ইন্দ্রিয়জ
'অন্ধাধুন' দেখছিলাম । যাঁদের পঞ্চেন্দ্রিয়ের মধ্যে যে কোনও একটি ইন্দ্রিয়ের প্রতিবন্ধকতা থাকে , তাঁদের সাধারণত অন্য একটি ইন্দ্রিয় ভীষণ প্রখর হয় । এ ব্যাপারে আমার ছোট পিসির কথা বলতে হয় । ছানি পড়ে একটা সময়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন । অপারেশনে ভীতি ছিল । ফলে বেশ কয়েক বছর পুরোপুরি অন্ধ অবস্থায় কাটান । পরে বাবা কাগজ দেখে রাসল স্ট্রিটে ডাঃ পাহাওয়ার সন্ধান পান । উনি কলকাতায় প্রথম লেজার( একটু বিদ্যে ফলাই । পুরো কথাটা হল --- Light Amplification by the Stimulated Emission of Radiation) রশ্মি দিয়ে ছানি অপারেশনের প্রযুক্তি এনেছিলেন । আমার ভাই পরম ধৈর্য সহকারে বুয়া , মানে আমার ছোট পিসিকে বুঝিয়ে অপারেশনে রাজি করায় । কলকাতায় বুয়ার অপারেশন হয় আশির দশকের শেষ লগ্নে । তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত ছোট পিসি চশমা ছাড়াই ভাল দেখতে পান ।
এটা আসল গল্প নয় । গল্প ওই ইন্দ্রিয় নিয়ে । অন্ধ অবস্থায় থেকেও পিসি বাড়িতে মাছ কাটার দায়িত্বটা যেচে নিজের ঘাড়ে নিয়েছিলেন । বাবা বাজারে যাওয়ার সময় বলে দিতেন কই মাছ আনলে, না কাটিয়ে আনতে । কোনও আপত্তি খাটত না । এখন বুঝি বুয়া চ্যালেঞ্জটা নিতে ভালোবাসতেন । আর জলপাইগুড়ির কই মাছের সুখ্যাতি তো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করে গেছেন --- "আনবে কটকি জুতো , মটকিতে ঘি এনো / জলপাইগুড়ি থেকে এনো কই জিয়নো !" যাঁরা কই মাছ কাটেন , তাঁরা যানেন কই মাছের কাঁটা সাংঘাতিক জিনিস , জ্যান্ত কই মাছ কাটা খুব কঠিন কাজ । খুব সতর্কতার সাথে কাজটা করতে হয় । আমার ছোট পিসি কিন্তু আমাদের চোখের সামনে জ্যান্ত কই মাছের প্রাণ কেড়েছেন দিনের পর দিন । মাছ কাটার আগে মা পাশে একটু সংগ্রহ করে আনা কোলবলের ছাই আর নুন দিতেন । নুনটা মাছের ওপর ছড়িয়ে , আর ছাইটা হাতে মেখে শুরু হত বুয়ার মাছ কাটা । হাতের কৌশলে অদ্ভুত কায়দায় মাছকে কাবু করতেন , ব্যাপারটা বলে বোঝানো অসম্ভব । আজকালকার ঘটনা হলে , এত শব্দ খরচ না করে , ফেসবুক বা ইউটিউব লাইভ করতাম ! ভাল কথা , বুয়া কিন্তু সে সময়ে সন্ধেবেলা সেতারও বাজাতেন ।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.