বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১

মিত্র না অমিত্র ? সাংবাদিকতার নীতিমালা

মাস কমিউনিকেশন যারা পড়তে যায় তাদের একটা বড় লাভ এই যে , তাবড় তাবড় সাংবাদিকদের শিক্ষক হিসেবে পাওয়া যায় । ২০০৫ সালে আমাদের তেমনি সম্পাদনা(Editing) পড়াতেন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক রথীন মুখোপাধ্যায় । স্যর একজন অগ্রজের গল্প করেছিলেন একদিন । হয়ত নিউজ বিভাগে খবর এল , কোনও এক জায়গায় একটা দুর্ঘটনায় সাতজন মারা গেছে । এই শুনে ওই বিভাগীয় প্রধান বলতেন --" ধুর , মাত্র সাত জন !" এরকম মন্তব্য তখন শিক্ষানবিশ স্যরের কানে লাগত । খারাপ লাগত । একদিন সাহস করে বিভাগীয় প্রধানকে জিজ্ঞেসই করে ফেলেছিলেন --- "আপনার খারাপ লাগে না এরকম কথা বলতে ? আরও বেশি লোক মারা গেলে আমাদের কী লাভ ?" শিক্ষানবিশের সংবেদনশীলতার জায়গাটি বুঝতে পেরে অল্প হেসে স্যরের বস উত্তর দিয়েছিলেন --- "আমাদের লাভ, ভাল শিরোনাম হবে । ৭ জনের মৃত্যু মানুষের মনে-চোখে-মস্তিষ্কে যতটা প্রভাব ফেলে , ৭০ জনের প্রভাব বা ৭০০ জনের প্রভাব তার চেয়ে অ-নে-ক বেশি । আর খবরটা যদি একমাত্র আমরাই দিই , তবে তো আরও বেশি লাভ ।" পোড় খাওয়া সেই সাংবাদিক সেদিন মানবিকতা আর ব্যবসা -- দু'দিকেই ভারসাম্য বজায় রেখে চলার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কঠিন দায়িত্বের কথা অনেকটা সময় ধরে স্যরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ।

বেশ কয়েক বছর আগে কাশ্মীর ঘুরতে গিয়ে পর্যটকদের একটা দল জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েছিল । ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পর্যটক মারা যান , বাকিরা মারাত্মক আহত হন এবং তাঁদের অঙ্গহানি হয় । পর্যটকদের কফিনবন্দী দেহ যখন কলকাতা বিমানবন্দরে নামানো হয় , তখন অন্য সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল , বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কফিনবন্দী দেহগুলির ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন । সমাজে ছিছিক্কার পড়ে গিয়েছিল , বহু কাগজের উত্তর সম্পাদকীয় ও সম্পাদকীয় স্তম্ভে উঠে এসেছিল সেই পুরনো প্রশ্ন । মানবিকতা আগে , না সাংবাদিকতা আগে ? সাংবাদিকদের অবস্থাটা আসলে শাঁখের করাতের মত , আসতেও কাটে , যেতেও । খবর না করলে তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে কাগজ বা চ্যানেল উঠে যাবে । আবার কাজের সময় সব দিক বজায় রেখে - চিন্তা করে কাজ করতে হলে হয় কাজটাই হবে না , নয়ত অন্য কেউ আগে করে ফেলবে । ফলে সাংবাদিকদের একটা কথাই মাথায় থাকে , যেন তেন প্রকারেণ কাজটা করতে হবে এবং সফলভাবে করতে হবে । আজ থেকে একশো বছর পরে ছবিটা বা ভিডিওটা থাকবে , সেটা কফিনের ওপর দাঁড়িয়ে তোলা হয়েছিল কিনা সে কথা কেউ মনে রাখবে না । এটাই নির্মম বাস্তব ।
আজ এই প্রসঙ্গ আসছে কেন ? কারণ আজ, ১৮- ০৩ -২০২১
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবার পর, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন এক রাজনীতিক । একটি চ্যানেলে দেখছিলাম , সাংবাদিক একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই রাজনীতিককে বারবার করছিলেন । আপনি কি ওই দল থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন ? উত্তরে না বলা সত্ত্বেও প্রতিবার একই প্রশ্ন করা হচ্ছিল । দেখা গেল , পাশে বসে থাকা ওই রাজনীতিকের পুত্র একবার কথা বলতে বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করলেন । কিন্তু তাঁকে থামিয়ে দিয়ে পোড় খাওয়া রাজনীতিক আবারও একই উত্তর দিলেন । কারণ তিনি দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় খুব ভালভাবে জানতেন , এটা সাংবাদিকদের খবর জোগাড়ের একটা কৌশল । রাজনীতিকরা একটা কথা বলে বা কোনও কাজ করে পরমুহূর্তেই বলবেন যে সেই কথাটা আদৌ কোনওদিন তিনি বলেনইনি বা সেই কাজটা করেনইনি । আর সাংবাদিকও তাঁর পেট থেকে সত্যি কথাটা বের করতে একই প্রশ্ন বারবার করে যাবেন এই আশায় যে , বিরক্ত হয়ে বা ভুল করে যদি তিনি সত্যি কথাটা বলে ফেলেন । পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি থাকায় , এই খেলার সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন , তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন স্বেচ্ছায় ।

কিন্তু খুব কাকতালীয় ও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই খবর সম্প্রচার হওয়ার পর একই দিনে তিনি গত হলেন । হয়ত তিনি অসুস্থ ছিলেন , হয়ত সেই কারণেই তাঁর পুত্র তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলেন । কিন্তু কিছু মানুষ এখন বলবেনই কেন তাঁকে একই প্রশ্ন বারবার করা হল ? অসুস্থ শরীরে এমন ইমোশনাল অত্যাচারই তাঁর মৃত্যুর কারণ এমন জল্পনাই দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা আগামিদিনে প্রবল ।

sankhamani goswami




সাংবাদিকতা

সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য

সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ


সাংবাদিকতার সংজ্ঞা


সাংবাদিকতার নীতিমালা





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...