচ্ছিলি ?”

--- “বলছি , এই মিঠুন , ডান দিকে সর তো একটু । এখানে বসলে মেন গেটের দিকে নজর রাখা যাবে । মনীষা আসলে দেখতে পাব । এবার তোর কথার উত্তর দিই । ওখানে গিয়ে একা একা বসে গান গাইছিলাম , কারণ আমি একটু একা থাকতে চাইছিলাম । ডু ইউ নট থিঙ্ক , আমরা আজকাল বড় বেশি কথা বলছি , সরবে এবং নীরবে , ফোনে এবং ফেসবুকে ? এত কথা শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে বড্ড হাঁপিয়ে উঠি । আজকাল সন্ধেবেলার দিকে কখনও কখনও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম গিয়ে গর্ভগৃহের পিছনের দিকে চুপচাপ ঘণ্টাখানেক চোখ বন্ধ করে বসে থাকি । সন্ধ্যারতি হয়ে যাওয়ার পর , ওই যে পিন ড্রপ সাইলেন্স --- ওটা মন আর মগজের পক্ষে বড্ড আরামদায়ক , কপালে মায়ের হাত বোলানোর মতন । আচ্ছা মিঠুন , তোরও কী মনে হয় না , আমাদের বন্ধু-বান্ধবীদের চোখের তারাগুলো আজকাল কেমন অস্বাভাবিকরকম চঞ্চল ?”

--- “আমি তোর মত ভাবুক নই । আর তোর মত ইন্টেলেক্টও আমার চোয়ালে এসে জমা হয়নি , অতয়েব আমি ইন্টেলেকচুয়ালও নই । তবে হ্যাঁ , দ্য ফার্স্ট পার্ট অব ইওর স্পিচ ইজ কোয়ায়েট রেলেভ্যান্ট । ইয়েস , উই আর মিসিং সামথিং । কী যেন একটা , খুব কাছাকাছিই আছে , কিন্তু ধরতে পারছিনা , বুঝতে পারছিনা । মনের ভিতর কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা আছে আর  সেটাকে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মত খুঁজতে খুঁজতেই আইপডে শ’য়ে শ’য়ে গান শোনা , গার্লফ্রেন্ডের সাথে তিস্তার স্পারে বসা আর সারাদিন ধরে ঘরে-বাইরে প্রচুর অদরকারি কাজে ডুবে থাকা আছে । এই আমাদের কথাই ধর , দু’দিন বাদে থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট বেরোবে , আস্তে আস্তে আমরা কাজের জগতে হারিয়ে যাব , হয়তো বা নিজের মধ্যে থেকেও হারিয়ে যাব । এ সি কলেজের আনাচকানাচে এভাবে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ানোটাকে মিস করব ভীষণভাবে । অথচ দেখ , এখনও পর্যন্ত আমরা রিয়েলাইজই করে উঠতে পারছিনা , আল্টিমেট সুখটা ঠিক কোথায় পাওয়া যাবে , কিসে পাওয়া যাবে !”

--- “ঠিক তাই ।“ মিঠুনের কথার সূত্র ধরে প্রবাল বলল --- “অ্যাপারেন্টলি আমাদের কোনও অভাব নেই । আমাদের বাবা-মা’দের যে প্রজন্ম তাঁরা এত নিরুদ্বেগে-নিশ্চিন্তে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ পাননি , সেদিক থেকে তো আমরা সৌভাগ্যবান । অথচ বুকের ভিতর কখনও কখনও ডিপলি ফিল করি , কোথায় যেন একটা নোঙর ফেলা বাকি । বুকের ভেতর থেকে কে যেন মাঝরাতে ফিসফিস করে বলে যায় , এই বেলা খুঁজে নাও , এই জীবন থেকে পরিপূর্ণভাবে তুমি ঠিক কী চাও । জীবনটাকে তুমি চালাবে , না জীবন তোমাকে । রাশ তোমার হাতে থাকবে , নাকি জীবনের গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে , অসহায়ভাবে মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে থাকবে যে , যাক , জীবন যেমন চায় , যেদিকে চায় , আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক । জীবন হোক বেলাগাম ।“  

--- “এই , আমরা বড্ড বেশি দার্শনিকের মত কথা বলছি । ছাড় তো । জাঁকিয়ে শীত পড়েছে কিন্তু আজ । টেম্পারেচার কততে নামল আজকে ? শিলিগুড়িতে তো চার না পাঁচ বলল খবরে ।“ উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করেই মিঠুন আবার বলল --- “কালই তো বড়দিন । আচ্ছা , থার্টি ফার্স্টে পিকনিক করতে গেলে হয়না মূর্তি কিংবা রোহিণীতে ?” ওর গলায় আনন্দ মেশানো উত্তেজনার ছোঁয়া ।

--- “বাস পাওয়া যাবে ভেবেছিস ! কুট্টিরা কালীঝোরা যাবে বলে একমাস আগে থেকে কালুসাহেবের একটা বাস বুক করে রেখেছে । তাছাড়া এত তাড়াতাড়ি সবকিছু অরগানাইজ করা যাবেনা । চাঁদা তোলার ব্যাপার আছে , মেয়েদের বাড়িতে কনভিন্স করানোর ব্যাপার আছে । তার চেয়ে বরং কাছেপিঠে কোথাও চল । লাল মন্দির গেলে হয়না ? নদী আছে , চা বাগান আছে , দারুণ জায়গা” --- বলল শুভার্থী । এতক্ষণ ও চুপচাপ বসে বাকিদের কথা শুনছিল ।

--- “ঠেলা ভাড়া করতে হবে , বাসনকোসন , চ্যালা কাঠ আর রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য । ঠেলাওয়ালা এই সময়ে সুযোগ বুঝে অনেক টাকা ভাড়া হাঁকবে । তাছাড়া যেতেও অনেক সময় লাগবে । তার চেয়ে বরং করলা ভ্যালি চা বাগানটা সিলেক্ট কর । কলেজের কাছেই হবে । আমরা সবাই সুবোধদার দোকানের সামনে সকালে মিট করব , তারপর একসঙ্গে যাব । এগ্রিড ?” বলল সৌরীশ ।

ওর অকাট্য যুক্তি মেনে নিয়ে সবাই মিলে করলা ভ্যালি চা বাগানেই পিকনিক করতে যাওয়া স্থির হল । কিছুক্ষণ পর নবনীতা , ঈপ্সিতা , মনামিরা কমনরুম থেকে ফিরলে ওদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট আর মেনুও ঠিক হয়ে গেল । চাঁদা ও পিকনিক স্পট নিয়ে বান্ধবীরা ওদের সঙ্গে সহমত । কেবল একটাই শর্ত , রান্নার দায়িত্ব একা মেয়েরা নেবে না , ছেলেদেরও হাত লাগাতে হবে । ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কেবল ফটো তুললেই চলবে না । হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হবে না , এই-ই ঢের । এই শর্তে কেউ অরাজি হয় ! ছেলেরা সমস্বরে বলল --- তথাস্তু !

