শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

খোলসের ভিতরে । সায়ন কাঁড়ার । সত্যিকারের ভূতের গল্প ।

 খোলসের ভিতরে

সায়ন কাঁড়ার

লিখতে বসে আজকে কিছুতেই কলমটা আমার কথা মানছে না। কি লিখবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা....মাথার মধ্যে হাজার একটা জিনিস ঘুরপাক খেলেও....গল্পের মায়াজাল কিছুতেই আর বুনতে পারছিনা। তাই ভাবছি একটা ঘটনার কথাই আজকে বলি। এই ঘটনা আমার কর্মজীবনের প্রথমদিকের। আমি তখন সদ্য বি.কম পাস করে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার কথা একদম ঝেড়ে ফেলি মাথা থেকে। পড়ার ইচ্ছা যে ছিল না তা নয়,কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় আমাদের সহায় হয় না। আমার ছোটবোন তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, ওর খুব ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন বিজ্ঞানী হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ায় ছোট থেকেই বাবা-মা কে দেখেছি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে, অনেক ভালোলাগা ভালোবাসা হাসিমুখে ত্যাগ করতে,তবে আমিই বা তাদের সন্তান হয়ে এইটুকু পারব না কেন।
বোন মেধার দিক দিয়ে আমার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে... আর আমাদের অবস্থার কথা ভেবে কোনদিন মুখ ফুটে বাড়তি কিছু চায় না। কখনো কোন বই প্রয়োজন হলে শিক্ষকদের থেকে চেয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় অংশটুকু জেরক্স করে নিত বা নোটস বানিয়ে রাখতো। যাক গে সেসব কথা এখন থাক। এই গল্প আমাকে বা আমার পরিবারকে নিয়ে নয়।
এই সময় আমার মনে হয় যদি কোনো একটা কাজ জোটাতে পারতাম তাহলে বাবা-মার পাশে হতে পারতাম ওদের একটু সাহায্য করতে পারতাম। বহু খুঁজে কাজ পেলাম শহরতলীর একটি বৃদ্ধাশ্রমে। খুব বেশি টাকা না পেলেও ওই মুহূর্তে,শুন্য হাতের চেয়ে ওই টাকার মূল্য আমার কাছে অনেক। অন্তত বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে পারবো।
অবশ্য বিশেষ পরিশ্রমের কাজ আমাকে করতে হত না। আমার কাজ ছিল এই বৃদ্ধাশ্রমের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা... বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য কি কি কাজ হচ্ছে তার দিকে নজর রাখা আর তার কোনো প্রয়োজন পড়লে তার খেয়াল রাখা।
বেশ আনন্দ সহকারে করছিলাম নিজের কাজ,বেশ একটা তৃপ্তি ছিল। সহজ-সরল বয়স্ক মানুষ গুলোর মাঝে দিব্যি সময় কেটে যেত। মানুষগুলো ভীষণ স্নেহ করতেন আমায়। ওনাদের মধ্যে কিছুজনের অতীত জীবনের কথা শুনে ভারী কষ্ট হত, ভাবতাম মানুষ এমনও হতে পারে... যে মানুষগুলো তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখায় তাদের এভাবে কি করে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে পারে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি... আমার সেই বৃদ্ধাশ্রম এর মালিকের বিষয়সম্পত্তি ছিল প্রচুর। তিনি অনেক ছোটবেলাতেই তার মাকে হারিয়েছেন,পরে বাবাকেও, পরবর্তীকালে ব্যবসা করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। উনি মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধাশ্রমে আসেন...এখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধা,শরীর-স্বাস্থ্যের আর খোঁজ নেন। বড়ো ভালো মানুষ তিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমের, প্রতিটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে সমস্ত কর্মচারী সকলেই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা ও পছন্দ করেন।
এইভাবে বেশ কয়েকবছর কেটে গেল।একদিন যখন বোনকে স্কুলে পৌছে আমি কাজে যাচ্ছি হঠাৎ নজরে পড়লো রাস্তার এক কোণে বেশ কিছু লোক জমায়েত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়া থাকায় পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গিয়েও কি ভেবে ফিরে দাঁড়ালাম। সেখানে গিয়ে দেখি এক অশীতিপর বৃদ্ধমানুষ পড়ে আছে রাস্তার পাশে... শতছিন্ন একটুকরো কাপড়পরা কঙ্কালসার এক অশরীরী প্রেতের মত শরীরে খুলিটা যেন আলগা করে বসিয়ে দিয়েছে কেউ। তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া প্রায় বুজে আসা চোখটা থেকে বিন্দু বিন্দু করে জল ঝরে পড়ছে...তাকে দেখতেই এত ভিড়।
সম্ভবত কোনো গাড়ি তাকে ধাক্কা মেরেছে। সত্যিই কি ভারি অদ্ভুত এই দুনিয়া...দুর্বলকে নিয়ে আলোচনা করতে,তার অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করতে কারো সমস্যা নেই, সমস্যা কেবল তাকে একটুখানি সাহায্য করার। ভীষন রাগ হল আজব দুনিয়ার এই আজব কান্ড কারখানা দেখে। নিজেই এগিয়ে গেলাম বৃদ্ধমানুষটিকে সাহায্য করার জন্য। কোনো ঝামেলা হবে না এই আশ্বাসে,স্থানীয় এক ব্যক্তির সাহায্যে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসতে আসতে যা বুঝলাম তা হলো..
উনি একজন হতভাগ্য পিতা। যিনি নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে 'টুবলু' মানে তার সন্তানের এক টুকরো জীর্ণ ছবি আঁকড়ে তাকে খুঁজে চলেছেন। হয়তো কোনভাবে তাঁর পরম প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার এই অবস্থা। সবকিছুই বিস্মৃত হয়েছেন তিনি.... কোথায় তার বাড়ি...কোথায় তার পরিবার...এমনকি কি বা তার নাম। শুধুমাত্র ভোলেননি তাঁর সন্তানকে,অসহায় দৃষ্টিতে জরাজীর্ণ ছবিটা আঁকড়ে অবাধ পিতৃস্নেহে 'টুবলু' কে খুঁজে চলেছে তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া ভাসা ভাসা চোখদুটো।
ফার্স্ট এইড করে দিয়ে বড়বাবু মানে বৃদ্ধাশ্রম এর মালিককে ফোন করে ঘটনাগুলো সবিস্তারে বললাম.... সবটা শুনে তিনি আমার কাজের জন্য গর্ব প্রকাশ করলেন এবং জানালেন খুব শীঘ্রই তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আসছেন। বড়বাবু যখন এলেন তখন প্রায় সন্ধ্যা। আমি ততোক্ষণে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেছি।
পরদিন ভোরবেলা ফোনের আওয়াজে আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেল।
ফোনটা নিয়ে দেখি,শিবুদা ফোন করেছে। শিবুদা,আমাদের বৃদ্ধাশ্রমের সিকিউরিটি গার্ড।
এত সকালে হঠাৎ ফোন করায় মনে হল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। আমার ধারণা যে মিথ্যে না, কয়েক মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারলাম।
কালকের সেই অশীতিপর বৃদ্ধমানুষটির জীবনাবসান ঘটেছে। ফোনটা রেখে খানিকক্ষণ চুপ করে খাটে বসে রইলাম। মনটা ভারি হয়ে উঠল...মানুষটার প্রতি বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল একটা দিনেই। কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে চটজলদি ছুটলাম বৃদ্ধাশ্রমে। ওখানে গিয়ে জানলাম মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরেই সব শেষ হয়ে যায়... সকালে শিবুদা এসে দেখে সব শেষ। আমরা সকলে মিলেই সেই কঙ্কালসার জীর্ণ শরীরটা বয়ে নিয়ে গেলাম শেষকৃত্যের উদ্দেশ্যে। শুনলাম বড়বাবু জানিয়েছেন মুখাগ্নি তিনি করবেন.......
কি ভাবছেন!!!!!!
এ তো একটা সামান্য ঘটনা... পথে-ঘাটে এরকম ঘটনা তো প্রত্যহই ঘটে থাকে... এইরকম অসহায় মানুষদের রাস্তাঘাটে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই...তাই না...
এতদূর সবটা হয়তো তাই ছিল। কিন্তু এরপর যেটা আপনাদের বলব সেটা হয়তো এতটা সামান্য সাধারণ না....
এই ঘটনার পরের দিন ওই ঘরটা, মানে যেই ঘরে ওই বৃদ্ধ ছিলেন,সেই ঘরটা পরিষ্কার করতে যাই।
অবশ্য তিনি ছিলেন বলা ভুল,এক রাতের অতিথি হয়ে ওই ঘরে এসেছিলেন পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে।
বৃদ্ধাশ্রম এর বয়স্ক মানুষরা মিলে ঠিক করেছিল, ওই ঘরেই মানুষটার আত্মার শান্তি কামনায় বাকি আচার পালন করবে। ঘরটা পরিষ্কার করতে করতে খাটের তলে আচমকা একটা কাগজের টুকরো খুঁজে পাই।
না কাগজ ঠিক না!!!
