"মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত করেনা , করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে । এ যেন আমি সহিতেই পারি না ।"
------ শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , দশম অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/blog-post_30.html
"মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত করেনা , করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে । এ যেন আমি সহিতেই পারি না ।"
------ শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , দশম অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/blog-post_30.html
নিয়তি বোধহয় একেই বলে । আজ যেন সৌগতর সঙ্গে দেখা হওয়ারই ছিল , দার্জিলিং মেলের বার্থে বসে ভাবছিলেন ষাটোর্ধ্ব সুরঙ্গনা । সেই কলেজ জীবনের মত এখনও সৌগতকে দেখলেই বুকের রক্ত চলকে ওঠে , স্থির রাখতে পারেননা নিজেকে । আজই যেমন ভরা কামরায় সৌগতকে দেখে অষ্টাদশীর মত আনন্দে নেচে উঠেছিলেন , কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না । সৌগতর সঙ্গে আছে অনিন্দ্য , বাবার সাথে কলকাতার বড় কলেজে যাচ্ছে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে । আজকালকার ছেলেগুলো বড্ড ডেঁপো , কেমন সব বুঝে গেছি টাইপের হাসি ঠোঁটে টেনে রেখেছিল সুরঙ্গনার ছটফটানি দেখে । ও কি কিছু জানে ? কারও কাছ থেকে কিছু শুনেছে ? হতেও পারে । বড় হয়েছে , জানতেও পারে সৌগত- সুরঙ্গনার উথালপাথাল প্রেমের কথা । এই বয়েসে চিত্তদৌর্বল্য কী ভীমরতির লক্ষণ ? না । মানুষের মন স্বাভাবিক ভাবেই বহুগামী হয় , জানেন সুরঙ্গনা । ক'টা প্রণয়ের সম্পর্ক আর পরিণয়ের দিকে এগিয়ে যায় ! আজ থেকে দুই কুড়ি বছর আগেও ওঁদের কলেজের সহপাঠীরা জানত যে সৌগত আর সুরঙ্গনার বিয়েটা শুধু সময়ের অপেক্ষা । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওদের দু'জনেরই বন্ধু বিজয় গিয়েছিল আনুষ্ঠানিকভাবে সৌগতর মায়ের কাছে ওদের বিয়ের কথাটা পাড়তে । সম্ভাবনাটাকে এককথায় নাকচ করে দিয়েছিলেন কাকীমা , জাতপাতের কথা তুলে । এদিকে সৌগত মাতৃঅন্তপ্রাণ , কিছুতেই মায়ের বিরুদ্ধাচরণ করবে না । ফলে সুরঙ্গনার আর সৌগতর ঘরণী হওয়া হল না , কিন্তু দুর্বলতাটা রয়ে গেল । বিজয় আগে থেকেই সুরঙ্গনার প্রতি অনুরক্ত ছিল । এই ঘটনার পর , বিয়ের প্রস্তাব দিতে দেরী করেনি । বিজয় - সুরঙ্গনার একমাত্র মেয়ে নবনীতা এখন পড়ছে যাদবপুরে ।
সৌগতর সঙ্গে আর দেখা না হলেই ভাল হত , পুরনো ক্ষত খুঁচিয়ে তুলে কী লাভ ? কিন্তু, এই যে জীবনসায়াহ্নে অন্যরূপে , পরিণত রূপে দেখা হওয়া , জীবনে সঞ্চয়ের খাতায় এইটুকু লিখে রাখলেই বা ক্ষতি কী ?
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/09/%20pub-9792609886530610_25.html
"একের মর্মান্তিক দুঃখ যখন অপরের কাছে উপহাসের বস্তু হইয়া দাঁড়ায় , তাহার চেয়ে ট্র্যাজেডি পৃথিবীতে আর আছে কি !"