                                            (২)   

      ঠিক ছিল সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সবাই কলেজের মেন গেটের সামনে সাইকেলে পৌঁছবে । রান্নার জিনিসপত্র কলেজপাড়ার এক বন্ধুর বাড়িতে রাখা থাকবে । একটা ঠেলা জোগাড় করা হয়েছে । ঠেলাওয়ালা নয় , ওরাই কলেজ থেকে করলা ভ্যালি পর্যন্ত সেটাকে ঠেলেঠুলে চালিয়ে নিয়ে যাবে ঠিক হয়েছে । ওইটুকু তো মাত্র পথ । কথামত আগে-পরে সবাই পৌঁছে গেল । স্নান করে আসতে হয়েছে বলে সবাই অল্পবিস্তর কাঁপছে । কাঁধ উঁচু করে হাতের চেটো ঘষছে । চারদিকে ঘন কুয়াশা । কথা বলতে গেলেই মুখ দিয়ে সবার ধোঁয়ামত বেরোচ্ছে । সবার মুখে হাসি । ওরা অপেক্ষা করছে উত্তমের জন্য । ওদের মুরগির ফার্ম আছে । মাংসের ব্যবস্থাটা ও-ই করবে । ছাড়িয়ে-কাটিয়ে আনতে হবে বলেই সম্ভবত ওর একটু দেরী হচ্ছে । সব রেডি , ও আসলেই সবাই বেরিয়ে পড়বে ।

       সাড়ে আটটা নাগাদ একটা বাজারের ব্যাগ সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে উত্তম যখন হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির হল , তখনও আকাশের মুখ ভার । দেখেই বোঝা যায় , আজ রোদ ওঠা মুশকিল আছে । পিকনিকের পক্ষে একেবারে আদর্শ দিন ! একটু পরে কুয়াশা কেটে যাবে কিন্তু হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাটা কমবে না । রান্না বসিয়ে , সেই আগুনেই হাত সেঁকে নেওয়া যাবে । পরপর গোল করে সাজিয়ে উনুন তৈরি করার জন্য মেন গেটের উল্টোদিকে সুবোধদার দোকানের সামনে কিছু ইট এনে রাখা ছিল । দোকানটা জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি মেন রোড থেকে একটু নীচুতে । ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে হিম ভেজা ঘাসে দু’একজনের পা পিছলে গেল । মনীষা গলা ছেড়ে গাইছে --- “দো নয়না অর এক কাহানি / থোড়া সা বাদল , থোড়া সা পানি / অর এক কাহানি ।” আরতি মুখার্জির এই গানটা সত্যিই মনির গলায় খোলে ভাল , মনে মনে ভাবল সৌরীশ । মিঠুন ডাকল --- “এই শুভার্থী , এদিকে আয় , জলের ড্রামটা একটু ধর , ঠেলায় তুলে দিই । সবাই যখন এসে গেছে , তখন আর দেরী করে লাভ নেই । ওখানে গিয়ে মাংসটা ধোওয়া আছে । তাছাড়া মাঝেমাঝেই যেরকম দমকা হাওয়া দিচ্ছে , তাতে উনুন জ্বালিয়ে রাখা কঠিন হবে । আয় আয় , দেরী করিস না । অ্যাই দীপঙ্কর , একদম ইয়ার ফোন বের করবি না । আরে ইয়ার , দিনটা এনজয় কর , গাছের থেকে নীচের শুকনো পাতাগুলোতে টুপটুপ করে ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ শোন । আজকে প্লিজ কানে ওটা গুঁজে রাখিস না । জিনিসটা বড্ড ইরিটেটিং বাড়ির বাইরে এলে ।“ দীপঙ্কর জিন্সের প্যান্টের ডান পকেট থেকে ইয়ার ফোনটা বের করতে গিয়েও মিঠুনের ধমক খেয়ে বাধ্য ছেলের মত সেটা আবার স্বস্থানে ঢুকিয়ে রাখল !

         ওরা রওনা দিল । ঠেলা সঙ্গে থাকবে , তাই সবাইকে সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতে হবে । উত্তম আস্তে আস্তে ঠেলার প্যাডেলে চাপ দিচ্ছে । সৌরীশ গিটার বাজিয়ে কবীর সুমনের একটা গান ধরল --- ‘কতটা পথ পেরোলে, তবে পথিক বলা যায়’ । সৌরীশ গলা ছেড়ে গাইছে , সবাই চুপ । দু’একজন মাঝে মাঝে ঠোঁট নাড়িয়ে কথাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে শুধু । মোহিতনগরের দিক থেকে শহরে কাজের খোঁজে ঢুকছে যে লোকগুলো , তারা সৌরীশের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে যাচ্ছে । জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের বাসের জানলা দিয়ে মুখ বার করে অনেকে কৌতূহলী চোখে দেখছে ছেলেমেয়েগুলোকে ।সৌরীশ সে সব কিছুই খেয়াল করছে না । নিজের মনে গাইতে শুরু করলে , বিশ্বচরাচরের সব কিছু ওর চোখের সামনে থেকে মুছে যায় ।

          একটু পরে , ওরা যখন ঢুকছে করলা ভ্যালি চা বাগানে , তখন কুয়াশা অনেকটাই কেটেছে । হাওয়ার দাপটও কমেছে খানিকটা । সামনের দিকে আদিগন্ত তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় । চারদিকে উঁচু-নীচু ঢেউ খেলানো চা বাগান ধীরে ধীরে নেমে গেছে করলা নদীর খাতের দিকে । নদী পেরিয়ে ওপারে আবার সবুজ ঢেউয়ের বিস্তার । মাঝখান দিয়ে চা বাগানের বুক চিরে এঁকেবেঁকে অল্প গভীর খাতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে করলা নদী । নদীর দু’পাশে বেশ খানিকটা জায়গা পর্যন্ত বালি জমে আছে । বর্ষাকালে নদী এই পর্যন্ত উঠে আসে দিব্যি বোঝা যায়  বালির ওপর পড়ে থাকা বড় গাছের শুকনো ডাল আর ছোট ছোট বোল্ডার দেখলে । নদীর তীরে বালির ওপর এখানেই ওদের রান্নার ব্যবস্থা হবে । দু’পাশে চা গাছের সারি , আর তার মাঝে চাপা রাস্তা দিয়ে এগোতে এগোতে ওরা দেখল , প্রায় প্রতিটি চা পাতার বেঁকে আসা শীর্ষবিন্দুটিতে মুক্তোর মত জমে রয়েছে শিশিরের কণা । নদীর দু’পাশেই চা বাগানের মধ্যে কিছুটা দূরে দূরে চা গাছগুলির মাথায় ছাতা ধরার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় মোটা গুঁড়ির গাছ ।