একটা একফালি অর্ধেক ছেঁড়া কাগজে প্রায় ঝাপসা হয়ে আসা একজন কিশোরের ছবি।
এই ছবি আমার অপরিচিত নয়।
এই ছবি ওই বৃদ্ধমানুষটির একমাত্র সম্বল ছিল।
তাঁর ছেলে 'টুবলুর' ছবি।
ছবিটা হাতে তুলে নিতে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। একফালি কাগজটার ঠিক পিছনে ত্যারা বাঁকা ভাবে লেখা আছে...
ধন্যবাদ..!!!!
এটা কে লিখল..!!!!
কালকে তো চোখে পড়েনি..!!!!
তারপর ভাবলাম হয়ত উন্মাদ বৃদ্ধকে শান্ত করতে তার অনুরোধে এই বৃদ্ধাশ্রমের অন্য কোন বৃদ্ধ এটা লিখেছেন। এ নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামালাম না।
এখানে কাজ করতে করতেই, আমি বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারভিউ দিতাম, ভালো কোন চাকরির আশায়, যাতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পারি।
এই ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ পাস করার চিঠি পাই। চাকরিটা হয়ে যাওয়াতে বৃদ্ধাশ্রমের কাজটা ছেড়ে দিলাম। তারপর ব্যস্ত হয়ে গেলাম নিজের নতুন চাকরিজীবনে।
কয়েকদিন আগে শিবুদার সঙ্গে দেখা হয়। কুশল সংবাদ বিনিময়ের পর,কাছেই একটা চায়ের দোকানে বসে শিবুদাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-"আচ্ছা শিবুদা বৃদ্ধাশ্রমের সবাই কেমন আছে গো... বড়বাবু কেমন আছেন... উনি আশ্রমে আসেন এখন...."
উত্তরে শিবুদা যা বলল তাতে মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাসের হিসেব পুরো ঘেঁটে গেল।
-"সবাই ভালো আছেরে ভাই। তুইতো কাজটা ছেড়ে দিলি, তারপর যে কি সব ঘটে গেল জানিস তো...."
-"মানে.....!!!!????"
কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলাম।
-"ওই বৃদ্ধ মানুষটাকে তোর মনে আছে... যাকে তুই আহত অবস্থায় রাস্তা থেকে ধরে এনেছিলি....."
-"হ্যাঁ,মনে থাকবে না কেন। বড্ড অসহায় ছিল মানুষটা। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে একটা ছবি আঁকড়ে ছেলেকে....."
-"উনি বড়বাবুর বাবা...."
আমার কথা শেষ করার আগেই শিবুদা বলে উঠলো।
-"কি বলছ টা কি শিবুদা...!!!!!"
ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম শিবুদার দিকে।
-"শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যিরে ভাই....আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি.... উনি নিজে পুলিশের কাছে সবটা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছেন..."
এতোটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শিবুদার বুক চিরে।
একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগল,
-"উনার বাবার বাড়ি বীরভূমের কোন এক গ্রামে। মানে বড়বাবুর আসল নিবাস যেখানে ছিল,সেখানে নাকি কি সব জমিজমা ছিল। পৈত্রিক জমি-বাড়ি, বাপ-ঠাকুরদার স্মৃতি বলে ওগুলো বড়বাবুর বাবা বিক্রি করতে চাননি। এদিকে ব্যবসা করতে চাওয়া বড়বাবুর পুঁজির প্রয়োজন। শত চেষ্টা করেও যখন কোন পুঁজির জোগাড় করে উঠতে পারেননা তখন বড়বাবুর চোখ দিয়ে পড়ে সেই জমির দিকে। বারবার করে সেটা বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করার পর তাঁর বাবা রাজি না হলে বাবা-ছেলের বিবাদ বাধে। এই বিবাদের কোন মীমাংসা না হওয়াতে... এক রাতে রাগের মাথায় বাবার মাথায় আঘাত করে তাকে বেহুশ করে অতি সন্তর্পনে তুলে দেয় কোনো এক ট্রেনে। প্রতিবেশীদের জানায় বাবাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে নিজের কাছে। আর তারপর সব জমিজমা আত্মসাৎ করে সেগুলো বিক্রি করে চলে আসে কলকাতায়। হয়তো সেইদিনের আঘাতেই ওই বৃদ্ধ ওনার সকল স্মৃতিশক্তি বিস্মৃত হয়েছিলেন......"
নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওইরকম একটা দেবতুল্য মানুষের আড়ালে এমন ভয়ঙ্কর শয়তান লুকিয়ে থাকতে পারে সত্যি কল্পনা করতে পারছিলাম না। কৌতুহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,
-"বড়বাবু তাহলে কোথায় এখন..!!??"
খানিকক্ষণ নিস্পলক দৃষ্টিতে দূরের দিকে তাকিয়ে, গলার আওয়াজ খাটো করে শিবুদা বললো,
-"জেলে.... উনার স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করেই ওনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরবর্তীকালে আদালত ওনাকে কারাদণ্ড দেয়।
লোকটা যে কি ভয়ঙ্কর চিন্তা করতে পারবি না... জানিস লোকটা এও বলেছে যে ঐদিন রাতে আমার ছুটির সুযোগ নিয়ে মাঝরাতে উনি বৃদ্ধ বাপকে খুন করতে এসেছিলেন.... এতদিন পরে হঠাৎ বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে যান বড়বাবু, যদিও তিনি সব বিস্মৃত হয়েছেন কিন্তু টুবলুকে ভোলেননি... যদি উনি কোন ভাবে সব কিছু ফাঁস করে দেয় সেই ভয়ে বাবাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বুড়ো হার্টফেল করে মারা গিয়েছিলেন। তাই প্রিয় ছেলের হাতে মরতে হলো না অন্তত।"
-"কিন্তু বড়বাবু এতকিছুর পর আচমকা এভাবে সবটা স্বীকার করলেন কেন.... এত নৃশংস যে মানুষটা হতে পারে... সে...."
আনমনে বলে বসলাম।
-"জানিনা রে।
হতে পারে বিবেক দংশন।
জানিস উনি একটা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে উনার সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডই ওনার বউ বাচ্চার ভরণপোষণ, এবং বাচ্চাটির পড়াশোনার খরচ চালাবে।
মাঝেমধ্যে ভাবলেই লজ্জা লাগে এরকম একটা জানোয়ারের জন্য কাজ করেছি।
ছিঃ ছিঃ!!"
ঝড়ের গতিতে বলে গিয়ে ধিক্কারে ফেটে পড়ল শিবুদা।
এরপর আরো কিছু কথাবার্তা সেরে এক একবার চা খেয়ে যে যার নিজের গন্তব্যে রওনা দিলাম।
সেদিন বাড়ি ফিরে এসে ড্রয়ার খুলে ওই হতভাগ্য বাবার অপদার্থ সন্তান 'টুবলুর' ফটোটা দেখি। তার পেছনের সেই আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা 'ধন্যবাদ'......
ছবিটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা এই ধন্যবাদ টা কে বৃদ্ধর নিছক পাগলামো, নাকি বৃদ্ধ সত্যিই কারো উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। শেষবারের মতো ছেলের সাথে সাক্ষাত করানোর জন্য কি তার উদ্দেশ্যেই এই কৃতজ্ঞতা....
বসে বসে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। আচ্ছা তিনি কি সত্যিই সব বিস্মৃত হয়েছিলেন,না কি.... আর সেদিন রাতেই ওই চার দেয়ালের মধ্যে কি ঘটেছিল....বড়বাবু ই বা কেন হঠাৎ সব স্বীকার করলেন.... বিবেক দংশন না কি ভয়...!!!!!!
আর বড়বাবুর মনে প্রথম থেকেই কি কোন আত্মগ্লানি ছিল। সম্পত্তির লোভে বাবাকে আঘাত করে সব আত্মসাৎ করলেও, তার মনের কোন অংশে কি কোন অপরাধবোধ লুকিয়ে ছিল। কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না, যে মানুষটা নিজের বাবার প্রতি এমন অবিচার করে, সেই একই মানুষ কিনা বৃদ্ধাশ্রমে অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এত যত্ন নিত।
সত্যিই মানুষের চরিত্র বোঝা বড়ই কঠিন। যে ছেলেকে, মানুষটা এত ভালোবাসলো, এমনকি স্মৃতি হারানোর পরও, সবকিছু ভুলে গেলেও ছেলেকে খুঁজে গেল সারা জীবন। সেই ছেলে বাবার উপর আঘাত করলো, এমনকি এত বছর পর অসহায় অবস্থায় বাবাকে দেখেও, তার মনে প্রতিহিংসা জাগল, সেই মানুষটা হঠাৎ কি করে আত্মগ্লানিতে ভুগে সবটা স্বীকার করলো।
সত্যিই কি সবটা এতটাই সরল। কোন এক অজানা কারণে যেন, আমার মন সবকিছু সরলভাবে মানতে পারছিল না।
ছবিটা হাতে নিয়ে একমনে এই সবই ভাবছিলাম,আচমকা একটা আওয়াজে হুঁশ ফিরলো। জানলা দরজাগুলো তীব্র হাওয়ার দাপটে ঝনঝন করছিল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আকাশ কালো করে ঝড় উঠেছে। অন্ধকার চিরে গর্জে উঠছে বিদ্যুৎ। ফটোটা টেবিলের উপর রেখে উঠে গেলাম জানলা দরজা জানলা বন্ধ করতে। তীব্র হাওয়াতে পর্দাগুলো উড়ছিল, হঠাৎই যেন একটা ঠান্ডা দমকা হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল ছবিটাকে, কানের কাছে যেনএকটা অস্পষ্ট ফিসফিস শুনতে পেলাম,
-"এত ভেবো না....সব প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যায়...স্বাভাবিক ভাবনার বাইরে যে অনেক কিছুই থাকে...."