----------- শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , দশম অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/blog-post.html
আজ রাস্তায় একটা মর্মস্পর্শী দৃশ্য চোখে পড়ল । রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে পুরসভার একটা ANIMAL MORTUARY VAN । আর তার পেছন পেছন ছুটছে সরবে , অন্তত দশ থেকে বারোটা রাস্তার কুকুর । 'বল হরি' বলছিল কি ? আমি বুঝতে পারিনি ওদের ভাষা । তবে এটুকু বুঝেছি ওদের কোনও নিকটাত্মীয় মারা গেছে । অথবা একই পাড়ার কুকুর । আগে - পরে খেয়াল করেছি, এমনটা প্রায়ই হয় । মানুষের ক্ষেত্রে শববাহী শকট হয় স্বচ্ছ , মৃতদেহ দেখা যায় বাইরে থেকে । অনেকে তা দেখে ঘন ঘন কপালে-বুকে ডানহাতের তর্জনী ছোঁয়ান । কিন্তু মানুষের চেয়ে ইতর প্রাণী যারা, তাদের দেহবাহী গাড়ি তো আগাগোড়া ঢাকা থাকে , তাহলে কুকুরেরা বোঝে কী করে স্বজাতির কেউ মারা গেছে ? নিশ্চয়ই গন্ধে । কুকুরের ঘ্রাণশক্তি এবং স্মৃতিশক্তির কথা তো সর্বজনবিদিত । সম্প্রতি রাজ্যে প্রাণীদেহ দাহ করার আলাদা শ্মশান হয়েছে , গোর দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে । সাধারণ কুকুরেরা কী সেই খবর জানে এবং শ্মশানযাত্রী হয় ? কে না জানে --- রাজদ্বারে-শ্মশানে চ য তিষ্ঠত স বান্ধব । মানুষ প্রভু মারা গেলে কুকুরকে কাঁদতে দেখেছি, গরুর কাঁদার গল্প শুনেছি, আর কুকুর মারা গেলে কুকুর কাঁদবে না , তাও কী হয় ? আসলে ইতরদের কান্নার ভাষা আমরা বুঝি না , চেষ্টাও করিনা । মনে পড়ল কয়েকদিন আগে ব্যারাকপুরে তথাকথিত সমাজ পরিত্যক্ত একজন পরিচিত মারা গেছেন । আমরা একসময়ে তাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকতাম । ওই ভদ্রলোকের জ্ঞাতি এবং এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এক ডাক্তারবাবু , যিনি শহরের একজন পুরনো বাসিন্দাও বটে , নিজে উদ্যোগী হয়ে ডাকাডাকি করেও রাতে শ্মশানযাত্রী হওয়ার জন্য তিন - চারজনের বেশি লোক পাননি । আবার আজ, স্টেশনে ঢোকার পথে দেখলাম একজন ট্রেনে কাটা পড়েছেন । মাঝেমধ্যেই পড়েন । পুলিশ-ডোম ঘিরে রয়েছে দেহটিকে । পুলিশ আধিকারিক দেহের উল্টোদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন । ওঁদের তো এসব গাসওয়া , তবুও দেখে মনে হল, ওঁর ভেতরে কোথাও একটা অস্বস্তি কাজ করছে । আর দেখলাম কিছু অপেক্ষমাণ যাত্রী খুব আগ্রহ নিয়ে কাজটা দেখছেন, মধুর ওপরে পিঁপড়ে জমা হওয়ার মত করে , ঠিক যেমনটা দেখেন এসব ক্ষেত্রে । আচ্ছা, একটা কাটা পড়া মানুষের দেহ বিন্যস্ত করার প্রক্রিয়া ঠিক কতখানি দর্শনীয় হতে পারে ? সিগমুন্ড ফ্রয়েড বেঁচে থাকলে হয়ত এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন । বীভৎসতার প্রতি আগ্রহ-নির্মমতা বোধহয় মানুষের সহজাত । অবচেতনে সুপ্ত অবস্থায় থাকে , আর সুযোগ পেলে জেগে ওঠে । মানুষ নাকি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন সামাজিক জীব ! কুকুর আর মানুষের সমাজের মধ্যে ফারাকটা দেখে ওদের মনুষ্যেতর বলতে লজ্জা হয় । ইতর কারা ? বিচার করে কে ?
