শুক্রবার, ২৬ মার্চ, ২০২১

জীবন যেমন

২০১১ সাল । একটা এস এম এস প্রতিযোগিতায় জিতে এ বি পি আনন্দের এক তর্কযুদ্ধের আসরে গিয়েছি । আমন্ত্রণ পত্রের নীচেই লেখা , শেষে 'হাই টি'-এর আয়োজন আছে । কথাটার মানে জানতাম না , বাবার কাছ থেকে জেনে নিলাম । প্রসঙ্গত , আমি অভিধান দেখা শুরু করেছি বাবা গত হওয়ার পরে । যাইহোক , অনুষ্ঠানে তাবড় তাবড় সব বক্তা ছিলেন । তালিকা দিয়ে লেখা দীর্ঘায়িত করতে চাইনা । ওঁদের তো টিভিতে দেখিই । আমি আমার চারপাশটা ভালভাবে দেখছিলাম । অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের 'দ্য পার্ক' হোটেলের প্রেক্ষাগৃহ 'গ্যালাক্সিতে' । সত্যিই সেদিন নক্ষত্র সমাবেশ হয়েছিল ওখানে । পাশেই 'ট্রিঙ্কা'জ' । ঊষা উথথুপের উত্থান এখান থেকেই , কাগজে পড়েছিলাম । 'দ্য পার্ক'- এ ক'টা তারা ? আমার জানা নেই । জানার আগ্রহও নেই । তবে কাচের দরজার সামনে দাঁড়ালে স্বয়ংক্রিয় দরজা আপনিই খুলে যায় , বেসিনের কলের তলায় হাত রাখলে জল পড়ে , হাত সরালে জল পড়া বন্ধ হয়ে যায় । হাত শুকানোর জন্য রুমাল বের করার দরকার হয়না , একটা মেশিনের নীচে হাত পাতলে , হাত নিজেই শুকিয়ে যায় , কিন্তু কষ্ট করে হাতটা পাততে হয় ! আমার কাছে সম্পূর্ণ এক নতুন জগৎ । এসব দেখছিলাম ঘুরে ঘুরে । এ বি পি আনন্দের গেস্ট , ঘ্যাম ব্যাপার । অবশ্য শুধু আমি নই , আরও অনেকেই আমন্ত্রিত ছিলেন । প্রেক্ষাগৃহে আমাদের বসার জায়গার বাঁদিকে টি ভি চ্যানেলের যন্ত্রের সারি বা প্যানেল । উপর থেকে ছবি নেওয়ার জন্য ছোট ক্রেন । আমি যে টেবিলে বসেছি , তারই একদিকে বসেছেন শাঁওলি মিত্র । প্যানেলের পিছন দিকে , হাতে স্ক্রিপ্ট নিয়ে, খুব টেনশনে ভোগা ছাত্রের মত চিন্তিত মুখে পায়চারি করছেন সুমন দে । এই অবস্থাটা আমার খুব চেনা , কারণ ছোটবেলায় এবং বড়বেলায় আমি পড়া মুখস্থ করতে হলে এভাবেই করি , এবং আরও অনেককে জানি যাঁদের একই অভ্যেস । কিছুক্ষণ পরে সুমন আসনে এসে বসলেন । অতিথিদের সাথে কথা বলছেন , কিন্তু চোখেমুখে টেনশনের ছাপ স্পষ্ট পড়া যায় । হঠাৎ আমাদের পিছন দিক থেকে অনুষ্ঠান পরিচালকের গলা ভেসে এল মাইক্রোফোনে । প্রথম নির্দেশ দর্শকদের প্রতি --- অনুষ্ঠান চলাকালীন আপনারা উঠবেন না বা হাঁটাহাঁটি করবেন না । তার পরের কথাটা সুমন দে-কে উদ্দেশ্য করে বলা ---- সুমন রেডি ? এবার যাব । সুমন অস্ফুটে উত্তর দিলেন --- রেডি । তারপর স্টার্ট সাউন্ড , রোল ক্যামেরা ... ফাইভ , ফোর , থ্রি , টু , ওয়ান ... তারপর ঠিক দশ সেকেন্ড মত বিরতি দিয়ে সুমন সহাস্যে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন -- নমস্কার , আমি ... ... ... । মুখে টেনশনের চিহ্নমাত্র নেই । এই সুইচ অফ আর অনটা উনি কী করে করলেন , আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি ।

অনুষ্ঠান শেষে আমাদের 'সামান্য' আপ্যায়নের আয়োজন । দামি ডিশ -কাঁটা-চামচ । কাঁটা-চামচ সামলাবার চেষ্টাই করিনা কোনওদিন । যে যাই করুক , আমার দক্ষিণ হস্তের উপরেই খাওয়ার ব্যাপারটা ছেড়ে দিই । দেখলাম একজন চামচ দিয়ে আলু ভাঙতে যাওয়ায় , আলু ছিটকে পড়ল দামি কার্পেটে । মনে আরও একটু বল পেলাম । বুফে সিস্টেমে খাওয়ার ব্যবস্থায় সম্ভবত মোট চব্বিশ রকম পদ ছিল সেদিন । বিখ্যাত মানুষদের কেউই কিচ্ছু খেলেন না , একজন ছাড়া --- সুগত মারজিত । উনি নামী অধ্যাপক , কলাম লেখক , শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গায়ক জানতাম , । জানা ছিল না , উনি খুব খাদ্যরসিকও । সেদিন দু'জন মাত্র , স-ব পদ্গুলি এক হাতা করে চেখে দেখেছিল । প্রথমজন উনি , দ্বিতীয় আমি । আক্ষরিক অর্থেই সেদিন ওনাকে আমি অনুসরণ এবং অনুকরণ করছিলাম । কিছু পদের নাম আমি সেদিনই প্রথম শুনেছিলাম । যেমন -- আর্জেন্টিনার বিখ্যাত চিকেন স্যালাড । আমি তো সাধারণ স্যালাডের মধ্যে সিদ্ধ করা মাংসের লম্বা লম্বা টুকরো ছাড়া আর কোনও পার্থক্য খুঁজে পাইনি । তবে হ্যাঁ , দ্য পার্কের রাঁধুনি বড় ভাল রাঁধে , তাই খাওয়াটা কিঞ্চিৎ বেশি হয়ে গিয়েছিল । তারপর আরেক টেবিলের আয়োজনও ছিল ! এবার ছোট্ট করে একটা চেনা গল্প বলি । একবার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এসে এক ভক্ত বললেন , ওই জায়গায় খুব বড় সঙ্গীতানুষ্ঠান হচ্ছে । এক ওস্তাদ আসবেন , তিনি বড় ভাল গান । কথাসাহিত্যিকের প্রশ্ন ছিল ---- তোমার ওস্তাদ থামতে জানে তো ? শেষ করলাম , কেমন !
sankhamanigoswami.blogspot.com

এ বি পি আনন্দ খবর



এ বি পি আনন্দ বাংলা খবর


এ বি পি আনন্দ আজকের খবর


এ বি পি আনন্দ লাইভ


এ বি পি আনন্দ খবর লাইভ






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...