বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

ভূতুড়ে কোয়ার্টার । উজ্জ্বল বাউরি ।

 আমার বাবা বড়ো হয়েছে পুরুলিয়া জেলায় কোনো এক গ্রামে।বাবা প্রথম যুবক বয়সে কলকাতার নামি সরকারি হাসপাতালে চাকরী(swiper) পেলেন। কিন্তু বিয়ে করে ছিলেন পুরুলিয়া য়।আমরা তিন ভাই বড়ো হলাম কলকাতায় , আমাদের পড়াশোনা হল কলকাতায়।

যখন আমি মাধ্যমিক পাশ করলাম তখন বাবা
ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরির ট্রান্সফার করালো
পুরুলিয়ায়।কারন, পুরুলিয়ার সুন্দর প্রকৃতি, মনোরম আবহাওয়া , খোলা আকাশের নিচে শান্তি ভাবে জীবন যাপন কাটা।আমার পড়াশোনা আবার শুরু হল পুরুলিয়া তে। পুরুলিয়াতে আমার ঠাকুরদাদা যে গ্রামে থাকতো সেই জায়গায় পুনরায় বাড়ি বানিয়ে বসবাস করলাম আমরা।
বাবা যেই হাসপাতালে কাজ join করলেন আমাদের গ্রামের থেকে ১৮ কিমি দূরত্ব।বাসে ট্রাভেল করতে হয়। সেই হাসপাতালে দুটি কর্মচারী (swiper), আমার বাবা আর আরেকটি মাঝ বয়সী লোক অরূপ কাকা।
দু'জনের কাজ অদল-বদল করে হতো । যেদিন বাবা থাকত সেদিন অরূপ কাকা নিজের বাড়ি চলে যেতেন আর যেদিন অরূপ কাকা ডিউটিতে থাকতেন সেদিন বাবা বাড়িতে থাকতেন।বাবা যখন ডিউটিতে থাকতেন তখন দিন-রাত দুটি ই ডিউটি করতে হতো তাই বাবা অরূপ কাকার ইচ্ছায় ওনার কোয়াটার ব্যবহার করতেন।তাই বাবাকে আলাদাভাবে কোয়ার্টার নিতে হইনি।
কোয়াটার টি ছিল হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে। কোয়ার্টার টির ধারে পাশে ছোট্ট ছোট্ট গাছপালা, ঝোপঝাড় ঘেরা।
দূর থেকে শুধু কোয়াটারের ছাদটা , জলের টাঙ্কি চোখে পড়ত। কোয়ার্টারটায় মোট চারটি রুম ছিল বাকি তিনটি রুমে তিনটি বিবাহিত নার্স ছিল ।
বাবা বেশ অনেক বার একা সেই কোয়ার্টার রাতে থাকার পর বাবা লক্ষ্য করলেন প্রায় মাঝরাতে জানলার দড়জায় কেও ঠক্ ঠক্ ঠোকার আওয়াজ করতেন।বাবা প্রথম প্রথম ব্যাপারটা কোনো পাত্তা দেইনি। কিন্তু অনেক বার একেইরকম ঘটনা ঘটার জন্য বাবা অরূপ কাকাকে জিজ্ঞেস করলেন আগেও কি এইরকম হতো?
অরূপ কাকা বলেছিল ,'সামনে একটী সাঁওতালি গ্রাম আছে ওইখানের সাঁওতালি চোর গুলো এইরকম করে।' দড়জায় জানলার ঠোকার আওয়াজ বন্ধ হওয়ার কয়েক মাস পর গভীর রাতে কোয়ার্টারের বাইরের জানলার ওপাশ দিয়ে কোনো নারীর কান্নার শব্দ ভেসে আসতে লাগল। কান্নার আওয়াজ টা বেশির ভাগই আসত অরূপ কাকার রুমে ধারে পাশে থেকে।বাবা প্রথম ভেবেছিল কোনো প্রেসেন্ট মারা যাওয়ার কারণে তার আত্মীয় কান্নাকাটি করছে
কিন্তু বারবার একি কান্নার শব্দ ,তখন বাবা র মনে কিছুটা খটকা লাগল।
বাবা মাঝে মধ্যেই মদ্যপান করত ;তাই বাবা যখন বাড়িতে এসে এইসব ঘটনার কথাগুলো বলতেন তখন আমরা সবাই বাবাকে অবিশ্বাস্য করে কথা টা উড়িয়ে দিয়ে ছিলাম আর বাবাকে বোঝালাম হইত বেশি মদ্যপান করার জন্য ভুলভাল শুনতে পেয়েছিল।পরে যখন পাশের রুমে নার্সদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন তারাও সেই কান্নার শব্দের কথা স্বীকার করেছিল।
ভূত আছে কি নেই?
আত্মা আছে কি নেই?
এই সব কথা আলোচনা না করে বাবাকে ওইখানে একা ছাড়া যাবে না এটাই সিদ্ধান্ত হলো আমাদের পরিবারের। সেই বার থেকে বাবার সাথে মা নইত আমি যেতাম।
এমন‌ একদিন সেই কোয়ার্টারে মা আর বাবা ছিল।সময়টা ছিল গ্রীষ্মকাল , প্রচুর গরম । পুরুলিয়ায় একটু বেশি গরম পড়ে।
সেদিন বেশি গরম লাগার জন্য মা আর বাবা ছাদে ঘুমাতে গেল ।
হাসপাতালে পেসেন্ট গুলোর যে ধরনের লোহার বেড্ দেওয়া হয় সেই রকম দুটি বেড কোয়ার্টারে ছাদে রাখা থাকত। সেই বেড দুটি তে মা একটাতে আর বাবা আরেকটি তে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে পড়ল। ঠিক রাত ১/১:৩০ সময় মায়ের বেডটা কোনো অচেনা শক্তি নিচ থেকে উপর দিকে উঠানোর চেষ্টা করছে,বেডের নিচ থেকে বেডটার ধাক্কার আওয়াজে মায়ের ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেল। মা যখন চোখ খুললেন তখন বেডের নিচে কোনো কিছুর থাকার অনুভব করলেন যেন বেডের নিচে কেও রয়েছে। সেদিন মা খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন।
মা যখন এইরকম ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছিল তখন বাবাও ঘুমের কাতরে স্বপ্ন দেখছিলেন -একটি লম্বা , কালো মানুষের ছায়া মূর্তি বাবা মাথা কাছে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।তখন মায়ের সাথে বাবারও ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল। সেইবার থেকে মা-বাবা ছাদে ঘুমাতে সাহস পাইনি।
তারপর তিন-চার মাসের মধ্যে রুমের বাকি তিনটি নার্স ওইখানে থেকে ট্রান্সফার হয়ে চলে গেলেন। তাদের পরিবর্তে আর দুটি নতুন নার্স ওই কোয়ার্টারে রুমে আশ্রয় নিয়েছিল কিন্তু কেজানে তারাও আশ্চর্য ভাবে সেই কোয়ার্টারে থাকতে পারলো না। শেষে ওই কোয়ার্টারে বাবা আর অরূপ কাকায় রয়ে গেলো।
ধীরে ধীরে ফাঁকা রুমগুলো ময়লা হতে হতে , মাকড়সা জাল ঘিরে এক ভুতুরি কক্ষে মতন পরিনত হলো। বিকেলে ঢুকতেই কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে আসত। সামান্য শব্দ টা অনেক বেশি শোনাত।
এমনি এক বিকেল বেলায় আমি অরূপ কাকার রুমে একা বসে কবিতা লিখতে মগ্ন ছিলাম বাবা হাসপাতালে কাজে ছিল। ঠিক তখনি কোয়ার্টারে মেন দরজায় পায়ের হাঁটার শব্দ ,পুরো বুঝতে পারছিলাম কেও চপল পরে কোয়ার্টারে ঢুকল। স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম জুতোর আওয়াজটা কোনো ভ্রম নই।আমি ভেবেছিলাম হইত বাবা আসছে তাই নিশ্চিত ছিলাম কোনো সন্দেহ করিনি। কিন্তু যখন শুনলাম পায়ের আওয়াজ টা রুমের দিকে না এসে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল তখনই মনটা খটকা লাগলো যে বাবা উপরে কেন গেল?
আমি রুমে বসেই কান পেতে এক মিনিট মতন অপেক্ষা করতে লাগলাম যে পায়ের আওয়াজ টা কখন নিচে আসবে কিন্তু যখন দেখলাম কারও নিচে নামার টু শব্দটি পেলাম না , আমি দুবার জোরে হাঁক দিলাম 'বাবা' বলে। কোনো উত্তর না আসায় আমি খাতা কলমটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে হাওয়ার বেগে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে দেখলাম কেউ কোথাও নেই । ছাদের নিচে ধারে পাশে কাওকে দেখতে পেলাম না ।কেও ঝাঁপ দিয়ে দৌড়ে পালালেও খুব দূরে যেতে পারবে না কিন্তু না ...কাওকে পেলাম না।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের একটা ড্রাইভার প্রায় বাবার সাথে রুমে আড্ডা জমাতো আমার মতন সেই ড্রাইভার টারও রুমে একা বসে ছিলেন আর আমার মতোই তারও অবিকল অভিজ্ঞতা হয়েছিল।সেও শুনতে পেয়ে ছিল উপরে যাওয়ার জুতোর আওয়াজটা।
বাবা-মা অনেক বার সেই কোয়ার্টারে থাকাকালীন মাঝরাতে খোলা ছাদের উপরে কারও পায়ের আওয়াজ,কখন ও ঝাড়ু দেওয়ার মতো জোরে জোরে আওয়াজ শুনতে পেতো। এমনি এক রাতে ছাদের উপর থেকে অনেক গুলো ইট্ একসাথে ভাঙার ভয়ানক শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন যেন কারা ইট গুলো মেঝেতে কাছাড় মেরে ভাঙছে। বাবা মা একসাথে টর্চ,লাঠি নিয়ে সাহস করে উপরে উঠে দেখলেন কেও তো নেই; একটি ইটও মাত্র ছিল না।
একদিন অরূপ কাকাকে আমরা জোর করে জিঞ্জেস করলাম , তোমার সাথে এইরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি?তারপর অরূপ কাকা যা বলে ছিল তা অবাক করার মতো। অরূপ কাকা একদিন সন্ধ্যায় সময় duty যাচ্ছে ।
রুমের দরজাটা তালা লাগিয়ে হাসপাতালে দিকে রওনা দিল ওমন সময় কোয়ার্টার থেকে বের হতে হতে দুধওয়ালা বোতলের দুধ নিয়ে হাজির ।
হাতে দুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে। অরূপ কাকা হাঁটতে হাঁটতে দুধওয়ালাকে বলে গেল দুধটা রুমে বাইরে রেখে দিতে।
কিছুক্ষণ পর অরূপ কাকা যখন কোয়ার্টারে এল ;দেখলো বোতলের দুধটা রুমের বাইরে রাখা ছিল। উনি বোতলটা নিয়ে রুমে রান্নাঘরে গেল দুধটা গরম করতে সেই তখনই কোয়ার্টারে বাইরে থেকে দুধওয়ালা কন্ঠস্বর এলো, 'দুধটা নিয়ে যাও!'
কাকা গিয়ে দেখে দুধওয়ালা আবার দুধ দিতে এসেছে । অরূপ কাকা আশ্চর্য হয়ে বলল, 'কতবার দুধ দিয়ে যাবে একটু আগেই তো দিয়ে গেলে, বিশ্বাস হচ্ছে না ;দাঁড়াও বোতলটা এনে দেখাচ্ছি!'
এই বলে অরূপ কাকা যখন রান্নাঘরে ঘরে গেল
বোতলটা আর দেখতে পাওয়া গেল না । রান্নাঘর থেকে বোতলটা যেন কর্পূরের মতো উবে গেছিল।
ফিরে এসে লজ্জায় নীরবে আরেকবার দুধটা নিতে হয়েছিল। দ্বিতীয় কথা যখন শুনলাম তখন সব রহস্য সমাধান হয়ে গেল; সেই কোয়ার্টারে পাশে এক রুমে নাকি এক মহিলা আত্নহত্যা করে ছিল তার আত্মার উপদ্রব আজও রয়ে গেছে। আরেকটি ব্যাপার, হাসপাতালটি এখানে তৈরী হওয়ার আগে এই পুরো জায়গাটা নাকি শ্মশান ছিল।
ঘটনাটা অরূপ কাকার মুখ থেকে শোনার পর আমরা সবাই একে ওপরের দিকে চেয়ে থেকে গেলাম।
কোয়ার্টারে এইসব ঘটনা গুলো পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। যদি কোনো ব্যক্তি, পাঠকগনের কাছে এর উত্তর থাকে তবে অবশ্যই দিবেন।


