বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

 ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন


ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এক অভিনব অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সংযোজন ঘটেছে। কেরালার বৃহত্তম জিপলাইনটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এটি শুধু কেরালার সবচেয়ে বড় জিপলাইন নয়, বরং একটি সাহসিকতার এক নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করে যা সমস্ত বয়সী অ্যাডভেঞ্চার লাভারদের মুগ্ধ করবে।

### জিপলাইন কী?

জিপলাইন হল একটি উত্তেজনাপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, যেখানে একটি দড়ির উপর একটি বিশেষ ব্যবস্থা দিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম বা ক্যাবলকে স্লাইড করে নিচে নামা হয়। এটি সাধারণত পাহাড় বা বনভূমির মাঝ দিয়ে নির্মিত হয়, যাতে পর্যটকরা উচ্চতা থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। জিপলাইন স্পোর্টস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় এবং এটির মাধ্যমে একদিকে যেমন অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী হওয়া যায়, তেমনি অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়।

### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইনটি সাস্পেনশন ব্রিজ এবং পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একটি দীর্ঘ দড়ি পদ্ধতির মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। এটি কেরালার কোঝিকোড় জেলার মালাপ্পুরমে অবস্থিত। এই জিপলাইনটি ২০০০ ফুট দীর্ঘ, যা কেরালার জিপলাইনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। উচ্চতা প্রায় ৩০০ ফুট পর্যন্ত, যা এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যেখানে আপনি আকাশে উড়ে যেতে পারেন এবং নিচে ছড়িয়ে থাকা বনভূমি ও নদী উপভোগ করতে পারেন।

এই জিপলাইনটি একে অপরের সাথে যুক্ত দুটি টাওয়ার বা পোস্টের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকরা একটি টাওয়ার থেকে শুরু করে আরেকটি টাওয়ার পর্যন্ত দ্রুতগতিতে স্লাইড করেন। গতি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে এটি নিরাপদ এবং উত্তেজনাপূর্ণ। অতিরিক্তভাবে, প্রতিটি যাত্রীর জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা তাদের নিরাপদে এই দুঃসাহসিক যাত্রা সম্পন্ন করতে সহায়ক।

### আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য

1. **দৃশ্যমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য**: জিপলাইনটি এমন স্থানে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আপনি পাহাড়, বনভূমি, এবং নদীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এটি কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি নতুন দিক তুলে ধরেছে।

2. **অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য আদর্শ**: যারা সাহসিক কাজের প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি নিখুঁত অভিজ্ঞতা। এখানে আপনার সমস্ত সাহসিকতা ও অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছা পূর্ণ হবে।

3. **নিরাপত্তা ব্যবস্থা**: কেরালার বৃহত্তম জিপলাইনে সমস্ত ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। হেলমেট, সেফটি হ্যারনেস, এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ এটি আরও নিরাপদ করে তোলে।

4. **পর্যটনের বিকাশ**: এই জিপলাইনটি কেরালায় পর্যটন শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেরালার সৌন্দর্যকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

### কেরালার পর্যটন শিল্পে ভূমিকা

কেরালা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কেরালার বৃহত্তম জিপলাইনটি এই ধরণের পর্যটনকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কেবল পর্যটকদের আকর্ষণ করেই থামেনি, বরং স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, জিপলাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কেরালার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ মিলছে।

### উপসংহার

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইনটি একটি আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ প্রদান করে যা একদিকে যেমন সাহসিকতার অভিজ্ঞতা সঞ্চারিত করে, তেমনি অন্যদিকে কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। এই জিপলাইনটি কেরালার পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীকে আকৃষ্ট করবে, যাদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।

নরওয়েরকিংবদন্তীদাবাড়ুমাগনুসকার্লসেন: এক বিস্ময়কর যাত্রা

 #নরওয়েরকিংবদন্তীদাবাড়ুমাগনুসকার্লসেন: এক বিস্ময়কর যাত্রা


দাবা বিশ্বের কিংবদন্তী নামগুলির মধ্যে একজন হলেন নরওয়ের মাগনুস কার্লসেন (Magnus Carlsen)। ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া এই দাবাড়ু আজকের দিনে বিশ্ব দাবা তথা বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের খেলায় এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষ। তার খেলা ও অর্জনগুলি শুধু নরওয়ে বা ইউরোপেই নয়, বিশ্বজুড়ে দাবাপ্রেমীদের কাছে এক বিশেষ মর্যাদার জায়গা অধিকার করেছে।

### প্রাথমিক জীবন ও শখ

মাগনুস কার্লসেন ১৯৯০ সালের ৩০ নভেম্বর নরওয়ের তুনসে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল একটি সাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত পরিবার, যেখানে তার বাবা হেন্সি কার্লসেন ছিলেন একটি সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার এবং মা, সেভেন মাগনসেন, ছিলেন এক ধরনের মাল্টি-স্পোর্টস অ্যাথলেট। মাগনুসের দাবায় আগ্রহ ছিল খুব ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ৮ বছর বয়সে দাবায় তার প্রথম পরিচিতি হয়, আর কিছুদিনের মধ্যে তিনি দাবার প্রতি এক গভীর অনুরাগ তৈরি করেন। তার বাবা-মা তাকে শখের খেলায় আগ্রহী করে তোলেন এবং নিয়মিত তাকে দাবা খেলার সুযোগ দেন। খুব শীঘ্রই তার বিশেষ প্রতিভা ফুটে ওঠে এবং মাত্র ৯ বছর বয়সে সে আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করে।

### প্রফেশনাল দাবায় অভিষেক

মাগনুস কার্লসেনের জন্য দাবার জগতে প্রবেশের যাত্রা অত্যন্ত দ্রুততর ছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি আন্তর্জাতিক দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার (GM) তকমা লাভ করেন, যা তখন একটি বিশ্ব রেকর্ড ছিল। এটি তার প্রাথমিক কীর্তির মধ্যে অন্যতম এবং তাকে বিশ্ব দাবা চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে।

### বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে

মাগনুস কার্লসেনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ২০১৩ সালে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনা। ২০১৩ সালে তিনি ভারতীয় কিংবদন্তী বিশ্বনাথ আনন্দকে পরাজিত করে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হন। তার পর থেকে তিনি ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮, এবং ২০২১ সালে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন পদটি রক্ষা করেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে তার অবস্থান বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নের আসনে, প্রমাণ করেছে যে তার খেলা কেবল কৌশলগত দক্ষতায় নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তায়ও এক বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছেছে।

### খেলার ধরন এবং কৌশল

মাগনুস কার্লসেনের খেলা বিশ্লেষণ করতে গেলে তার অভ্যন্তরীণ কৌশল এবং খেলার গভীরতার প্রতি তার অনুপ্রেরণা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। তিনি কোনো নির্দিষ্ট ওপেনিং বা কৌশলকে কেন্দ্র করে খেলতে পছন্দ করেন না। বরং, তার খেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার পরিসরের মানসিক তীক্ষ্ণতা এবং খেলোয়াড়ের ভুল ধরতে পারার ক্ষমতা। তার অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ এবং ডিফেন্সিভ মেন্টালিটি একে তাকে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রতিটি পদক্ষেপে এক পা এগিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।

