খোলসের ভিতরে
সায়ন কাঁড়ার
লিখতে বসে আজকে কিছুতেই কলমটা আমার কথা মানছে না। কি লিখবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা....মাথার মধ্যে হাজার একটা জিনিস ঘুরপাক খেলেও....গল্পের মায়াজাল কিছুতেই আর বুনতে পারছিনা। তাই ভাবছি একটা ঘটনার কথাই আজকে বলি। এই ঘটনা আমার কর্মজীবনের প্রথমদিকের। আমি তখন সদ্য বি.কম পাস করে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার কথা একদম ঝেড়ে ফেলি মাথা থেকে। পড়ার ইচ্ছা যে ছিল না তা নয়,কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় আমাদের সহায় হয় না। আমার ছোটবোন তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, ওর খুব ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন বিজ্ঞানী হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ায় ছোট থেকেই বাবা-মা কে দেখেছি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে, অনেক ভালোলাগা ভালোবাসা হাসিমুখে ত্যাগ করতে,তবে আমিই বা তাদের সন্তান হয়ে এইটুকু পারব না কেন।
বোন মেধার দিক দিয়ে আমার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে... আর আমাদের অবস্থার কথা ভেবে কোনদিন মুখ ফুটে বাড়তি কিছু চায় না। কখনো কোন বই প্রয়োজন হলে শিক্ষকদের থেকে চেয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় অংশটুকু জেরক্স করে নিত বা নোটস বানিয়ে রাখতো। যাক গে সেসব কথা এখন থাক। এই গল্প আমাকে বা আমার পরিবারকে নিয়ে নয়।
এই সময় আমার মনে হয় যদি কোনো একটা কাজ জোটাতে পারতাম তাহলে বাবা-মার পাশে হতে পারতাম ওদের একটু সাহায্য করতে পারতাম। বহু খুঁজে কাজ পেলাম শহরতলীর একটি বৃদ্ধাশ্রমে। খুব বেশি টাকা না পেলেও ওই মুহূর্তে,শুন্য হাতের চেয়ে ওই টাকার মূল্য আমার কাছে অনেক। অন্তত বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে পারবো।
অবশ্য বিশেষ পরিশ্রমের কাজ আমাকে করতে হত না। আমার কাজ ছিল এই বৃদ্ধাশ্রমের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা... বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য কি কি কাজ হচ্ছে তার দিকে নজর রাখা আর তার কোনো প্রয়োজন পড়লে তার খেয়াল রাখা।
বেশ আনন্দ সহকারে করছিলাম নিজের কাজ,বেশ একটা তৃপ্তি ছিল। সহজ-সরল বয়স্ক মানুষ গুলোর মাঝে দিব্যি সময় কেটে যেত। মানুষগুলো ভীষণ স্নেহ করতেন আমায়। ওনাদের মধ্যে কিছুজনের অতীত জীবনের কথা শুনে ভারী কষ্ট হত, ভাবতাম মানুষ এমনও হতে পারে... যে মানুষগুলো তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখায় তাদের এভাবে কি করে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে পারে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি... আমার সেই বৃদ্ধাশ্রম এর মালিকের বিষয়সম্পত্তি ছিল প্রচুর। তিনি অনেক ছোটবেলাতেই তার মাকে হারিয়েছেন,পরে বাবাকেও, পরবর্তীকালে ব্যবসা করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। উনি মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধাশ্রমে আসেন...এখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধা,শরীর-স্বাস্থ্যের আর খোঁজ নেন। বড়ো ভালো মানুষ তিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমের, প্রতিটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে সমস্ত কর্মচারী সকলেই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা ও পছন্দ করেন।