sankhamanigoswami.blogspot.com


ভূতুড়ে বাড়ি,

ভূতুড়ে গল্প,

ভূতুড়ে গল্প দেখান, 
ভূতুড়ে,
ভূতুড়ে গল্প দাও,
ভূতুড়ে গল্প ভুতুড়ে গল্প,

ভূতুড়ে আয়, 

ভূতুড়ে গল্প দেখতে চাই, 

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

ভুতের সত্য ঘটনা । bhuter sotti ghotona । ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা । বাংলা ভুতের গল্প সত্য ঘটনা ।


ভুতের গল্প,ভূতের গল্প,ভৌতিক ঘটনা,ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা,ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা সত্য,ভূতের গল্প সত্য ঘটনা,ভূতের গল্প সত্য ঘটনা বাংলা,ভূতের গল্প ফুল ভিডিও,ভূতের গল্প বাংলায়,ghost story in bengali,ghost story in bengali real,ghost story in bengali video,ghost story in bengali language,original ghost story in bengali,ghost story,horror stories,ghost stories,bhuter golpo,ভুতের সত্য ঘটনা,bhuter sotti ghotona,বাংলা ভুতের গল্প সত্য ঘটনা,sotti bhuter golpo

 

শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

হাল্লা চলেছে যুদ্ধে এবং হল্লা । রাশিয়া বনাম ইউক্রেন ।

 হল্লা


রাশিয়া মানে খুব ছোটবেলায় আমার কাছে আর্ট পেপারে ছাপা 'মিশা' পত্রিকা । ইন্দ্রজাল কমিক্সের মত , কিন্তু ভাষাটা ইংরেজি । বাবা পড়ে শোনাতেন , মানে বোঝাতেন । যতদূর মনে পড়ে পত্রিকাটি রাশিয়া থেকেই প্রকাশিত হত । রাশিয়া মানে আরেকটু বড় হয়ে আমার কাছে ভস্তক , রাদুগা প্রকাশনীর বই । তারপর যখন কাগজ পড়া শুরু করলাম একটু একটু করে , তখন কাগজে দু'টি শব্দ দেখতাম প্রায়ই -- 'গ্লাসনস্ত' আর 'পেরেস্ত্রোইকা' । মিখাইল গর্ভাচভ আর এই নীতি সমার্থক । মনে আছে , আমি বাবাকে বলতাম ,ওনার চকচকে টাকে ওরকম দাগ কেন ? চা পড়ে গেছিল ? ! দু'বছর আগেও ভুলে গেলে বাবার কাছে জেনে নিতাম 'গ্লাসনস্ত' কথাটির অর্থ হল মুক্ত চিন্তা আর 'পেরেস্ত্রইকা' মানে হল পুনর্গঠন । কমিউনিস্ট রাশিয়াকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করতে চেয়ে এই নীতি প্রবর্তন করেছিলেন গর্ভাচভ ।
কিন্তু আজ ? রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের কথাই শেষ কথা । চিন - উত্তর কোরিয়া-ব্রাজিল-ভারত-মায়ানমার সর্বত্র একই ছবি । যায় যদি যাক প্রাণ , হীরকের রাজা ভগবান । এর অন্যথা ঘটলেই তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে । মস্তিষ্ক প্রক্ষালক ? আহাম্মক ! মগজ ধোলাই ? আজ্ঞে, ঠিক তাই !
এল ডোরাডোর খোঁজ যেখানে পেয়েছে মানুষ , সেখানেই পরস্পরের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতেছে । অল্পেতে সাধ মেটেনা , এ স্বাদের ভাগ হবে না ! রাশিয়া আর ইউক্রেন , যে দু'টি দেশের মধ্যে লড়াই বেধেছে , তার কারণ একটাই , খনিজ সম্পদে ঠাসা এলাকাগুলির দখল নেওয়া , যা বেচে রাশিয়া বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র । ভালয় ভালয় দিয়ে দিলে ল্যাটা চুকে যেত , দিলি না তো , এবার সামলা কার্পেট বম্বিং । কিছু নিরপরাধ মানুষ অবশ্য মরবে দু'দেশেই , ওটাকে কূটনীতিতে বলে 'সমান্তরাল ক্ষতি' । সভ্যতা আমাদের শিখিয়েছে ওটুকু মেনে নিতে হয় , মানিয়ে নিতে হয় ।
ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাশিয়া গিয়েছিলেন এ বি পি আনন্দের প্রতিনিধি সুমন দে । ঘুরে দেখিয়েছিলেন , মস্কোর মেট্রো চলাচল ব্যবস্থা , যা কিনা পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরনো পাতালরেল পরিষেবা । আজ সেই মেট্রো স্টেশনগুলিকেই বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করছেন সাধারণ মানুষ , প্রাণের দায়ে , বোমারু বিমান থেকে রক্ষা পেতে । সুমন দে 'মেট্রো টু'-এর কথাও বলেছিলেন , আদতে এটি একটি উপন্যাস । কিন্তু অনেকের মনেই স্থির বিশ্বাস এ এক চূড়ান্ত গোপনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা , যার মাধ্যমে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন প্রান্তে । কোনটা ঠিক , কতটুকু ঠিক--- কে জানে ? আমরা তো কেবল যুদ্ধের ফুটেজ দেখে যাব এবং গ্যাসের আর জিনিসপত্রের দাম মেটাতে নাকানিচোবানি খাব ।
sankhamanigoswami.blogspot.com


ইউক্রেন ও রাশিয়ার সামরিক শক্তি,
ইউক্রেন এর সামরিক শক্তি,
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণ,
ইউক্রেন দেশের পরিচিতি,
রাশিয়া বনাম ইউক্রেন,
রাশিয়া বনাম,
ন্যাটো বনাম রাশিয়া


শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

চৌকিদার । রোমিলা গঙ্গোপাধ্যায় । ভূতের গল্প

 চৌকিদার

কিছু ঘটনা এমন থাকে যা ঘটার সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী এক অন্যধরনের পরাবাস্তব অনুভূতি সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই একই ঘটনা পরিস্থিতি প্রকারান্তরে অন্যরকম হয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছিল বেশ কিছু বছর আগে। সবে কলেজ এর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে কিছুদিন অবসরসময়।
সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত আমরা কোথাও একটা পরিবার বা গুরুজন ছাড়া ঘুরতে যেতে চাইছিলাম। যেখানে আমাদের ওপর আর কেউ থাকবেনা। আসলে বড়ো হচ্ছিলাম তাই স্বাধীনতা বোধ ও বাড়ছিল, সেখান থেকেই এই প্রবণতা।
তা, আমাদের তৎকালীন বন্ধুদের গ্রুপটি ছিল চমৎকার। ছেলে মেয়ে সহ জমজমাট গ্রুপ। আমরা বাড়িতে জানানোর পর, তারা অনেক ভেবে, একটা শর্ত দিলেন, সেটা হলো, আমরা প্রথমবার বাড়িতে জানিয়ে বাইরে নিজেদের মত করে ঘুরতে যাচ্ছি। কেউ থাকবে না, আমরা কি করবো তা দেখার জন্য, আর তাই গ্রুপ এ শুধু মাত্র বন্ধুরাই থাকবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ই একটা দায়িত্ব নিতে হবে।
কোনও প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি এইবার যেতে পারবে না।
এই শুনে তো আমাদের মাথায় হাত!!
তার একটা কারণ হলো, বেশিরভাগ প্রেমের গল্পই কারোর না কারোর বাড়িতে জানা আর সেকারণে আমরা কখনো না কখনো নাকানি - চোবানি ও খেয়েছি। তাই লুকিয়ে যাওয়া যাবে না। এই যে আমরা যাচ্ছি তার জন্য অভিভাবকরা রাজি হলেও এইটাই তাদের শর্ত যে কোনরকম ঝুট ঝামেলা তারাও চান না।
অগত্যা শেষমেষ ১২ জনের গ্রুপ থেকে আমরা মাত্র ৫ জন জোগাড় হলাম ঘুরতে যাওয়ার জন্য ।
নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো!!
অনেক চিন্তা ভাবনা হিসেব করে আমরা জায়গা ঠিক করলাম, পুরুলিয়ার অন্তর্গত এক নামকরা টুরিষ্ট স্পট। কলকাতার অফিস থেকেই বুক করে নিলাম কটেজ।
এইবার নির্দিষ্ট দিনে ট্রেন এ চেপে ঘণ্টা তিনেক তারপর ওখান থেকে লোকাল ভ্যান এ চেপে গন্তব্য এমন কিছু দূরে নয়।
আমাদের যাওয়ার দিন ঠিক হলো কোনও এক রবিবার। ভোর ৬টায় ট্রেন হাওড়া থেকে। বেলা ১১টায় পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। খুব দেরি হলে বেলা ১২টায়। মানে দুপুরের খাওয়া ওখানেই। সেই বুঝে ভালোমত খাবার অর্ডার আমরা কলকাতা থেকেই করে দিলাম। সব মিলিয়ে দু রাত্রি তিন দিনের সম্পূর্ণ সফর।
নির্দিষ্ট দিন যত এগিয়ে আসতে থাকলো উত্তেজনায় আমাদের ঘুম কমে যেতে লাগলো। শেষে এমন হলো আমরা কেউ কেউ বার পাঁচেক আমাদের ছোটো ব্যাগ টা গুছিয়ে ফেললাম। প্রায় রোজ ই ভোরবেলায় ওঠার মহড়া চলতে লাগলো। তবে আসল ঘটনা টা ঘটল যাওয়ার দিন।
নির্দিষ্ট দিনে, বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনায় কেউ ভোরবেলা উঠে shampoo করতে লাগলো তো কেউ শেষ মুহূর্তে জামা ইস্ত্রি। কেউ আবার ভোর ৬টায় কি বাস এ যাবে ভাবতে ভাবতেই সময় পার করে দিলো, তারফল যেটা হলো যখন আমরা সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বড়ো ঘড়ির নিচে জড়ো হলাম ঠিক তখন আমাদের নাকের ডগা দিয়ে আমাদের ট্রেনটি আমাদের ছাড়াই নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো।
খানিক হতভম্বের মত দাড়িয়ে যখন হুশ ফিরল, একে আমি মারি,তো ও আমায় মারে অবস্থা। কাউন্টার এ খোঁজ নিয়ে শুনলাম, রবিবার আর কোনো সরাসরি যাওয়ার ট্রেন নেই। একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আছে সেটা দুপুর ১২ টায় খড়গপুর থেকে ছাড়বে!
কপালের লিখন খন্ডায় কে!!
যাহোক থাকে কপালে বলে সেই প্যাসেঞ্জার ট্রেন এই চেপে বসলাম আমরা, কিন্তু দুর্ভোগ এর শেষ তখনও হয়নি। বরঞ্চ বলা যায় যে শুরু।
খড়গপুর পৌঁছালে জানা গেলো সেখান থেকে যে ট্রেনটি আমাদের গন্তব্যে নিয়ে যাবে সেটি রাস্তায় বিকল হয়েছে । তার কেটে গেছে(আমাদের ই মত আর কি!) কখন আসবে তার ঠিক নেই।
-আজ আমাদের দিনটাই খারাপ, ধুস!
এইভাবে কখন পৌঁছাবে বলতো!
-তোদের ও বলিহারি যাই সাত সকালে শ্যাম্পু করে কি লাভ হলো, হ্যাঁ??
রাগে গজগজ করতে থাকে উৎসব। ওই একমাত্র ট্রেন ছাড়ার আগে এসে পৌঁছেছিল আর আমরা না আসায় ট্রেন এ উঠেও নেমে এসেছে।
রাগ যে আমার ও হচ্ছিল না তা নয় কিন্তু এখন আগে প্রয়োজন গন্তব্যে পৌঁছনো।
পেটে ছুচোয় ডন মারছে। প্রায় বিকেল ৪ টে নাগাদ বিকল হয়ে যাওয়া ট্রেন এর পরিবর্তে অন্য ট্রেন এলো। ট্রেন তো এলো কিন্তু
তাতে বেজায় ভীড়। আর হবে নাই না কেনো, অনেকেই কাজ কর্ম শেষে বাড়ি ফিরছে। প্রায় সমস্ত স্টেশন থেকে লোক তুলে ও নামিয়ে আমাদের ট্রেন এগিয়ে চললো পুরুলিয়ার দিকে।
অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে (ঠায় ৩ঘণ্টা দাড়ানো তাও তো একরকম বিপত্তি!, যদিও শেষের দিকে একজন বসতে দিয়েছিলেন তবে তার মেয়াদ ১০মিনিটের বেশি ছিল না, একেকজনের জন্য। মানে একটা সিট আমরা ভাগাভাগি করে বসছিলাম) শেষ মেষ যখন স্টেশন এ এসে নামলাম তখন আমরা ছাড়া আর দু চার জন মুটে জাতীয় লোক নামলো ওই স্টেশন এ।
পুরো স্টেশন টাই কুশায়ার চাদর জড়িয়ে বসে আছে। একটাও দোকান খোলা নেই।
বাইরে এসে যা বুঝলাম, শুধু স্টেশন এর ভেতরেই নয় বাইরেও লোক সংখ্যা ভীষণরকম কম। যে দু একজন ছিল তাদের থেকে জানা গেলো, এসব অঞ্চলে খুব মাওবাদীদের উৎপাত(তখন ছিল) তাই রাত্রে কেউ বাইরে থাকেনা, এছাড়া রবিবার এমনিও তাড়াতাড়ি সব বন্ধ হয়ে যায়। সাথে এও জানলাম যে আমরা যেখানে যাবো সেখানে আজ রাত্রে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে আর এই অন্ধকারে সেখানে কেউ যাবে না। জঙ্গলে এ গাড়ি দাঁড় করিয়ে লুটপাট হয় , তারপর ফেলে রেখে চলে যায়। এক্ষেত্রে, সাথে আবার দু- দু'খান মেয়ে!!
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আরো যুক্ত হলো যে কোনও থাকার জায়গা, হোম স্টে/হোটেল কিচ্ছু নেই আশেপাশে।
কলকাতায় বেড়ে ওঠা আমরা তখন এমনিই ঠান্ডায় কাবু। তায় থাকার জায়গার এমন অবস্থা শুনে সবাই একেবারে চুপসে গেলাম।
প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে কালু(ভালো নাম এক খানা ছিল কিন্তু সেটা ভুলে গেছি)আর উৎসব আমাদের দলের দুজন একটা অটো জাতীয় গাড়ি নিয়ে এলো।
বললো, ওই লোকটা ৫০০টাকার বিনিময়ে আমাদের সরকারি বাংলো তে পৌঁছে দেবে।
৫০০ টাকা!!
প্রায় ৯-১০বছর আগে ৫০০টাকা মানে আমাদের একদিনের পুরো ঘোরার ও খাবার টাকা। দিনের আলোয় ওই রাস্তা যেতে ৫ জনের ৫০টাকা লাগে।
শুনেই তো আমি আর জুনা বসে পড়লাম। বলে কি!!
মানে একেকজনের ১০০!! তবে কিছুক্ষনেই বুঝলাম, রাজি না হয়ে উপায় নেই। এইভাবে বসে থেকে তো রাত কাটানো যাবে না।
তারপর ওই শীতেও কিন্তু মশা রা ছুটি নেয়নি
উল্টে কলকাতার রক্ত দেখে ফিস্টি বসিয়ে দিয়েছে। আমি মশা তাড়াতে তাড়াতে ভাবছিলাম ঠান্ডায় কি ম্যালেরিয়া হয়!!