        প্রবালের ফটোগ্রাফির শখ আছে , ওর ডি এস এল আর ক্যামেরা সচল হয়ে উঠেছে । তাই ও একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছে ওদের দল থেকে । সেটা লক্ষ্য করে ঈপ্সিতা গলা তুলে ওকে ডাকল --- অ্যাই প্রবাল , তাড়াতাড়ি আয় , পরে ছবি তুলিস । আয় এখন একসঙ্গে যাই । আজ বিকেল পর্যন্ত আমরা সবাই একসাথে থাকব , একা ঘোরাঘুরি চলবে না ।

--- “যথা আজ্ঞা ম্যাডাম !” প্রবাল পিঠের ব্যাগে ক্যামেরা পুরে ফেলল । নদীর পাড়ে পৌঁছে একটু পরিষ্কার মত একটা জায়গা বেছে নিয়ে রান্নার তোড়জোড় শুরু হল । ওরা তিনটে দলে ভাগ হয়ে গেল । এক দল গেল নদীর পাড়ে মাংস ধুতে , একদল ইট সাজিয়ে পাশাপাশি দু’টো উনুন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । আর মেয়েরা বালির ওপর চাদর পেতে বসলো ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করতে । সঙ্গে ফ্লাস্কে করে সবার জন্য চা বানিয়ে এনেছে নবনীতা । সবার জন্য ডিম-পাউরুটি-মাখন আর কলা আনা হয়েছে । রান্নাটা চাপিয়ে দিয়েই জঠরাগ্নি কিছুটা প্রশমনের ব্যবস্থা করতে হবে । কেউই অত সকালে খেয়ে আসেনি , তাই সকলের পেটেই ছুঁচো দৌড়চ্ছে !

 

                                              (৩)

       “এই সোডিয়াম , কেরোসিন তেলের ড্রামটা নিয়ে আয় ঠেলার উপর থেকে, কাঠগুলো ভাল জ্বলছে না , আরেকটু তেল ঢালতে হবে” -- হাঁক পাড়ল প্রবাল । ফাঁকা জায়গা বলে ওর কথার প্রতিধ্বনি হল কিছুটা । সেই শব্দে কাছেপিঠের গাছ থেকে এক ঝাঁক কিচিরমিচির করতে থাকা পাখি উড়ে গেল ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে । জায়গাটা এতই নিস্তব্ধ যে কথা বললেই তা কয়েকগুণ জোরে বাজছে কানে । তাই কারওই কথা বলতে বিশেষ ইচ্ছে করছিল না । নবনীতাও কপট রাগ দেখিয়ে , ঠোঁট ফুলিয়ে , ধুপ ধুপ করে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে প্রবালকে তেলটা দিয়ে এসে চটি পেতে বসল ওদের পাশে । নদীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নবনীতার তোম্বা হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল শুভার্থী । নবনীতা ‘সোডিয়াম’ সম্বোধনটাতে খুব চটে যায় , আর সেই কারণেই সবাই ওকে আরও বেশি করে খ্যাপায় ! ‘সোডিয়াম’ নাম কেন ? কারণ ইংরেজিতে নবনীতার নামের বানান শুরু হয় এন এ(Na) দিয়ে , যেটা সোডিয়ামের রাসায়নিক চিহ্ন । প্রবালটা একা উনুন নিয়ে পড়েছে , চাল ধুতে হবে , রান্না চাপাতে হবে একে একে । এবার ওঠা দরকার , হাতে হাতে কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার বুঝছে সবাই , কিন্তু এই অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা থেকে চোখ সরিয়ে কারওই আর উঠতে ইচ্ছে করছে না । স্তব্ধতা ভেঙে সৌরীশ হঠাৎ বলে উঠল --- “কী অদ্ভুত ব্যাপার না ,আমরা কিন্তু অনেকক্ষণ একসাথে চুপ করে বসে আছি । হল কী রে আমাদের !” হক কথা , ওরা নিজেরাও বহু চেষ্টাতে মনে করতে পারবে না , শেষ কবে একসাথে বসে স্তব্ধতার গান শুনেছে । আসলে , এটা এই জায়গাটার গুণ । এই বিরাট উন্মুক্ত প্রান্তরে ওরা সবাই আত্মস্থ হয়ে রয়েছে । মুখে কথা আসবে কী করে ? মনে মনে সবাই ভাবছিল , এতদিন এখানে আসিনি কেন । এই যে অনির্বচনীয় আনন্দের অনুভূতি , তা মনকে মাতিয়ে তোলে না , বরং শান্ত করে , একটা অভিনব কোমল পরশ বুলিয়ে দেয় । এই স্পর্শ সবার কাছেই অনাস্বাদিত । এই যে সামনে , চারপাশে , দিগন্তবিস্তৃত অফুরন্ত সৌন্দর্য , এই যে এঁকেবেঁকে, ছোট ছোট রঙবেরঙের নানা আকারের পাথরের উপর দিয়ে কুল কুল করে বয়ে যাওয়া নদী , এই যে তাকে প্রহরীর মত ঘিরে থাকা চা-গাছগুলো , আর সেই ছোট ছোট সবুজ চা পাতারই রঙের ক-ত বৈচিত্র্য , পাতার ওপর মুক্তোর মত ঝিকমিক করতে থাকা জলকণা , আশপাশের বড় গাছগুলোতে নাম না জানা কত কত পাখির কত রকমের সুরেলা ডাক , আর সেই ডাকের অপূর্ব মাদকতা , এ তো চট করে ফুরোবার নয় , থেমে যাওয়ার নয় । প্রকৃতি যেন আজ সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত করেছে তার মাতৃরূপ ।

