কাবুলিওয়ালার দেশের কথা
আফগানিস্তান অ-সভ্য তালিবান জঙ্গিদের হাতে চলে গেছে । খুবই দুঃখের কথা । প্রতিবেশী দেশে ভারত কোন একটা বন্দর তৈরি করে দিয়েছিল শুনেছিলাম । ইরান থেকে আফগানিস্তান হয়ে ভারতে গ্যাসের পাইপলাইন আসার একটা খবরও পড়েছিলাম । সেই সম্ভাবনাগুলোও শেষ । মন্দির পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায়না , প্রতিবেশী দেশের জল-জমি-আকাশ জঙ্গিদের দখলে চলে গেলে ভারতের চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে । ইমরান খান এই ঘটনাটিকে আফগানিস্তানের মুক্তি পাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন ! একজন প্রথমসারির প্রাক্তন ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মুখে এমন অখেলোয়াড়োচিত মন্তব্য হতবাক করে দেয় ।
পৃথিবীর
প্রতিটি জঙ্গি সংগঠনই কোনও না কোনও ভাবে বৃহৎ শক্তির দ্বারা মদতপুষ্ট , সরাসরি বললে
স্পনসরড । আইসিস হোক বা তালিবান – কোনও মহাশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এত শক্তিশালী হয়ে
উঠতে পারেনা । পারেনা আফগানিস্তানের মত একটা গোটা দেশ দখল করতে । আমেরিকা দু’দশক আফগানিস্তানকে
রক্ষা করে এসেছে এমনি এমনি নয় , সে সময়ে এ গ্রহের দাদা ছিল আমেরিকা । হালে খুব সূক্ষ্ম
ভাবে পৃথিবীর দাদা যে পাল্টাচ্ছে, সেটা মোটের ওপর আমাদের সবার কাছে স্পষ্ট । আমেরিকার
কাছেও । তাই তারা হাত গুটিয়ে নিচ্ছে । এদিকে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ায় উল্লসিত
পাকিস্তানের সর্বাধিনায়ক ইমরান খান । সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের খুব বন্ধু রাষ্ট্র
চিন , এ গ্রহের নয়া দাদা । তালিবানরা যে চিনের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে এই কথাটা বুঝতে
খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয়না । এই মুহূর্তে চিন একমাত্র রাষ্ট্র যে , তার সীমানার
কাছাকাছি থাকা প্রত্যেকটি দেশের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করেছে গত কয়েক মাসে
। একটা নির্বাচিত সরকারকে অঙ্গুলিহেলনে নাচানোর চেয়ে তালিবানদের সাহায্য করার কাজটা
অনেক সহজ চিনের পক্ষে , দাদাগিরি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ।
যেটা হচ্ছে খুব খারাপ হচ্ছে, সন্দেহ নেই । বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির ধ্বংস হওয়ার মত আরও কিছু বর্বরতার ছবি আমরা আগামী দিনে যে দেখব তাতেও সংশয় নেই । প্রতিবেশী দেশের বিপদ নিয়ে চিন্তা খুবই ভাল , আরও ভাল নিজেদের দেশ নিয়ে আগে চিন্তা করা । বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তির মত অত প্রাচীন না হলেও লুটিয়েন্স দিল্লির স্থাপত্যের একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে , শোভা আছে । সেটাকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে মোদীর শাসনকালের প্রতীকস্বরূপ সেন্ট্রাল ভিস্টার কাজ চলার মধ্যে তালিবানিজম নেই ? মোগলসরাই স্টেশনের নাম পরিবর্তনের মধ্যে তালিবানি চিন্তা-ভাবনার ছাপ নেই ? পশ্চিমবঙ্গের মত বরাবর পরমতসহিষ্ণু রাজ্যে সশস্ত্র রামনবমীর মিছিল করার মধ্যে তালিবান জঙ্গিদের ছায়া নেই ? রামনবমীর মিছিলে বাচ্চাদের হাতে তরোয়াল ধরিয়ে দেওয়ার মধ্যে সেই একই জঙ্গিপনা নেই ? প্রতিবাদ অনেকেই করেন , কিন্তু কেউ তো বলেন না ----রাজা তোর কাপড় কোথায় , কেউ তো স্পষ্ট ভাষায় বলেন না , যারা বাচ্চাদের হাতে তরোয়াল ধরিয়ে দেয় ,তারা কখনও সমাজের হিতাকাঙ্ক্ষী হতে পারেনা ।