### বিশ্বসেরা রেটিং

কার্লসেন যে তার সময়ের অন্যতম সেরা দাবাড়ু, তা তার ফিডে রেটিংও প্রমাণ করেছে। ২০১৪ সালে, তিনি ২৮৮২ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেন, যা তখনকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেটিং ছিল। এখনও পর্যন্ত তার রেটিং ২৮০০ এর উপরে থাকে, যা তাকে বিশ্বে সর্বোচ্চ রেটিংধারী দাবাড়ু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছে।

### কার্লসেনের অবদান এবং প্রভাব

মাগনুস কার্লসেন শুধু খেলার ক্ষেত্রেই অসাধারণ নন, তিনি দাবা এবং অন্যান্য বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক খেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নরওয়ে এবং অন্যান্য দেশে তার খেলা, তাকে দাবার নতুন মহিমায় পৌঁছে দিয়েছে এবং দাবাকে একটি জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু তা-ই নয়, তিনি বিভিন্ন দাবা অ্যাপ এবং প্ল্যাটফর্মেও আগ্রহী, এবং তার মেধা ও কৌশলকে শিখিয়ে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

মাগনুস কার্লসেন একমাত্র বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই পরিচিত নয়, তিনি আধুনিক দাবা জগতের একটি আদর্শ, যেখানে প্রজ্ঞা, মনস্তাত্ত্বিক দৃঢ়তা, এবং নিরলস পরিশ্রমের সম্মিলন ঘটেছে। তার খেলা, তার যাত্রা, এবং তার অবদান আগামী প্রজন্মের দাবাড়ুদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার মতো একজন প্রফেশনাল দাবাড়ুর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

#ভারতীয়দাবাড়ুপ্রজ্ঞানন্দ: একজন প্রতিভাবান তরুণ

ভারতীয় দাবার জগতে একজন বিশেষ নাম উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে, তিনি হলেন প্রজ্ঞানন্দ, যার সম্পূর্ণ নাম **প্রজ্ঞানন্দ হে.**। ২০০৫ সালে জন্ম নেওয়া এই তরুণ দাবাড়ু শুধু ভারতেই নয়, বিশ্ব দাবার অঙ্গনে অত্যন্ত পরিচিত। মাত্র ১৮ বছর বয়সে, প্রজ্ঞানন্দ তাঁর খেলার দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। তার খেলার শৈলী, মনোযোগী বিশ্লেষণ, এবং নিরলস পরিশ্রম তাকে শুধু ভারতীয় দাবার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নয়, বরং আন্তর্জাতিক দাবা দুনিয়ার এক উদীয়মান তারকায় পরিণত করেছে।

### প্রাথমিক জীবন ও শখ

প্রজ্ঞানন্দ হে. জন্মগ্রহণ করেন ২০০৫ সালের ১০ আগস্ট ভারতের তামিলনাড়ুর চিদামবরম শহরে। তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাউকে দাবায় বিশেষ আগ্রহ ছিল না, তবে প্রজ্ঞানন্দ ছোটবেলা থেকেই শখের দাবা খেলোয়াড় ছিলেন। ৫ বছর বয়সে তার বাবা তাকে দাবা খেলতে শেখান এবং তার প্রতিভা খুব তাড়াতাড়ি ফুটে ওঠে। প্রজ্ঞানন্দকে যখন প্রথম আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পাঠানো হয়, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। তার শৈশব থেকে এই খেলা সম্পর্কে গভীর আগ্রহ এবং একাগ্রতা তাকে দ্রুত রেটিংয়ে উন্নীত করেছিল।

### প্রফেশনাল দাবায় পদার্পণ

প্রজ্ঞানন্দের পেশাদার দাবার যাত্রা শুরু হয় খুব তাড়াতাড়ি। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি **আন্তর্জাতিক মাস্টার (IM)** তকমা লাভ করেন, যা তাকে দাবার শিখরে পৌঁছানোর পথ পরিষ্কার করে দেয়। ২০১৮ সালে, মাত্র ১৩ বছর ১০ মাস বয়সে, তিনি **গ্র্যান্ডমাস্টার (GM)** তকমা লাভ করেন, যা তাকে ভারতীয় দাবা ইতিহাসের অন্যতম তরুণ গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে পরিচিতি দেয়। এই অর্জনটি শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বরং বিশ্ব দাবা জগতে প্রজ্ঞানন্দের প্রতি আগ্রহের সূচনা ছিল।

### আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফলতা

প্রজ্ঞানন্দ দ্রুতই আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টগুলোতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেন। তার খেলা কৌশলগত বিচক্ষণতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, এবং বিরল মনোযোগের জন্য পরিচিত। ২০২১ সালে তিনি **ফিদে বিশ্ব দাবা কাপ**-এ নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখান, যেখানে তিনি বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন **মাগনুস কার্লসেন**সহ বেশ কিছু শীর্ষ দাবাড়ুর বিরুদ্ধে ভালো খেলা দেখান। তার সৃজনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাগুলো ধরার ক্ষমতা তাকে এক অপ্রতিরোধ্য খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত করেছে।

### খেলার ধরন এবং কৌশল

প্রজ্ঞানন্দের খেলার ধরন অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। তিনি কৌশলগতভাবে শক্তিশালী এবং কখনোই আবেগের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন না। তার খেলা সাধারণত ঠান্ডা মাথায় এবং সতর্কতার সাথে চালিত হয়। তিনি ওপেনিং থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তকে বিশ্লেষণ করেন এবং প্রতিপক্ষের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর মনোযোগ দেন। তার খেলা মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য যেমন অপেশাদার এবং ভুলের প্রতি অদ্বিতীয় মনোযোগ, সেগুলোর মাধ্যমে তিনি সবসময়ই প্রতিপক্ষের কৌশল এবং ভুল ধরতে সক্ষম হন।

প্রজ্ঞানন্দের বিশেষ কৌশল হলো—তিনি নির্দিষ্ট একটি ওপেনিং বা স্ট্র্যাটেজিতে আটকে থাকেন না। পরিবর্তে, তিনি প্রতিটি ম্যাচের জন্য উপযুক্ত কৌশল নির্বাচন করেন, যা তার বুদ্ধিমত্তা এবং অবিচল মনোভাবের পরিচয় দেয়।

### পরবর্তী লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ

প্রজ্ঞানন্দ, এখনো তরুণ, তার পেশাদার ক্যারিয়ারে অনেক বড় অর্জনের পথে রয়েছেন। আগামী বছরগুলোতে, তিনি আরও বড় মঞ্চে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করবেন, এবং তার লক্ষ্য বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষস্থান দখল করা। ইতিমধ্যেই তার অগ্রগতি এবং বিশ্ব দাবা দুনিয়ায় অবদান তাকে বিশ্বসেরা দাবাড়ুদের মধ্যে স্থান দিয়েছে।