এইসব ভাবতে ভাবতেই অটো মতো গাড়িতে চেপে বসলাম আমরা। উঠেই দেখে নিলাম,আমাদের কারও ফোনে পর্যাপ্ত ব্যাটারী নেই। থাকবে কি করে, সেই সকালে বেরিয়েছিল তারপর যে ট্রেন এ এসেছি তাতে চার্জিং পয়েন্ট আশা করাই অন্যায়।
অন্ধকার রাত্রির সৌন্দর্য্য চিরদিন ই অন্যরকম। আবেদনময়ী। আর তখন বয়স কম, সবকিছুর মধ্যেই আমরা রোমান্টিসিজমের ব্যাপার খুঁজে পাই।কিন্তু সে রাত্রি ছিল আলাদা, পরবর্তীকালে অন্ধকার অনেক দেখেছি কিন্তু এমন ঘুটঘুটে নিকষ কালো রাত্রি আমি অন্তত খুবএকটা দেখিনি জীবনে। বস্তুতঃ, সেইবার প্রথম দেখেছিলাম। সেরাত্রে, চাঁদ উঠে থাকলেও তার দেখা পাইনি আমরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকালয় ছাড়িয়ে বাদার(একধরনের জলাভূমি) পথ ধরল অটো। যা রাস্তা তাতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছিল, অন্ধকারে তো গর্ত দেখা যায়না, তাই লাফানোর পরিমাণ ও কমছিল না। কিছুদূর যাওয়ার পর অটোচালক নানা কথা বলতে আরম্ভ করলো। মানে ওখানে কি কি হয়, কেমন করে খুন করে, রাহাজানি করে এইসব।
বিষয়টা আমাদের ঠিক ভালো না ঠেকলেও কিছু করার নেই। জয় বলার চেষ্টা করলো যে ওর পিসেমশাই পুলিশ তবে সেটা চালক এর কানে গেলো কিনা বুঝলাম না। এদিকে অটো চলছে তো চলছেই।
আমরা ভাবছি, অন্ধকারে রাস্তা কি বেশি মনে হয়। এত সময় তো লাগার কথা নয়।
প্রায় ৩০মিনিট বেশ জোরে চলার পর সামনে একদম হটাৎ করেই একটা লাইট দেখা গেলো। দুপাশে ঘনও জঙ্গল।আমরা সবাই হাত ধরাধরি করে বসে রয়েছি। যাই হয়ে যাক কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না।
তখন বয়সটাই অন্যরকম, সম্পর্ক ভেজাল বিহীন, আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের গ্রাস করতে পারেনি।
তা কাছে আসতে বোঝা গেলো একটা লোক হাতে আলো নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গাড়ি থামাতে বলছে। চালকের খুব একটা ইচ্ছা ছিল না কিন্তু লোকটা একেবারে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাই থামতেই হলো।
লোকটা আঞ্চলিক ভাষায় বললো, ও গেস্ট হাউসের চৌকিদার। বিকেলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিল বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু পথে সেটা বিগরেছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছে, একা যেতে সাহস পাচ্ছিলেন না।এখন এই রাস্তায় গাড়ি যেতে দেখে থামালো। এই কথোপকথন আঞ্চলিক ভাষায় হলেও যেহেতু বাংলা জাতীয় তাই আমরা বুঝতে পারছিলাম।
তারপরই নিজেই উঠে বসলো চালকের পাশে আর আমাদের থেকে জেনে নিল কোথায় যাবো।
তারপর চালক কে যা বললো, সেটা বুঝতে পেরে আমাদের আরও ঠাণ্ডা লাগতে লাগলো।
যা বুঝলাম তা হলো, আমাদের বাংলো যাওয়ার রাস্তা অন্যদিকে,এইদিকে অনেক বেশি জঙ্গল আর এখানে দিনের আলোতেও লোক বেশি আসেনা।
চালক জেনে বুঝেই আমাদের এই রাস্তায় এনেছে।
ওদের নিজেদের মধ্যে বচসা হতে হতেই ধমকে চৌকিদার গাড়ির দিক নির্দেশ করতে লাগলো। কথা বলার ভঙ্গিমা শুনে বুঝতে পারলাম লোকটির যথেষ্ট জানাশোনা আছে। যদিও এই অটোর চালক চৌকিদার কে চেনে না তবে তাদের অনেক কমন কানেকশন আছে বলেই মনে হোল।
আরও বেশ কিছুটা চলার পর আসতে আস্তে জঙ্গলে ফাকা হতে লাগলো। শেষ অবধি একটা বিশাল গেট ওয়ালা কম্পাউন্ড এর সামনে অটো এসে দাড়ালো ।
ফলক এ নাম দেখে বুঝলাম যে এই সেই জায়গা!
ভাড়া মিটিয়ে এ ভীষণ ক্লান্ত আমরা চৌকিদারকে আসতে বলে তার অপেক্ষা না করেই ভিতরে ঢুকে গেলাম। তারপর রিসেপশন থেকে নির্দিষ্ট কটেজ এর চাবি নিয়ে পৌঁছানোর সময় ও আর কোথাও তাকে দেখলাম না।
রাত্রে আর দেরি না করে খেতে চলে গেছিলাম আমরা। দুর্দান্ত রান্না । এসে স্নান করে, তারপর খেয়ে কিন্তু ক্লান্তি দুর হয়ে গেছিলো আমাদের।
খেয়েদেয়ে অনেক রাত্রে প্রায় ১১ টায়, চৌকিদার কে খুঁজতে গেলাম।
যারা ঘুরতে গেছেন তারা একমত হবেন যে সাধারণত শুক্রবার যেকোনো ঘোরার জায়গায় ভীড় হয় বেশি। রবিবার সেরোম ভীড় থাকেনা। বেশিরভাগ মানুষই ফিরে চলে যান, সোমবার থেকে কাজের জগতে ফিরতে হয় তাদের। তাই এইসময় স্টাফ এর সংখ্যা কম ই থাকে।
আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে অনেক বিঘা জায়গা নিয়ে ছোটো জঙ্গলে, পার্ক, কটেজ ছড়িয়ে রয়েছে। তো, রিসেপশন অফিস এ গিয়ে যিনি ছিলেন তাকে বলতে তিনি বুঝতেই পারলেন না কার কথা বলছি।
দেখা হলে আমরা অনেক ধন্যবাদ দিতাম ওনাকে। বুঝতে পারছিলাম কি ভীষণ বিপদ থেকে বাঁচলাম, ওনার জন্য। ফেরার পথে চারপাশ টা ভালো করে দেখতে দেখতে এলাম, যদি দেখা পাই কিন্তু অনেক কোথাও দেখা গেলো না। ওইসময় আমাদের ওনার নাম জিজ্ঞেস করার কথা মনে হয়নি। রীতিমত ভয় পেয়ে গেছিলাম আমরা। সেই নিয়েও আফসোস হচ্ছিল।
সেইরাত্রে আমরা বেশ কিছুক্ষন আড্ডা মেরে রাত ১২টায় সম্ভবত শুতে গেলাম। সারা রাত এ আমার আর ঘুম ভাঙ্গেনি।
একটু বেলার দিকে বেরোনোর সময় অফিস গেলাম আর তখন ই শুনলাম অন্য একটি ঘটনা।
ম্যানেজার ভদ্রলোক সকালে ছিলেন , আমাদের দেখে উনি কুশল জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলেন কাল কার খোঁজ করছিলাম।
সবিস্তারে বল্লাম ঘটনা টা।
সব শুনে উনি বললেন, গণেশ পূততুন্দু সাথে আমাদের বলা চৌকিদার এর মিল আছে। কিন্তু তিনি তো বেশ কিছুদিন নিখোঁজ। বন্ধুর বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন তবে আর আসেন নি। পুলিশ ও খুঁজেছে, তা আজ প্রায় দেড় মাস - দু মাস হলো। ওনার সাইকেল পাওয়া যায় জঙ্গলে মধ্যে একটা রাস্তায় যেখানে লোকজন বড়ো একটা যায়না। কিন্তু ওনাকে পাওয়া যায়নি। তারপর, উনি একটা পুরনো ফটো দেখালেন,গ্রুপ ফটো।
তাতে যাকে গণেশ নামে দেখলেন তিনিই আমাদের দেখা কালকের চৌকিদার!
আমরা কিরম একটা ঘোরে চলে গেছিলোম এসব শুনে। উনি বলে যাচ্ছিলেন, এখানকার অনেক স্থানীয় মানুষ লুকিয়ে মাওবাদীদের সমর্থন করে। ওরা সাধারণ মানুষ বিশেষত টুরিষ্ট দের সুযোগ পেলে ধরেও নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করে।
যদি সেসব কিছু নাও হয় তাও লুঠপাট বা অন্যধরনের অত্যাচার তো আছেই। কাল আমরা খুব বড়ো বিপদ এর হাত থেকে বেঁচে গেছি।"
মনে মনে ভাবছিলাম কাল যিনি আমাদের নিজে থেকে পৌঁছে দিলেন তিনি দরজা অবধি এসে, এইখানে কেনো আসবেন না!!!
নাহ ব্যাপারটা কিছুতেই মেলাতে পারা গেলো না।আর উনি তো কাল ও বলেছিলেন যে ওনার ফেরার পথে সাইকেল খারাপ হয়ে গেছিলো। বললাম সেটাও।
শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ম্যানেজার শুধু বললেন, 'আপনারা শহরে থাকেন। বয়সে অনেক ছোট, আজ ও জঙ্গলে এ অনেক এমন ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা বাস্তবে দেওয়া মুশকিল।
আজ তো বেরোবেন দেখুন কোনোভাবেই আর যেনো ৬টার বেশি দেরি করবেন না।
গনেশদা কিন্তু রোজ রোজ বাঁচাতে আসবে না।'
আমরা আর যে দুদিন ছিলাম, ৬টার অনেক আগেই চলে এসেছি
তারপর ওই গ্রাউন্ড এর ভেতরেই ঘুরেছি। আজ ও যখন ই ঘটনাটা মনে পরে, এক অচেনা জগতে হারিয়ে যাওয়া গণেশ পুতুতুন্ড কে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই ।

