সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

প্রেমপত্র । রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

 

প্রেমপত্র

 

সুজন এখন একাদশ শ্রেণি । রোজ আড্ডা দিতে বেরোয় বিকেলবেলায় । তিস্তার স্পারে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সবে শেখা সিগারেটে টান দেওয়ার রোমাঞ্চ উপভোগ করে । স্পারের ঝোপঝাড়ে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলা আর ঝিঁঝিঁ পোকার কোরাস শুরু হওয়ার পর , বাড়ি ফেরার আগে, চিবনোর জন্য মৌরির প্যাকেটও রাখে প্যান্টের পকেটে , যাতে মুখ দিয়ে তামাকের উগ্র গন্ধ বের না হয় । মা টের পেলেই বলা শুরু করবে,--- “তুই আবার ওইসব ছাইপাঁশ খেয়েছিস ? চারিদিকে এত ক্যানসার হচ্ছে তবুও ! আর পাঁচজনের মত সুজনও জ্ঞানপাপী । ক্ষতি হবে জেনেও বুকে ধোঁয়া টানে , বুকের অন্য আগুনকে নেভানোর জন্য । ওর বাবা কিছু ব্যাপারে খুব কড়া । বাবার বেঁধে দেওয়া নিয়ম হল , বিকেল চারটের পর বাড়িতে থাকবে না , আর সন্ধে ছ’টা , বড়জোর সাড়ে ছ’টার পর আর বাড়ির বাইরে থাকবে না । সুজন ভালমত জানে, এই নিয়মের অন্যথা হলে কপালে জবরদস্ত ঝাড় আছে । তাই কিছু ব্যাপারে নিজের স্বার্থেই সে নিপাট ভাল ছেলে । আজও বাড়ির গেট খোলার আগে সে রিস্টওয়াচ দেখে নিয়েছে । পাক্কা ছ’টা দশ । কিন্তু গেটের সামনের ঘরের লাইট জ্বলছে কেন ? কেউ এসেছে নিশ্চয়ই । ওই ঘরেই তো সাইকেলটা ঢোকাতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেজিয়ে রাখা পাল্লাটা ঠেলতেই চমকে উঠল সুজন । বাবা বসে , মুখ গম্ভীর , চোয়াল শক্ত আর চোখ সরাসরি ওর দিকে । সুজনের তলপেট গুড়গুড় করতে শুরু করেছে । কিছু বলা বা করার আগেই নির্দেশ এলো --- “বোস ।“ সুজন ঢোঁকটা পুরো গেলার আগেই ওর বাবা একটা ডাকে আসা খাম ধরিয়ে দিলেন হাতে । বললেন – “আজ বিকেলে এটা এসেছে , তুই বেরোবার পরে । দেখ , কাউকে ভাল লাগতেই পারে , সেটা দোষের কিছু না । কিন্তু আপাতত এসব নিয়ে মেতে না উঠে, পড়াশোনাটা ঠিকমত কর । সারাজীবনে ভাল মেয়ে অনেক দেখবি , প্রেম করারও অনেক সময় পাবি । আমার অভিজ্ঞতা বলে , চিরকাল জগতে সব সামাজিক গোলমালের মূল কারণ দু’টো । নারী আর অর্থ । আপাতত, এই গোলযোগে তোর না জড়ালেও চলবে । আমার তা-ই মনে হয় । আর তুই নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখিস । সে বয়স তোর হয়েছে । এবং অবশ্যই , মনে করে, চিঠিটা পড়া হয়ে গেলে ছিঁড়ে ফেলে দিস ।“ সুজনের হতভম্ব ভাবটা কাটার আগেই এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে, ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ওর বাবা । ছিঁড়ে ফেলতে বলার তো একটাই কারণ থাকতে পারে । আর কেউ যাতে এই চিঠির কথা না জানে । আর কেউ বলতে , সুজনের পিঠোপিঠি বোন মুনমুন । একবার এটার কথা জানলে ও জ্বালিয়ে মারবে , শুধু তা-ই নয় , নিজের বন্ধু মহলে রাষ্ট্র করবে এই চিঠির কথা , সেটা সুজন বিলক্ষণ জানে । কিন্তু এমন কী আছে চিঠিতে , যে পড়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে ? ভ্রূ কুঁচকে চিঠিটা খুলল সুজন । রুল টানা নোট খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ---- “আপনার ছেলে আজকাল বড্ড মৌটুসির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে । প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে মৌটুসিকে ভালবাসে । মৌটুসি আমার । অবিলম্বে ওর পিছু না ছাড়লে ফল খুউব খারাপ হবে । ইতি, জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী ।“ এ-এ-এহ ! বীরপুরুষ একেবারে । যদি হিম্মত থাকে, তবে সামনে এসে ডুয়েল লড় ! দুধ কা দুধ , পানি কা পানি হয়ে যাবে । তা না , যত রাজ্যের খচরামো । আর দেখ , হুমকিও দিয়েছে প্রায় সাধুভাষায় । কোনও আনাড়ি রোমিওর হাতের কাজ যে এটা নয়, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয়না । কিন্তু একী ! হাতের লেখাটা যে বড্ড চেনা চেনা লাগে । হাতের লেখা যতই বিকৃত করার চেষ্টা করো বাবা , সুজন বসুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয় । দিনের পর দিন তোর পাশে বসে ক্লাস করছি , আর তোর হাতের লেখা চিনব না ? শারলক হোমস , ফেলুদা , ব্যোমকেশ বক্সী , কিরীটী রায় গুলে খাওয়া সুজনকে এত ভ্যাবলারাম ভাবলি তুই । কিন্তু তাই বলে, তুই ! শালা , একটু আগেই যে ঘাড়ে হাত রেখে দিব্যি গল্প করলি । একবার মুখ ফুটে এই কথাগুলোই  বলে দেখতে পারতিস । সরে যেতাম তোদের মাঝখান থেকে । তা না করে , এইভাবে পিছন থেকে ছুরি মারলি ভাই । ইউ টু , ব্রুটাস ? শালা এসকেপিস্ট ।

