করোনা ভাইরাস এসে যৌনকর্মীদের ভাতে মেরেছে । আদিম রিপুর দংশনের চেয়েও মানুষের প্রাণের মায়া বেশি । আরও অনেকের মত দিনবাজারের মানসীর লোকের দয়ায় পেট ভরছে । সরকারের থেকেও রেশন মিলছে , কিন্তু সংসারে নগদ টাকার চাহিদা কী এসবে মেটে ? সংসার ! হাসি পায় মানসীর । সংসারের করার স্বপ্নে বিভোর হয়েই মালবাজারের বাড়ি থেকে বিপ্লবের সাথে পালিয়েছিল সে । দু'দিন ফুর্তির পরে বিপ্লব তাকে অন্য লোকের হাতে বেচে দিয়েছে । প্রথমটায় বিপ্লবের এই আচমকা পরিবর্তন বিশ্বাসই করতে পারেনি সে । যতদিনে বিশ্বাস হল , ততদিনে বেশ কয়েকবার হাত বদল হয়ে এই পাড়ায় ঠাঁই পেয়েছে ।
খিদে বড় বালাই , দেড় বছর ধরে লকডাউনের ধাক্কা মানসীর জীবনেও ভালভাবেই এসে লেগেছে । এমন একটা দুনিয়ায় তাকে ছুঁড়ে ফেলেছে সমাজ, যে বিকল্প জীবিকা খোঁজার পথটাও খুব কঠিন । ইদানীং খদ্দের আসছে , তবে হাতে গোনা । মানসী তাই এই পরিস্থিতির ওপর , সমাজ-সংসারের ওপর বেজায় খাপ্পা । তার মনে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠে । ইচ্ছা করে গোটা পুরুষ জাতটাকে উচিত শিক্ষা দিতে । বছর কুড়ি আগে , স্কুলে পড়তে কাগজে একটা নষ্ট মেয়ের কথা পড়েছিল মানসী । ঘটনাটা অভিনব । মেয়েটি এইচ আই ভি পজিটিভ ছিল । কন্ডোম ছাড়া একাধিক যৌন সংসর্গে যে এইডস , সিফিলিস , গনোরিয়ার মত অসুখ অনিবার্য, মানসী সেটা জানত । ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস , জীবন বিজ্ঞানে মাধ্যমিকে লেটার মার্কস ছিল তার । আজ লোকে সে কথা শুনলে হাসবে । তো, সেই মেয়েটা একটা অদ্ভুত খেলা খেলেছিল সমাজের সাথে । যে সমাজ , যে পুরুষ তাকে এই মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছে , তাঁদের সঙ্গে সঙ্গমের সময় সে নিজের অসুখের কথা বেমালুম লুকিয়ে ফেলত । সেই সময়েও কন্ডোম নিয়ে এত সচেতন ছিলনা মানুষ । ফলে ওই একজন মেয়ের থেকেই বহু পুরুষ এইচ আই ভি - তে আক্রান্ত হয় । ব্যাপারটা এত অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে পুলিশি তদন্ত শুরু হয় । দেখা যায় আক্রান্তদের সকলের যৌনপল্লীতে যাতায়াত ছিল । তদন্ত আরও এগোতে দেখা যায় , আক্রান্তরা সবাই কোনও না কোনও সময়ে ওই মেয়েটির কাছে গিয়েছে । শেষে মেয়েটিকে জেরা করে গোটা ঘটনাটা জানা যায় ।
যদি বিপ্লবকে হাতের কাছে পাওয়া যেত , ভাবে মানসী , আর নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসতে থাকে । লাইনের অন্য মেয়েরা খেয়াল করেনা , মানসীর চোয়াল ক্রমশ শক্ত হচ্ছে ।
বিষকন্যা কি
বিষকন্যা দাও

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.