httpssankhamanigoswami.xyz







ভূতের গল্প ,

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প, বিখ্যাত ভূতের গল্প, ভয়ের গল্প, https://www.somewhereinblog.net/blog/s_rezowana/29465956, https://bengali.momspresso.com/parenting/rumaar-ddaayyeri/article/styi-bhuuter-glp, 

পুপুর বড় শাশুড়ি মা । অমৃতা বিশ্বাস সরকার । ভূতের গল্প

পুপুর বড় শাশুড়ি মা

১)
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে পা দিতে না দিতেই পুপু পড়লো মহা বিপদে...সারাদিন কেউ যেন তাকে চোখে চোখে রাখে...সে কি করছে,কি খাচ্ছে,কোথায় যাচ্ছে-সব একজন কেউ নজরে রাখছে কিন্তু পুপু তাকে দেখতেই পাচ্ছেনা...এত বড় বাড়িতে আর কারুর দিকেই যেন তার নজর নেই...শুধু পুপুর উপর নজর রাখাই তার কাজ যেন...এইদিকে পুপুর তো একেই মন খারাপ নিজের বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়েছে তাকে এই বাড়িতে...বাবা-মা-ভায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়...আর রাগ হয় রমেশ মানে তার স্বামীর ওপর...কি দরকার ছিল তাকে বিয়ে করার...একটা বিয়ে বাড়িতে তাকে দেখে রমেশ ও তার বাড়ির লোকজন সব যেন গলে গেলো...উল্টো দিকে রমেশের এত বড় বাড়ি,বড় ব্যবসা,বনেদী ব্যাপার দেখে তার বাড়ির লোকজনও আর না করেনি এই বিয়েতে...পুপুর আপত্তি থাকলেও সেটা টিকলোনা...তার ভাই রুপুটাও মহা পাজী...বলে কিনা : দিদি,তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর...তোদের ওই বাড়িতে গিয়ে তাহলে আমি মাছ ধরবো!...শুনেই রাগে সারা শরীর জ্বলে গেছিল পুপুর...রুপুর কানটা মুলতে যেতেই লাফিয়ে পরে হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল...আর তারপর বিয়ে হয়ে চলে এলো সে এই চাঁপাদীঘিতে...একদম পছন্দ হয়নি জায়গাটা পুপুর....কি রকম জঙ্গুলে জায়গা রে বাবাঃ!! শুধু গাছ আর গাছ,পুকুর,বাগান,গরু,বাছুর,মুরগি,ধান,চাল,ক্ষেত,চাষ-বাস এইসব নিয়েই এরা দিন কাটিয়ে দেয়...তাকে কোনো কাজ করতে হয়না,পায়ের উপর পা দিয়েই বসে থাকে কিন্তু তাতে একটুও ভালো লাগে না পুপুর...কিছু করতে পারলে হয়তো সময়টা কাটতো...বই পড়ে,ঘুমিয়ে আর গল্প করে এদের সাথে আর কাহাতক সময় কাটানো যায়? তার বরটাও যেন কি রকম...পুপুর সব কথা মেনে নেয়...সব কিছুতেই সায় দেয়...একটু ঝগড়া করলেও না হয় সময় কাটতো তার....ধুস্!পাতি হয়ে গেল পুপুর জীবনটা যেন...আর সব হয়েছে রমেশের জন্য...তাই ভারী রাগ করে সে রমেশের ওপর…একদিন ইচ্ছে করে সব ছেড়ে পালিয়ে যাবে...সেটারই চেষ্টা করতে থাকে সে...একদিন সুযোগও মেলে...রাতের বেলায় যখন সবাই ঘুমাচ্ছিল তখন চুপিসারে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে পুপু...সিঁড়ি দিয়ে সোজা নেমে আসে নীচে.…শীতের রাত-সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন...দারোয়ানটাও সদর দরজার সামনে বসে ঘুমাচ্ছে...পুপু খুব সাবধানে সদর দরজাটা খুলে সবে এক পা বাড়িয়েছে বাড়ির বাইরে...তখনই হঠাৎ কোথা থেকে একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে তাকে ঘিরে ধরে...পুপু নিজের গায়ের চাদরটা ভালো করে মাথা দিয়ে জরিয়ে এগিয়ে যেতে চায় আর ঠিক সেই সময় তার হাতটা কেউ চেপে ধরে আর সে শুনতে পায় একটা খ্নখ্নে গলায় কেউ বলছে : কোথায় যাচ্ছিস্ রে ছুড়ি?আয় ভেতরে আয় বলছি!
২)
নিজের মনে গুনগুন করে একটা হিন্দি ছবির গান গাইছিল পুপু বিকেলবেলায় ছাদে ঘুরতে ঘুরতে...তখনই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া তাকে ছুঁয়ে গেল...পুপুর এখন এইসব গা সওয়া হয়ে গেছে...পুপু জানে যে তার বড়-শাশুড়িমা এসে গেছেন...বড়-শাশুড়িমা মানে তার শাশুড়ির শাশুড়ি...যেদিন রাতে পুপু বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল সেদিনই এঁনার সাথে তার প্রথম আলাপ হয়...তার আগে নাকি পুপুকে চোখে চোখে রাখতেন উনি...পুপুকে নাকি প্রথম দিন দেখেই উনি বুঝে গেছিলেন 'এ বউ সুবিধার না...পালালো বলে'...আর তাই দায়িত্ব নিয়ে তিনি পাহারা দিতেন পুপুকে...চোখের আড়াল করতেন না...তার এত সাধের সংসার পুপুর জন্য ভেঙে যাবে,কষ্ট পাবে তার প্রিয় নাতি সেটা তিনি কি করে হতে দেবেন!...তাই তো সেদিন কোনো উপায় না দেখে নিজেই নেমে এলেন বাড়ির বাগানের আম গাছটা থেকে,পুপুর পথ আটকালেন...পুপু নেহাত সাহসী মেয়ে তাই ভয় পায়নি...অন্য কেউ হলে অক্বা পেত...চোখের আড়াল থেকে সাদা থান দেখে পুপু বললো : এসেছেন তো অনেকক্ষন..বলেই ফেলুন যা বলবেন?
বড় শাশুড়ি মা : ওলো, অ কি গান গাইছিস রে নাত বউ? এ আবার গান‌ নাকি?
পুপু : এই গান গুলোই চলে আজকাল...আপনি তো অনেকদিন‌ আগেই আমাদের টাটা করে চলে গেছেন তাই জানেন না
বড় শাশুড়ি মা : কি? আমি জানি না?তুই কতটুকু জানিস রে ছুড়ি? এ সব গান নাকি? ছোঃ ছোঃ!...গান তো ছিল আমাদের সময়...কি সব গান...আহাঃ ...একটা গাই শোন তবে..
পুপু : থাক! আপনি আর দয়া করে গান ধরবেন না...আমি ছাড়া অন্য‌ কেউ শুনলে ভিমরি খাবে...তাছাড়া আপনার যা গলার ছিড়ি !!!
বড় শাশুড়ি মা : কি বললি? আমার গলা ভালো না তো কি তোর গলা ভালো?গাস এবার গান...দেবো গলায় নিম পাতা ঢেলে
পুপু হেসে ফেলে...তার এই বড় শাশুড়ি মাকে রাগাতে তার ভারী ভালো লাগে...খুনসুটি করে ওনার সাথে খুব মজা লাগে...তার সময়টাও কাটে বেশ...যখন-তখন, সময়-অসময়ে, যেখানে-সেখানে এঁনার আসাটা ভারী উপভোগ করে সে...পুপু শুনেছে নিজের শাশুড়ির থেকে যে জীবিতকালে নাকি খুব রাশভারী মহিলা ছিলেন,দাপুটে ও ছিলেন‌ বেশ,সব কিছু চোখে চোখে রাখা তাঁর অভ্যাস ছিল...সেই স্বভাব গত হওয়ার পর ও ছাড়তে পারেনি...সব বিষয়ে নাকটা তাঁকে গলাতেই হবে...বিশেষ করে পুপুর ব্যাপারে...পুপু কিছু বলেনা কাউকে...সে জানে যে ওনার কোনো বাজে উদ্দেশ্য নেই...পুপুকে হাসতে দেখে রাগ করে চলে যান তিনি...তবে একটু পরে ফিরে আসেন...
বড় শাশুড়ি মা : বলছি একটু সেজে গুজে থাকবি,স্বামী এলে আসে পাশে ঘুরবি...গানের গলা তো ভালো...গান শোনাবি
পুপু : টুইস্ট করবো তারপর
বড় শাশুড়ি মা : আ্যঁ!
পুপু : টুইস্ট...একটি নাচ...নাচবেন?
বড় শাশুড়ি মা : কেন রে আপদি? আমি কি বাজারে নাকি?
পুপু : আজকাল সবাই নাচে...আপনিও নাচুন না
বড় শাশুড়ি মা : তুই নাচবি না ওই সব বাজারি নাচ বলে দিলাম
পুপু : এই যে বুড়ি বেশী বললে আপনার নাতিকেও নাচাবো
বড় শাশুড়ি মা : তোর মুখে নুড়ো জ্বেলে দেবো
এই বলে রেগে গিয়ে উঁনি চলে গেলেন..আর পুপু হাসতে হাসতে নীচে নিজের ঘরে নেমে এলো
৩)
ঘরে এসে পুপু দেখে যে রাগ করে উনি তার ঘরেই বসে আছেন তার খাটের ওপর...এই ঘরটা নাকি তাঁর ছিল...ওঁনার মৃত্যুর পর তার আদরের নাতি এই ঘরটায় থাকতে আসে...তাতে অবশ্য এঁনার কোনো অসুবিধা নেই...নাতি কাছাকাছি আছে তাতেই এঁনার বেশ আমোদ হয়...পুপুকে দেখে রাগ দেখিয়ে তিনি দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন...পুপু তার রাগ কমানোর জন্য তার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করে...শেষে আমের আচারের লোভ দেখিয়ে সেদিনের মত তাঁর রাগ কমে....পুপুকে তার শাশুড়ি মায়ের ঘর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর জন্য আচার ও নিয়ে আসতে হয়....খাটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে আয়েস করে আচার খেতে খেতে পুপুর সাথে কথা বলতে থাকেন