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/%20pub-9792609886530610_61.html
"ঐশ্বর্যের ক্ষমতা জিনিসটা এতই বিশ্রী যে সেটা পরের ধার করা হইলেও তাহার অপব্যবহারের প্রলোভন মানুষে সহজে কাটাইয়া উঠিতে পারেনা ।"
----- শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , নবম অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/blog-post_30.html
সাবেক কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থা দেখা আমার বহুদিনের ইচ্ছে ! এমন অদ্ভুত ইচ্ছের কারণ কী ? কাগজে পড়েছি সেই ব্রিটিশ আমলে তৈরি কলকাতার ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি । ফলে সেই আমলে তৈরি ভূগর্ভস্থ দেওয়ালগুলিই এখনও বিরাট নালার কাজ করে মহানগরে । সেই দেওয়ালগুলোর চেহারা দেখা আমার বহুদিনের সাধ । এমনিতে উপায় নেই , এই সুযোগ একমাত্র মিলতে পারে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা হলে । একদিন আচমকাই চাঁদনি চকের কাছে সেই সুযোগ হল । ম্যানহোলে নেমে কাজ করছিলেন পুরকর্মীরা । আমি উঁকি মেরে যতটা সম্ভব খুঁটিয়ে দেখছিলাম । উপরে যে সব পুরকর্মী দাঁড়িয়েছিলেন , তাঁদের একজন হঠাৎ আমাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে অস্ফুটে বললেন ---- "সরি ।" খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললেন ---- "বিষাক্ত গ্যাসে মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন ।" কিন্তু 'সরি' কেন ? উনি আমাকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তাই । ওঁর সৌজন্যবোধ আর উপস্থিত বুদ্ধি সেদিন লজ্জা দিয়েছিল আমায় ।
ষোল বছর পার করেও কলকাতা আমার কাছে এখনও অচেনা । খুব চেনা রুট না হলে সাধারণত কন্ডাক্টরকে গন্তব্য জানিয়ে ডেকে দিতে বলি । সেদিন নামব ই. এম. বাইপাসে , ধাপার মাঠের কাছে । গন্তব্য আসার পর কন্ডাক্টর ডেকে তো দিলেনই , নেমে যাওয়ার পরে বললেন ---- "সাবধানে রাস্তা পার হবেন ।" শুধু এই একটি বাক্য খরচ করে উনি আমার মনের মণিকোঠায় স্থায়ী জায়গা দখল করে নিয়েছেন ।
কলকাতার বন্ধুরা হাত ধরে চিনিয়েছিল ধর্মতলায় ডেকার্স লেনের 'চিত্তবাবুর দোকান' --- অফিস পাড়ার বাবুদের টিফিন করার খুব প্রিয় জায়গা । এখানে বিশেষ করে চোখে পড়ে কলকাতা হাইকোর্টের উকিলদের । খানদানি চায়ের কাপ - পেয়ালা , খাবার প্লেট তো আছেই , এই দোকানের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গেলে , বলতেই হয় ওঁদের বিরাট উঁচু কাঠের টুলটার কথা , যেটার উপর দোকানের মালিক বসে থাকেন । কাগজে ওঁদের বিরাট সুনামের কথা পড়েছি । সেটা কেন , বুঝলাম একদিন বৈকালীন জলযোগ সারতে গিয়ে । সেদিন দোকানের সামনে বসার জায়গায় তিল ধারণের জায়গা নেই । আমি, সত্যি কথা বলতে কী , কাঁধের ব্যাগ আর হাতের