             উনুন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে । অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাইকে উঠতেই হল । আলু-ফুলকপি কেটেকুটে আনাই হয়েছে , কলেজ পাড়ার বন্ধুটির বাড়িতে বসে মেয়েরা এসব করেছে কাল সন্ধেবেলায় । এতগুলো মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে বলে ঈপ্সিতা –নবনীতারাও আজ যেন একটু বেশি বড় বড় ভাব করছে ! রান্নাবান্নার ব্যাপারটা যত এগোবে , ছেলেরা জানে , এই ভাব তত বাড়বে ! কিন্তু আজ আর এসব নিয়ে মেয়েদের কেউ ঘাঁটাবে না । দীপঙ্কর , ঈপ্সিতাকে শুধু বলতে গিয়েছিল , বকফুল আর চাটনিটা শেষে করার কথা । ওরা ওকে ব্যসন ফেটিয়ে দেওয়ার কথা বলাতে আমতা আমতা করছে দেখে মজা পেয়ে বাঁ হাতটা তুলে মিঠুন বলল --- “চিন্তা করিস না , আমি ওটা করে দেব । এবার আয় , সবাই ব্রেকফাস্টটা সেরে নিই । প্রায় সাড়ে দশটা বাজে ।“

    

                                               (৪)   

            খাওয়াদাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় সওয়া তিনটে বাজল । ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার ঘর পেরোলেই ঝুপ করে অন্ধকার নামবে , তাই ওরা সবাই মিলে এবার ঘুরতে বেরোল । কাছাকাছি একটা চায়ের কারখানা আছে , সেটা দেখে ওরা নদীর কোল ঘেঁষে হাঁটবে কিছু দূর অব্দি , এমনটাই ঠিক হয়েছে । এসব জায়গায় তো আর একা একা চট করে আসা হয়না , তাই যতটা পারা যায় সবাই ঘুরে দেখে নিতে চাইছে । স্থানীয় দু’জন লোক , ওরা যখন খাচ্ছিল এক পঙক্তিতে বসে , তখন দূরে বসে জুলুজুলু চোখে তাকিয়েছিল । ওদের ডেকে পেট পুরে খাইয়ে সঙ্গের জিনিসপত্র আর সাইকেল পাহারায় বসিয়ে আসা হয়েছে । এইসব আদিবাসীরা খুব বিশ্বাসী হয় , তাই জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । হাঁটতে হাঁটতে সবাই রান্নার প্রশংসা করছে । করবেই , কারণ প্রত্যেকেই কব্জি ডুবিয়ে আঙুল চেটে খেয়েছে । মেয়েরা বাড়িতে কত রান্না করে , সবাই জানে ! কিন্তু আজকের পরীক্ষায় ওরা একেবারে ডিসটিঙ্কশন পেয়ে পাশ করেছে । সঠিক স্বাদ বজায় রেখে এতগুলো মানুষের জন্য রান্না করা কি চাট্টিখানি কথা ! আসলে মনটা আনন্দে থাকলে , তাজা থাকলে , সব কাজই ভালভাবে উতরে যায় । চায়ের কারখানায় কাণ্ড-কারখানা দেখে ওদের তাক লেগে গেল । এক জায়গায় ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত স্তূপ করে রাখা বাগান থেকে আনা চা পাতা , আর এক জায়গায় ওরা দেখল একটা কনভেয়ার বেল্টের উপর দিয়ে চা পাতা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা বাক্স মতন যন্ত্রে । পাতাগুলো সেখান থেকে কুচিকুচি হয়ে বেরিয়ে আসছে । ওদের সবার গায়ে গরম জামা , সোয়েটার , চাদর । অথচ ওদের দেখে খারাপ লাগল , যারা কারখানায় কাজ করছে , তারা প্রত্যেকেই পাতলা-শতচ্ছিন্ন জামাকাপড় পরে রয়েছে । অথচ লোকগুলো এত পরিশ্রম আর কষ্টের মধ্যেও হাসতে ভোলেনি । কাজ করতে করতেই রসিকতা করছে পরস্পরের সাথে । সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে যে উষ্ণ তরলে সবাই সরু করে ঠোঁট ছোঁয়ায় , সেটা গৃহস্থের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার পথে যে কত মানুষের শ্রম লুকিয়ে থাকে !

            কারখানা থেকে বেরিয়ে ওরা নদীর ধারে বালির ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় একটা সরু বাঁকে , নদীর জল একটু কম দেখে , নদী পেরিয়ে গেল ওপারে । বাঁ হাতে চটিজোড়া নিয়ে পায়ের পাতা ডোবা , হাড় হিম করা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে দিয়ে নদী পেরোতে গিয়ে ওদের সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল । এ পাশটায় লোকজনের যাতায়াত আরও কম , তাই পাখির সমাবেশ আরও বেশি । চা-বাগানের মাঝে বড় গাছগুলিতে শ’য়ে শ’য়ে পাখির কলরবে জায়গাটা ভরে আছে । এত সুরেলা , এত মধুর সিম্ফনি ওরা কেউ আগে শোনেনি । প্রবাল চা-গাছগুলোর মাথায় বসে থাকা ছোট ছোট নানা রঙের পাখির ছবি তুলতে তুলতে ভাবছিল , প্রকৃতিতে যে এত রঙ আছে , রঙের এত বৈচিত্র্য আছে , তা-ই তো জানা ছিলনা এতদিন । সেই লাইনটা মনে পড়ে যায় --- দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া , ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া , একটি ধানের… , থুড়ি চা পাতার ওপর , একটি শিশিরবিন্দু !   

           এর মধ্যে কখন যে দিনের আলো নিভে এসেছে কেউই খেয়াল করেনি । এখনই কালো পর্দার মত অন্ধকার নেমে আসবে আর চা-গাছগুলোকে ঘিরে এল ই ডি আলোর মত থোকায় থোকায় জোনাকি জ্বলে উঠবে । এই জায়গাটা তখন সেজে উঠবে অন্য এক রূপে । দু’একটা জোনাকি ইতিমধ্যেই এদিক-ওদিক থেকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে । তার সঙ্গেই খুব মৃদু হলেও শুরু হয়েছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক । এবার ওদের ফিরতে হবে । আবার সেই বাগানের ঢাল বেয়ে নেমে আসা , আবার সেই নদী পেরনো । এপারে এসে ওরা বালির ওপরে চটি হাতে খালি পায়েই হাঁটছিল । ভিজে পায়ে চটি পরে বালির ওপর দিয়ে হাঁটা যায়না । টুকটাক কথা বলতে বলতে ওরা বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে , চিন্তা করছে ওই লোক দু’টো এখনও ওদের জিনিসপত্রের কাছে বসে আছে কিনা তাই নিয়ে । এমন সময় সৌরীশ হঠাৎ পিছন ফিরে দৌড়ে গেল নদীর দিকে । ডান হাত দিয়ে জলের সামনে থেকে কী যেন একটা খামচে তুলে নিয়ে , দৌড়েই ফিরে এল আবার । সৌরীশ অল্প হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের সামনে এসে মুঠো খুলল । বন্ধুরা দেখল সৌরীশের হাতে এক তাল ভেজা মাটি । কেউ কোনও প্রশ্ন করার আগেই ও হাতের মুঠো মুখের খুব কাছে এনে, চোখ বন্ধ করে জোরে একবার শ্বাস নিল । তারপর বলে উঠল --- “এই গন্ধটাই তো হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম এতদিন ধরে ।“  সৌরীশের কথায় এক অদ্ভুত তৃপ্তির সুর ফুটে উঠল, যা ওর বন্ধুরা আগে কোনওদিন শোনেনি । অথচ সবাই নিমেষে অনুভব করল , সৌরীশের কথাটা কোথায় যেন লুকিয়ে ছিল সবার বুকের ভিতরে ।