প্রজ্ঞানন্দের জন্য ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে। তার একাগ্রতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, এবং খেলার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা তাকে আরও অনেক বড় সাফল্য অর্জনের পথ প্রশস্ত করবে।

প্রজ্ঞানন্দ শুধু একটি প্রতিভাবান দাবাড়ু হিসেবে পরিচিত নয়, তিনি ভারতীয় দাবার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করছেন। তার কঠোর পরিশ্রম, দক্ষতা, এবং বুদ্ধিমত্তা তাকে বিশ্ব দাবার সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান দিয়েছে। তরুণ বয়সেই বিশ্বশ্রেণির দাবাড়ু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রজ্ঞানন্দের খেলা ভবিষ্যতেও অনেক দেশ, শহর এবং দাবাপ্রেমীদের মনে থাকবে। তার কৃতিত্ব এবং অর্জন নতুন প্রজন্মের দাবাড়ুদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, এবং তিনি নিশ্চয়ই দাবা জগতে আরও অনেক বড় কীর্তি রচনা করবেন।

#ভারতীয়দাবাড়ুগুকেশ: তরুণ প্রজন্মের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

ভারতীয় দাবার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে তরুণ দাবাড়ু **গুকেশ** এর মাধ্যমে। ২০০৬ সালে জন্মগ্রহণ করা গুকেশ ডি. (Gukesh D) এক আশ্চর্য প্রতিভা, যার খেলা ও কৌশল দাবার দুনিয়ায় অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক দাবা জগতে নিজেকে এক শীর্ষ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গুকেশের খেলা, তার দক্ষতা, এবং দ্রুত উন্নতির গতি তাকে শুধুমাত্র ভারতীয় দাবার গর্বিত প্রতিনিধি নয়, বরং বিশ্বের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ দাবাড়ু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

### প্রাথমিক জীবন এবং দাবায় আগ্রহ

গুকেশের জন্ম ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই শহরে। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন খেলায় আগ্রহী ছিলেন, তবে দাবার প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তার পরিবারের সদস্যদের কেউ বিশেষ দাবা খেলোয়াড় না হলেও গুকেশের প্রতি দাবার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। মাত্র ৫ বছর বয়সে, গুকেশ দাবা খেলা শিখতে শুরু করেন, এবং শীঘ্রই তার প্রখর মেধা এবং খেলার প্রতি আগ্রহ তাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। খুব কম বয়সেই তার খেলার দক্ষতা এবং কৌশল চোখে পড়ার মতো হয়ে ওঠে।

### আন্তর্জাতিক মাস্টার (IM) এবং গ্র্যান্ডমাস্টার (GM) হওয়া

গুকেশের দাবা যাত্রা শুরু হয় তার অসাধারণ শৈশব প্রতিভা দিয়ে। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি **ফিদে আন্তর্জাতিক মাস্টার (IM)** তকমা লাভ করেন, যা তখন ভারতের জন্য একটি বড় কীর্তি ছিল। তার পরে, ২০১৯ সালে মাত্র ১২ বছর ৫ মাস বয়সে তিনি **গ্র্যান্ডমাস্টার (GM)** তকমা লাভ করেন, যা তাকে ভারতের অন্যতম তরুণ গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করে। গুকেশের এই দ্রুত উন্নতির পেছনে ছিল তার অবিচলিত পরিশ্রম, দক্ষ প্রশিক্ষণ, এবং খেলা বিষয়ে গভীর আগ্রহ।

### আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফলতা

গুকেশ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তার পারফরম্যান্স দিয়ে সমগ্র দাবা জগতকে মুগ্ধ করেছেন। তিনি বিশ্বের শীর্ষ দাবাড়ুদের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য কৌশল এবং জয়ের জন্য পরিচিত হয়েছেন। ২০২১ সালে, গুকেশ **স্লোভেনিয়া ওপেন**-এ প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং একই বছর **উন্নত রেটিং অর্জন** করেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও পরিচিত করে তোলে।

গুকেশের খেলার শৈলী বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক এবং সৃজনশীল। তিনি যখন কোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেন, তখন তার খেলার মধ্যে প্রতিটি পদক্ষেপের গভীর বিশ্লেষণ এবং পরিপূর্ণ কৌশল থাকে। প্রতিপক্ষের ভুল ধরার ক্ষেত্রে তার দক্ষতা তাকে অনেক ম্যাচে বিজয়ী করেছে।

### খেলার ধরন এবং কৌশল

গুকেশের খেলার ধরন নিয়ে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। তিনি নিজে বলেন, "আমি সাধারণত অনেক বড় পরিসরের কৌশল নিয়ে খেলতে পছন্দ করি এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা আমার শক্তি"। তার খেলার মধ্যে একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার **আক্রমণাত্মক শৈলী** এবং **ব্রিলিয়ান্ট ওপেনিং** কৌশল। তিনি সাধারণত খেলোয়াড়দের চাপের মধ্যে ফেলে তাদের ভুল বের করে আনেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপে সৃজনশীলতার ছাপ থাকে এবং প্রতিপক্ষের কাছে তিনি এক অবর্ণনীয় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠেন।

এছাড়া, গুকেশ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন। তার খেলার মধ্যে কোনো একটি নির্দিষ্ট ওপেনিং বা স্ট্র্যাটেজি নেই, বরং তিনি প্রতিটি ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশল তৈরি করেন, যা তাকে প্রতিটি ম্যাচে শীর্ষস্থান দখল করতে সহায়ক হয়।

### ভবিষ্যতের লক্ষ্যে

গুকেশের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল। তার বয়স কম হলেও, আন্তর্জাতিক দাবা দুনিয়ায় তার সুনাম দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তিনি আরো বড় অর্জনের পথে। আগামী বছরগুলোতে তিনি আরও বড় মঞ্চে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করবেন এবং তার লক্ষ্য হবে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থান দখল করা।

তিনি তার ক্যারিয়ারে একাধিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিভিন্ন শীর্ষ দাবাড়ুর বিপক্ষে জয়লাভ করেছেন, যা তার ভবিষ্যত অর্জনের প্রতি আস্থা জোগায়। গুকেশের কঠোর পরিশ্রম এবং খেলার প্রতি নিষ্ঠা তাকে এক সফল ভবিষ্যত এনে দেবে।

গুকেশ ভারতীয় দাবা জগতের এক নতুন যুগের প্রতিনিধি। তার খেলা, কৌশল, এবং মনোযোগের প্রতি নিবেদন তাকে বিশ্ব দাবার অন্যতম উজ্জ্বল তারকা হিসেবে পরিচিত করেছে। ভারতের পরবর্তী দাবা কিংবদন্তী হওয়ার পথে গুকেশ অনেক বড় মাইলফলক অর্জন করবেন, এবং তার উদাহরণ ভবিষ্যত প্রজন্মের দাবাড়ুদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তাকে শুধুমাত্র ভারতের নয়, আন্তর্জাতিক দাবা দুনিয়াতেও শীর্ষস্থানে নিয়ে যাবে, এবং তার প্রতিভা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হবে।

মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

মস্কোর মেট্রো ২ সম্পর্কে কাহিনী

 **মস্কোর মেট্রো ২ সম্পর্কে কাহিনী**


মস্কোর মেট্রো একটি বিশ্বের অন্যতম উন্নত এবং পরিচিত মেট্রো সিস্টেম হিসেবে পরিচিত। তবে, মস্কো মেট্রো ২ বা "সিক্রেট মেট্রো" নামের যে কথাটি শোনা যায়, তা একটি রহস্যময় এবং অস্বাভাবিক বিষয়। এই মেট্রোটি সম্পর্কে বহু গুজব, কল্পকাহিনী এবং রহস্যপূর্ণ গল্প প্রচলিত রয়েছে। বাস্তবে মস্কো মেট্রো ২-এর অস্তিত্ব নিয়ে এখনও নানা মতভেদ রয়েছে, তবে এর সঙ্গে জড়িত গল্পগুলো মস্কোর ইতিহাস এবং শীতল যুদ্ধকালীন ঘটনা গুলির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।


### মস্কো মেট্রো ২: রহস্যের জন্ম


মস্কো মেট্রো ২ এর কথা প্রথম উঠে আসে ১৯৯০ সালের দিকে, যখন একটি রুশ সংবাদপত্র এই সিস্টেমের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করে। মেট্রো ২-কে মূলত মস্কোর সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং শীতল যুদ্ধের সময়কার এক গোপন সাবওয়ে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মেট্রোটি শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, মিলিটারি অফিসার এবং কিছু নির্দিষ্ট জনগণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এটি মস্কোর অধীনে একাধিক গভীর স্তরের টানেল এবং স্টেশন নিয়ে গঠিত, যেগুলি শহরের সাধারণ মেট্রো সিস্টেমের বাইরে এবং অনেকটাই গোপন।


### মেট্রো ২ এর উদ্দেশ্য


মস্কো মেট্রো ২ এর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার সরকার এবং সেনাবাহিনীর সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটি একটি অত্যন্ত গোপনীয় প্রকল্প ছিল, যার মাধ্যমে শীতল যুদ্ধের সময়, বিশেষ করে পারমাণবিক হামলার ক্ষেত্রে, দেশের শাসকরা নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারতেন। ধারণা করা হয় যে, এই মেট্রোটি সরাসরি ক্রেমলিন এবং মস্কোর প্রধান সরকারি অফিসগুলির সাথে যুক্ত ছিল। মেট্রো ২ এ এমন সব সুরক্ষিত পথ রয়েছে যা সাধারণ জনগণের কাছে একদম অজ্ঞাত ছিল।


### কাহিনীগুলির মধ্যে বাস্তবতা এবং কল্পনা


মস্কো মেট্রো ২ সম্পর্কে প্রচলিত কাহিনীগুলির মধ্যে কিছু হয়তো বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত, আবার কিছু পুরোটাই কল্পনাপ্রসূত। গুজব রয়েছে যে মেট্রো ২ তে এমন কিছু স্থান রয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত, যা সাধারণ মেট্রো সিস্টেমের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কিছু রুশ সাংবাদিক এবং লেখক দাবি করেছেন যে, তারা মেট্রো ২-এর গোপন স্টেশনগুলি দেখতে পেয়েছেন, যেখানে বিজ্ঞানীদের জন্য বিশেষ গবেষণাগার, শীতল যুদ্ধের সময়কার অস্ত্রাগার এবং অন্য অনেক গোপন স্থাপন রয়েছে।


অন্যদিকে, কিছু ইতিহাসবিদ এবং গবেষক মনে করেন যে মেট্রো ২ আসলে সম্পূর্ণ বাস্তব নয়। তাদের মতে, এটি শুধুমাত্র এক ধরনের পৌরাণিক কাহিনী যা শীতল যুদ্ধকালীন সময়ের ভয় এবং অশান্তির পরিবেশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, মস্কো মেট্রোর প্রকৃত নির্মাণ ও পরিকল্পনার জন্য উপযুক্ত নথি এবং প্রমাণের অভাবও অনেক সন্দেহ উত্থাপন করেছে।


### মস্কো মেট্রো ২ এবং সমালোচনা


মস্কো মেট্রো ২-এর প্রকল্প অনেক সময় রাশিয়ার সরকারের প্রতি এক ধরনের সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু সমালোচক বলছেন যে, দেশের জনগণের প্রতি অবিশ্বাস এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে রাষ্ট্রীয় স্তরে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত জনগণের সুবিধার পরিবর্তে শাসকদের জন্য। এই ধরনের সুরক্ষিত এবং গোপন প্রকল্পগুলো রাষ্ট্রীয় খরচে পরিচালিত হওয়ায় অনেক সময় সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।


### উপসংহার


মস্কো মেট্রো ২ একটি রহস্যময় এবং ইতিহাসের অন্ধকার দিকের অংশ। এটি আধুনিক রুশ ইতিহাসের এক অবিশ্বাস্য অধ্যায় যা বহু কল্পকাহিনী এবং গুজবের জন্ম দিয়েছে। যদিও এর প্রকৃত অস্তিত্ব এবং কার্যক্রম সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবুও এটি মস্কোর মানুষের মধ্যে একটি পৌরাণিক চরিত্র হয়ে উঠেছে। মেট্রো ২-এর গল্প, রাশিয়ার শীতল যুদ্ধকালীন ভয়ের সাথে মিশে গিয়ে আজও রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে রয়ে গেছে।


Publisher ID: pub-9792609886530610

চন্দননগর: এক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র

 **চন্দননগর: এক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র**


বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নদী ঘেঁষে অবস্থিত চন্দননগর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার একটি সুন্দর শহর। এটি কলকাতা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং হুগলি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চন্দননগরের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র করে তুলেছে। এই শহরের ইতিহাস বিশেষত ফরাসি উপনিবেশ এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য প্রসিদ্ধ। 


### ইতিহাস ও ঐতিহ্য


চন্দননগরের ইতিহাস প্রায় পাঁচশত বছর পুরানো। এই শহরটি এক সময় ছিল ফরাসি উপনিবেশ, যা ১৭৫৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৫০ সালে ভারতের অন্তর্গত হয়। ফরাসি শাসনকালে চন্দননগর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং প্রশাসনিক শহর ছিল। ফরাসিরা এখানে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল, যেগুলি আজও শহরের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে টিকে আছে। তাদের তৈরি করা পুরোনো বাড়িঘর, গির্জা, এবং অন্যান্য নির্মাণশৈলী এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।


### চন্দননগরের পর্যটন কেন্দ্র


1. **চন্দননগর রিভারফ্রন্ট (Chandannagar Riverside):**

   চন্দননগরের প্রধান আকর্ষণ হল হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত রিভারফ্রন্ট। এখানে পর্যটকরা সন্ধ্যা বেলায় হাঁটতে এসে নদীর শান্ত প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন। নদী পাড়ে বসে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য অনেকেই মুগ্ধ হয়ে দেখে। এই স্থানটি খুবই জনপ্রিয় সাঁতার কাটাও, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে।