এইভাবে বেশ কয়েকবছর কেটে গেল।একদিন যখন বোনকে স্কুলে পৌছে আমি কাজে যাচ্ছি হঠাৎ নজরে পড়লো রাস্তার এক কোণে বেশ কিছু লোক জমায়েত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়া থাকায় পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গিয়েও কি ভেবে ফিরে দাঁড়ালাম। সেখানে গিয়ে দেখি এক অশীতিপর বৃদ্ধমানুষ পড়ে আছে রাস্তার পাশে... শতছিন্ন একটুকরো কাপড়পরা কঙ্কালসার এক অশরীরী প্রেতের মত শরীরে খুলিটা যেন আলগা করে বসিয়ে দিয়েছে কেউ। তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া প্রায় বুজে আসা চোখটা থেকে বিন্দু বিন্দু করে জল ঝরে পড়ছে...তাকে দেখতেই এত ভিড়।
সম্ভবত কোনো গাড়ি তাকে ধাক্কা মেরেছে। সত্যিই কি ভারি অদ্ভুত এই দুনিয়া...দুর্বলকে নিয়ে আলোচনা করতে,তার অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করতে কারো সমস্যা নেই, সমস্যা কেবল তাকে একটুখানি সাহায্য করার। ভীষন রাগ হল আজব দুনিয়ার এই আজব কান্ড কারখানা দেখে। নিজেই এগিয়ে গেলাম বৃদ্ধমানুষটিকে সাহায্য করার জন্য। কোনো ঝামেলা হবে না এই আশ্বাসে,স্থানীয় এক ব্যক্তির সাহায্যে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসতে আসতে যা বুঝলাম তা হলো..
উনি একজন হতভাগ্য পিতা। যিনি নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে 'টুবলু' মানে তার সন্তানের এক টুকরো জীর্ণ ছবি আঁকড়ে তাকে খুঁজে চলেছেন। হয়তো কোনভাবে তাঁর পরম প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার এই অবস্থা। সবকিছুই বিস্মৃত হয়েছেন তিনি.... কোথায় তার বাড়ি...কোথায় তার পরিবার...এমনকি কি বা তার নাম। শুধুমাত্র ভোলেননি তাঁর সন্তানকে,অসহায় দৃষ্টিতে জরাজীর্ণ ছবিটা আঁকড়ে অবাধ পিতৃস্নেহে 'টুবলু' কে খুঁজে চলেছে তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া ভাসা ভাসা চোখদুটো।
ফার্স্ট এইড করে দিয়ে বড়বাবু মানে বৃদ্ধাশ্রম এর মালিককে ফোন করে ঘটনাগুলো সবিস্তারে বললাম.... সবটা শুনে তিনি আমার কাজের জন্য গর্ব প্রকাশ করলেন এবং জানালেন খুব শীঘ্রই তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আসছেন। বড়বাবু যখন এলেন তখন প্রায় সন্ধ্যা। আমি ততোক্ষণে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেছি।
পরদিন ভোরবেলা ফোনের আওয়াজে আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেল।
ফোনটা নিয়ে দেখি,শিবুদা ফোন করেছে। শিবুদা,আমাদের বৃদ্ধাশ্রমের সিকিউরিটি গার্ড।
এত সকালে হঠাৎ ফোন করায় মনে হল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। আমার ধারণা যে মিথ্যে না, কয়েক মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারলাম।
কালকের সেই অশীতিপর বৃদ্ধমানুষটির জীবনাবসান ঘটেছে। ফোনটা রেখে খানিকক্ষণ চুপ করে খাটে বসে রইলাম। মনটা ভারি হয়ে উঠল...মানুষটার প্রতি বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল একটা দিনেই। কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে চটজলদি ছুটলাম বৃদ্ধাশ্রমে। ওখানে গিয়ে জানলাম মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরেই সব শেষ হয়ে যায়... সকালে শিবুদা এসে দেখে সব শেষ। আমরা সকলে মিলেই সেই কঙ্কালসার জীর্ণ শরীরটা বয়ে নিয়ে গেলাম শেষকৃত্যের উদ্দেশ্যে। শুনলাম বড়বাবু জানিয়েছেন মুখাগ্নি তিনি করবেন.......