                                          ----------------






রোমান্টিক গল্প


প্রেমের গল্প

ভালো গল্প


রোমান্টিক গল্প

প্রেমের গল্প

গল্প লেখা

ভালো গল্প

হাসির গল্প

জীবনের গল্প

সাইকেলের গল্প

পাখির গল্প



সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

প্রেমপত্র । রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

 

প্রেমপত্র

 

সুজন এখন একাদশ শ্রেণি । রোজ আড্ডা দিতে বেরোয় বিকেলবেলায় । তিস্তার স্পারে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সবে শেখা সিগারেটে টান দেওয়ার রোমাঞ্চ উপভোগ করে । স্পারের ঝোপঝাড়ে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলা আর ঝিঁঝিঁ পোকার কোরাস শুরু হওয়ার পর , বাড়ি ফেরার আগে, চিবনোর জন্য মৌরির প্যাকেটও রাখে প্যান্টের পকেটে , যাতে মুখ দিয়ে তামাকের উগ্র গন্ধ বের না হয় । মা টের পেলেই বলা শুরু করবে,--- “তুই আবার ওইসব ছাইপাঁশ খেয়েছিস ? চারিদিকে এত ক্যানসার হচ্ছে তবুও ! আর পাঁচজনের মত সুজনও জ্ঞানপাপী । ক্ষতি হবে জেনেও বুকে ধোঁয়া টানে , বুকের অন্য আগুনকে নেভানোর জন্য । ওর বাবা কিছু ব্যাপারে খুব কড়া । বাবার বেঁধে দেওয়া নিয়ম হল , বিকেল চারটের পর বাড়িতে থাকবে না , আর সন্ধে ছ’টা , বড়জোর সাড়ে ছ’টার পর আর বাড়ির বাইরে থাকবে না । সুজন ভালমত জানে, এই নিয়মের অন্যথা হলে কপালে জবরদস্ত ঝাড় আছে । তাই কিছু ব্যাপারে নিজের স্বার্থেই সে নিপাট ভাল ছেলে । আজও বাড়ির গেট খোলার আগে সে রিস্টওয়াচ দেখে নিয়েছে । পাক্কা ছ’টা দশ । কিন্তু গেটের সামনের ঘরের লাইট জ্বলছে কেন ? কেউ এসেছে নিশ্চয়ই । ওই ঘরেই তো সাইকেলটা ঢোকাতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেজিয়ে রাখা পাল্লাটা ঠেলতেই চমকে উঠল সুজন । বাবা বসে , মুখ গম্ভীর , চোয়াল শক্ত আর চোখ সরাসরি ওর দিকে । সুজনের তলপেট গুড়গুড় করতে শুরু করেছে । কিছু বলা বা করার আগেই নির্দেশ এলো --- “বোস ।“ সুজন ঢোঁকটা পুরো গেলার আগেই ওর বাবা একটা ডাকে আসা খাম ধরিয়ে দিলেন হাতে । বললেন – “আজ বিকেলে এটা এসেছে , তুই বেরোবার পরে । দেখ , কাউকে ভাল লাগতেই পারে , সেটা দোষের কিছু না । কিন্তু আপাতত এসব নিয়ে মেতে না উঠে, পড়াশোনাটা ঠিকমত কর । সারাজীবনে ভাল মেয়ে অনেক দেখবি , প্রেম করারও অনেক সময় পাবি । আমার অভিজ্ঞতা বলে , চিরকাল জগতে সব সামাজিক গোলমালের মূল কারণ দু’টো । নারী আর অর্থ । আপাতত, এই গোলযোগে তোর না জড়ালেও চলবে । আমার তা-ই মনে হয় । আর তুই নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখিস । সে বয়স তোর হয়েছে । এবং অবশ্যই , মনে করে, চিঠিটা পড়া হয়ে গেলে ছিঁড়ে ফেলে দিস ।“ সুজনের হতভম্ব ভাবটা কাটার আগেই এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে, ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ওর বাবা । ছিঁড়ে ফেলতে বলার তো একটাই কারণ থাকতে পারে । আর কেউ যাতে এই চিঠির কথা না জানে । আর কেউ বলতে , সুজনের পিঠোপিঠি বোন মুনমুন । একবার এটার কথা জানলে ও জ্বালিয়ে মারবে , শুধু তা-ই নয় , নিজের বন্ধু মহলে রাষ্ট্র করবে এই চিঠির কথা , সেটা সুজন বিলক্ষণ জানে । কিন্তু এমন কী আছে চিঠিতে , যে পড়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে ? ভ্রূ কুঁচকে চিঠিটা খুলল সুজন । রুল টানা নোট খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ---- “আপনার ছেলে আজকাল বড্ড মৌটুসির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে । প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে মৌটুসিকে ভালবাসে । মৌটুসি আমার । অবিলম্বে ওর পিছু না ছাড়লে ফল খুউব খারাপ হবে । ইতি, জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী ।“ এ-এ-এহ ! বীরপুরুষ একেবারে । যদি হিম্মত থাকে, তবে সামনে এসে ডুয়েল লড় ! দুধ কা দুধ , পানি কা পানি হয়ে যাবে । তা না , যত রাজ্যের খচরামো । আর দেখ , হুমকিও দিয়েছে প্রায় সাধুভাষায় । কোনও আনাড়ি রোমিওর হাতের কাজ যে এটা নয়, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয়না । কিন্তু একী ! হাতের লেখাটা যে বড্ড চেনা চেনা লাগে । হাতের লেখা যতই বিকৃত করার চেষ্টা করো বাবা , সুজন বসুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয় । দিনের পর দিন তোর পাশে বসে ক্লাস করছি , আর তোর হাতের লেখা চিনব না ? শারলক হোমস , ফেলুদা , ব্যোমকেশ বক্সী , কিরীটী রায় গুলে খাওয়া সুজনকে এত ভ্যাবলারাম ভাবলি তুই । কিন্তু তাই বলে, তুই ! শালা , একটু আগেই যে ঘাড়ে হাত রেখে দিব্যি গল্প করলি । একবার মুখ ফুটে এই কথাগুলোই  বলে দেখতে পারতিস । সরে যেতাম তোদের মাঝখান থেকে । তা না করে , এইভাবে পিছন থেকে ছুরি মারলি ভাই । ইউ টু , ব্রুটাস ? শালা এসকেপিস্ট ।