2. **ফরাসি গির্জা (French Church):**

   চন্দননগরের ফরাসি গির্জা, যেটি ১৮৫৫ সালে নির্মিত, এখানকার অন্যতম প্রধান স্থাপনা। এর স্থাপত্যশৈলী অত্যন্ত সুন্দর এবং দর্শনীয়। গির্জার ভেতরকার পেইন্টিং, প্রতিমা এবং স্থাপত্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।


3. **দেবী কালী মন্দির (Dakshineswar Kali Temple):**

   চন্দননগরের কাছেই দেবী কালী মন্দির, যা পর্যটকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। এটি শহরের প্রাচীন মন্দিরগুলির একটি এবং এখানকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দর্শনীয়।


4. **চন্দননগর মিউজিয়াম (Chandannagar Museum):**

   চন্দননগরের মিউজিয়াম একটি ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে শহরের পুরনো যুগের অনেক স্মৃতিচিহ্ন এবং ফরাসি শাসনকালের সংগ্রহ রাখা হয়েছে। মিউজিয়ামের বিভিন্ন প্রদর্শনী চন্দননগরের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেয়।


5. **ওল্ড কোর্ট বিল্ডিং (Old Court Building):**

   এই বিল্ডিংটি ফরাসি শাসনের সময় তৈরি হয়েছিল এবং এটি এক সময় চন্দননগরের প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্র ছিল। আজও এর স্থাপত্যশৈলী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।


### সাংস্কৃতিক উৎসব এবং অনুষ্ঠান


চন্দননগরের সাংস্কৃতিক জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন ধরনের মেলা, উৎসব এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে চন্দননগর মেলা, যা প্রতিবারে আয়োজিত হয়, স্থানীয় হস্তশিল্প, খাদ্য এবং সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব প্রদর্শনী। এছাড়াও, বাংলা নববর্ষ, দুর্গাপূজা, এবং অন্যান্য স্থানীয় উৎসবগুলিতে শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় গুরুত্ব ফুটে ওঠে।


### চন্দননগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেও চন্দননগর একেবারে বিশেষ। শহরের চারপাশে বিস্তীর্ণ বাগান, পার্ক এবং নদী অঞ্চলের শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের মনকে আনন্দিত করে। শহরের নদী তীরবর্তী অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দর্শনার্থীদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরো বিশেষ করে তোলে। গ্রীষ্মকালে, চন্দননগরে একটি আরামদায়ক ছুটির দিন কাটানোর জন্য এটি আদর্শ স্থান।


### উপসংহার


চন্দননগর এক ভিন্ন ধরনের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক সুন্দর মিশ্রণ দেখা যায়। ফরাসি উপনিবেশের যুগের স্মৃতি, নদী তীরের সৌন্দর্য, এবং স্থানীয় মন্দির ও গির্জা চন্দননগরকে একটি অনন্য পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই যারা ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, চন্দননগর তাদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।

রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২

মা

 #মা

আয়া সেন্টার থেকে ওনাকে পাঠানো হয়েছিল । শয্যাশায়ী মাকে দেখেই বলে উঠলেন - পড়া পেশেন্ট আমি ধরব না । আমার শরীরে কুলাবে না । বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন । ফিরেও এলেন ঘণ্টাখানেক পর । সেন্টার ফের ওনাকেই পাঠিয়েছে, অন্য লোক নেই । বললেন আমার হাতে হাতে একটু ধরতে হবে । ধরলাম । সন্ধ্যাবেলায় চলে যাওয়ার আগে বললেন - মা যেন বিছানার ধারে চলে না আসে , একটু দেখো । এই পেশেন্ট যদি খাট থেকে পড়ে যায়, তাহলে কিন্তু ওনারও শাস্তি, তোমাদেরও । পড়ে থাকা যে কী শাস্তি তুমি বুঝবেনা বাবা । এক কথায় দু'কথায় নিজের প্রসঙ্গও এসে পড়ল । বললেন - স্বামী ষোলো বছর ধরে নিরুদ্দেশ (তবুও সিঁথিতে সিঁদুর , কপালেও)। দুই ছেলে , একজন আন্দামানে থাকে , আরেকজন কল্যানীতে । দুজনই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, কেউই আমাকে দেখে না । বেঁচে থাকতে হবে তো , তাই এই বয়সেও আয়ার কাজ করি । বাড়ি ভাড়া দিতে হয় মাসে তিন হাজার টাকা । এখন বলো তো, আয়ার কাজ করে যা পাই , সেটুকু পেটকে দেব, না বাড়িওয়ালাকে ? অসুখবিসুখ হলে চিকিতসা করার পয়সাও থাকেনা । বেঁচে থাকার অনেক জ্বালা , বুঝলে ।


অণু গল্প



আধুনিক অণুগল্প
৫০ শব্দের অনুগল্প
১০ শব্দের অনুগল্প

সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২

খোলা চিঠি

 ভাই সঞ্জীব প্রামাণিক ,

আগের আমলে , মানে বামপন্থীদের রাজত্বকালে এক বিরাট নেতা(কখনও নিজেকে ছোট মনে করতে নেই , অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ !) তাঁর বাড়িতে ঢোকার মুখে, দেওয়ালে একটি বাণী খোদাই করে রেখেছিলেন --- "সবার উপরে মানুষ সত্য / তাহার উপরে বিনয় দত্ত ।" কথাটা শুনে মনে হয় না , হাসব না কাঁদবো ? নিন্দুকদের দাবি আপনি বলেছেন, যাদবপুরের যে কোনও শিক্ষকের কলার ধরার ক্ষমতা আপনি রাখেন । ভালই করেন । সঞ্জীব প্রামাণিক হাসলেন , চাকরি পাবেন এই ভরসায় ! একটা ঘটনা বলি , চাইলে কিছু শিখতে পারবেন । আমি ব্যারাকপুরে থাকি । এখানকার খুব পুরনো বাসিন্দা এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন বয়স্ক ডাক্তারবাবুর কাছে শুনেছি , নোনা চন্দনপুকুর এলাকায় এক সি পি এম নেতা এত ক্ষমতা ধরতেন, যে বলতেও ভয় লাগে ! পালাবদলের তিন দিনের মধ্যে সেই নেতা নোনা চন্দনপুকুর বাজার এলাকায় তাঁর দ্বিতল গৃহ জলের দরে বিক্রি করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান , মানে কোথায় যাচ্ছেন বাড়ি বিক্রি করে প্রতিবেশীদেরও বলে যাওয়ার সময় পাননি আর কি ! একটা ছোট্ট অনুরোধ, পরামর্শও বলতে পারেন । বড় নেতার ভরসায় কোনও মন্তব্য করবেন না( আমি আপনার নামে প্রচারিত অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করিনি ! )। বড় নেতারা কতক্ষণ চিনবেন , গ্যারান্টি নাই । কিন্তু আপনার জীবনে সমস্যার মেঘ ঘনিয়ে আসার ফুল গ্যারান্টি আছে রাতারাতি নেতার অচেনা হয়ে গেলে । হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ করতে বড় নেতাদের জুড়ি নেই ! তাই , সাবধানে থাকবেন । ভাল থাকবেন , সুস্থ থাকবেন ।