দিল্লি - মোগলসরাই অনেক দূর , ঘরের কাছে মুর্শিদাবাদ আছে । মোগল আমলের চিত্তাকর্ষক ইতিহাসের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন এখনও সেখানে অটুট । মুর্শিদ কুলি খাঁ-র নামে মুর্শিদাবাদ । আগামিদিনে যদি মুর্শিদাবাদের নাম বদল হয় , তখন প্রতিবাদ করার মত জোর পাবেন তো তাঁরা , যাঁরা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে খুবই চিন্তিত ? বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তি আমি চোখে দেখিনি , কিন্তু তার অনেক গল্প শুনেছি , গল্প শুনে আর ভিডিও দেখে আমি তাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি । খুব ভাল কথা । কিন্তু আমরা প্রায় সবাই যে স্বচক্ষে খোসবাগে সিরাজের সমাধি দেখেছি , মুর্শিদ কুলি খাঁ'র সমাধি দেখেছি । আগামিদিনে যদি ভারতে মুসলিম শাসনের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এগুলি ভেঙে ফেলা হয় , গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় , মুর্শিদাবাদের নাম পাল্টে দেওয়া হয় , তবে আমার অন্তত বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস হতে দেখার চেয়েও বেশি কষ্ট হবে । আর ভবিষ্যৎ কাল কেন , ঘটমান বর্তমানে আসি । তালিবানরা ঐতিহাসিক কাবুল গেট ভেঙেছে , আর আমাদের দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগ জেনারেল ডায়ারের কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক স্মৃতির ক্ষত বয়ে চলার বদলে হয়ে উঠছে ঝাঁ চকচকে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো । এখন আর দেওয়ালে বুলেটের ক্ষত নয় , কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল আরও বেশি দ্রষ্টব্য হয়ে উঠবে বলে খবর । বিশিষ্ট ইতিহাসবিদেরা বলছেন , কুখ্যাত হত্যাকাণ্ডের স্মারক হিসেবে বিষণ্ণতা নয় , নবনির্মিত জালিয়ানওয়ালাবাগ দর্শক-শ্রোতাদের মনে আনন্দ ও ফুর্তি জোগাবে । ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে আমরা পড়েছি , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে 'নাইটহুড' ত্যাগ করেছিলেন । খুব আনন্দে কাজটা করেছিলেন কি ? একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি । আমরা আগ্রা দুর্গ দেখতে গিয়ে দেওয়ান-ই-আম এবং দেওয়ান-ই-খাসের দেওয়ালে , দুর্গের আনাচকানাচে অমুক প্লাস অমুক , তমুক প্লাস তমুক দেখেছিলাম ২০০৩ সালে । তখনও দিল্লির মসনদে এন ডি এ , থুড়ি বিজেপি সরকার । খুব কষ্ট হয়েছিল ঐতিহাসিক একটি স্থাপত্য রক্ষায় সরকারের অসীম উদাসীনতা দেখে । ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্ধু মহাসভার ভূমিকা খুব ইতিবাচক নয় বলেই কি এই ঔদাসীন্য ?
এককথায় বললে , কেপটাউনে জল জমলে লেক টাউনের কী ? তালিবান অনেক দূরে আছে , ঘাড়ের কাছে শ্বাস ফেলছে সাম্প্রদায়িক উগ্রতা , এবং ক্রমশ তা শক্তিশালী হয়ে উঠছে । এই অপশক্তি নিয়ে আরও বেশি চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই আমার মনে হয় ।
তালিবান আফগানিস্তান
তালিবান আফগানিস্তানের যুদ্ধ
তালিবান খবর
তালিবান নিউজ
তালিবান সংবাদ
তালিবান মিনিং ইন বাঙ্গালী
talibanism in india 2021

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.