নিজের মনে এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সুজনের একবার মনে হল এখনিই একবার বেরিয়ে গিয়ে হতচ্ছাড়ার কলার খামচে ধরে । এখনও ওরা স্পারেই আছে । তারপরেই বুঝল, কোনও লাভ নেই তাতে । ওই ইয়েটা কিচ্ছু স্বীকার করবে না , বন্ধুদের সামনে ভাল মানুষ সাজবে । তুমি তো আবার বাবা অল স্কোয়ার , পড়াশোনায় ভাল , তার ওপর আবার কুইজ থেকে ছবি আঁকা , সব প্রতিযোগিতায় নিয়মিত পুরস্কার জেতো । শিলিগুড়ি আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক করো । সর্বোপরি , রমণীমহলে তোমার তো আবার বিশেষ সমাদর রয়েছে । যেখানে যাও গোপিনীরা ছেঁকে ধরে , আর আমরা দূরে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষি ! আমার কথা কে বিশ্বাস করবে বলো ? কব্জির জোরে যে আমি পারবোনা , সেটা তুমি খুব ভাল করে জানো । তাই ভেবেচিন্তে এই রাস্তা নিয়েছ । মোটের ওপর, কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে , সুজন বুঝল চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে বিষয়টা ভুলে যাওয়া ছাড়া , তার সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই আপাতত । তাহলে কী মৌটুসিই ওকে দিয়ে এসব করিয়েছে ? কাল সুরঞ্জনা একবার বলছিল বটে – “মৌটুসি কাকুর নাম করে বলল , ওনার ছেলে আমার পিছনে খুব লাইন মারছে আজকাল । রোজ বিকেলে ও যখন ছাদে পায়চারি করে , তুই নাকি ওদের বাড়ির চারপাশে সাইকেল নিয়ে চক্কর কাটিস ? তোর হাঁ মুখ নাকি বন্ধই হয় না ? ও কিন্তু খুব বিরক্ত এটা নিয়ে ।“ তা সুজনের কী দোষ ? এ তো যৌবনের তাড়না । একটা লেখাপড়ায় ভাল , মোটামুটি চটকদার মেয়ে যদি একসাথে পড়তে যাওয়ার সময় সর্বদা স্কিন টাইট জিন্স – টপ পরে , ঠোঁটে লিপ গ্লস দিয়ে ঘুরে বেড়ায় , তবে কোন ছেলে লাট খাবে না ? তবে, সুজন বসু সংযমী মানুষ , ঠিক সময় নিজেই নিজের রাশ টানত । এসব করার কোনও দরকার ছিলনা ।  ইনফ্যাচুয়েশন আর লাভ – এর ফারাক সে বোঝে । মাঝখান থেকে ওকে নিয়ে বাবার চিন্তা বাড়ল । এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই খাম- সহ চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে বাড়ির নালায় ফেলে দিল সুজন । আর ঠিক করল, আজ থেকে মৌটুসি আর ‘জনৈক শুভানুধ্যায়ী’র সাথে কথা বলা বন্ধ । চিরতরে ।

 

      তারপর , জীবন গিয়েছে চলে তাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার । সুজন নিজেকে দেওয়া কথা রাখতে পারেনি । ওই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ওর রাগ পড়ে গিয়েছিল । ওই দুই বন্ধু – বান্ধবীর সাথেও  সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল । ওরা এখন ঘোর সংসারী মানুষ , আলাদাভাবে ! ওদের প্রেমটাও জমেনি । দু’জনেরই বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে এসেছে সুজন । এখন তো ওদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে গেছে । পুরনো দিনের অনেক ঘটনা নিয়ে এখন সবার চোখের সামনেই খোলামেলা আলোচনা , হাসিঠাট্টা হয় ওদের মধ্যে, ফেসবুকে । শুধু চিঠির ব্যাপারটা সুজন বিল্কুল হজম করে গেছে । কিচ্ছু বুঝতে দেয়না ওই দু’জনকে । অন্য বন্ধুদের তো নয়ই । এখন ওরা পরিণতবয়স্ক । কিছুটা বোধহয় পরিণতমনস্কও । কারণ ফেসবুকে ওই দুই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে সেদিনের ঘটনার কথা মনে পড়লে এখন সুজনের হাসি পায় ।

      হ্যাঁ । সাংবাদিক এবং পাকা গিন্নি মৌটুসি আর খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক ‘জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী’ দু’জনেই এখন রয়েছে অধ্যাপক সুজন বসুর ফ্রেন্ড লিস্টে । শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আরকী ! তিনজনেই এখন কলকাতা ও শহরতলিতে থাকে । কোনও একটা জায়গা বেছে নিয়ে মাসে একবার নিয়ম করে আড্ডা মারে । মৌটুসির ঠোঁট এখনও রাঙা হয় , তবে খয়েরের কল্যাণে । ও এখন ভীষণ ভাবে পানাসক্ত ! বলে , সবই মেয়ের চিন্তায় । ওর মেয়ে এবার ক্লাস টেনে উঠল ।

                                 ---------------------

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/05/pub-9792609886530610_10.html


প্রেমের গল্প

ভালোবাসার গল্প

গল্প

জীবনের গল্প


ভালবাসার গল্প









প্রেমিকাকে লেখা প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমপত্র প্রতিশব্দ

আধুনিক প্রেমপত্র






হাসির প্রেমপত্র

প্রেমপত্র লেখার পদ্ধতি

সুন্দর প্রেমপত্র

কষ্টের প্রেমপত্র

বাংলা রোমান্টিক প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমিককে লেখা প্রেমপত্র