পুপু : ঠাকুরদার সাথে বিয়েটা হয়েছিল কিভাবে?
বড় শাশুড়ি মা : সে অনেক কথা...আমাদের বাড়ির পুরুত ঠাকুর আর এদের বাড়ির পুরুত ঠাকুর ছিলেন দুই ভাই...আমার বাবা আমার জন্য ছেলের খোঁজ করছিলেন আর এরা খুঁজছিল তোর ঠাকুরদার জন্য মেয়ে....বিয়ে করে আসি যখন তখন আমার বয়স ১২ আর ওনার ২২
পুপু : বাপরে!!!এত বড়?
বড় শাশুড়ি মা : তখন তাই হত রে নাতবউ...তা আমি ওনাকে পেতুম খুব ভয়...একঘরেও থাকুত না...তা বিয়ের ২মাস পর তিনি পড়াশোনার জন্য চলে যান দিল্লি...
পুপু : আপনাকে একা ফেলে?
বড় শাশুড়ি মা : ওমা!!! একা কোই রে পাগলি! বাড়িতে কত লোকজন ছিল..আমার শ্বশুর-শাশুড়ি,দেওর,জা,ননদরা,কাজের লোকজন...কত লোক...সংসার মানে কি আর শুধু কপোত-কপোতি‌ রে?সবাইকে নিয়েই সংসার...যত লোকজন তত ভালোবাসা,তত দায়িত্ব,তত একে ওপরের সুখে-দুঃখে থাকা...তোরা আজকালকার মেয়েরা বুঝবিনা...সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে পারাটাই যে কৃতিত্ব রে
পুপু অবাক হয়ে শোনে...এই ভদ্রমহিলা তার থেকে কত আগের প্রজন্মের...কিন্তু কি অবলীলায় একটা চরম সত্য কথা বলে গেলেন...আলাদা আলাদা যে কেউ থাকতে পারে তবে একসাথে থাকার ভেতর যে ভালোলাগাটা আছে সেটার স্বাদ পাওয়া যায়না
বড় শাশুড়ি মা : তারপর হঠাৎ একদিন একটা চিঠি এলো আমার নামে...আমার ছোট দেওর লুকিয়ে দিয়ে গেল আমায়...দেখি তোর ঠাকুরদা লিখেছেন...আমি তো লজ্জায় মিশে গেলাম...রাতে সবাই শুয়ে পড়লে পর আসতে আসতে দরজাতে খিল এঁটে চিঠিটা পড়লাম...
পুপু : তারপর?
বড় শাশুড়ি মা : চিঠি পড়তে পড়তে কেমন জানি একটা মায়া পরে গেল ওনার ওপর...নিজের বাড়ি ছেড়ে এত দূরে পরে আছেন...কি খান না খান কে জানে,কোথায় থাকেন,শরীর খারাপ হলে কে দেখে...এইসব ভেবে চোখে জল চলে এলো সেই প্রথম ওনার জন্য...তারপরের দিন আমিও সবাইকে লুকিয়ে একটা চিঠি লিখে আমার দেওরকে দিয়ে পোষ্ট করিয়ে দিলাম...এই রকম ভাবে আমাদের চিঠি পর্ব চলতে থাকলো সবাইকে লুকিয়ে...
পুপু : বলুন প্রেম পর্ব
বড় শাশুড়ি মা ‌লজ্জা পেয়ে বললেন : ওই হলো
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো আর রমেশ এসে ঘরে ঢুকলো...রমেশকে আসতে শুনেই বড় শাশুড়ি মা হাওয়াতে মিলিয়ে গেলেন...আচারের বাটি পরে রইলো খাটের ওপর...
রমেশ : পুপু
পুপু : বলো
রমেশ : আমাকে ব্যবসার কাজে কদিনের জন্য বাইরে যেতে হবে...আজকে রাতেই বেড়িয়ে যেতে হবে...
পুপুর খুব খারাপ লাগলো,তাকেও তো যেতে বলতে পারতো রমেশ তার সাথে...রমেশ তার দিকে এগিয়ে আসে...তার হাতটা ধরে বলে : রাগ করো না,তোমাকেও নিয়ে যেতে ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওখানে কাজের অনেক চাপ থাকবে...তোমাকে সময় দিতেই পারবোনা..একা একা তুমি কি করবে? তার থেকে বরং এখানে সবার সাথে থাকা ভালো তোমার...
পুপুর কেন জানিনা খুব অভিমান হলো...রমেশকে একটা কথা বলতেও ইচ্ছে করলোনা...চুপ করেই থাকলো...স্যুটকেস গুছিয়ে রমেশ যখন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল তখনও রমেশের দিকে তাকিয়ে দেখলো না...রাতে যখন একা একা বিছানাতে শুয়ে ছিল তখন রমেশের কথা চিন্তা করতে করতে চোখের কোনায় নিজের অজান্তেই একটু জল চলে এলো...খুব অবাক হলো পুপু...রমেশকে তো তার তেমন ভালো লাগে না তাহলে ও চলে যেতে এত খারাপ লাগছে কেন তার? কানের পাশ থেকে শুনতে পেলো তার বড় শাশুড়ি মা বলছেন‌ : ওলো! প্রেমে পড়েছিস্ যে আমার নাতির...
৪)
প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল রমেশ বাইরে গেছে...খুব কাজের চাপ তার ওইখানে...রাতে নিয়ম করে ফোন করে সে পুপুকে...তবে ৫মিনিটের বেশী কথা বলতে পারেনা...ক্লান্ত থাকে,কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরে...পুপুর ও রমেশকে বলে ওঠা হয়না তার‌ না বলা কথা গুলো...সেদিন ছাদে ঘুরছিল পুপু আনমনে...বড় শাশুড়ি মাও ছিলেন...নানা কথা বলে পুপুর মন ভালো করার চেষ্টা করেন তিনি...পুপু যে রমেশের চলে যাওয়ার পর থেকেই কষ্টে আছে সেটা তিনি ভালোই বোঝেন...তাই তাঁর এখন একমাত্র কাজ পুপুকে সঙ্গ দেওয়া ও তাকে ভুলিয়ে রাখা...কিন্তু পুপুর মন তাতে সাময়িক ভালো থাকলেও একেবারে ভালো হয়ে যায়না...হঠাৎ বৃষ্টি এলো তেড়ে...পুপু ভিজতে থাকলো...তার মনে হলো বৃষ্টি তার সমস্ত কষ্ট দূর করে দেবে...বড় শাশুড়ি মা তাকে বারবার নিচে নামতে বলেন,পুপু শোনে না,ভিজতেই থাকে...তার ফলে মাঝরাতে এলো তার প্রচন্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর....সবাই ঘুমাচ্ছে,তা ছাড়া পুপুর ইচ্ছেও করলো না কাউকে ডাকতে...নিজেকে কষ্ট দিয়ে যেন রমেশের ওপর শোধ নিতে চাইলো সে...তবে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার বড় শাশুড়ি মা...বারবার পুপুর গায়ে মাথায় হাত দিয়ে দেখতে থাকলেন,বিছানার চারিদিকে ঘুরতে থাকলেন আর বাড়ির বাকিরা পুপুর খোঁজ না নিয়ে নাকে তেল‌ দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে তাদের সকলকে আঙুল মটকে মটকে শাপ দিতে থাকলেন...কোনো রকমে রাতটা কাটলো...সকালবেলায় পুপুকে ডাকতে এসে তার এই হাল দেখে তার শাশুড়ি মা ঘাবরে গেলেন,নামী ডাক্তার এলেন,অনেক টেস্ট ও ওষুধ দিয়ে গেলেন...তবে পুপুর শরীর যে খারাপের সে খারাপই থেকে গেল...তখন রাত কটা পুপুর খেয়াল নেই,হঠাৎ একটা হাতের ছোঁয়াতে পুপুর ঘুম ভেঙে গেল...চোখ খুলে দেখে রমেশ...পুপু আর কিছু না দেখে জরিয়ে ধরে রমেশকে....রমেশ পুপুকে জরিয়ে ধরে তার মাথায় হাত বুলোতে থাকে...পুপু ঘুমিয়ে পরে...এর ঠিক দুদিনের মাথায় পুপু একদম সুস্থ হয়ে যায়..রমেশ ও পুপু ঘরে বসে গল্প করছিল,তখন পুপু জিজ্ঞাসা করে : তুমি সেদিন চলে এলে যে?
রমেশ : তোমার জন্য মন কেমন করছিল আর তা ছাড়া....
পুপু : কি?
রমেশ : ঠাকুমাকে দেখলাম ....
পুপু : মানে?
রমেশ : ঠাকুমাকে দেখলাম স্বপ্নে...আমাকে বললেন যে তোমার খুব শরীর খারাপ,আমি যেন তোমার কাছে ফিরে যাই তক্ষুনি...তার বলার ভেতর কি ছিল কি জানি...আমিও আর দেরী না করে যে ফ্লাইটটা আগে পেলাম সেটা নিয়েই তোমার কাছে চলে এলাম...আর এসে দেখি তোমার এই হাল!
পুপুর মনটা কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় ভরে যায় তার বড় শাশুড়ি মা থুড়ি তার ঠাকুমার জন্য...তাকে তিনি যে কতটা ভালোবাসেন সেটা বুঝতে পারে পুপু...সত্যিই সংসার সবাইকে নিয়েই হয়.…তাতেই বড় সুখ...চোখের কোন দিয়ে পুপু দেখতে পায় তাদের ঠাকুমা তাদের দিকে মায়া ভরা চোখে চেয়ে আছেন ও মিটিমিটি হাসতে হাসতে আমের আচার খাচ্ছেন।