httpssankhamanigoswami.xyz



ভয়ংকর ভূতের গল্প,
ছোটদের ভূতের গল্প,
 ভূতের গল্প,
বিখ্যাত লেখকদের ভূতের গল্প,
সত্যিকারের ভূতের গল্প,
বড় ভূতের গল্প,
একটা বড় ভূতের গল্প,
bengali Ghost story
Literary genre


সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ভৌতিক জায়গা, যা নিয়ে গা ছমছমে গালগল্প চলে

আধুনিক পৃথিবী যেভাবে ভূত-প্রেতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে চলে, সেখানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন অব্দি ছড়িয়ে থাকা শত শত ভুতুড়ে জায়গা কৌতুহল জাগায় বৈকি। তবে বাস্তবে হয়তো কখনো কখনো জনশ্রুতিতেই গড়ে ওঠে এমন অনেক ভূতুড়ে বাড়ি বা জায়গা। কোনোটায় বা থাকে অনুদঘাটিত কোনো রহস্য, যা এই জায়গাগুলোকে ঘিরে তৈরি করে ভূতুড়ে আবহ। অনেক হয়েছে বাইরের দেশের ভৌতিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা।বাংলাদেশের নানা প্রান্তেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ভৌতিক জায়গা, যা নিয়ে গা ছমছমে গালগল্প চলে এই স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেটের সময়েও। এগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা সবাই জানেন। কিন্তু এসব পড়তে কার না ভালো লাগে??

গানস অফ বরিশাল
গুগলে লেখে সার্চ দিলেই পাবেন। ব্রিটিশরা বরিশালে আসার সময় নাম ছিল বাকেরগঞ্জ। বাকেরগঞ্জের ততকালীন ব্রিটিশ সিভিল সার্জন প্রথম ঘটনাটা লেখেন। বর্ষা আসার আগে আগে গভীর সাগরের দিক থেকে রহস্যময় কামান দাগার আওয়াজ আসতো। ব্রিটিশরা সাগরে জলদস্যু ভেবে খোজা খুজি করেও রহস্যভেদ করতে পারে নাই।

বগা লেক
কেওকারাডং এর আগে রুপসী বগা লেক। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। বমদের রুপকথা অনুযায়ী অনেক আগে এই পাহাড়ে এক ড্রাগন বাস করতো। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে খেয়ে ফেলতো। গ্রামের লোকেরা ড্রাগনকে হত্যা করলে তার মুখ থেকে আগুন আর প্রচন্ড শব্দ হয়ে পাহাড় বিস্ফোরিত হয়। রুপকথার ধরন শুনে মনে হয়, এটা একটা আগ্নেয়গীরির অগ্ন্যুতপাত। উপজেলা পরিষদের লাগানো সাইনবোর্ডে সরকারী ভাবে এই রহস্যের কথা লেখা। এখনো এর গভীরতা কেউ বলতে পারে না। ইকো মিটারে ১৫০+ পাওয়া গেছে। প্রতিবছর রহস্যময় ভাবে বগা লেকের পানির রঙ কয়েকবার পালটে যায়। যদিও কোন ঝর্না নেই তবুও লেকের পানি চেঞ্জ হলে আশপাশের লেকের পানিও চেঞ্জ হয়। হয়তো আন্ডার গ্রাউন্ড রিভার থাকতে পারে। রহস্য ভেদ হয়নি এখনো।

চিকনকালা (নিফিউ পাড়া)
মুরং গ্রামটা বাংলাদেশ-বার্মা নো ম্যানস ল্যান্ডে। এখানে মৃত চিতাবাঘের ছাল দেখা গিয়েছে। দিনের বেলাতেই বার্কিং ডিয়ার আর ভাল্লুকের ডাক শুনা গিয়েছে। কাছের মুরং গ্রাম চিকনকালার লোকেরা বলে প্রতিবছর নাকি (দিনটা নির্দিষ্ট না) হঠাত কোন জানান না দিয়ে বনের ভিতর রহস্যময় ধুপ ধাপ আওয়াজ আসে। শিকারীরা আওয়াজটা শুনলেই সবাই দৌড়ে বন থেকে পালিয়ে আসে। কিন্তু প্রতিবছরেই কয়েকজন পিছে পড়ে যায়। যারা পিছে পড়ে তারা আর ফিরে আসে না। কয়েকদিন পরে বনে তাদের মৃত দেহ পাওয়া যায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু চেহারায় ভয়ঙ্কর আতঙ্কের ছাপ।

চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার আলিয়াপুর নামক গ্রামে নাকি প্রতি আমাবস্যায় রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত একদল কুকুর দলবেঁধে গ্রামটি ঘিরে চক্কর দেয়। । অনেকেই সেই কুকুরের দলকে দেখতে পেয়েছেন। । আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তারা শুধুমাত্র আমাবস্যার রাতেই উপস্থিত হয় এবং সারা মাসে তাদের আর দেখা যায় না। । কয়েক যুবক মিলে একবার রাত করে তাদের দেখার জন্য প্রস্তুতি নেয়। । তাদের মাঝে ২ জন কুকুরের কামড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। । যুবকদের প্রায় সকলেই একই স্বীকারউক্তি দেয় যে, সেই সব কুকুরগুলো কালচে বর্ণের ছিলো, কারন অন্ধকারে তাদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। । তারা একটা ছন্দ মিলিয়ে এক লাইনে হাঁটছিলো এবং তাদের প্রত্যেকের চোখ থেকেই এক প্রকার নীলচে আভা বের হচ্ছিল।

পুরান ঢাকা
পুরান ঢাকাতে কিছু মিষ্টির দোকান আছে যেখান থেকে কিছু লোক কয়েকদিন পর পর এসে রাত ৮টার দিকে ১০-১২ কেজি মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। । তারা যেই দোকানে ঢুকে সেই দোকানের মালিককে লাইট নিভিয়ে দিতে বলে। । অন্ধকারে তারা আসে, অন্ধকারে চলে যায়। । এই লোকগুলো আকারে অনেক লম্বা এবং তাদের চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখতে পারে নি। । ধারণা করা হয়, এরা জীন প্রজাতি। । পুরান ঢাকার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানের লোকেরাই উনাদের কথা জানেন।

পুরান ঢাকার ১টা গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে নাকি রাত ১২টার পর একটা বউকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। । যার পড়নে থাকে লাল পার দেয়া একটা হলুদ শাড়ি। । সে কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায় তা কেউ আজ পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে নি। । অনেকেই নাকি বউটাকে দেখেছে।

লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লার নিচ দিয়ে অনেক গুলো সুড়ঙ্গ আছে, যেগুলো জমিদার আমলে করা। । জমিদাররা বিপদ দেখলে সেইসব পথে পালিয়ে যেতো। । তেমনই একটা সুড়ঙ্গ আছে, যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না। । মানে, সে আর ফিরে আসে না। । পরীক্ষা করার জন্য একবার ২টা কুকুরকে চেইনে বেঁধে সেই সুড়ঙ্গে নামানো হয়েছিলো। । চেইন ফেরত আসে কিন্তু কুকুর দুটো ফিরে আসে নি।

গদ্রবঙ্গা
বাংলাদেশের সাঁওতাল উপজাতিরা অনেক দেব/দেবীর পুজা করে। । এই সব দেব/দেবীর মাঝে কিছু আছে যারা অপদেবতা। । তেমনি এক ধরনের অপদেবতার পুজা করে সাঁওতালরা যাদের "গদ্রবঙ্গা" বলা হয়। । এইসব দেবতারা সাইজে ২-৩ ফিট হয়। । চেহারাও ছোট বাচ্চাদের মতো। । ওরা বিভিন্ন সাঁওতাল পরিবারেও পালিত হয়ে থাকে। ওদেরকে লালন, পালন, আর পুজা দেয়ার কারন হলো, এইসব দেবতারা যেইসব পরিবারে পালিত হয় তাদেরকে অনেক ধনী করে দেয়। । এইসব দেবতারা অন্য বাড়িঘর থেকে স্বর্ণ চুরি করে তা নিজ পালিত ঘরের মালিককে দেয়। । তবে, এর বিনিময়ে তারা যা দাবি করে তা খুবই ভয়ঙ্কর। । স্বর্ণ দেয়ার বদলে এইসব অপদেবতারা যে বাড়িতে পালিত হয়, সেই বাড়ির মালিকের ছোট ছোট ছেলে সন্তানগুলোকে চায়। । তারা এইসব ছোট ছেলেদেরকে মেরে ফেলে (কথিত আছে, খেয়ে ফেলে, কারন সেইসব ছোট বাচ্চাদের আর পাওয়া যায় না)।   আর বাড়ির মালিক যদি তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তাহলে "গদ্রবঙ্গা" রা ঐ পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। । এসব জানার পরও এখনো সাঁওতাল অনেক পরিবারই ধনী হবার লোভে এইসব অপদেবতা পালন করে আসছে।

