রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

শিক্ষক দিবস ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

ক্লাস টেন । ভোলাবাবুর বাংলা ক্লাসে টেক্সট বই সামনে খুলে রাখা বাধ্যতামূলক । এ আর বি সেকশন একসাথে ক্লাস হচ্ছে । ক্লাসরুম ছাত্রে ঠাসা । আমি লাস্ট বেঞ্চের আগেরটায় বসেছি , ভালো ছেলে , টেক্সট বই এনেছি । অকারণে নয় , একটু ট্যাঁ ফো করলে স্যরেরা ভয় দেখাতেন , সোনাউল্লা স্কুলে বাবার কাছে ফোন যাবে । যাইহোক , ঠিক পিছনের বন্ধু হঠাৎ ছোঁ মেরে বইটা তুলে নিল , কারণ ও বই আনেনি । আমিও ততোধিক সপ্রতিভ ভাবে পাশের বন্ধুর বই টেনে নিলাম , আর ও কিছুক্ষণ আমার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে ব্যাগের থেকে অঙ্ক বই বের করে খুলে বসল গম্ভীর ভাবে । স্যর রোল কল করলেন , তারপর মাথা নীচু করেই হুঙ্কার ছাড়লেন --- "গোস্বামী , তোমার পাশের জনকে দাঁড়াতে বলতো ।" আমি ওকে বাধ্য ছাত্রের মত চোখের ইঙ্গিত করলাম । আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভোলাবাবু মুখে হাসি টেনে বাজখাঁই গলার আওয়াজেও বলে উঠলেন --- "তুমি কাকে টুপি পড়াচ্ছো বাবা ? হাতে ওটা কী বই ? ওটা নিয়ে একবার এদিকে এসো তো বাবা !" বন্ধুটির মাথায় অতঃপর টকাটক কতগুলো গাঁট্টা পড়ল , ভোলাবাবুর শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতি । যারা ভোলাবাবুকে দেখেননি , তাঁরা বাম আমলের মন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়কে মনে করতে পারেন , অনেকটা মিল আছে । একটা বিরাট ঘরে একজনকে হাতেনাতে কীভাবে স্যর ধরলেন , সেটা এখনও আমার কাছে একটা রহস্য ।


ক্লাস ইলেভেন । আমাদের ডানা গজাচ্ছে , কারণ আশপাশে প্রচুর ডানাকাটা পরী ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমরা মূর্তিতে পিকনিকে যাব । সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে যাবেন দিলীপ বাবু আর জয়দেব বাবু । সদর গার্লস কবে মূর্তিতে পিকনিকে যাবে , সেটা জেনেই সব ঠিক করা হয়েছে । আয়োজন মসৃণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে । আমরা নির্দিষ্টও দিনে পূর্ব নির্দিষ্ট সময়ে মূর্তি পৌঁছলাম । খবর পেলাম সদর গার্লস আগেই পৌঁছেছে , কারণ ওরা আলো থাকতে থাকতেই ফিরে যাবে । ঠাকুর রান্না করবে , আমরা আর বসে থেকে কী করবো , একটু মূর্তি নদীর , পাহাড়ের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করবো না ! সবিনয়ে সকলে মিলে স্যরেদের কাছে অনুমতি চাইলাম ---- "স্যর , আমরা একটু ঘুরে আসি ?" দু'জন স্যরই একসাথে বললেন ---"এসো ।" আমরা একটু এগোতেই পিছন থেকে ডাকলেন , কাছে এলে কেটে কেটে দিলীপ বাবু বললেন ---- "এখানে তোমরা এমন 'কিছু' করো না, যাতে স্কুলের সুনাম নষ্ট হয় ।" আমরা হাঁ ! বোঝা গেল , আমরা ডালে ডালে চললে , স্যরেরা চলেন পাতায় পাতায় !
কলকাতার একটা বাংলা দৈনিকে শিক্ষানবিশি করছি তখন । কাগজের তৎকালীন কার্যনির্বাহী সম্পাদক (পরে সম্পাদক) ডেকে পাঠালেন । একটা বইয়ের রিভিউ লিখতে হবে। ওনার ঘরে ঢোকার পর
বসতে বলে আমার হাতে একটা প্রিন্ট আউট ধরিয়ে দিয়ে বললেন -- আমি শুরু করেছিলাম লিখতে । হঠাৎ একটা জরুরি কাজে কলকাতার বাইরে থাকব , তাই তোমাকে ডাকা । তুমি নিজের মত করে লিখবে । যদি রাখা প্রয়োজন মনে করো, তবে আমার লেখা অংশটুকু রাখবে, অপ্রাসঙ্গিক মনে হলে ফেলে দেবে। ফেলে দেবে-- শব্দ দুটো শুনে আমি তখন হতবাক। বাংলায় একটা আপ্তবাক্য আছে, ---- বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে। ওনার কথা শুনে সেদিন এই কথাটাই মনে হয়েছিল প্রথমে । একজন শিক্ষানবীশ ছোকরার সামনে ওই পদমর্যাদার একজন মানুষ , এতটা বিনয়ী , এতটা উদার হতে পারেন তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। নিজেকে যে কয়েকজন সাংবাদিকের ভাবশিষ্য বলে মনে করি, উনি তাঁদের মধ্যে একজন । শিক্ষক দিবস আমার কাছে এই গুরুস্থানীয়দের বারবার স্মরণ করার দিন ।
sankhamanigoswami.blogspot.com



শিক্ষক দিবস রচনা


শিক্ষক দিবস কবে পালিত হয়


শিক্ষক দিবস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা


শিক্ষক দিবস কবে

শিক্ষক দিবস কার জন্মদিন


শিক্ষক দিবস ২০২১

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...