a famous sketch by Satyajit Ray from GGBB




ভূতের গল্প বাংলা, ভূতের গল্প , ভূতের গল্প শোনাও তো, ভূতের গল্প বই, ভূতের গল্প দাও, https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/belablog/30227703,https://bengali.momspresso.com/parenting/rumaar-ddaayyeri/article/styi-bhuuter-glp,https://blog.rokomari.com/book-review/chondrahoto/

শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

খোলসের ভিতরে । সায়ন কাঁড়ার । সত্যিকারের ভূতের গল্প ।

 খোলসের ভিতরে

সায়ন কাঁড়ার

লিখতে বসে আজকে কিছুতেই কলমটা আমার কথা মানছে না। কি লিখবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা....মাথার মধ্যে হাজার একটা জিনিস ঘুরপাক খেলেও....গল্পের মায়াজাল কিছুতেই আর বুনতে পারছিনা। তাই ভাবছি একটা ঘটনার কথাই আজকে বলি। এই ঘটনা আমার কর্মজীবনের প্রথমদিকের। আমি তখন সদ্য বি.কম পাস করে, পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষার কথা একদম ঝেড়ে ফেলি মাথা থেকে। পড়ার ইচ্ছা যে ছিল না তা নয়,কিন্তু পরিস্থিতি সবসময় আমাদের সহায় হয় না। আমার ছোটবোন তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, ওর খুব ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন বিজ্ঞানী হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ায় ছোট থেকেই বাবা-মা কে দেখেছি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতে, অনেক ভালোলাগা ভালোবাসা হাসিমুখে ত্যাগ করতে,তবে আমিই বা তাদের সন্তান হয়ে এইটুকু পারব না কেন।
বোন মেধার দিক দিয়ে আমার থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে... আর আমাদের অবস্থার কথা ভেবে কোনদিন মুখ ফুটে বাড়তি কিছু চায় না। কখনো কোন বই প্রয়োজন হলে শিক্ষকদের থেকে চেয়ে নিয়ে প্রয়োজনীয় অংশটুকু জেরক্স করে নিত বা নোটস বানিয়ে রাখতো। যাক গে সেসব কথা এখন থাক। এই গল্প আমাকে বা আমার পরিবারকে নিয়ে নয়।
এই সময় আমার মনে হয় যদি কোনো একটা কাজ জোটাতে পারতাম তাহলে বাবা-মার পাশে হতে পারতাম ওদের একটু সাহায্য করতে পারতাম। বহু খুঁজে কাজ পেলাম শহরতলীর একটি বৃদ্ধাশ্রমে। খুব বেশি টাকা না পেলেও ওই মুহূর্তে,শুন্য হাতের চেয়ে ওই টাকার মূল্য আমার কাছে অনেক। অন্তত বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে পারবো।
অবশ্য বিশেষ পরিশ্রমের কাজ আমাকে করতে হত না। আমার কাজ ছিল এই বৃদ্ধাশ্রমের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা... বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য কি কি কাজ হচ্ছে তার দিকে নজর রাখা আর তার কোনো প্রয়োজন পড়লে তার খেয়াল রাখা।
বেশ আনন্দ সহকারে করছিলাম নিজের কাজ,বেশ একটা তৃপ্তি ছিল। সহজ-সরল বয়স্ক মানুষ গুলোর মাঝে দিব্যি সময় কেটে যেত। মানুষগুলো ভীষণ স্নেহ করতেন আমায়। ওনাদের মধ্যে কিছুজনের অতীত জীবনের কথা শুনে ভারী কষ্ট হত, ভাবতাম মানুষ এমনও হতে পারে... যে মানুষগুলো তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখায় তাদের এভাবে কি করে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে পারে।
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি... আমার সেই বৃদ্ধাশ্রম এর মালিকের বিষয়সম্পত্তি ছিল প্রচুর। তিনি অনেক ছোটবেলাতেই তার মাকে হারিয়েছেন,পরে বাবাকেও, পরবর্তীকালে ব্যবসা করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। উনি মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধাশ্রমে আসেন...এখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলেন, তাদের সুবিধা-অসুবিধা,শরীর-স্বাস্থ্যের আর খোঁজ নেন। বড়ো ভালো মানুষ তিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমের, প্রতিটি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে সমস্ত কর্মচারী সকলেই তাঁকে খুব শ্রদ্ধা ও পছন্দ করেন।
এইভাবে বেশ কয়েকবছর কেটে গেল।একদিন যখন বোনকে স্কুলে পৌছে আমি কাজে যাচ্ছি হঠাৎ নজরে পড়লো রাস্তার এক কোণে বেশ কিছু লোক জমায়েত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়া থাকায় পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গিয়েও কি ভেবে ফিরে দাঁড়ালাম। সেখানে গিয়ে দেখি এক অশীতিপর বৃদ্ধমানুষ পড়ে আছে রাস্তার পাশে... শতছিন্ন একটুকরো কাপড়পরা কঙ্কালসার এক অশরীরী প্রেতের মত শরীরে খুলিটা যেন আলগা করে বসিয়ে দিয়েছে কেউ। তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া প্রায় বুজে আসা চোখটা থেকে বিন্দু বিন্দু করে জল ঝরে পড়ছে...তাকে দেখতেই এত ভিড়।
সম্ভবত কোনো গাড়ি তাকে ধাক্কা মেরেছে। সত্যিই কি ভারি অদ্ভুত এই দুনিয়া...দুর্বলকে নিয়ে আলোচনা করতে,তার অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করতে কারো সমস্যা নেই, সমস্যা কেবল তাকে একটুখানি সাহায্য করার। ভীষন রাগ হল আজব দুনিয়ার এই আজব কান্ড কারখানা দেখে। নিজেই এগিয়ে গেলাম বৃদ্ধমানুষটিকে সাহায্য করার জন্য। কোনো ঝামেলা হবে না এই আশ্বাসে,স্থানীয় এক ব্যক্তির সাহায্যে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসতে আসতে যা বুঝলাম তা হলো..
উনি একজন হতভাগ্য পিতা। যিনি নিজের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে 'টুবলু' মানে তার সন্তানের এক টুকরো জীর্ণ ছবি আঁকড়ে তাকে খুঁজে চলেছেন। হয়তো কোনভাবে তাঁর পরম প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার এই অবস্থা। সবকিছুই বিস্মৃত হয়েছেন তিনি.... কোথায় তার বাড়ি...কোথায় তার পরিবার...এমনকি কি বা তার নাম। শুধুমাত্র ভোলেননি তাঁর সন্তানকে,অসহায় দৃষ্টিতে জরাজীর্ণ ছবিটা আঁকড়ে অবাধ পিতৃস্নেহে 'টুবলু' কে খুঁজে চলেছে তাঁর কোটরে ঢুকে যাওয়া ভাসা ভাসা চোখদুটো।
ফার্স্ট এইড করে দিয়ে বড়বাবু মানে বৃদ্ধাশ্রম এর মালিককে ফোন করে ঘটনাগুলো সবিস্তারে বললাম.... সবটা শুনে তিনি আমার কাজের জন্য গর্ব প্রকাশ করলেন এবং জানালেন খুব শীঘ্রই তিনি বৃদ্ধাশ্রমে আসছেন। বড়বাবু যখন এলেন তখন প্রায় সন্ধ্যা। আমি ততোক্ষণে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে গেছি।
পরদিন ভোরবেলা ফোনের আওয়াজে আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেল।
ফোনটা নিয়ে দেখি,শিবুদা ফোন করেছে। শিবুদা,আমাদের বৃদ্ধাশ্রমের সিকিউরিটি গার্ড।
এত সকালে হঠাৎ ফোন করায় মনে হল কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। আমার ধারণা যে মিথ্যে না, কয়েক মুহূর্ত পরেই বুঝতে পারলাম।
কালকের সেই অশীতিপর বৃদ্ধমানুষটির জীবনাবসান ঘটেছে। ফোনটা রেখে খানিকক্ষণ চুপ করে খাটে বসে রইলাম। মনটা ভারি হয়ে উঠল...মানুষটার প্রতি বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল একটা দিনেই। কিছুক্ষণের মধ্যে রেডি হয়ে চটজলদি ছুটলাম বৃদ্ধাশ্রমে। ওখানে গিয়ে জানলাম মাঝ রাতে ঘুমের ঘোরেই সব শেষ হয়ে যায়... সকালে শিবুদা এসে দেখে সব শেষ। আমরা সকলে মিলেই সেই কঙ্কালসার জীর্ণ শরীরটা বয়ে নিয়ে গেলাম শেষকৃত্যের উদ্দেশ্যে। শুনলাম বড়বাবু জানিয়েছেন মুখাগ্নি তিনি করবেন.......
কি ভাবছেন!!!!!!
এ তো একটা সামান্য ঘটনা... পথে-ঘাটে এরকম ঘটনা তো প্রত্যহই ঘটে থাকে... এইরকম অসহায় মানুষদের রাস্তাঘাটে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই...তাই না...
এতদূর সবটা হয়তো তাই ছিল। কিন্তু এরপর যেটা আপনাদের বলব সেটা হয়তো এতটা সামান্য সাধারণ না....
এই ঘটনার পরের দিন ওই ঘরটা, মানে যেই ঘরে ওই বৃদ্ধ ছিলেন,সেই ঘরটা পরিষ্কার করতে যাই।
অবশ্য তিনি ছিলেন বলা ভুল,এক রাতের অতিথি হয়ে ওই ঘরে এসেছিলেন পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে।
বৃদ্ধাশ্রম এর বয়স্ক মানুষরা মিলে ঠিক করেছিল, ওই ঘরেই মানুষটার আত্মার শান্তি কামনায় বাকি আচার পালন করবে। ঘরটা পরিষ্কার করতে করতে খাটের তলে আচমকা একটা কাগজের টুকরো খুঁজে পাই।
না কাগজ ঠিক না!!!
একটা একফালি অর্ধেক ছেঁড়া কাগজে প্রায় ঝাপসা হয়ে আসা একজন কিশোরের ছবি।