কি ভাবছেন!!!!!!
এ তো একটা সামান্য ঘটনা... পথে-ঘাটে এরকম ঘটনা তো প্রত্যহই ঘটে থাকে... এইরকম অসহায় মানুষদের রাস্তাঘাটে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই...তাই না...
এতদূর সবটা হয়তো তাই ছিল। কিন্তু এরপর যেটা আপনাদের বলব সেটা হয়তো এতটা সামান্য সাধারণ না....
এই ঘটনার পরের দিন ওই ঘরটা, মানে যেই ঘরে ওই বৃদ্ধ ছিলেন,সেই ঘরটা পরিষ্কার করতে যাই।
অবশ্য তিনি ছিলেন বলা ভুল,এক রাতের অতিথি হয়ে ওই ঘরে এসেছিলেন পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে।
বৃদ্ধাশ্রম এর বয়স্ক মানুষরা মিলে ঠিক করেছিল, ওই ঘরেই মানুষটার আত্মার শান্তি কামনায় বাকি আচার পালন করবে। ঘরটা পরিষ্কার করতে করতে খাটের তলে আচমকা একটা কাগজের টুকরো খুঁজে পাই।
না কাগজ ঠিক না!!!
একটা একফালি অর্ধেক ছেঁড়া কাগজে প্রায় ঝাপসা হয়ে আসা একজন কিশোরের ছবি।
এই ছবি আমার অপরিচিত নয়।
এই ছবি ওই বৃদ্ধমানুষটির একমাত্র সম্বল ছিল।
তাঁর ছেলে 'টুবলুর' ছবি।
ছবিটা হাতে তুলে নিতে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। একফালি কাগজটার ঠিক পিছনে ত্যারা বাঁকা ভাবে লেখা আছে...
ধন্যবাদ..!!!!
এটা কে লিখল..!!!!
কালকে তো চোখে পড়েনি..!!!!
তারপর ভাবলাম হয়ত উন্মাদ বৃদ্ধকে শান্ত করতে তার অনুরোধে এই বৃদ্ধাশ্রমের অন্য কোন বৃদ্ধ এটা লিখেছেন। এ নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামালাম না।
এখানে কাজ করতে করতেই, আমি বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারভিউ দিতাম, ভালো কোন চাকরির আশায়, যাতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পারি।
এই ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ পাস করার চিঠি পাই। চাকরিটা হয়ে যাওয়াতে বৃদ্ধাশ্রমের কাজটা ছেড়ে দিলাম। তারপর ব্যস্ত হয়ে গেলাম নিজের নতুন চাকরিজীবনে।
কয়েকদিন আগে শিবুদার সঙ্গে দেখা হয়। কুশল সংবাদ বিনিময়ের পর,কাছেই একটা চায়ের দোকানে বসে শিবুদাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-"আচ্ছা শিবুদা বৃদ্ধাশ্রমের সবাই কেমন আছে গো... বড়বাবু কেমন আছেন... উনি আশ্রমে আসেন এখন...."
উত্তরে শিবুদা যা বলল তাতে মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাসের হিসেব পুরো ঘেঁটে গেল।
-"সবাই ভালো আছেরে ভাই। তুইতো কাজটা ছেড়ে দিলি, তারপর যে কি সব ঘটে গেল জানিস তো...."
-"মানে.....!!!!????"
কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলাম।
-"ওই বৃদ্ধ মানুষটাকে তোর মনে আছে... যাকে তুই আহত অবস্থায় রাস্তা থেকে ধরে এনেছিলি....."
-"হ্যাঁ,মনে থাকবে না কেন। বড্ড অসহায় ছিল মানুষটা। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে একটা ছবি আঁকড়ে ছেলেকে....."
-"উনি বড়বাবুর বাবা...."