ইতি --- শঙ্খমণি গোস্বামী । নোনা চন্দনপুকুর , ব্যারাকপুর ।

বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

খাওয়ার বয়স

সেদিন খানা-খাজানায় দেখলাম এক ষাটোর্ধ্ব ভদ্রলোক আমার সামনের চেয়ারে এই সপ্তাহের সাপ্তাহিক বর্তমানখানা খুলে বসলেন । ভাবলাম মালিকের পরিচিত , গরমে জিরিয়ে নিতে এসেছেন । একটু পরেই আমার ভুল ভেঙে দিয়ে দোকানের কর্মচারী ওনার সামনে এক প্লেট এগ-চাউ রেখে গেল । ওপরে বেশি করে চিলি এবং টম্যাটো সস , পেঁয়াজ আর শশা কুচনো । ভদ্রলোক একটু করে খাচ্ছেন , আর চিবাতে চিবাতে পড়ছেন । আহা , কী সুখ ! আমার একটা গল্প ভেবে নিতে ইচ্ছে হল । এনার শরীর ভর্তি রোগ । অনেক কিছু খাওয়া বারণ । বাড়ির লোক খুব শাসনে রাখে । তাই , দোকানে এসে ভালো করে সাঁটাচ্ছেন । গল্পটা ঠিক কিনা ভুল আমি জানিনা , কিন্তু সিনিয়র সিটিজেনদের ফুচকা , রোল , চাউ , কাটলেট , বিরিয়ানি খেতে দেখলে আপনাদের কী চোখ আটকে যায় ? আমার যায় । কিন্তু যাওয়া তো উচিত না । সত্তর বছর বয়সে ফুচকা খেতে ইচ্ছে করতে পারেনা ? আমি তো খাব । অল্প করে হলেও , খাব । খাওয়ার জন্যই তো বাঁচা !

সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২

সমান্তরাল প্রশাসন

বেশ কয়েকবছর আগেকার কথা । রবিবার সকালে বসে টিভিতে আমির খানের 'সত্যমেব জয়তে' দেখছি মন দিয়ে । খুব পছন্দের শো আমার । এক ছোটবেলার বন্ধুর ফোন এল । ভলিউম মিউট করেছি ঠিকই , কিন্তু চোখ এবং মন টিভির পর্দায় । সেদিনের বিষয়টাও ছিল খুব মনোগ্রাহী , 'গো বলয়ের খাপ পঞ্চায়েত' । আমির খানের টিম প্রাণনাশের হুমকি পাওয়া হিন্দু ও মুসলিম প্রেমিক-প্রেমিকা এবং খাপ পঞ্চায়েত সদস্যদের মুখোমুখি বসিয়েছে । উদ্দেশ্য কপোত-কপোতীকে বাঁচানো । ফলে আমি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলাম । ছোটবেলার বন্ধুটি ঠিক ধরে ফেললো --- "মনটা কোথায় ? অ্যাঁ অ্যাঁ করছিস কেন ?" ফলে সবটা খুলে বলতেই হল । শুনেই তাঁর পত্রপাঠ প্রতিক্রিয়া --- "ওসব ফালতু শো ছাড় , অন্য কিছু দেখ , কাজে দেবে ।" শুনেই দুম করে মেজাজ গেল গরম হয়ে , বললাম --- "আমির খানের শো-এ দু'পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়েছে , ১৩০ কোটি মধ্যে অন্তত বেশ কয়েক কোটি লোক শো-টা দেখছে । এর ইমপ্যাক্ট কী হবে, তোর কোনও ধারণা আছে ?" বন্ধুটি শান্ত গলায় বলল --- "আছে । হওয়ার যেটা সেটাই হবে । সে যত বড়, প্রভাবশালী লোকের শো-ই হোক না কেন ।" আরও বিরক্ত হয়ে বললাম -- "ফোনটা রাখতো এখন । আমি এটা দেখবো । পরে তোকে ফোন করছি ।"


এই ঘটনার পরে একমাসও বোধহয় কাটেনি । প্রথম পাতার বাঁ দিকে ছোট্ট খবর - ওই তরুণ-তরুণীকে খুন করা হয়েছে । সঙ্গে এটাও লেখা 'সত্যমেব জয়তে'-তে ওরা এসেছিলেন । আমি হতবাক ! বুঝলাম সনাতন ভারতীয় সমাজকে বুঝতে আমার ঢের দেরী আছে । কিন্তু সেদিনের কথা আজকে আবার বলছি কেন ? কারণ খবরে দেখলাম মহিষাদলে , মানে আমাদের রাজ্যে , "ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া" পৌঁছনো যায় , এমন এক গ্রাম পঞ্চায়েত শিলমোহর-সহ বারো দফা নির্দেশিকা জারি করেছে ঠিক খাপ পঞ্চায়েতের মতন । সেসব প্রলাপের চর্বিতচর্বণে আর নাই-ই বা গেলাম ! পশ্চিমবঙ্গে অনেক কিছু হয়না বলে গর্ব ছিল , সেই গর্ব আস্তে আস্তে ভেঙে যাচ্ছে । প্রশাসন নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে , পঞ্চায়েত বকা খাবে । কিন্তু তারপর সব কিছু কী ঠিক হয়ে যাবে ? আমার মনে হয়, লিখিত আদেশগুলি, শুধু অলিখিত আদেশে পরিণত হবে । পঞ্চায়েতের নির্দেশিকা ওপরমহলের চাপে পাল্টাতে পারে , গ্রামের মাতব্বরদের মন নয় ।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

ভূতুড়ে কোয়ার্টার । উজ্জ্বল বাউরি ।

 আমার বাবা বড়ো হয়েছে পুরুলিয়া জেলায় কোনো এক গ্রামে।বাবা প্রথম যুবক বয়সে কলকাতার নামি সরকারি হাসপাতালে চাকরী(swiper) পেলেন। কিন্তু বিয়ে করে ছিলেন পুরুলিয়া য়।আমরা তিন ভাই বড়ো হলাম কলকাতায় , আমাদের পড়াশোনা হল কলকাতায়।

