#ফেঁক_দো
ঘটনাটা বাবার কাছ থেকে শোনা । বাবা ঠাকুরদার পিণ্ডদান করতে গয়ায় যাচ্ছেন । ওই কামরায় , একই কাজে গয়া যাচ্ছেন , এমন কিছু বাঙালিও আছেন , কিন্তু বয়সে সকলেই বাবার থেকে অনেক বড় । তাই ওঁদের নিজেদের মধ্যেই দীর্ঘ ট্রেন যাত্রায় আড্ডা জমে উঠেছে । কামরা প্রায় ফাঁকা , সবাই শুয়ে-বসে-গড়িয়ে যাচ্ছে । ওই কুপেতে একজন শুধু আপাদমস্তক চাদর ঢাকা দিয়ে নীচের বার্থে শুয়ে আছে দীর্ঘক্ষণ ধরে , উঠছেও না , কোনও কথাও বলছে না । নাই কাজ , তো খই ভাজ । কিছুক্ষণ পরে বাঙালিদের দলটি পড়ল ওই না-দেখা লোকটিকে নিয়ে । নানারকম মন্তব্য ছুঁড়তে লাগল , কিন্তু তাতেও কোনও হেলদোল নেই । এবার শুরু হল চরম পন্থা -- ওই লোকটির উদ্দেশ্যে যেসব মন্তব্য ধেয়ে যেতে লাগল , তার কয়েকটা এরকম --- "ইয়ে আদমি মরা হুয়া হ্যায় , নাকি রে বাবা !" তার উত্তরে আরেকজন বলল -- "পুলিশকে ডাকলেই তো হয় ।" অপেক্ষাকৃত কমবয়সী এক ভদ্রলোক হঠাৎ করে বসলেন চরম সাহসী মন্তব্য --- "আরে , পুলিশ-টুলিশ ডাকার কী দরকার , উঠাকে ফেঁক দিলেই তো হয় !" এবার চাদর সরিয়ে উঠে বসলেন এক সর্দারজি , যাঁর পুরোটা শরীর শয্যায় আঁটছিল না । তিনি যে এতক্ষণ ধরে সব বাগাড়ম্বর শুনছিলেন তাঁর প্রমাণ দিয়ে খুউউব শান্তভাবে বললেন --- "উঠাকে ফেঁক দো !" কামরায় যেন বাজ পড়ল ! কারণ , ওই গল্পে মাতোয়ারা বাঙালি দলটির কোনও একজনের পক্ষে পাঁইয়াজিকে 'উঠাকে' ট্রেন থেকে 'ফেঁক' দেওয়া সম্ভব নয় !
দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটা আমার । স্কুলবেলার শেষ দিক । ছুটিতে এসেছিলাম মামাবাড়ি বোলপুরে , একা । ফেরার টিকিট পাইনি , দার্জিলিং মেলের জেনারেল বগিতে উঠেছি । তখন ট্রেনটা বোলপুরে আসত রাত দশটা নাগাদ । তো মামাতো দাদার কথা অমান্য করে , উঠে পড়ে দেখি ভেতরে তিলধারণের জায়গা নেই । শুধু বাথরুমটা ফাঁকা । সেটার সামনেই দাঁড়ালাম । অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছি না , অভিজ্ঞ জনে বুঝে নেবেন ! তো , ঘণ্টা দুই পরে প্রথম কুপেতে একটু ঢুকতে পারলাম । প্রায় সমবয়সী একটা পাঞ্জাবি ছেলে যেচে তার পাশে একটু বসার জায়গা দিল । বসলাম । ছেলেটা নিশ্চয়ই সিটটা কিনে শুয়ে যাচ্ছিল । বড়ই দয়ার মন তাঁর । নিজে থেকেই হিন্দিতে বলল , এন জে পি পর্যন্ত এভাবেই চলে যাওয়া যাবে , তারপর ও ঢুকবে শিলিগুড়িতে , আমি ধরব জলপাইগুড়ির ট্রেন । একটা রাতের তো ব্যাপার , দিব্যি কেটে যাবে , মনে করে একটু নিশ্চিন্ত হতেই কয়েকজন দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আমার ওপর খেপে উঠলেন স্বাভাবিকভাবেই । আমি বসার জায়গা পেয়ে গেলাম , ওঁরা পেলেন না , রাগ হওয়া স্বাভাবিক । শুরু হল আমার উদ্দেশে কটূক্তি বর্ষণ । আমিও খোলা জানলা দিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারে প্রাকৃতিক শোভা খুঁজতে লাগলাম ! কারণ , চশমাটা(যদিও তখন ছিলনা) খসে গেলে মুশকিলে পড়ি , দাদা আমি এখনও যে ইস্কুলে পড়ি , কব্জির জোরে আমি পারবো না ! আমি স্পিকটি নট হলেও , কিছুক্ষণ পর শিখ ছেলেটিকে উশখুশ করতে দেখলাম । তারপর হঠাৎ বাঁ হাত দিয়ে , ডান হাতের বালাটাকে কব্জির উপরে তুলতে তুলতে ছেলেটা উত্তেজিতভাবে লোকগুলোকে বলল --- "সিট ম্যায়নে খরিদা হ্যায় । ইস ভাইকো হামনে বইঠনে দিয়া হ্যায় । আপ লোগোঁকো কোয়ি তকলিফ হ্যায় কেয়া ?" ব্যস , এক ডোজেই কটূক্তি বন্ধ ! ছেলেটা তার মানে বাংলা বোঝে ! একই প্রশ্ন আমি দিল্লিতে ঘুরতে গিয়ে এক গাড়ির ড্রাইভারকে করেছিলাম । তাঁর উত্তরটা খাসা ছিল ---- "যব বাংলা মে আপলোগ গালিয়াঁ দেতে হো , তব সমঝমে আতা হ্যায় !"
রম্যরচনা
রম্য অর্থ
রম্য সাহিত্য কি
রম্য রচনা বৈশিষ্ট্য
রম্যরচনা উদাহরণ
রম্যরচনা কাকে বলে
রম্যরচনা অর্থ
রম্যরচনা meaning

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.