আমার কথা শেষ করার আগেই শিবুদা বলে উঠলো।
-"কি বলছ টা কি শিবুদা...!!!!!"
ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম শিবুদার দিকে।
-"শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যিরে ভাই....আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি.... উনি নিজে পুলিশের কাছে সবটা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছেন..."
এতোটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শিবুদার বুক চিরে।
একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগল,
-"উনার বাবার বাড়ি বীরভূমের কোন এক গ্রামে। মানে বড়বাবুর আসল নিবাস যেখানে ছিল,সেখানে নাকি কি সব জমিজমা ছিল। পৈত্রিক জমি-বাড়ি, বাপ-ঠাকুরদার স্মৃতি বলে ওগুলো বড়বাবুর বাবা বিক্রি করতে চাননি। এদিকে ব্যবসা করতে চাওয়া বড়বাবুর পুঁজির প্রয়োজন। শত চেষ্টা করেও যখন কোন পুঁজির জোগাড় করে উঠতে পারেননা তখন বড়বাবুর চোখ দিয়ে পড়ে সেই জমির দিকে। বারবার করে সেটা বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করার পর তাঁর বাবা রাজি না হলে বাবা-ছেলের বিবাদ বাধে। এই বিবাদের কোন মীমাংসা না হওয়াতে... এক রাতে রাগের মাথায় বাবার মাথায় আঘাত করে তাকে বেহুশ করে অতি সন্তর্পনে তুলে দেয় কোনো এক ট্রেনে। প্রতিবেশীদের জানায় বাবাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে নিজের কাছে। আর তারপর সব জমিজমা আত্মসাৎ করে সেগুলো বিক্রি করে চলে আসে কলকাতায়। হয়তো সেইদিনের আঘাতেই ওই বৃদ্ধ ওনার সকল স্মৃতিশক্তি বিস্মৃত হয়েছিলেন......"
নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওইরকম একটা দেবতুল্য মানুষের আড়ালে এমন ভয়ঙ্কর শয়তান লুকিয়ে থাকতে পারে সত্যি কল্পনা করতে পারছিলাম না। কৌতুহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,
-"বড়বাবু তাহলে কোথায় এখন..!!??"
খানিকক্ষণ নিস্পলক দৃষ্টিতে দূরের দিকে তাকিয়ে, গলার আওয়াজ খাটো করে শিবুদা বললো,
-"জেলে.... উনার স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করেই ওনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরবর্তীকালে আদালত ওনাকে কারাদণ্ড দেয়।
লোকটা যে কি ভয়ঙ্কর চিন্তা করতে পারবি না... জানিস লোকটা এও বলেছে যে ঐদিন রাতে আমার ছুটির সুযোগ নিয়ে মাঝরাতে উনি বৃদ্ধ বাপকে খুন করতে এসেছিলেন.... এতদিন পরে হঠাৎ বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে যান বড়বাবু, যদিও তিনি সব বিস্মৃত হয়েছেন কিন্তু টুবলুকে ভোলেননি... যদি উনি কোন ভাবে সব কিছু ফাঁস করে দেয় সেই ভয়ে বাবাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বুড়ো হার্টফেল করে মারা গিয়েছিলেন। তাই প্রিয় ছেলের হাতে মরতে হলো না অন্তত।"
-"কিন্তু বড়বাবু এতকিছুর পর আচমকা এভাবে সবটা স্বীকার করলেন কেন.... এত নৃশংস যে মানুষটা হতে পারে... সে...."
আনমনে বলে বসলাম।
-"জানিনা রে।
হতে পারে বিবেক দংশন।
জানিস উনি একটা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে উনার সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডই ওনার বউ বাচ্চার ভরণপোষণ, এবং বাচ্চাটির পড়াশোনার খরচ চালাবে।
মাঝেমধ্যে ভাবলেই লজ্জা লাগে এরকম একটা জানোয়ারের জন্য কাজ করেছি।
ছিঃ ছিঃ!!"