নিজের মনে এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সুজনের একবার মনে হল এখনিই একবার বেরিয়ে গিয়ে হতচ্ছাড়ার কলার খামচে ধরে । এখনও ওরা স্পারেই আছে । তারপরেই বুঝল, কোনও লাভ নেই তাতে । ওই ইয়েটা কিচ্ছু স্বীকার করবে না , বন্ধুদের সামনে ভাল মানুষ সাজবে । তুমি তো আবার বাবা অল স্কোয়ার , পড়াশোনায় ভাল , তার ওপর আবার কুইজ থেকে ছবি আঁকা , সব প্রতিযোগিতায় নিয়মিত পুরস্কার জেতো । শিলিগুড়ি আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক করো । সর্বোপরি , রমণীমহলে তোমার তো আবার বিশেষ সমাদর রয়েছে । যেখানে যাও গোপিনীরা ছেঁকে ধরে , আর আমরা দূরে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষি ! আমার কথা কে বিশ্বাস করবে বলো ? কব্জির জোরে যে আমি পারবোনা , সেটা তুমি খুব ভাল করে জানো । তাই ভেবেচিন্তে এই রাস্তা নিয়েছ । মোটের ওপর, কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে , সুজন বুঝল চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে বিষয়টা ভুলে যাওয়া ছাড়া , তার সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই আপাতত । তাহলে কী মৌটুসিই ওকে দিয়ে এসব করিয়েছে ? কাল সুরঞ্জনা একবার বলছিল বটে – “মৌটুসি কাকুর নাম করে বলল , ওনার ছেলে আমার পিছনে খুব লাইন মারছে আজকাল । রোজ বিকেলে ও যখন ছাদে পায়চারি করে , তুই নাকি ওদের বাড়ির চারপাশে সাইকেল নিয়ে চক্কর কাটিস ? তোর হাঁ মুখ নাকি বন্ধই হয় না ? ও কিন্তু খুব বিরক্ত এটা নিয়ে ।“ তা সুজনের কী দোষ ? এ তো যৌবনের তাড়না । একটা লেখাপড়ায় ভাল , মোটামুটি চটকদার মেয়ে যদি একসাথে পড়তে যাওয়ার সময় সর্বদা স্কিন টাইট জিন্স – টপ পরে , ঠোঁটে লিপ গ্লস দিয়ে ঘুরে বেড়ায় , তবে কোন ছেলে লাট খাবে না ? তবে, সুজন বসু সংযমী মানুষ , ঠিক সময় নিজেই নিজের রাশ টানত । এসব করার কোনও দরকার ছিলনা ।  ইনফ্যাচুয়েশন আর লাভ – এর ফারাক সে বোঝে । মাঝখান থেকে ওকে নিয়ে বাবার চিন্তা বাড়ল । এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই খাম- সহ চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে বাড়ির নালায় ফেলে দিল সুজন । আর ঠিক করল, আজ থেকে মৌটুসি আর ‘জনৈক শুভানুধ্যায়ী’র সাথে কথা বলা বন্ধ । চিরতরে ।

