Thinking aloud --- উচ্চস্বরে ভাবা । কানে, প্রায় অদৃশ্য হেডফোন গুঁজে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে চলার কথা বা মোবাইলের পর্দায় নিমগ্ন হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটার কথা বলছিনা , সেটা আলাদা রোগ । ওটা ডিজিঠ্যালা । ডিজিটালের ঠ্যালা , বলা ভাল গুঁতো । আমি বলছি এমনি এমনিই রাস্তা দিয়ে বিড়বিড় করতে করতে হাঁটা বা বাস-ট্রেন-ট্রামের সহযাত্রীর কথা । একবার শুনেছিলাম এক ভদ্রলোক বিড়বিড় করে বলছেন --- "বাড়ি ফেরার সময় কর্নফ্লেক্সটা নিয়ে ফিরতে হবে , দুধ কিনতে হবে , কেলগস... কেলগস ...!" এটা হয় কেন , মনোবিদরা বলতে পারবেন , তবে আজকাল চলাফেরার পথে এই ব্যাপারটা খুব কমন । আরেকবার এ বি পি আনন্দের একটি বিতর্কের অনুষ্ঠানে থাকার সুযোগ হয়েছিল । দেখছিলাম , একজন প্রয়াত অর্থনীতিবিদ সমানে বিড়বিড় করে যাচ্ছেন , যখন চুপ করে আছেন । ঘটনাচক্রে এই অনুষ্ঠানের কিছুদিন পরেই উনি মারা যান । আমার ব্যক্তিগত ধারণা আমাদের জীবনযাপনের চাপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াই এর কারণ । ভাবনাটা আর মনে-মাথায় জায়গায় কুলোচ্ছে না , মেমোরি কার্ড ওভারলোডেড । তাই মাথা আর মনের ভাবনাগুলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে । কাকতালীয় হলেও একটা রসিকতা করাই যায় ! মেমোরি কার্ড পরিমাপের একক হল গিগা বাইট , সংক্ষেপে জিবি । যে মেমোরি কার্ডে বুদ্ধি আর নানারকমের চিন্তা ভরা থাকে , তাকে কী বলা হবে --- বুদ্ধিজীবী ? বাঙালির বুদ্ধিজীবী হিসেবে সারা দেশে খ্যাতি বা কুখ্যাতি আছে । আমার এক বন্ধু বলে --- যার ইন্টেলেক্ট চোয়ালে আটকে থাকে , তাকেই ইন্টেলেকচুয়াল বলে ! অনেকে বলবেন , বাঙালি ভাবে বেশি , করে কম । মানে কাজ করে কম । তাই চোয়াল নিজের অজান্তেও সচল থাকে ।
আমার পর্যবেক্ষণ একটু অন্যরকম । আমার মনে হয় গড় হিসেবে , সামাজিকভাবে আমাদের জীবন অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে দিনে দিনে । আবার এর বিপরীতে 'মিনিমাল লিভিং' বা ন্যূনতম প্রয়োজনমাফিক জীবনযাপনও ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে সারা বিশ্বে । কিন্তু তাতে অভ্যস্ত হওয়া আপাতভাবে কঠিন কাজ । তাই, আপাতত যদি নিজের যে কোনও একটা দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যদি বিচার করি , তাহলেই ব্যাপারটা বেশ ভালভাবে বোঝা যায় । এই খরুচে জীবন যাপনের রসদ জোগানের তো একটা চাপ আছে , ভীষণ চাপ আছে । সেটা সবাই নিতে পারছেন না । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যতিক্রম ছাড়া শারীরচর্চা তলানিতে এসে ঠেকা । নিজেকে দিয়েই বিচার করি । আমার এখনকার বয়সে বাবা সারাদিনে যতটা হাঁটতেন শুধু , যোগ -ব্যায়াম ছাড়া , তার এক চতুর্থাংশও আমি সারাদিনে , সারা মাসে , সারা বছরে হাঁটি না । আর কে না জানে মনের সাথে শরীরের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রয়েছে । যার শরীর ভাল থাকে , সাধারণত তাঁর মনও ভাল থাকে , সুস্থ থাকে । গড় হিসেবে, এখন আমাদের শারীরচর্চার অভ্যেস তলানিতে এসে ঠেকেছে , বেড়েছে প্রাণ খুলে মনের কথা বলার লোকের অভাব । এখন , "সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে ।" সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী , বন্ধুতাটা ওপর ওপর , দেখনদারি । এসবের তো একটা ছাপ পড়ে , মনের ওপর , মগজের ওপর । আমার কাছে উচ্চস্বরে ভাবার কারণ কিছুটা এরকমই । কোনওদিন হয়ত আমাকেই দেখা গেল , রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর বিড়বিড় করে বলছি ---- ব্যাপারটা নিয়ে একটা লেখা নামিয়ে ফেলতে হবে !

মন দিয়ে কর সবে বিদ্যা উপার্জন,
উত্তরমুছুনসকল ধরে সার বিদ্যা মহাধন
এই ধন কেহ নাহি নিতে পারে কেড়ে,
যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে।
জ্ঞানের প্রদীপ শিখা নাই মনে যার
কখনো কাটেনা তার ঘোর অন্ধকার। - কার লেখা?
ঈশ্বর গুপ্ত ।
মুছুন