রোমান্টিক লাভ লেটার

বাংলা রোমান্টিক লাভ লেটার

প্রেমের লাভ লেটার

সেরা প্রেম পত্র

লাভ লেটার পিক    


রোমান্টিক লাভ লেটার

সুন্দর প্রেমপত্র

ভালোবাসার রোমান্টিক চিঠি

প্রেমিকার কাছে রোমান্টিক চিঠি







মিষ্টি প্রেমের চিঠি

শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি

প্রথম প্রেমের চিঠি

একটি প্রেমের চিঠি


মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট । ছোটগল্প


ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট


        দুর্গা পুজোয় হেঁটে ঘুরতে বেরিয়ে কুড়ি – পঁচিশ জন বন্ধু মিলে , দল বেঁধে রুবি বোর্ডিঙে খাওয়াটা বাঁধা ছিল প্রতিবার । কী একটা কথায় সেবার আমি খুব হেসে উঠে দু’হাত ছড়িয়ে দিতেই ঘটে গেল বিপত্তি । উল্টোদিকে এক ভদ্রমহিলা ছেলেকে পাশে নিয়ে বসে খাচ্ছিলেন । জলের গেলাস আমার উচ্ছ্বসিত হাতের ধাক্কায় গিয়ে পড়ল তাঁর খাবার প্লেটে ! বলা বাহুল্য খাওয়ার দফারফা ! আর হাসি আচমকা থেমে গিয়ে আমি যথারীতি কিংকর্তব্যবিমূঢ় । ততক্ষণে বেয়ারাকে ডেকে ওর ওই খাবারটাই আরেক প্লেট অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে মা – ছেলের জন্য । সবার হতভম্ব ভাবটা কাটার আগেই ফিরে এসে , কাঠের চেয়ার টেনে বসতে বসতে ও শুধু ভদ্রমহিলাকে বিনয়াবতার পাপোশ হয়ে বলল – “প্লিজ, কিছু মনে করবেন না । ব্যাপারটা অ্যাক্সিডেন্টালি হয়ে গেছে । উই বেগ ইওর পারডন । আপনাদের খাবার আসছে ।“ ভদ্রমহিলার ভীষণ ভাবে কুঞ্চিত ভ্রূ এতে খানিকটা সোজা হল । একটা বড় গোলমাল দানা বেঁধে ওঠার আগেই মিটে গেল । আর আমি অল্পের জন্য সবার ঝাড় খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলাম সে যাত্রায় । আমাদের বন্ধু অচ্যুত এমনই , প্রত্যুৎপন্নমতি ।     
        র‍্যাঞ্চো যেন কী বলত ? এক্সেলেন্স । উৎকর্ষে মন দাও , সাফল্য আপ সে আপ আসবে । এ গল্প অবশ্য তার অনেক আগের , নয়ের দশকের শেষের দিকের । অচ্যুতদের বাড়িতে আমাদের একটা সান্ধ্য আড্ডা , থুড়ি ঠেক ছিল । বাইরের ঘরে, এম. টিভিতে ভেঙ্গা বয়েজের লাস্য কিংবা শুভা মুদ্গলের – ‘আব কে সাওন এয়সে বরসে’ চলতো , আর আমরা পঙ্গপালের ঝাঁকের মত সামনের খাটে বসে গোগ্রাসে সেসব গিলতাম । আর খাটেরই আরেক প্রান্তে , বুকের কাছে বালিশ নিয়ে আধশোয়া হয়ে, অচ্যুত সার্কিট বোর্ডের বই ঘাঁটত । প্র্যাক্টিকাল খাতার মত দেখতে এমন এক একটা বই ওর হাতে ঘুরত , যার পাতার পর পাতা জুড়ে রয়েছে শুধু বিভিন্ন  বৈদ্যুতিন যন্ত্রের সার্কিট বোর্ডের ছবি । আমার সেগুলোকে একেবারে মানচিত্রের মত লাগত দেখতে । আর ওর অখণ্ড মনোযোগী তর্জনী এঁকে বেঁকে ঘোরাফেরা করত পাতার মধ্যে । এরকম অপূর্ব একাকে কি সহ্য হয় সে বয়সে ! আমরা যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বলতাম --- “কী ছাইপাঁশ গিলছিস ? আব্বে, এদিকে তাকা । ব্ল্যাক মাম্বা আর সাম্বা দেখ !“ ও স্মিত হেসে টিভির দিকে এক পলক তাকিয়েই ফের বইয়ে ডুবে যেত অনায়াসে , কোনও কথা বলত না ।
           “তখন তোমার একুশ বছর বোধহয় / আমি তখন অষ্টাদশী ছোঁয়ায় ।“ প্রেম , উচ্চ মাধ্যমিকে বায়ো সায়েন্স , এবং তারপর কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পাস গ্র্যাজুয়েট । আর, এসবের ফাঁকে ফাঁকে যুব কল্যাণ বিভাগের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একের পর এক কোর্স করা --- অচ্যুতের জীবনটা তখনও সমবয়সী আর পাঁচজনের থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না । ও পড়াশোনায় ভাল ছিল , কিন্তু আহামরি নয় । আরও কিছুদিন পরের কথা । আমরা তখন ম্যারাথন আড্ডা মারছি , নাটক করছি , লিটল ম্যাগ বের করছি , কিংবা নিখাদ সমাজসেবা করছি পরম উৎসাহে । আর ও, বাড়ির ভিতরে উঠোনের দিকে এক কোণায়, নিজের মত করে একখানা টিনের চাল দেওয়া বেড়ার ঘর বানিয়ে নিয়েছে স্বোপার্জিত অর্থে । সে ঘরে বেড়ার দরজা ঠেলে ঢুকতে হয় । ওদের একতলা পাকা বাড়ির বাকি সদস্যদের সেখানে খুব প্রয়োজন ছাড়া , অলিখিত ভাবে প্রবেশ নিষেধ । সেখানে তখন ও বাড়ির ভিতর থেকে টেনে নিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ । ওই ছাপরা ঘরটাই হয়ে উঠল ওর কর্মশালা । ঘরে ঢুকলেই চোখে পড়ত এলোমেলো চেয়ার – টেবিল , ঘরময় ছড়ান-ছিটান বিভিন্ন যন্ত্রাংশ , টিভি , টেপ রেকর্ডার , মিউজিক সিস্টেম ইত্যাদি । ও লোকের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে এনে ওগুলো ঠিক করে দিত । যেচে উপকার করতে গেলে যা হয় , অনেক ক্ষেত্রে  সেটাই হত । বহু লোক আপাতদৃষ্টিতে ওর ভালোমানুষির সুযোগ নিত । কাজের উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও হয় একেবারেই পেত না , নয়ত পেত নামমাত্র । এ নিয়ে আমরা ওকে খুব প্যাক দিতাম । তখন আমাদের ‘বিভিন্ন’ প্রয়োজনে বেশ খানিকটা পকেট মানি লাগার শুরুর বয়স । ও তার ব্যতিক্রম ছিল না , বলা বাহুল্য । আমরা প্রায়ই বিরক্ত হয়ে ওকে খোঁচাতাম --- “কী গর্দভ রে তুই । লোকে তোকে দিয়ে বিনে পয়সায় খাটিয়ে নেয় , আর তুইও বোকার মত বেগার খেটে মরিস , কিচ্ছু বলিস না । তোর দ্বারা কিস্যু হবে না ।“ শেষের বাক্যটা আমাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিনিয়ত শুনতে হত । তাই নিজেরাও অন্যেকে শুনিয়ে দিতাম একটু সুযোগ পেলেই । ও কিন্তু উত্তরে যথারীতি শুধু হাসত , ভাল – মন্দ কিছুই বলত না ।