প্লেট সামলে , কিছুতেই মানিব্যাগটা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না । হঠাৎ টুলের উপর থেকে দোকানের মালিক বাড়ির বড়দের মত শাসনের সুরে বললেন ---- "আঃ । অত তাড়ার কী আছে ! খেয়ে নিন আগে । পরে টাকা দেবেন ।" চিকেন স্টুটা কেন যেন অমৃত মনে হচ্ছিল সেদিন । জলপাইগুড়ি থেকে এসে পড়েছি এমন এক জনসমদ্রের কাছে , যেখানে আমাকে কেউ চেনে না । একটা দুর্ঘটনা ঘটলেও বাড়িতে খবর পৌঁছতে অন্তত ছয়- সাত ঘণ্টা সময় লাগবে । প্রথম প্রথম তাই বড্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতাম । এরকম আন্তরিক ব্যবহার পেতে পেতে , এখন একটু বুকে বল পাই । কবীর সুমন বোধহয় আমাদের মত মানুষদের কথা ভেবেই লিখেছিলেন ----- "লোকটা দেখল ঠিক দু'তিনটে হাত যায় জুটে ।"
অসংখ্য গল্প আছে । কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি ! ২০১২ সাল । জুলাই মাস । বাবা ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি । পরপর রাত জাগা চলছে । একদিন সকালে জরুরি কাজে ভাইকে হাসপাতালে রেখে লোকাল ট্রেনে ফিরে আসছি ব্যারাকপুরে । ট্রেনে ওঠার পর থেকে মাথাটা ঘুরছিলই , সোদপুরের কাছাকাছি এসে হঠাৎ ভীষণ বমি পেল । টলতে টলতে দরজার কাছে গিয়ে হাতলটা কোনওমতে ধরে বাইরে ঝুঁকে পড়লাম । অপ্রত্যাশিত ভাবে এক জোড়া হাত নেমে এল আমার কাঁধে । পিছনে তাকিয়ে দেখি , আমারই বয়সী এক ভদ্রলোক বলছেন --- বসে পড়ুন , নইলে পড়ে যাবেন । নিজেকে সামলে সিটে এসে গা এলিয়ে দিলাম । উনি হাত ধরে ব্যারাকপুরে আমাকে নামিয়ে দিলেন । বাড়িতে এসে ওষুধ খেয়ে একটু সুস্থ বোধ করার পর খেয়াল হল, ওঁকে একটা ধন্যবাদও জানানো হয়নি , উনি হারিয়ে গেছেন শহরতলির জনারণ্যে ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/%20pub-9792609886530610_16.html
কলকাতা , তুমিও হেঁটে দেখ ক-ল-কা-তা...
" স্নেহের গভীরতা কিছুতেই কালের স্বল্পতা দিয়ে মাপা যায় না ।"
---- শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , চতুর্থ অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/blog-post_27.html
এই ফেসবুক - হোয়াটস অ্যাপের যুগে আমি অনেক স্মার্ট হয়ে গেছি ! টুক করে ছবি তুলে টাক করে ফেসবুকে তুলে দিই , অনেক লোক দেখতে পায় । পছন্দ এবং অপছন্দ করে । লকডাউন চলাকালীন এই প্রবণতা বেড়েছে । অনেক প্রতিভার স্ফুরণ হচ্ছে । জানতে পারছি গোমড়াথেরিয়াম দাদাটি দুর্দান্ত স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান । যে মেয়ে জিন্স-টপ ছাড়া পরে না , সে দারুণ রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় ওই পোশাকেই । কিন্তু এমনও তো সময় ছিল যখন খ্যাতি(এবং কুখ্যাতি) পাওয়া এত সহজ ছিল না । কেউ হয়ত ভাল সেতার বাজাতেন , কেউ সুন্দর গান