 

      তারপর , জীবন গিয়েছে চলে তাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার । সুজন নিজেকে দেওয়া কথা রাখতে পারেনি । ওই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ওর রাগ পড়ে গিয়েছিল । ওই দুই বন্ধু – বান্ধবীর সাথেও  সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল । ওরা এখন ঘোর সংসারী মানুষ , আলাদাভাবে ! ওদের প্রেমটাও জমেনি । দু’জনেরই বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে এসেছে সুজন । এখন তো ওদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে গেছে । পুরনো দিনের অনেক ঘটনা নিয়ে এখন সবার চোখের সামনেই খোলামেলা আলোচনা , হাসিঠাট্টা হয় ওদের মধ্যে, ফেসবুকে । শুধু চিঠির ব্যাপারটা সুজন বিল্কুল হজম করে গেছে । কিচ্ছু বুঝতে দেয়না ওই দু’জনকে । অন্য বন্ধুদের তো নয়ই । এখন ওরা পরিণতবয়স্ক । কিছুটা বোধহয় পরিণতমনস্কও । কারণ ফেসবুকে ওই দুই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে সেদিনের ঘটনার কথা মনে পড়লে এখন সুজনের হাসি পায় ।

      হ্যাঁ । সাংবাদিক এবং পাকা গিন্নি মৌটুসি আর খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক ‘জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী’ দু’জনেই এখন রয়েছে অধ্যাপক সুজন বসুর ফ্রেন্ড লিস্টে । শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আরকী ! তিনজনেই এখন কলকাতা ও শহরতলিতে থাকে । কোনও একটা জায়গা বেছে নিয়ে মাসে একবার নিয়ম করে আড্ডা মারে । মৌটুসির ঠোঁট এখনও রাঙা হয় , তবে খয়েরের কল্যাণে । ও এখন ভীষণ ভাবে পানাসক্ত ! বলে , সবই মেয়ের চিন্তায় । ওর মেয়ে এবার ক্লাস টেনে উঠল ।

                                 ---------------------

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/05/pub-9792609886530610_10.html


প্রেমের গল্প

ভালোবাসার গল্প

গল্প

জীবনের গল্প


ভালবাসার গল্প









প্রেমিকাকে লেখা প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমপত্র প্রতিশব্দ

আধুনিক প্রেমপত্র






হাসির প্রেমপত্র

প্রেমপত্র লেখার পদ্ধতি

সুন্দর প্রেমপত্র

কষ্টের প্রেমপত্র

বাংলা রোমান্টিক প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমিককে লেখা প্রেমপত্র

রোমান্টিক লাভ লেটার

বাংলা রোমান্টিক লাভ লেটার

প্রেমের লাভ লেটার

সেরা প্রেম পত্র

লাভ লেটার পিক    


রোমান্টিক লাভ লেটার

সুন্দর প্রেমপত্র

ভালোবাসার রোমান্টিক চিঠি

প্রেমিকার কাছে রোমান্টিক চিঠি







মিষ্টি প্রেমের চিঠি

শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি

প্রথম প্রেমের চিঠি

একটি প্রেমের চিঠি


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...