তেজগাঁও
ঢাকার তেজগাঁও এর মনিপুরীপাড়া এলাকায় একটা পুরনো খ্রিস্টান বাড়ি আছে। । এই বাড়িতে ভাড়া থাকা প্রায় সব ভাড়াটিয়াই বিভিন্ন অদ্ভুত বা ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার সম্মুখীন হন। । অনেক সময়ই গভীর রাতে(রাত ১-২টার দিকে) বাড়িটার নিচের উঠোনের দোলনায় কাউকে দুলতে দেখা যায়। । ঘটনাটি দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। । এছাড়াও বাড়ির ছাদে অনেকসময় নাকি গভীর রাতে কারা হইচই করে। । কিন্তু তৎক্ষণাৎ ছাদে গেলেও কাউকে দেখা যায় না। । এই বাড়িটিকে ঘিরে লোক মনে কৌতূহলের কোনো শেষ নেই। । শোনা যায়, উক্ত বাড়িওয়ালার মেয়ে প্রায় ১৬ বছর আগে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে মারা যায়। । মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো। । এই আত্মহত্যার পর থেকেই এমন অদ্ভুতুড়ে কার্যকলাপ শুরু হয়।
 

মিরপুর ইনডোর স্টোডিয়াম

মিরপুর ইনডোর স্টোডিয়ামে আগে যখন পুকুর ছিল তখন যে ২/৩বছর পর পর একজন করে মানুষ নিত। শেষ মানুষ টার কথাই আমার মনে আছে আমি তখন খুব ছোট, তখন একদিন দুপুর বেলা ৬নং সেকশনের নান্টু নামে একজন পুকুরে গোসল করতে নামে প্রতিদিনের মত কিন্তূ সে আর উঠে আসে না,পুকুর পারে তার সেন্ডেল লুন্গি গামছা সব পরে থাকে। তারপর কত ডুবুরি কত মানুষ পুকুরে তন্ন তন্ন করে খুজল কিন্তূ নান্টু মিয়াকে আর খুজে পেলনা। তারপর ২৪ ঘন্টা পর তার লাশ ভেসে উঠছিল কোনরকম কিছুই হয়ছিলনা লাশের শরিরে। সবাই বলছিল শিকলে নিয়ে গেছিল। স্টোডিয়াম বানাবার সময়ও নাকি অনেক সমস্যা হয়েছিল বলে শুনা গিয়েছে।

ফয়েসলেক (চট্টগ্রাম)

এখানে একটি কালো ছায়া দেখতে পাওয়া যায় বলে লোকমুখে শোনা যায়। আবার অনেকে সাদা শাড়িতে খোলা চুলে একটি নারীকেও প্রায়ই ঘোরাফেরা করতে দেখতে পান বলে জানিয়েছেন।


httpssankhamanigoswami.xyz



ভৌতিক স্থান বাংলাদেশ
ভৌতিক স্থান সমূহ
বাংলাদেশের ভৌতিক স্থান
বাংলাদেশের ভৌতিক জায়গা
চট্টগ্রামের ভৌতিক জায়গা

ভৌতিক ঘটনা কি
ভৌতিক অর্থ

গানস অব বরিশাল








ইয়াড্ডো বাগান । নিউ ইয়র্কের ভুতুড়ে বাগান যা আপনার মেরুদণ্ডে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দেবে । ভুতুড়ে বাগানের গল্প

 নিউ ইয়র্কের ভুতুড়ে বাগান যা আপনার মেরুদণ্ডে শিহরণ পাঠাবে

নিউইয়র্কের পতনের মরসুমের আগমনের সাথে সাথে শীতল আবহাওয়া, কুঁচকে যাওয়া পাতা এবং প্রায়শই অক্টোবর মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভয়ঙ্কর কম্পন আসে। আমাদের রাজ্য জুড়ে আপনি প্রচুর দর্শনীয় আকর্ষণ খুঁজে পেতে পারেন যা আপনার ঘাড়ের পিছনে চুল বাড়াবে, তবে আপনি যদি এমন কোনও জায়গায় যেতে চান যা আরও বন্ধুত্বপূর্ণ আত্মার আবাসস্থল, তারপরে আপস্টেটে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে যা ভূতে ভরা যা আপনি দেখতে আগ্রহী হতে পারেন তাহলে লেখাটি পড়তে থাকুন।


এই অনিশ্চিত সময়ে, অনুগ্রহ করে নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখুন এবং পরবর্তী তারিখে দেখার জন্য আপনার তালিকায় গন্তব্য যোগ করার কথা বিবেচনা করুন।

দিনের বেলা দেখার মতো একটি চমৎকার বাগান, আর রাতে সারাতোগার ইয়াড্ডো আত্মায় পূর্ণ একটি জায়গায় পরিণত হয়।


ক্লেয়ার হোয়াইটহাউস

উত্তরপথে প্রস্থান 14 এর ঠিক দূরে, ইয়াডডো হল একটি বাগান যা আপনি ইউরোপের কোথাও দেখতে পাবেন না। এটি একটি অত্যাশ্চর্য জায়গা যেখানে আপনি প্রায়শই স্থানীয়দের ফটোশুটের জন্য এবং এর অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখতে পাবেন, বাগানটিকে ভূতুড়ে বলে শুনে অনেকেই প্রায়ই অবাক হন।

আপনি যে এলাকাটির কথা সবচেয়ে বেশি শুনবেন সেখানে আপনি চারটি মার্বেল মূর্তি খুঁজে পাবেন, যা চারটি ঋতু নামে পরিচিত।


ইয়াদ্দো গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশন

কে জানত যে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত্কাল এবং শীতকালে এমন ভয়ঙ্কর পরিবেশ থাকতে পারে? চারটি মার্বেল মূর্তি একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানকার সম্পত্তিতে রয়েছে, যারা তাদের কাছাকাছি যায় তাদের জন্য ক্রমাগত ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।


যদিও প্রত্যেকের নিজস্ব ধারণা আছে, তবু অনেক লোক বিশ্বাস করে যে তারা চার ঋতুর চারপাশে যে আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করে তা ট্রাস্ক শিশুদের।


টমাস কামিন্স

আপনি যদি ইয়াডোর ইতিহাসের সাথে অপরিচিত না হন তবে জানাই, 1881 সালে এস্টেট কেনার পর স্পেন্সার ট্রাস্ক তার স্ত্রীর জন্মদিনের উপহার হিসাবে বাগানটি তৈরি করেছিলেন। এই দম্পতির চারটি সন্তান ছিল যারা শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় কিশোর বয়সে পৌঁছানোর আগেই মারা গিয়েছিল। . যারা আজ চারটি মূর্তির কাছাকাছি যায় তারা দাবি করে যে তারা যে আত্মা অনুভব করে তা শিশুদেরই, অনেককে বিশ্বাস করে যে ট্রাস্ক শিশুরা এখনও সম্পত্তির চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বাগান জুড়ে অন্যান্য এলাকাগুলিকে ভূতুড়ে বলা হয়, অনেকে অনুমান করে যে তারা যে অলৌকিক অস্তিত্ব অনুভব করে সেগুলি এডগার অ্যালান পোয়ের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের।


ম্যাট জিগিন্স

ইয়াদ্দো বছরের পর বছর ধরে শিল্পীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে, সব জায়গা থেকে সৃজনশীল মনকে আকর্ষণ করছে। কিন্তু কিছু লোক যা বুঝতে পারে না তা হল যে, ট্রাস্কের সম্পত্তি কেনার আগে, এডগার অ্যালান পো এখানে একটি ছোট শেড দখল করেছিলেন বলে জানা গেছে। সম্ভবত তিনি খুবই খুশি যে আজও Yaddo এ তাঁর উপস্থিতি অনুভূত হয় ।

29শে অক্টোবর থেকে শুক্রবার এবং রবিবার বিকাল 5টা পর্যন্ত এঁরা ঘোস্ট ট্যুর অফার করেন, যারা ইয়াডোর আত্মা সম্পর্কে আগ্রহী তারা নিজের জন্য ভুতুড়ে বাগানের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।


ইয়াদ্দো গার্ডেন অ্যাসোসিয়েশন

আপনি যদি অন্য কোনো সময়ে বাগানে যান তবে এটি সমস্ত দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে, তবে যে অতিথিরা একটি গাইডেড ঘোস্ট ট্যুর নিতে আগ্রহী তাদের $10 ডলার দিতে হবে (যদি না আপনার বয়স 12 বছর বা তার কম হয়)। এক ঘন্টা স্থায়ী, আপনি বাগানের চারপাশে ঘুরতে পারবেন এবং এর চিত্তাকর্ষক কিন্তু ভুতুড়ে ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানবেন।


ইয়াড্ডো এবং তাদের ঘোস্ট ট্যুর সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে518-584-0746 নম্বরে কল করুন।

আপনি কি কখনও ইয়াদ্দোতে ভূত সফর করেছেন বা করবেন ?  

httpssankhamanigoswami.xyz

ভৌতিক স্থান , ভৌতিক স্থান নিউইয়র্ক, ভুতুড়ে বাগানের গল্প,ভৌতিক ঘটনা কি, ভৌতিক অভিজ্ঞতা,ভৌতিক অর্থ, সত্যি ভুতের গল্প, কিছু ভূতের ঘটনা,ভূতের কিছু সত্য ঘটনা,আমার ভূতের ঘটনা




রবিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২

মমিফিকেশন- মিশরে কিভাবে মমি বানানো হত? বীর চৌধুরী

"মমিফিকেশন- মিশরে কিভাবে মমি বানানো হত?"