ঝড়ের গতিতে বলে গিয়ে ধিক্কারে ফেটে পড়ল শিবুদা।
এরপর আরো কিছু কথাবার্তা সেরে এক একবার চা খেয়ে যে যার নিজের গন্তব্যে রওনা দিলাম।
সেদিন বাড়ি ফিরে এসে ড্রয়ার খুলে ওই হতভাগ্য বাবার অপদার্থ সন্তান 'টুবলুর' ফটোটা দেখি। তার পেছনের সেই আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা 'ধন্যবাদ'......
ছবিটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা এই ধন্যবাদ টা কে বৃদ্ধর নিছক পাগলামো, নাকি বৃদ্ধ সত্যিই কারো উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। শেষবারের মতো ছেলের সাথে সাক্ষাত করানোর জন্য কি তার উদ্দেশ্যেই এই কৃতজ্ঞতা....
বসে বসে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। আচ্ছা তিনি কি সত্যিই সব বিস্মৃত হয়েছিলেন,না কি.... আর সেদিন রাতেই ওই চার দেয়ালের মধ্যে কি ঘটেছিল....বড়বাবু ই বা কেন হঠাৎ সব স্বীকার করলেন.... বিবেক দংশন না কি ভয়...!!!!!!
আর বড়বাবুর মনে প্রথম থেকেই কি কোন আত্মগ্লানি ছিল। সম্পত্তির লোভে বাবাকে আঘাত করে সব আত্মসাৎ করলেও, তার মনের কোন অংশে কি কোন অপরাধবোধ লুকিয়ে ছিল। কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না, যে মানুষটা নিজের বাবার প্রতি এমন অবিচার করে, সেই একই মানুষ কিনা বৃদ্ধাশ্রমে অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এত যত্ন নিত।
সত্যিই মানুষের চরিত্র বোঝা বড়ই কঠিন। যে ছেলেকে, মানুষটা এত ভালোবাসলো, এমনকি স্মৃতি হারানোর পরও, সবকিছু ভুলে গেলেও ছেলেকে খুঁজে গেল সারা জীবন। সেই ছেলে বাবার উপর আঘাত করলো, এমনকি এত বছর পর অসহায় অবস্থায় বাবাকে দেখেও, তার মনে প্রতিহিংসা জাগল, সেই মানুষটা হঠাৎ কি করে আত্মগ্লানিতে ভুগে সবটা স্বীকার করলো।
সত্যিই কি সবটা এতটাই সরল। কোন এক অজানা কারণে যেন, আমার মন সবকিছু সরলভাবে মানতে পারছিল না।
ছবিটা হাতে নিয়ে একমনে এই সবই ভাবছিলাম,আচমকা একটা আওয়াজে হুঁশ ফিরলো। জানলা দরজাগুলো তীব্র হাওয়ার দাপটে ঝনঝন করছিল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আকাশ কালো করে ঝড় উঠেছে। অন্ধকার চিরে গর্জে উঠছে বিদ্যুৎ। ফটোটা টেবিলের উপর রেখে উঠে গেলাম জানলা দরজা জানলা বন্ধ করতে। তীব্র হাওয়াতে পর্দাগুলো উড়ছিল, হঠাৎই যেন একটা ঠান্ডা দমকা হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল ছবিটাকে, কানের কাছে যেনএকটা অস্পষ্ট ফিসফিস শুনতে পেলাম,
-"এত ভেবো না....সব প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যায়...স্বাভাবিক ভাবনার বাইরে যে অনেক কিছুই থাকে...."
ভয়ংকর ভূতের গল্প,
ছোটদের ভূতের গল্প,
ভূতের গল্প,
বিখ্যাত লেখকদের ভূতের গল্প,
সত্যিকারের ভূতের গল্প,
বড় ভূতের গল্প,
একটা বড় ভূতের গল্প,
bengali Ghost story
Literary genre