যখন আমি মাধ্যমিক পাশ করলাম তখন বাবা
ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরির ট্রান্সফার করালো
পুরুলিয়ায়।কারন, পুরুলিয়ার সুন্দর প্রকৃতি, মনোরম আবহাওয়া , খোলা আকাশের নিচে শান্তি ভাবে জীবন যাপন কাটা।আমার পড়াশোনা আবার শুরু হল পুরুলিয়া তে। পুরুলিয়াতে আমার ঠাকুরদাদা যে গ্রামে থাকতো সেই জায়গায় পুনরায় বাড়ি বানিয়ে বসবাস করলাম আমরা।
বাবা যেই হাসপাতালে কাজ join করলেন আমাদের গ্রামের থেকে ১৮ কিমি দূরত্ব।বাসে ট্রাভেল করতে হয়। সেই হাসপাতালে দুটি কর্মচারী (swiper), আমার বাবা আর আরেকটি মাঝ বয়সী লোক অরূপ কাকা।
দু'জনের কাজ অদল-বদল করে হতো । যেদিন বাবা থাকত সেদিন অরূপ কাকা নিজের বাড়ি চলে যেতেন আর যেদিন অরূপ কাকা ডিউটিতে থাকতেন সেদিন বাবা বাড়িতে থাকতেন।বাবা যখন ডিউটিতে থাকতেন তখন দিন-রাত দুটি ই ডিউটি করতে হতো তাই বাবা অরূপ কাকার ইচ্ছায় ওনার কোয়াটার ব্যবহার করতেন।তাই বাবাকে আলাদাভাবে কোয়ার্টার নিতে হইনি।
কোয়াটার টি ছিল হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে। কোয়ার্টার টির ধারে পাশে ছোট্ট ছোট্ট গাছপালা, ঝোপঝাড় ঘেরা।
দূর থেকে শুধু কোয়াটারের ছাদটা , জলের টাঙ্কি চোখে পড়ত। কোয়ার্টারটায় মোট চারটি রুম ছিল বাকি তিনটি রুমে তিনটি বিবাহিত নার্স ছিল ।
বাবা বেশ অনেক বার একা সেই কোয়ার্টার রাতে থাকার পর বাবা লক্ষ্য করলেন প্রায় মাঝরাতে জানলার দড়জায় কেও ঠক্ ঠক্ ঠোকার আওয়াজ করতেন।বাবা প্রথম প্রথম ব্যাপারটা কোনো পাত্তা দেইনি। কিন্তু অনেক বার একেইরকম ঘটনা ঘটার জন্য বাবা অরূপ কাকাকে জিজ্ঞেস করলেন আগেও কি এইরকম হতো?
অরূপ কাকা বলেছিল ,'সামনে একটী সাঁওতালি গ্রাম আছে ওইখানের সাঁওতালি চোর গুলো এইরকম করে।' দড়জায় জানলার ঠোকার আওয়াজ বন্ধ হওয়ার কয়েক মাস পর গভীর রাতে কোয়ার্টারের বাইরের জানলার ওপাশ দিয়ে কোনো নারীর কান্নার শব্দ ভেসে আসতে লাগল। কান্নার আওয়াজ টা বেশির ভাগই আসত অরূপ কাকার রুমে ধারে পাশে থেকে।বাবা প্রথম ভেবেছিল কোনো প্রেসেন্ট মারা যাওয়ার কারণে তার আত্মীয় কান্নাকাটি করছে
কিন্তু বারবার একি কান্নার শব্দ ,তখন বাবা র মনে কিছুটা খটকা লাগল।
বাবা মাঝে মধ্যেই মদ্যপান করত ;তাই বাবা যখন বাড়িতে এসে এইসব ঘটনার কথাগুলো বলতেন তখন আমরা সবাই বাবাকে অবিশ্বাস্য করে কথা টা উড়িয়ে দিয়ে ছিলাম আর বাবাকে বোঝালাম হইত বেশি মদ্যপান করার জন্য ভুলভাল শুনতে পেয়েছিল।পরে যখন পাশের রুমে নার্সদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তখন তারাও সেই কান্নার শব্দের কথা স্বীকার করেছিল।
ভূত আছে কি নেই?
আত্মা আছে কি নেই?
এই সব কথা আলোচনা না করে বাবাকে ওইখানে একা ছাড়া যাবে না এটাই সিদ্ধান্ত হলো আমাদের পরিবারের। সেই বার থেকে বাবার সাথে মা নইত আমি যেতাম।
এমন‌ একদিন সেই কোয়ার্টারে মা আর বাবা ছিল।সময়টা ছিল গ্রীষ্মকাল , প্রচুর গরম । পুরুলিয়ায় একটু বেশি গরম পড়ে।
সেদিন বেশি গরম লাগার জন্য মা আর বাবা ছাদে ঘুমাতে গেল ।
হাসপাতালে পেসেন্ট গুলোর যে ধরনের লোহার বেড্ দেওয়া হয় সেই রকম দুটি বেড কোয়ার্টারে ছাদে রাখা থাকত। সেই বেড দুটি তে মা একটাতে আর বাবা আরেকটি তে বিছানা পেতে ঘুমিয়ে পড়ল। ঠিক রাত ১/১:৩০ সময় মায়ের বেডটা কোনো অচেনা শক্তি নিচ থেকে উপর দিকে উঠানোর চেষ্টা করছে,বেডের নিচ থেকে বেডটার ধাক্কার আওয়াজে মায়ের ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেল। মা যখন চোখ খুললেন তখন বেডের নিচে কোনো কিছুর থাকার অনুভব করলেন যেন বেডের নিচে কেও রয়েছে। সেদিন মা খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন।
মা যখন এইরকম ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছিল তখন বাবাও ঘুমের কাতরে স্বপ্ন দেখছিলেন -একটি লম্বা , কালো মানুষের ছায়া মূর্তি বাবা মাথা কাছে দাঁড়িয়ে বাবার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছে।তখন মায়ের সাথে বাবারও ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিল। সেইবার থেকে মা-বাবা ছাদে ঘুমাতে সাহস পাইনি।
তারপর তিন-চার মাসের মধ্যে রুমের বাকি তিনটি নার্স ওইখানে থেকে ট্রান্সফার হয়ে চলে গেলেন। তাদের পরিবর্তে আর দুটি নতুন নার্স ওই কোয়ার্টারে রুমে আশ্রয় নিয়েছিল কিন্তু কেজানে তারাও আশ্চর্য ভাবে সেই কোয়ার্টারে থাকতে পারলো না। শেষে ওই কোয়ার্টারে বাবা আর অরূপ কাকায় রয়ে গেলো।
ধীরে ধীরে ফাঁকা রুমগুলো ময়লা হতে হতে , মাকড়সা জাল ঘিরে এক ভুতুরি কক্ষে মতন পরিনত হলো। বিকেলে ঢুকতেই কেমন যেন গায়ে কাঁটা দিয়ে আসত। সামান্য শব্দ টা অনেক বেশি শোনাত।
এমনি এক বিকেল বেলায় আমি অরূপ কাকার রুমে একা বসে কবিতা লিখতে মগ্ন ছিলাম বাবা হাসপাতালে কাজে ছিল। ঠিক তখনি কোয়ার্টারে মেন দরজায় পায়ের হাঁটার শব্দ ,পুরো বুঝতে পারছিলাম কেও চপল পরে কোয়ার্টারে ঢুকল। স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম জুতোর আওয়াজটা কোনো ভ্রম নই।আমি ভেবেছিলাম হইত বাবা আসছে তাই নিশ্চিত ছিলাম কোনো সন্দেহ করিনি। কিন্তু যখন শুনলাম পায়ের আওয়াজ টা রুমের দিকে না এসে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল তখনই মনটা খটকা লাগলো যে বাবা উপরে কেন গেল?
আমি রুমে বসেই কান পেতে এক মিনিট মতন অপেক্ষা করতে লাগলাম যে পায়ের আওয়াজ টা কখন নিচে আসবে কিন্তু যখন দেখলাম কারও নিচে নামার টু শব্দটি পেলাম না , আমি দুবার জোরে হাঁক দিলাম 'বাবা' বলে। কোনো উত্তর না আসায় আমি খাতা কলমটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে হাওয়ার বেগে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে দেখলাম কেউ কোথাও নেই । ছাদের নিচে ধারে পাশে কাওকে দেখতে পেলাম না ।কেও ঝাঁপ দিয়ে দৌড়ে পালালেও খুব দূরে যেতে পারবে না কিন্তু না ...কাওকে পেলাম না।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের একটা ড্রাইভার প্রায় বাবার সাথে রুমে আড্ডা জমাতো আমার মতন সেই ড্রাইভার টারও রুমে একা বসে ছিলেন আর আমার মতোই তারও অবিকল অভিজ্ঞতা হয়েছিল।সেও শুনতে পেয়ে ছিল উপরে যাওয়ার জুতোর আওয়াজটা।
বাবা-মা অনেক বার সেই কোয়ার্টারে থাকাকালীন মাঝরাতে খোলা ছাদের উপরে কারও পায়ের আওয়াজ,কখন ও ঝাড়ু দেওয়ার মতো জোরে জোরে আওয়াজ শুনতে পেতো। এমনি এক রাতে ছাদের উপর থেকে অনেক গুলো ইট্ একসাথে ভাঙার ভয়ানক শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন যেন কারা ইট গুলো মেঝেতে কাছাড় মেরে ভাঙছে। বাবা মা একসাথে টর্চ,লাঠি নিয়ে সাহস করে উপরে উঠে দেখলেন কেও তো নেই; একটি ইটও মাত্র ছিল না।
একদিন অরূপ কাকাকে আমরা জোর করে জিঞ্জেস করলাম , তোমার সাথে এইরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি?তারপর অরূপ কাকা যা বলে ছিল তা অবাক করার মতো। অরূপ কাকা একদিন সন্ধ্যায় সময় duty যাচ্ছে ।
রুমের দরজাটা তালা লাগিয়ে হাসপাতালে দিকে রওনা দিল ওমন সময় কোয়ার্টার থেকে বের হতে হতে দুধওয়ালা বোতলের দুধ নিয়ে হাজির ।
হাতে দুধ নিয়ে দাঁড়িয়ে। অরূপ কাকা হাঁটতে হাঁটতে দুধওয়ালাকে বলে গেল দুধটা রুমে বাইরে রেখে দিতে।
কিছুক্ষণ পর অরূপ কাকা যখন কোয়ার্টারে এল ;দেখলো বোতলের দুধটা রুমের বাইরে রাখা ছিল। উনি বোতলটা নিয়ে রুমে রান্নাঘরে গেল দুধটা গরম করতে সেই তখনই কোয়ার্টারে বাইরে থেকে দুধওয়ালা কন্ঠস্বর এলো, 'দুধটা নিয়ে যাও!'
কাকা গিয়ে দেখে দুধওয়ালা আবার দুধ দিতে এসেছে । অরূপ কাকা আশ্চর্য হয়ে বলল, 'কতবার দুধ দিয়ে যাবে একটু আগেই তো দিয়ে গেলে, বিশ্বাস হচ্ছে না ;দাঁড়াও বোতলটা এনে দেখাচ্ছি!'
এই বলে অরূপ কাকা যখন রান্নাঘরে ঘরে গেল
বোতলটা আর দেখতে পাওয়া গেল না । রান্নাঘর থেকে বোতলটা যেন কর্পূরের মতো উবে গেছিল।
ফিরে এসে লজ্জায় নীরবে আরেকবার দুধটা নিতে হয়েছিল। দ্বিতীয় কথা যখন শুনলাম তখন সব রহস্য সমাধান হয়ে গেল; সেই কোয়ার্টারে পাশে এক রুমে নাকি এক মহিলা আত্নহত্যা করে ছিল তার আত্মার উপদ্রব আজও রয়ে গেছে। আরেকটি ব্যাপার, হাসপাতালটি এখানে তৈরী হওয়ার আগে এই পুরো জায়গাটা নাকি শ্মশান ছিল।
ঘটনাটা অরূপ কাকার মুখ থেকে শোনার পর আমরা সবাই একে ওপরের দিকে চেয়ে থেকে গেলাম।
কোয়ার্টারে এইসব ঘটনা গুলো পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। যদি কোনো ব্যক্তি, পাঠকগনের কাছে এর উত্তর থাকে তবে অবশ্যই দিবেন।