- মিশর নামটা শুনলেই যেটা সবচেয়ে আগে মাথায় আসে তা হল "মমি"। ছোটবেলায় সিনেমায় দেখতাম মমিদের ভুত হিসেবে দেখানো হত, খুব ভয়ও লাগত ওরকম বীভৎস চেহারা বা রুপ দেখে। তারপর আরেকটু বড় যখন হলাম তখন জানলাম মমি হল আসলে মিশরের রাজপরিবারের কোন মৃত লোককে সহস্র বছর ধরে সংরক্ষন করে রাখা, মানে যাতে সেই মৃত শরীর কঙ্কাল না হয়ে যায়। তখন মনে প্রশ্ন জাগল যে কিভাবে কোন মৃত শরীরকে কয়েক হাজার সাল ধরে সংরক্ষন করা যায়? আর কেনই বা করা হতো!! তারপর এই নিয়ে পড়াশুনো করতে শুরু করলাম, আর জানলাম মমিফিকেশন বা মমি বানানোর সেই দুর্দান্ত প্রক্রিয়ার ব্যাপারে। আর মমি কেন করা হত সেই ব্যাপারে পৌরানিক অনেক কাহিনীও জানলাম। আজ আমরা এই লেখায় মমিফিকেশন ও মমি করার সমস্ত মাইথোলজিকাল কারন সম্পর্কে জানব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক:-

*** মমিফিকেশন এর ব্যাপারে জানার আগে চলুন জেনে নি এই মমির উৎপত্তির ব্যাপারে যত পৌরানিক গল্প জড়িত আছে সেগুলো সম্পর্কে --

- মিশর পুরানের একদম প্রথমদিকে ওসাইরিস, আইসিস ও সেথ নামের তিন দেবদেবী ছিলেন। তারা ভাইবোনও ছিলেন। দেবতা ও মিশরের সম্রাট ওসাইরিস বিয়ে করেন তার বোন আইসিসকে, এদিকে ভাই সেথ যিনি ছিলেন ধ্বংসের দেবতা, তিনি ওসাইরিসকে মারতে চাইতেন। একদিন ওসাইরিসকে চালাকি করে মেরে তিনি বিয়াল্লিশটা টুকরো করে সমগ্র মিশরে। দেবী আইসিস সেই টুকরোগুলো একটা বাজপাখির রুপ নিয়ে খুঁজে খুঁজে বার করে এক একটা করে জোড়া লাগালেন। যদিও ওসাইরিসের লিঙ্গ পাওয়া গেলনা, সে জায়গায় সোনার লিঙ্গ বানালেন আইসিস। দেহ তো প্রতিস্থাপন হল কিন্তু প্রানসঞ্চার কিভাবে হবে? এগিয়ে এলেন নরক ও মৃত্যুর দেবতা আনুবিস, ঠিক হল আনুবিসই ওসাইরিসের দেহের সংরক্ষন করে তাতে প্রান ফিরিয়ে আনবেন। মিশর ইতিহাসের সর্বপ্রথম মমি বানানো হল দেবতা ওসাইরিসের। তারপর ওসাইরিসের পুনর্জন্ম হল। এরপর ওসাইরিস আর আইসিসের এক পুত্র জন্মায় যার নাম হোরাস। এই হোরাস সেথের বিরুদ্ধে তার বাবার প্রতি হওয়া অন্যায়ের বদলা নেয়, যা ছিল মিশর পুরানের সর্বপ্রথম মহাযুদ্ধ। সেই গল্প অন্য একদিন শোনাব তোমাদের। যাইহোক তো, আনুবিসের এর পরে নতুন পরিচয় হল, তার নাম হল মমিফিকেশনের দেবতা। ওসাইরিস নতুন জীবন পেয়ে পাতাললোকে রাজত্ব করতে চলে গেলেন, তিনি হলেন মৃত্যুর পরের জগতের দেবতা। এই ছিল মমি বানানোর পিছনের পৌরানিক গল্প। যাইহোক, পুরান তো মানুষই বানিয়েছে, আর সেটা তো শুধু একটা গল্পই, কিন্তু এই গল্প বাস্তবে পরিনতি পেয়েছিল। অর্থাৎ মমিফিকেশন মিশরে চালু হয়েছিল।
মমি বানানোর পিছনে প্রাচীন মিশরের মানুষদের বেশ কিছু বিশ্বাস ছিল। যেমন তারা মনে করত মৃত্যুই জীবনের শেষ নয়, মৃত্যুর পরেও আরেকটা জগত থাকে যেখানে আত্মারা জীবিতদের মতই জীবনযাপন করে। তার মমি বানানোর সময় তারা কফিনে জল, খাবার, সাজগোজের জিনিস, পোষাক, মুদ্রা সবই রাখত। আত্মা নিয়ে তাদের মনে প্রচুর বিশ্বাস ছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রধান যে বিশ্বাসটা কাজ করত তা হল, মিশরীয়রা মানতো যে মানুষের শরীরের ভিতরে যে আত্মাটা আছে তার নাম "কা", এই কা এর জন্যেই মানুষ বেঁচে থাকে। তাই মৃত্যুর পরেও যদি কা-কে বাচিয়ে রাখতে হয় তাহলে শরীরটাকেও সতেজ রাখতে হবে, অর্থাৎ সংরক্ষন করতে হবে। এই বিশ্বাস থেকেই মমিফিকেশনের জন্ম হয়। এরপর মিশরে চালু হয় মমি বানানোর প্রক্রিয়া। এবার সেই পয়েন্টে যাব আমরা--

•• মমিফিকেশনঃ- মিশর খুবই শুষ্ক দেশ। মমিফিকেশন চালু হওয়ার আগে তারা মৃতদেহকে বালির নীচে কবর দিত। বালির নীচে রাখার ফলে বডিগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত কিন্তু পচতো না। এভাবে তারা মৃতদেহ সংরক্ষন করত। কিন্তু এই প্রক্রিয়াতে মিশরের ফ্যারাওরা খুশি ছিলেন না। তারা মনে করতেন যে তাদের কবর হবে সাধারন মানুষের থেকে অনেক স্পেশাল ভাবে, কারন তারা রাজপরিবারের। এই ভাবনা থেকেই ফ্যারাওদের জন্যে সমাধি বানানোর ব্যবস্থা শুরু হল। কিন্তু বালির নীচে যেমন বডি পচেনা, সমাধিতেও তো সেরকম ব্যবস্থা করতে হবে নইলে সংরক্ষন কিভাবে হবে? এদিকে ব্যাকটেরিয়া থেকেও বডিকে রক্ষা করতে হবে। এই নিয়ে পন্ডিতরা ভাবতে বসল। অনেক বছর ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে সমাধিকে উন্নত না করে মৃতদেহগুলিকে পচনশীল হওয়া থেকে আটকাতে হবে। তবেই সংরক্ষন সম্ভব হবে। এই চিন্তা থেকেই মমিফিকেশন পদ্ধতির জন্ম হল। আস্তে আস্তে সেটাকে উন্নত করতে বহু বছর আরো সময় লাগল। এরপর মিশরীয়রা মমিফিকেশন পদ্ধতি আস্তে আস্তে রপ্ত করে ফেললো।