এই ছবি আমার অপরিচিত নয়।
এই ছবি ওই বৃদ্ধমানুষটির একমাত্র সম্বল ছিল।
তাঁর ছেলে 'টুবলুর' ছবি।
ছবিটা হাতে তুলে নিতে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। একফালি কাগজটার ঠিক পিছনে ত্যারা বাঁকা ভাবে লেখা আছে...
ধন্যবাদ..!!!!
এটা কে লিখল..!!!!
কালকে তো চোখে পড়েনি..!!!!
তারপর ভাবলাম হয়ত উন্মাদ বৃদ্ধকে শান্ত করতে তার অনুরোধে এই বৃদ্ধাশ্রমের অন্য কোন বৃদ্ধ এটা লিখেছেন। এ নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামালাম না।
এখানে কাজ করতে করতেই, আমি বেশ কিছু জায়গায় ইন্টারভিউ দিতাম, ভালো কোন চাকরির আশায়, যাতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পারি।
এই ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ পাস করার চিঠি পাই। চাকরিটা হয়ে যাওয়াতে বৃদ্ধাশ্রমের কাজটা ছেড়ে দিলাম। তারপর ব্যস্ত হয়ে গেলাম নিজের নতুন চাকরিজীবনে।
কয়েকদিন আগে শিবুদার সঙ্গে দেখা হয়। কুশল সংবাদ বিনিময়ের পর,কাছেই একটা চায়ের দোকানে বসে শিবুদাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-"আচ্ছা শিবুদা বৃদ্ধাশ্রমের সবাই কেমন আছে গো... বড়বাবু কেমন আছেন... উনি আশ্রমে আসেন এখন...."
উত্তরে শিবুদা যা বলল তাতে মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাসের হিসেব পুরো ঘেঁটে গেল।
-"সবাই ভালো আছেরে ভাই। তুইতো কাজটা ছেড়ে দিলি, তারপর যে কি সব ঘটে গেল জানিস তো...."
-"মানে.....!!!!????"
কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলাম।
-"ওই বৃদ্ধ মানুষটাকে তোর মনে আছে... যাকে তুই আহত অবস্থায় রাস্তা থেকে ধরে এনেছিলি....."
-"হ্যাঁ,মনে থাকবে না কেন। বড্ড অসহায় ছিল মানুষটা। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে একটা ছবি আঁকড়ে ছেলেকে....."
-"উনি বড়বাবুর বাবা...."
আমার কথা শেষ করার আগেই শিবুদা বলে উঠলো।
-"কি বলছ টা কি শিবুদা...!!!!!"
ভ্যাবাচাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলাম শিবুদার দিকে।
-"শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যিরে ভাই....আমরাও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি.... উনি নিজে পুলিশের কাছে সবটা স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছেন..."
এতোটুকু বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শিবুদার বুক চিরে।
একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগল,
-"উনার বাবার বাড়ি বীরভূমের কোন এক গ্রামে। মানে বড়বাবুর আসল নিবাস যেখানে ছিল,সেখানে নাকি কি সব জমিজমা ছিল। পৈত্রিক জমি-বাড়ি, বাপ-ঠাকুরদার স্মৃতি বলে ওগুলো বড়বাবুর বাবা বিক্রি করতে চাননি। এদিকে ব্যবসা করতে চাওয়া বড়বাবুর পুঁজির প্রয়োজন। শত চেষ্টা করেও যখন কোন পুঁজির জোগাড় করে উঠতে পারেননা তখন বড়বাবুর চোখ দিয়ে পড়ে সেই জমির দিকে। বারবার করে সেটা বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করার পর তাঁর বাবা রাজি না হলে বাবা-ছেলের বিবাদ বাধে। এই বিবাদের কোন মীমাংসা না হওয়াতে... এক রাতে রাগের মাথায় বাবার মাথায় আঘাত করে তাকে বেহুশ করে অতি সন্তর্পনে তুলে দেয় কোনো এক ট্রেনে। প্রতিবেশীদের জানায় বাবাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে নিজের কাছে। আর তারপর সব জমিজমা আত্মসাৎ করে সেগুলো বিক্রি করে চলে আসে কলকাতায়। হয়তো সেইদিনের আঘাতেই ওই বৃদ্ধ ওনার সকল স্মৃতিশক্তি বিস্মৃত হয়েছিলেন......"
নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওইরকম একটা দেবতুল্য মানুষের আড়ালে এমন ভয়ঙ্কর শয়তান লুকিয়ে থাকতে পারে সত্যি কল্পনা করতে পারছিলাম না। কৌতুহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,
-"বড়বাবু তাহলে কোথায় এখন..!!??"
খানিকক্ষণ নিস্পলক দৃষ্টিতে দূরের দিকে তাকিয়ে, গলার আওয়াজ খাটো করে শিবুদা বললো,
-"জেলে.... উনার স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করেই ওনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরবর্তীকালে আদালত ওনাকে কারাদণ্ড দেয়।
লোকটা যে কি ভয়ঙ্কর চিন্তা করতে পারবি না... জানিস লোকটা এও বলেছে যে ঐদিন রাতে আমার ছুটির সুযোগ নিয়ে মাঝরাতে উনি বৃদ্ধ বাপকে খুন করতে এসেছিলেন.... এতদিন পরে হঠাৎ বাবাকে দেখে ভয় পেয়ে যান বড়বাবু, যদিও তিনি সব বিস্মৃত হয়েছেন কিন্তু টুবলুকে ভোলেননি... যদি উনি কোন ভাবে সব কিছু ফাঁস করে দেয় সেই ভয়ে বাবাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বুড়ো হার্টফেল করে মারা গিয়েছিলেন। তাই প্রিয় ছেলের হাতে মরতে হলো না অন্তত।"
-"কিন্তু বড়বাবু এতকিছুর পর আচমকা এভাবে সবটা স্বীকার করলেন কেন.... এত নৃশংস যে মানুষটা হতে পারে... সে...."
আনমনে বলে বসলাম।
-"জানিনা রে।
হতে পারে বিবেক দংশন।
জানিস উনি একটা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে উনার সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডই ওনার বউ বাচ্চার ভরণপোষণ, এবং বাচ্চাটির পড়াশোনার খরচ চালাবে।
মাঝেমধ্যে ভাবলেই লজ্জা লাগে এরকম একটা জানোয়ারের জন্য কাজ করেছি।
ছিঃ ছিঃ!!"
ঝড়ের গতিতে বলে গিয়ে ধিক্কারে ফেটে পড়ল শিবুদা।
এরপর আরো কিছু কথাবার্তা সেরে এক একবার চা খেয়ে যে যার নিজের গন্তব্যে রওনা দিলাম।
সেদিন বাড়ি ফিরে এসে ড্রয়ার খুলে ওই হতভাগ্য বাবার অপদার্থ সন্তান 'টুবলুর' ফটোটা দেখি। তার পেছনের সেই আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা 'ধন্যবাদ'......
ছবিটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা এই ধন্যবাদ টা কে বৃদ্ধর নিছক পাগলামো, নাকি বৃদ্ধ সত্যিই কারো উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। শেষবারের মতো ছেলের সাথে সাক্ষাত করানোর জন্য কি তার উদ্দেশ্যেই এই কৃতজ্ঞতা....
বসে বসে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। আচ্ছা তিনি কি সত্যিই সব বিস্মৃত হয়েছিলেন,না কি.... আর সেদিন রাতেই ওই চার দেয়ালের মধ্যে কি ঘটেছিল....বড়বাবু ই বা কেন হঠাৎ সব স্বীকার করলেন.... বিবেক দংশন না কি ভয়...!!!!!!
আর বড়বাবুর মনে প্রথম থেকেই কি কোন আত্মগ্লানি ছিল। সম্পত্তির লোভে বাবাকে আঘাত করে সব আত্মসাৎ করলেও, তার মনের কোন অংশে কি কোন অপরাধবোধ লুকিয়ে ছিল। কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না, যে মানুষটা নিজের বাবার প্রতি এমন অবিচার করে, সেই একই মানুষ কিনা বৃদ্ধাশ্রমে অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এত যত্ন নিত।
সত্যিই মানুষের চরিত্র বোঝা বড়ই কঠিন। যে ছেলেকে, মানুষটা এত ভালোবাসলো, এমনকি স্মৃতি হারানোর পরও, সবকিছু ভুলে গেলেও ছেলেকে খুঁজে গেল সারা জীবন। সেই ছেলে বাবার উপর আঘাত করলো, এমনকি এত বছর পর অসহায় অবস্থায় বাবাকে দেখেও, তার মনে প্রতিহিংসা জাগল, সেই মানুষটা হঠাৎ কি করে আত্মগ্লানিতে ভুগে সবটা স্বীকার করলো।
সত্যিই কি সবটা এতটাই সরল। কোন এক অজানা কারণে যেন, আমার মন সবকিছু সরলভাবে মানতে পারছিল না।
ছবিটা হাতে নিয়ে একমনে এই সবই ভাবছিলাম,আচমকা একটা আওয়াজে হুঁশ ফিরলো। জানলা দরজাগুলো তীব্র হাওয়ার দাপটে ঝনঝন করছিল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আকাশ কালো করে ঝড় উঠেছে। অন্ধকার চিরে গর্জে উঠছে বিদ্যুৎ। ফটোটা টেবিলের উপর রেখে উঠে গেলাম জানলা দরজা জানলা বন্ধ করতে। তীব্র হাওয়াতে পর্দাগুলো উড়ছিল, হঠাৎই যেন একটা ঠান্ডা দমকা হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল ছবিটাকে, কানের কাছে যেনএকটা অস্পষ্ট ফিসফিস শুনতে পেলাম,
-"এত ভেবো না....সব প্রশ্নের উত্তর কি পাওয়া যায়...স্বাভাবিক ভাবনার বাইরে যে অনেক কিছুই থাকে...."

httpssankhamanigoswami.xyz



ভয়ংকর ভূতের গল্প,
ছোটদের ভূতের গল্প,
 ভূতের গল্প,
বিখ্যাত লেখকদের ভূতের গল্প,
সত্যিকারের ভূতের গল্প,
বড় ভূতের গল্প,
একটা বড় ভূতের গল্প,
bengali Ghost story
Literary genre


কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...