          আড্ডার সময়টা প্রায় বাদ দিয়ে ইতিমধ্যে অচ্যুত আরেকটা কাজ নিয়মিত করা শুরু করেছিল । বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্রের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় যে সব দোকানে , সেই দোকানের মালিকেরা তখন অধিকাংশ সময়েই , হয় দিল্লি , নয়ত কলকাতার চাঁদনি মার্কেট থেকে দল বেঁধে , ট্রেনের কামরা বোঝাই করে, সেইসব মালপত্র নিয়ে আসতেন আমাদের মফসসল শহরে, জলপাইগুড়িতে । কিন্তু তারপর, অত জিনিসের মধ্যে থেকে তো দেখে নিতে হবে , কোনটা ঠিক আছে , কোনটা নেই । ধরেই রাখতে হয়, যাতায়াতের পথে অতি স্পর্শকাতর যন্ত্রগুলির অন্তত দশ শতাংশ ভোগে যাবে , থুড়ি খারাপ বেরোবে । আর খারাপ জিনিস লোকে কিনে নিয়ে গেলে দোকানের সুনামের বারোটা বেজে যাবে । এত্ত জিনিসের মধ্যে এই ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজটা , --- ইংরেজিতে যাকে বলে একটা ‘ম্যামথ টাস্ক’ । যারা করেন তারা বিলক্ষণ জানেন এটা কতখানি ধৈর্যের কাজ , সময়সাপেক্ষ কাজ , এবং সর্বোপরি ঠাণ্ডা মাথার কাজ । এই বিরাট দায়িত্বপূর্ণ কাজটা অচ্যুত যেচে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দোকানে ঘুরে ঘুরে করা শুরু করল । অল্প পয়সায় এ কাজ করার লোক আর কে পায় ! ফলে অচিরেই ওর কদর বাড়ল এবং ও কাজটার মধ্যে একেবারে ডুবে গেল । বাড়িতে থাকলে অচ্যুত তখন নিজের ঘুপচি কাজের ঘরে , আর বাড়ির বাইরে থাকলে, দোকান ঘরের মেঝেতে , মাথা গুঁজে যন্ত্রাংশে মগ্ন । আমরা সেখানে গিয়েই হানা দিয়েছি কয়েকবার , কিন্তু  হু –হাঁ-এর বেশি উত্তর পাইনি । স্বাভাবিকভাবেই ওর জমে ক্ষীর হয়ে ওঠা প্রেমটা কেটে গেল । তারপর আস্তে আস্তে আমাদের সাথে যোগাযোগটাও । আমাদের রাস্তা যে আলাদা হয়ে গেছে, সেটা বেশ অনুভব করতে পারছিলাম । বুঝতে পারছিলাম, জীবন নামে আমাদের সামনের বিরাট সমুদ্রটায় পাড়ি দেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে অচ্যুত । ওর হাতে কম্পাস , লক্ষ্য স্থির । ঝড় আসবে , কিন্তু ও দিকভ্রষ্ট হবে না ।
        এরপর দীর্ঘদিন কোনও দেখা – সাক্ষাৎ নেই । ওর কথা প্রায় ভুলেই গেছি এবং সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ছে একটু একটু করে , এমন একটা সময়ে, হঠাৎ আমাকে এবং আরও অনেককে একইসাথে ভীষণ চমকে দিয়ে ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এল ওর নামে , সঙ্গের ছবিটার সাথেও ওর মিল আছে । গড়নটা একই আছে , কিন্তু জেল্লা বেড়েছে । শুধু মোম মসৃণ অচ্যুতের মুখে সেই চেনা গোঁফটা হাওয়া । দিব্যি অনুমান করা যায়, খাসা আছে । একসেপ্ট করার পর স্মাইলির সাথে একটা ছোট্ট মেসেজ ঢুকল – “কেমন আছিস ?” যথোচিত সম্ভাষণ পর্বের খানিকক্ষণ পরে জানা গেল, বাবু এখন আমেরিকায় থাকেন ! সে এখন এক বহুজাতিক সফটওয়্যার – হার্ডওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থার মস্ত বড় চাকুরে । ওখানকার মেয়ে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পেয়েছে । ও বছরে দু’বার করে দেশে এলে আমরা , পুরনো বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বেরোই , সঙ্গিনী- পোলাপান ছাড়া । বেশিরভাগ সময়তেই ট্রেক করতে যাই কোথাও । আমাদের মত প্রতি মুহূর্তে কী করছি, কোথায় করছি , কাদের সাথে করছি এবং কী করছিনা , সেসব লিখে বা ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস আপডেট দেওয়ার ব্যাপারে ওর কোম্পানির কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । ওতে নাকি প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার লোকেরা সমস্ত গোপন ব্যবসায়িক খবর আগাম পেয়ে যায় লোক লাগিয়ে , যাতে ব্যবসার বিরাট ক্ষতি । এ তো ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ । যাক গে যাক , আমাদের তো আর সেসবের বালাই নেই ! তাই আমরা ছবি- সহ সবিস্তারে ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখে ওকে ট্যাগ করে ঘোরার গ্রুপে পোস্ট করে দিই । ভ্রমণবৃত্তান্তের এখন হেব্বি ডিম্যান্ড । পকেটে পয়সা থাকলেই এখন উঠল ঝোলা , চলল ভোলা । আর না থাকলে, ঘরে বসে মানসভ্রমণই সই , দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো যাকে বলে । টু কে , থ্রি কে লাইক , কমেন্ট আসে আমাদের পোস্টে । আমাদের বন্ধুত্বের গল্প হাতে হাতে শেয়ার হয় । খারাপ কী । কিন্তু এমন গল্পেরও আগের একটা গল্প তো থাকে সবার জীবনে । সেটা সবাই জানেন না । জানতেও চান না । জীবনটা যে একটা উদযাপনের মাঝখান থেকে শুরু হয়না , সেটা তাঁদের জানাতেই এই গৌরচন্দ্রিকা ।








Short story

https://g.co/kgs/vwjJTa


ছোটগল্প



অধ্যবসায়ের গল্প



স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলা ছোটগল্প



কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...