** "ফাদার অফ হিস্ট্রি" পন্ডিত হেরোডটাসের লেখাতে এই মমিফিকেশন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। তিনি লিখেছিলেন এই মমিফিকেশন যারা জানত তাদের সমাজে সম্মান ছিল প্রচুর, এবং এই মমি বানানোর কাজটা করার জন্যে অনেক ওয়ার্কশপও বানানো হয়েছিল। তবে প্রথমদিকে এই মমি বানানো শিখতে মিশরীয়দের কালঘাম ছুটে গেছিল। কারন একদম প্রথমে তাদের মানুষের শরীর নিয়ে অত জ্ঞ্যান ছিল না। তারা সিম্পলি মৃতদেহগুলিকে পাটের কাপড়কে রজন নামে এক আঠালো গাছের রস দিয়ে ভিজিয়ে তা দিয়ে বডিটাকে ভালভাবে মুড়িয়ে রাখতেন। কিন্তু পচন আটকাতে এই পদ্ধতি অসক্ষম হয়েছিল। কাপড়ের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া থেকেই যেত, যার ফলে বডিটা কঙ্কালে পরিনত হত। এরপর মিশরের পন্ডিতরা আরো পড়াশুনা করা শুরু করে। অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পর তারা বোঝে যে মৃতদেহগুলি আসলে পচে না, পচে যায় বডির ভেতরে থাকা অঙ্গগুলি। তাই বডিকে না পচিয়ে সংরক্ষন করতে হলে খুব সাবধানভাবে আগে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো বার করে নিতে হবে। এই কাজটা করার জন্যে তারা চমৎকার এক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিস্কার করে। এটিই মমিফিকেশন নামে বিখ্যাত। এবার আমরা সেই মমিফিকেশন পদ্ধতির ব্যাপারে জানব, কিভাবে ধাপে ধাপে সেটা করা হত:-
**** মৃতদেহকে প্রথমেই আনা হত ওয়ার্কশপের প্রথম ঘরে, যার নাম "ইবু" বা বিশুদ্ধিকরন ঘর। এখানে প্রথমে দেহটিকে সুগন্ধী তাড়িজাতীয় তরল দিয়ে ভাল করে ধোয়ানো হত। তারপর পবিত্র নীল নদের জল দিয়ে দেহটিকে তিনদিন ধরে সঠিক ভাবে পরিস্কার করা হত। এরপর বডিটিকে আনা হত পরের ঘর অর্থাৎ "পার নেফার" এ, এই ঘরটিকে মমিকরণ কক্ষও বলা হত। এই ঘরেই মমি বানানোর আসল কাজগুলি হত। এই ঘরে আনার পর দেহটিকে লম্বা এক কাঠের টেবিলে শোওয়ানো হত। মূল পুরোহিত তার সাগরেদদের নিয়ে মমিফিকেশনের কাজ করার জন্যে আসতেন এখানে। এই পুরোহিত আনুবিসের মুখোশ পড়ে থাকতেন। এই পুরোহিতকে বলা হত "হেরি সেশতা"। মমিফিকেশন এর শুরুতেই দেহটিকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে অঙ্গ অপসারনের কাজ শুরু করা হত। এই কাজের শুরু হত মস্তিস্ক দিয়ে। পুরোহিত দেহটির নাকের ফুটোর ভেতর দিয়ে তীক্ষ্ণ ও সরু একটা আঁকশি ঢুকিয়ে খুলি অব্দি নিয়ে যেত। এরপর সেই তামার আঁকশিটি দিয়ে তারা পুরো মস্তিষ্কটা কুরে কুরে বার করে আনত নাক দিয়েই। পুরোটা বার করা সম্ভব হতনা, অবশিষ্ট অংশ তারা লম্বা একটি সরুমুখওলা চামচ দিয়ে বা জল স্প্রে করে বার করে দিত। মজার ব্যাপার হল, এত কষ্ট করে তারা মস্তিস্কটা বার করত, কিন্তু সেটার সংরক্ষন তারা করত না। কারন প্রাচীন মিশরীয়রা জানতোই না মস্তিষ্ক কতটা দামী বা মস্তিষ্ক ঠিক কি কি কাজে লাগে। তারা জানত মৃত্যুর পরের জগতে এই মস্তিষ্ক কোন কাজে লাগেনা, তাই মস্তিষ্কটা তারা বেমালুম নষ্ট করে ফেলত। এই কাজটা পুরোহিত করত, কিন্তু পরের কাজ অর্থাৎ বাকি অঙ্গগুলো অপসারণের কাজগুলি বাকিরা করত। তারা অবসিডিয়ান নামক শক্ত এক পাথরের ব্লেড দিয়ে দেহটির বাম পাশে লম্বালম্বিভাবে চিরে একে একে বার করে আনত যকৃত, ফুসফুস, পাকস্থলী ও অন্ত্র বার করে আনতেন। হৎপিন্ড প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে খুবই পবিত্র ও দামী অঙ্গ ছিল। তারা মনে করত হৎপিন্ড না থাকলে ওসাইরিসের বিচারসভায় মৃত ব্যক্তির বিচার সম্ভব হবেনা এবং আত্মা কোনদিনই পরকালের জগতে যেতে পারবেনা। তাই হৎপিন্ড তারা শরীর থেকে বার করত না। ওটা যথাস্থানে সুরক্ষিতভাবে থাকত। এবার এই অপসারিত অঙ্গগুলি তারা ভাল করে ধুয়ে, রজনের প্রলেপ দিয়ে, পাটের কাপড়ে মুড়ে এক বিশেষ পাত্রে সংরক্ষন করতেন। এই পাত্রগুলিকে "ক্যানোপিক জার" বলা হত। এই পাত্রগুলি মমির সাথেই তার সমাধিতে রাখা হত।
এই ক্যানোপিক জার নিয়েই অল্প কিছু তথ্য দিয়ে দি। মানুষের মাথার মত দেখতে জারটির নাম "ইমসেটি", এটিতে যকৃত রাখা হত। বেবুনের মাথার মত দেখতে জারটির নাম "হাপি", এতে ফুসফুস রাখা হত। শিয়ালের মাথার মত দেখতে জারের নাম "ডুয়ামেতেফ", এতে পাকস্থলী রাখা হত। আর বাজপাখির মাথার মত দেখতে জারের নাম ছিল "কেবেহসেনুয়েফ", এতে অন্ত্র রাখা হত।
এবার শরীরের অঙ্গগুলি বার করার পরে যে ফাঁকা জায়গা হত তাতে সেখানে ধূপ ও অন্যান্য পদার্থ ঢুকিয়ে দেওয়া হত যাতে চামড়া ভিতরের দিকে না ঢুকে যায়। এরপর দরকার হত শরীরের সমস্ত জল বার করে নেওয়ার, কারন জল থাকলেই পচন হবে। এজন্যে শরীরটিকে "ন্যাট্রন" নামক এক লবনের চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে রাখা হত। এই ন্যাট্রন শরীরের চামড়ার রং না বদলে বা দেহটিকে স্টিফ না করেই শরীরের সমস্ত জল শুষে নিত। এই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্যে দেহটিকে প্রায় ৩৫-৪০ দিন এই ন্যাট্রনে ডোবানো থাকত। এই চল্লিশ দিন পর দেখা যেত বডিটি একদম শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এরপর এই দেহটিকে আনা হত "ওয়াবেত" নামক ঘরে, এখানে দেহটির ভিতরে ঢুকানো সব পদার্থগুলি বার করে ন্যাট্রন, রজনে ভেজানো পাটের কাপড়, বালি এসব দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হত। এরপর সেই কাটা জায়গা গুলি সেলাই করে দেওয়া হত। এরপর দেহ থেকে বাজে গন্ধ যাতে না বেরোয় তাই সিডার অয়েল, নানা মশলা মিশ্রিত রজন ইত্যাদি দিয়ে দেহটিতে ভাল করে প্রলেপ লাগানো হত। এরপর দেহটিকে ব্যান্ডেজ করার কাজ শুরু হত। এই ব্যান্ডেজ করার কাজটি ছিল বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। মাথা ও গলা প্রথমে ব্যান্ডেজ করে তারপর হাত পা সহ গোটা শরীরটাকে ব্যান্ডেজে মুড়িয়ে ফেলা হত। ও এরমাঝে চোখদুটি তুলে সে জায়গায় সাদা পাথরের উপর আকা চোখ বসানো হত। নাকের ও কানের ফুটোয় মোম দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হত। এরপর দ্বিতীয় স্তরের ব্যান্ডেজের কাজ শুরু হত। এই দ্বিতীয় স্তর করার সময় মাঝের জায়গাগুলি আঠা দেওয়া হত। এই সময় আরেকজন পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারন করতেন পাশে দাঁড়িয়ে। এবং মমির উপর রাখা হত নানান মন্ত্রপূত কবচ এবং কিছু মন্ত্র লিখে রাখা প্যাপিরাসের পাতা। হাতদুটো জড়ো করে বুকের কাছে রাখা হত। সেখানেও কবচ রাখা থাকত। এরপর মমিটিকে কাঠের এক কফিন বা সমাধিতে ঢোকানো হত। এই কফিনের গায়ে লেখা থাকত মমিটির পরিচয় এবং বুক অফ ডেডের কিছু বাণী। এরপর কাঠের কফিনটি পাথরের আরেক কফিনে ঢোকানো হত যার নাম "সারকোফেগাস"। ও এর মাঝে দেহটির মুখের উপর এক মুখের আকারের মুখোশ পড়ানো হত যেটি দেখতে মিশরীয় কোন দেবতার মুখের মত হত। এই সারকোফেগাস বানানো হত লাইমস্টোন দিয়ে, এর ফলে কফিনের ভেতর যে আবহাওয়া হত সেটা দেহের সমস্ত মাংসগুলিকে শুকিয়ে দিত। ব্যান্ডেজের নীচে শুধু শুকিয়ে যাওয়া মমিটির দেহ পাওয়া যেত। কিন্তু পচতো না মমিগুলো।
এভাবেই একটি মৃতদেহকে মমি বানানো হত। অবশ্য এই মমিফিকেশন নিয়ে আরো গল্প আছে। যেমন শুধু কি ফ্যারাওরাই বানাত এই মমি?? মিশরীয় বা মানবজাতি কি মমিগুলি সু সংরক্ষন করতে আদোও পেরেছিল?? এই সব গল্পগুলো আরেকদিন হবে। আজ এই অব্দিই থাকুক।
** কেমন লেগেছে অবশ্যই জানিও। মমিফিকেশন নিয়ে এই লেখাটা খুবই স্পেশাল একটা লেখা। পারলে শেয়ার করে বন্ধুদেরও দেখিও। ধন্যবাদ


httpssankhamanigoswami.xyz

মমি কিভাবে তৈরি হয়,
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে ফারাওরা কি বিশ্বাস করতেন , মমি রহস্য, বিখ্যাত মমি, পিরামিড কি, মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করেছিল কেন, ফারাও কাদের বলা হয়, মমি বলতে কি বুঝায়, মমি ছবি, মমি রহস্য,মমি অর্থ কি

শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

স্বপ্নে প্রতিদিন । কল্যাণী মিত্র ঘোষ । প্রেমের গল্প । ভালবাসার গল্প ।

আমি এখন একটা প্রজাপতি হয়ে অরণ্যের লিভিং রুমে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছি। আমি রোজ রাতেই এরকম কিছু একটা হয়ে যাই, হয় হামিং বার্ড, নয় রোলি পোলি অথবা হানি বি। এই আমেরিকার পোকা মাকড় গুলো বাচ্চাদের খুব প্রিয়, কেউ এদের মারে না, আলতো করে হাতে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাদের চাল চলন দেখে। তাই আমিও যখন খুশী এই সব রূপ ধারণ করি, খুন হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না। আমার নাম সিক্তা।

আর আমাকে প্রজাপতি করে তুলেছে তো অরণ্যই, কি সুন্দর সুন্দর কথা দিয়ে ও আমাকে একটু একটু করে পরমা রূপবতী করে তুলেছে। নিজেকে আয়নায় দেখে তো আমি অবাক হয়ে যাই, কোথায় সৌন্দর্য্য? এতো এক সাধারণ মেয়ে! কিন্তু ও বলে, আমি পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ও গোলাপের গন্ধ পায়, আমার টেক্সট মেসেজ ওকে মাতাল করে তোলে, আর যেদিন আমরা একান্তে দেখা করি সেদিন ও বুভুক্ষুর মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরে একটু একটু করে শুষে নেয় আমার ভেতরে ওর জন্য, শুধু ওরই জন্য জেগে ওঠা টই টুম্বুর প্রেম। মেঘের ভেলায় চেপে ভেসে যাই দুজনে। বৃষ্টি নামে, প্রবল।
ওর সঙ্গে আলাপ আমার ইউনিভার্সিটি থেকে। আমি এখনও রিসার্চ করছি, ও এখন অবশ্য একটা চাকরীতে ঢুকেছে, পাশের শহরেই। ওর সঙ্গে যেদিন আমার দেখা সেদিন প্রবল তুষারপাত আমেরিকার পূর্ব রাজ্যে। আমি সবে এসেছি, রকম সকম কিছুই জানিনা, একটা স্নো বুট পর্য্যন্ত ছিলনা। ও তখন ল্যাব থেকে বেরিয়ে আমাকে দেখেই কেমন স্ট্যাচু হয়ে গেল। আমারও বুকটা হঠাৎ ধড়াস করে উঠলো। টানটান, মেদহীন লম্বা চেহারা আর মাথায় কাঁচা পাকা চুল। পরে জেনেছি ওটা জেনেটিক, অনেক আগেই নাকি ওর চুল পাকতে শুরু করেছিল। ওর ঠোঁটের কাছে কেমন একটা চুম্বকের আকর্ষণ। চোখ নামিয়ে নিই। অসম্ভব মায়াবী গলায় আহ্বান আসে,
"আপনি বাঙালী? একবার যেন দেখলাম মনে হলো ক্যাফেটেরিয়ায়? কবে এসেছেন? কোথায় উঠেছেন? আপনি তো সেরকম প্রস্তুত হয়ে আসেন নি দেখছি। চলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি আপনাকে।"
এবার কপালকুণ্ডলা নবকুমারের পশ্চাদ্ধাধাবন করিল।
দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। অরণ্যকে ছাড়া আমি চোখে অন্ধকার দেখি। ও ই আমাকে ইউনিভার্সিটির কাছে একটা স্টুডিওর খোঁজ পাইয়ে দিয়েছে। সস্তায় ভদ্র পাড়ায়। ও এদেশে সেই ছাত্রাবস্থায় এসেছিল, আর ফেরেনি। মাস তিনেক পর জানলাম ও বিবাহিত। ও ই জানালো। কিন্তু অসম্ভব অসুখী, ওর বউ এর সাংঘাতিক সন্দেহবাতিক আর সেই থেকে গার্হস্থ্য হিংসা। ও বেচারা বাড়িতে নিঃশ্বাস নিতে পারেনা, একমাত্র কাজ ই ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অমায়িক, মৃদুভাষী, সুপুরুষ, দয়ালু মানুষটার দুর্গতিতে কোমল হৃদয়া আমি শোকাকুল হয়ে পড়ি।
"সেকি? এদেশেও এ রকম একটা সম্পর্ক নিয়ে বেঁচে আছো? ডিভোর্স দাও না কেন? এখানে তো শুনেছি সব কিছুই খুব সহজ, এবং সবাই ন্যায় বিচার পায়। তুমিও শান্তিতে থাকো আর ও ও ভালো থাকুক।"
"দুর, যা সব সময় খবরে পড়ো তা ঠিক নয়। অনেক সমস্যা। আমার এত দিনের উপার্জনের অনেকটা বেরিয়ে যাবে, তাছাড়া আরো নানান হ্যাপা।"
"তাহলে মানিয়ে গুছিয়ে চললেই তো পারো!"
"আর তা পারিনা, এখন তোমার চোখে আমার সর্বনাশ দেখেছি যে!"
ওর সেই অসম্ভব আকর্ষণীয় ঠোঁট দুটো আস্তে আস্তে আমার মুখের ওপর নেমে এসে আমার সমস্ত যুক্তির অবসান ঘটায়।
আমি মেনে নিই এই সম্পর্ক টা সেই সঙ্গে পড়াশুনোতেও মন দিই। এদেশে কেউ কারোর ব্যাপারে মাথা ঘামায় না, পরের স্বামী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া টাইপের কোনো মন্তব্য ভেসে আসে না। কাজের জায়গায় আমরা যে যার নিজের গণ্ডির মধ্যে থাকি আর ব্যক্তিগত জীবনে অপার স্বাধীনতা। ইতিমধ্যে অরণ্য পাশের শহরের বায়োটেক কোম্পানীর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে বেশ ভালো একটা চাকরি পেয়ে যায়। আমাদের দেখা করা একটু অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ও আর তেমন টেক্সট করেনা। আমার ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে। দু একবার ওকে মেসেজ করেছি, ও বলেছে,
"নতুন চাকরিতে নাভিঃশ্বাস উঠছে। বাড়িও চেঞ্জ করে অফিসের কাছাকাছি এসেছি। এছাড়া জানোই তো আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কথা। খুব চাপে আছি, ডিপ্রেশনে। "
তা হবেও বা! তবু মন কেমন করে, এক লাইন টেক্সট করতে কি হয়! এর মধ্যে হঠাৎ একদিন শুভর সঙ্গে দেখা। আমি একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনছি। যাঁর গাড়ি উনি সস্ত্রীক ভারতে ফিরে যাচ্ছেন, সত্যিই নামমাত্র দামে উনি গাড়িটি বলতে গেলে "দিয়ে যাচ্ছেন"। ওনার অ্যাড দেখে আমি উত্তর দিতেই উনি আমাকে ফোন করলেন,
" তুমি নিয়ে যাও গাড়িটা, যত্নে রেখো। আমিও ছাত্র হয়েই এদেশে এসেছিলাম, এখন মেয়েও এদেশে চাকরিতে ঢুকেছে, আমরা বুড়োবুড়ি দেশে ফিরছি, হয়তো তিন মাস করে এখানে মেয়ের কাছে বেড়াতে আসবো। তোমার এখন সামনে বিরাট স্ট্রাগল, আমি যদি এটুকু সাহায্য করতে পারি তাহলে ভালো লাগবে। আমি অন্য কাউকে এটা দিচ্ছিনা, কাল চলে এসো, আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করবে।"
কি আন্তরিক কণ্ঠস্বর, মনটা ভালো হয়ে গেলো। পরদিন ওনার বাড়ি গেলাম বাসে চেপে, আর ভাবতেই ভালো লাগছে যে ফিরবো আমার নিজস্ব বাহনে! গত তিনমাসে আমি ফাঁকে ফাঁকে গাড়ি চালানোর স্কুলে ভর্তি হয়ে হাত পাকিয়ে ফেলেছি। এদেশে ভীষণ কঠিন ফ্রী ওয়ে তে গাড়ি চালানো। খুব নার্ভাস লাগে, অবশ্য সেটা এড়াতে অনেক ঘুরপথেও যাওয়া যায়।
মিস্টার শর্মার ডোরবেল টা বাজাতে দরজা খুললো দেখি শুভ, আরে কি কান্ড! ও এনাকে চেনে নাকি? তাহলে তো দারুণ হবে। আমার সঙ্গে ও ফার্স্ট ইয়ারে পড়েছিল, তারপর আর আমাদের যোগাযোগ ছিলনা, শুনেছিলাম ও বিদেশে পড়তে চলে গেছে। শুভ হৈ হৈ করে উঠলো,
"আমি আঙ্কলের থেকে তোর নাম দেখেই বুঝেছি এই আমাদের সিক্তা, তারপর ফেসবুকে একবার তোর প্রোফাইল এ ঢুঁ মেরে শিওর হয়ে গেলাম। কি ভালো লাগছে রে তোকে দেখে!"
মিস্টার শর্মাও বেরিয়ে এলেন।
