শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

স্যর । লেখক : ঁশঙ্করদেব গোস্বামী ।

               কিছুদিন আগে টিভিতে একটা খবর দেখে আমি হতবাক । খবরটা দেখামাত্রই আমার ষাট বছর আগেকার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল । টিভিতে কী দেখেছি , পরে বলছি । আগে ষাট বছর আগেকার ঘটনাটার কথা বলে নিই । বুড়ো হলে, পুরনো দিনের স্মৃতিচারণায় মন বড় আনন্দ পায় । তখন আমি সবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি । আমার এক সহপাঠীর বাবা সদ্য বড় অপারেশন করিয়ে বাড়ি ফিরেছেন । আমি তাঁকে দেখতে গেছি । তাঁর ঘরে ঢুকতেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন । তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ,তিনি বেশ ভাল আছেন দেখে , বন্ধুর ঘরে এসে জমিয়ে গল্প করছি । ওই বয়সে যা হয় , সমকালীন রাজনীতি নিয়ে আলোচনায় বেশ মেতে উঠেছি দু'জন । এমন সময়ে একটা ফোন এল । তর্ক থামিয়ে , ফোন ধরার ইচ্ছে না থাকলেও , বন্ধুটি রিসিভার তুলে কিছুটা বিরক্তির সঙ্গেই গম্ভীরভাবে বলে উঠল --- "হ্যালো !" ওপার থেকে কী কথা ভেসে এল শুনতে পেলাম না । হঠাৎ দেখি রিসিভার হাতেই বন্ধুটি তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলছে --- "হ্যাঁ স্যর , ভাল আছেন স্যর । পরশুদিন বাড়ি এসেছেন । ঘরের মধ্যেই একটু একটু করে হাঁটানো হচ্ছে । আপনি আসবেন স্যর ! খুব ভাল হবে । বাবার তো ভাল লাগবেই , আমিও খুব আনন্দ পাব । আপনার শরীর ভাল আছে স্যর ? আপনি আসবেন , আমার কী যে আনন্দ হচ্ছে !" তারপর আরও কয়েকবার হ্যাঁ স্যর , হ্যাঁ স্যর , আচ্ছা স্যর বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল । এই যে এতগুলি কথা হল , এতক্ষণ কিন্তু বন্ধুটি ঠায় দাঁড়িয়ে । এত সবিনয়ে স্যর - স্যর করা ভাল লাগল না । বিরক্তি চাপতে পারলাম না । একটু কটাক্ষের সুরে বললাম --- "এত স্যর -স্যর করছিলি , অফিসের বস বুঝি !" এতক্ষণে বন্ধুটি একগাল হেসে বলল --- "না রে , আমাদের হেডস্যর কথা বলছিলেন । কারও কাছ থেকে বাবার অসুখের খবর পেয়েছেন । বাবাকে দেখতে আসবেন বললেন । চিন্তা কর , ক-বে রিটায়ার করেছেন স্যর । এখনও , এই বয়সেও , বাবাকে দেখতে আসবেন বলছেন । ভাবা যায় !" আমি বললাম --- "তা , ফোন ধরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লি কেন ?" ও বলল --- "স্যরের গলা পেয়ে আমার খেয়ালই নাই যে ফোনে কথা বলছি । মনে হচ্ছিল , আমি স্যরের সামনে দাঁড়িয়ে । স্যরের সামনে আমরা কখনও বসে কথা বলার কথা ভাবতে পেরেছি, বল !" 

            এবার বলি টিভিতে কী দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম । টিভিতে দেখাচ্ছিল , কোনও এক গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক , যুবা বয়সের হলেও স্কুলের প্রবেশপথে নালায় পড়ে , ছোট ছোট ছেলেদের দিকে হাত বাড়িয়ে তাঁকে তুলে দিতে বলছেন জড়ানো গলায় । কয়েকটি বাচ্চা ছেলে তাঁকে তোলার বৃথা চেষ্টা করছে । বাকিরা আশপাশে হেসে গড়িয়ে যাচ্ছে । বাচ্চাদের চেঁচামেচি শুনে মুহূর্তে পথচারী ও সংলগ্ন গ্রামবাসীরা ছুটে এসেই মাস্টারমশাইকে এলোপাথাড়ি চড়-চাপড় মারছে , সঙ্গে গালাগাল । সংবাদ পাঠকের কণ্ঠে জানা গেল , ওই ব্যক্তি মদ্যপ ছিলেন । প্রতিদিনই তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্কুলে আসেন । সংবাদ পাঠক আরও কী কী সব বলছিলেন রসিয়ে রসিয়ে । আমার আর শুনতে ভাল লাগল না , টিভি বন্ধ করে দিলাম । ষাট বছর আগের ঘটনাটি যখন প্রত্যক্ষ করি , তখন প্রতি বাড়িতে টিভি ছিল না , ফ্রিজ ছিল না , টেলিফোনও পল্লীতে দু'টো-একটা বাড়িতে । এখন প্রতি বাড়িতেই টিভি - ফ্রিজ , ফোন তো একাধিক । স্বাধীনতার পরে আমরা দিনকে দিন ক-ত সভ্য হয়ে উঠছি বলুন ! মাস্টারমশাইরা মদ খেয়ে স্কুলে আসছেন , ডাক্তারবাবুরা কিডনি কিংবা শিশু পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ছেন , ইঞ্জিনিয়ারেরা কোটি কোটি টাকা বালিশ-তোশক, এমনকি কমোডের ভিতরেও গুছিয়ে রাখার দক্ষতা অর্জন করছেন কেউ কেউ ! সভ্যতা বিকাশের আর কী প্রমাণ চাই ?    

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/09/%20pub-9792609886530610_26.html


          





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...