করতেন , কিন্তু নিজেকে প্রকাশ করবার উপযুক্ত মঞ্চ পাননি । এমন অনেকেই আছেন আমাদের পরিবারে । স্মৃতি থেকে আমি সেই সময়ে দু'টি ঘটনা বলি । সুহৃদ লেন কালীবাড়ির পাশে , আমাদের খেলার মাঠে সরস্বতী পুজো হত । সেবার মূর্তি গড়ার দায়িত্ব পেলেন শিল্পী অশোকদা (সমাদ্দার) । মূর্তি তৈরি হবে কাগজের মণ্ড দিয়ে , এবং মূর্তি তৈরি হবে আমাদের সামনেই । এই কথাটা গুরুত্বপূর্ণ , কারণ খুব ছোটতে দুরন্তপনার জন্য আমাদের মাটির মূর্তি তৈরির স্টুডিওয় ঢুকতে দেওয়া হত না । অশোকদা সকাল - বিকেলে সুবিধেমত আসতেন আর আমাদের মত কচিকাঁচাদের নির্দেশ দিতেন যার বাড়িতে যত খবরের কাগজ আছে , সব নিয়ে আসতে । তখন জলপাইগুড়িতে কাগজ আসত পরের দিন । অতিউৎসাহে দু'একদিন সেদিনের কাগজও অশোকদার হাতে তুলে দিয়ে বাড়িতে বকা খেয়েছি । আমি - ভোলা এবং অন্যান্যরা সেইসব কাগজ কুচি কুচি করে ছিঁড়ে জলভরা বালতির মধ্যে চুবিয়ে রাখতাম । এক-দু'দিনের সেই নরম কাগজের সাথে ফেভিকল মিশিয়ে অশোকদা মণ্ড তৈরি করতেন । আসল কাজ তার পরে । বেশি দেরী করলে মণ্ড আঠায় শক্ত হয়ে যাবে বলে অশোকদা দ্রুত , দক্ষ হাতে বাঁশের কাঠামোর ওপর পরতে পরতে মণ্ড চড়াতেন । হাতের নিখুঁত চাপে তৈরি হত অবয়ব । এইভাবে শুধু মণ্ড দিয়ে আমাদের চোখের সামনে এক দুর্দান্ত সরস্বতী মূর্তি তৈরি হল । একেবারে জ্যান্ত যেন । মৃন্ময়ী(?) দেবীকে চিন্ময়ী করে তুলতে অশোকদা মূর্তিতে সোনালি রঙ করলেন । সবমিলিয়ে সে এক দেখার মত ভাস্কর্য তৈরি হল । খুব সকাল আর সন্ধ্যা নামার আগে হালকা কুয়াশার মধ্যে সে অনুপম সৃষ্টির সাক্ষী হতে পারা আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা । গোটা পাড়া টিউবলাইট দিয়ে সাজানো হয়েছিল , শহর ভেঙে পড়েছিল আমাদের পাড়ার ঠাকুর দেখতে । ছোট ছিলাম , তাই সেই মূর্তির কী হল , জানিনা এখনও । কিন্তু বারবার মনে হয় , আর দশজনকে যদি ডেকে দেখাতে পারতাম । এ জিনিস দেখাও বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার ।
যদি খুব ভুল না করি , সে বছরই মুক্তি পেয়েছে শ্যাম বেনেগালের ছবি ---- 'সুরজ কে সাতওয়াঁ ঘোড়া' । সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই বাবার সহকর্মী , আমার আঁকার শিক্ষক অখিল স্যার প্লাস্টার অব প্যারিস দিয়ে তৈরি করলেন সূর্যের সাতটি ঘোড়া । একেবারে জীবন্ত । যেন চোখের সামনে সূর্যের রথ টেনে নিয়ে চলেছে সাতটি সাদা ঘোড়া । দিশারী ক্লাবের দুর্গা পুজোর সেবার মূল আকর্ষণই হল সেই ভাস্কর্য ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/08/%20pub-9792609886530610_44.html
"মানুষের কর্মই কেবল অস্পৃশ্য ও অশূচি হয় , মানুষ হয় না ।"
----- শ্রীকান্ত , তৃতীয় খণ্ড , চতুর্থ অধ্যায় , শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...