হিন্দীতে বললেন অনেক দিন ধরেই উনি শুভ কে চেনেন, আসলে এদেশে পুজো পার্বণ বা ঘরোয়া পার্টিতে গেলে পরিচয় হয়ে যায় আর সে থেকে অনেক সম্পর্ক প্রায় আত্মীয়তায় পর্যবসিত হয়। বিদেশে একা থাকা মানুষ গুলো খুঁজে নেয় প্রাণের দোসর। শুভ সেই থেকে ওনার ঘরের ছেলে হয়ে গেছে। উইকএন্ডে অনেক টা ড্রাইভ করে এসে দেখে যায় আঙ্কল আন্টি কে। ও একটুও বদলায় নি, সেই কথায় কথায় হা হা করে হাসি। আমিও নস্টালজিয়ায় ভেসে গেলাম।
শর্মা আন্টির হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা। ওনারা নিরামিষ খান , মেনুতে ছিল আলু কা পরাঠা, ছোলে, রায়তা, চিলি পনীর আর গাজর কা হালওয়া, এলাহি কাণ্ড। আমি বহুদিন পর চেটে পুটে সব খেয়ে নিলাম। এরপর আঙ্কল বললেন,
"চলো, এবার আমার ছোট মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিই, আর তার আগে শেষ বারের মতো এক চক্কর দিয়ে আসি।"
টেস্ট ড্রাইভ, গাড়ি কেনার আগে এটা মাস্ট, কিন্তু আমার কোনো টেনশন ছিলনা, শুভ এনাদের চেনেন অতএব ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নইলে অনেকেই দেখেছি লঝ্ঝড়ে গাড়ি বেমালুম গছিয়ে দেন ভুলভাল বিজ্ঞাপন দিয়ে। গ্যারাজে গিয়ে দেখলাম গাঢ় নীল রঙের একটা টয়োটা ক্যামরি, দেখেই ভালোবেসে ফেললাম, জলের দরে পাচ্ছি বলেই আমি কিনতে পারছি। খুব যত্নে রাখবো ওকে, শর্মা আঙ্কল কে বললামও সে কথা। এরপর আমরা চার জনে ঘুরে এলাম আধ ঘণ্টা একটা লেকের ধারে। এখন এ দিকে ফল কালার এসে গেছে, সবুজ গাছের পাতারা হলুদ, লাল, কমলা রং ধারণ করে নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। সে সব দেখতে দেখতে আমরা লেকের পাশেই ঘুরে নিলাম। বাড়ি এসে আঙ্কল শেষ বারের মতো গাড়িটার গায়ে হাত বুলিয়ে চাবিটা আমার হাতে তুলে দিলেন, আমারও বুকের কাছটা মুচড়ে উঠলো, আমি আলতো করে আঙ্কলের হাতের ওপর হাত রাখলাম। ব্যাংক ট্রান্সফার আগেই করে দিয়েছি। এবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। শুভ বলল,
"আর দু ঘন্টা এটা আঙ্কলের গ্যারাজেই থাক, চল তোকে আমার এক কলিগের বাড়ি নিয়ে যাই পাশের শহরে, পনেরো মিনিটের ড্রাইভ। তারপর আবার তোকে এখানে নামিয়ে দেবো তুই এখান থেকে ড্রাইভ করে ফিরে যাস। রাত অভি বাকি হ্যায় ইয়ার।"
ওর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গেলাম, আজ শনিবার, কাল সকালে ওঠার তাড়া নেই। আঙ্কলদের বাই বলে আমি শুভর ফোর্ড এক্সপ্লোরার এ উঠে বসলাম। গাড়িতে বাজছে রাহাত ফতে আলীর " ইয়ে যো হাল্কা হাল্কা সুরুর হ্যায়, ইয়ে তেরি নজর কা কসুর হ্যায় ..."
শুভ বকবক করেই চলে,
" চল দেখবি দারুণ ভালো লাগবে, হেব্বি আড্ডাবাজ মানুষ ওরা, আমার কম্পানী তে এই সবে জয়েন করেছে। স্বামী স্ত্রী একদম লাভ বার্ডস, নইলে অন্য বউ রা বরদের বন্ধুদের যখন তখন বাড়ি এসে আড্ডা মারা পছন্দ করে না। আমি বৌদি কে ফোনে তোর কথা বলতেই তোকে নিয়ে যেতে বললো।"
বলতে বলতে গাড়িটা একটা সুন্দর তিনতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। ভদ্রলোক তার মানে বেশ ভালো পোস্টেই কাজ করেন। শুভ জোরে জোরে বেল বাজাতে লাগলো, বোঝা গেল এ বাড়িতেও ওর অবাধ যাতায়াত।
দরজা খুলে দিলেন এক মিষ্টি মুখের মহিলা, পূর্ণ গর্ভবতী। হাসতে হাসতে ধমক দিলেন শুভ কে,
"এই অবস্থাতেও আমাকে দৌড় করালে তো? দাঁড়াও তোমার দাদা আসুক, তোমার কি অবস্থা করে দেখো!"
"সে কি, দাদা নেই?"
"আরে একটু বিরিয়ানী আনতে পাঠালাম, তুমি আসছো, সঙ্গে বান্ধবী, একটু ভালো মন্দ খাওয়াবো না? এসো ভাই বসো।"
আমরা কিচেনের লাগোয়া ফ্যামিলি রুমটায় গিয়ে বসলাম। মহিলার যেমন মিষ্টি চেহারা তেমনি সুন্দর ব্যবহার। এদিকে আমার আবার একটু টয়লেটে যাবার প্রয়োজন হয়ে পড়লো। গৃহকর্ত্রী কে জিজ্ঞেস করতেই উনি ঘরের অন্য প্রান্তটি দেখিয়ে দিলেন। শুভ বললো,
"বৌদি, তোমাকে দৌড় করিয়েছি, অতএব শাস্তি স্বরূপ আমি চার জনের কফি বানিয়ে আনছি, ইউ প্লীজ রিল্যাক্স।"
টয়লেট থেকেই শুনতে পেলাম সদর দরজার লক খুলে কেউ ঢুকলো। গৃহস্বামী এলেন বুঝি। মুখে চোখে একটু জল দিয়ে চুলটা ঠিক ঠাক করে নিলাম। সারাদিন টই টই, উফ্ শুভর পাল্লায় একবার পড়লে .....
একি! এ কার কণ্ঠস্বর! আস্তে করে দরজাটা খুলে দেখি এ যে আমার অরণ্য, আমার! সেই দীর্ঘদেহ, কাঁচাপাকা চুল, হন্তদন্ত হয়ে লিভিং রুমের দিকে গেল। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? তারপর হাতের ব্যাগ গুলো কিচেনের তাকে রেখেই ছুটে এলো মহিলার কাছে, তাকে এক হাতে জড়িয়ে গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো, যে ভাবে আমার ঠোঁট থেকে সব রস শুষে নিতো, ঠিক সেই ভাবে! আমি যন্ত্রচালিতের মতো এক পা এক পা করে আলো আঁধারিতে ওদের সোফার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছি। স্থবির। অরণ্য মহিলার কানে কানে বলছে,
"মিসড্ ইউ।"
"খালি পাগলামো, এই আধ ঘণ্টায় ইউ মিসড্ মি? এমন মারবো না!"
"কখন মারবে? কি ভাবে মারবে? বলো না সোনা!"
চুমু খেতেই থাকে অরণ্য।
মহিলা বলেন, "ছাড়ো, শুভ কফি নিয়ে আসছে ...."
ঠিক এই সময় আমি একটু এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে অরণ্যর কাঁধে হাত রাখি, আর ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে পেছন ফিরে তাকায়, মুখ ফ্যাকাশে! আমি কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ওদের উল্টো দিকের সোফায় গিয়ে বসি, একটু হাসি। অরণ্যও হাসে। সম্পূর্ণ বিপরীত এই দুটো হাসি। আমার কান্না পায়, চীৎকার করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমি হাসি।
শুভ কফি নিয়ে আসে।
"অরণ্য দা, এই আমার বন্ধু সিক্তা।"
সে রাতে আমি চেটেপুটে বিরিয়ানী খেয়ে বাড়ি এলাম নিজের টয়োটা ক্যামরি চালিয়ে। অরণ্য বেচারা বিরিয়ানী খেতেই পারলো না, বললো ওর মাথা ধরেছে। আহা রে। হয়তো এখন ও স্ত্রীর কোলে মাথা দিয়ে শুয়েছে, অথবা চোখ বন্ধ করে আমার কথা ভাবছে আর শিউরে উঠছে! আমি এই বেলা প্রজাপতি হয়ে ওর ঠোঁটের সেই মারাত্মক খাঁজে গিয়ে বসি, ফিসফিস করে ডাকি,
"রণ, আমার রণ ..."
ও শুনতে পায়, কিন্তু সাড়া দিতে পারেনা, আমাকে ছুঁতে চায় কিন্তু দেখতে পায়না, আর আমি ডানা ফরফরিয়ে ওর আসে পাশে উড়ে বেড়াই। কাল যাবো একটা ঘাস ফড়িং হয়ে, রোজ যাবো, স্বপ্নে।
সমাপ্ত
কল্যানী মিত্র ঘোষ

httpssankhamanigoswami.xyz




প্রেমের গল্প বাংলা,প্রেমের গল্প প্রেমের গল্প,প্রেমের গল্প রোমান্টিক,প্রেমের গল্প কাহিনী,

প্রেমের গল্প ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প দুঃখের , প্রেমের গল্প কষ্টের , ভালবেসে একটি মেয়ের আঘাত পাওয়ার গল্প



কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...