sankhamanigoswami.blogspot.com


ভূতুড়ে বাড়ি,

ভূতুড়ে গল্প,

ভূতুড়ে গল্প দেখান, 
ভূতুড়ে,
ভূতুড়ে গল্প দাও,
ভূতুড়ে গল্প ভুতুড়ে গল্প,

ভূতুড়ে আয়, 

ভূতুড়ে গল্প দেখতে চাই, 

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

ভুতের সত্য ঘটনা । bhuter sotti ghotona । ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা । বাংলা ভুতের গল্প সত্য ঘটনা ।


ভুতের গল্প,ভূতের গল্প,ভৌতিক ঘটনা,ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা,ভূতের গল্প ভয়ংকর ঘটনা সত্য,ভূতের গল্প সত্য ঘটনা,ভূতের গল্প সত্য ঘটনা বাংলা,ভূতের গল্প ফুল ভিডিও,ভূতের গল্প বাংলায়,ghost story in bengali,ghost story in bengali real,ghost story in bengali video,ghost story in bengali language,original ghost story in bengali,ghost story,horror stories,ghost stories,bhuter golpo,ভুতের সত্য ঘটনা,bhuter sotti ghotona,বাংলা ভুতের গল্প সত্য ঘটনা,sotti bhuter golpo

 

শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

হাল্লা চলেছে যুদ্ধে এবং হল্লা । রাশিয়া বনাম ইউক্রেন ।

 হল্লা


রাশিয়া মানে খুব ছোটবেলায় আমার কাছে আর্ট পেপারে ছাপা 'মিশা' পত্রিকা । ইন্দ্রজাল কমিক্সের মত , কিন্তু ভাষাটা ইংরেজি । বাবা পড়ে শোনাতেন , মানে বোঝাতেন । যতদূর মনে পড়ে পত্রিকাটি রাশিয়া থেকেই প্রকাশিত হত । রাশিয়া মানে আরেকটু বড় হয়ে আমার কাছে ভস্তক , রাদুগা প্রকাশনীর বই । তারপর যখন কাগজ পড়া শুরু করলাম একটু একটু করে , তখন কাগজে দু'টি শব্দ দেখতাম প্রায়ই -- 'গ্লাসনস্ত' আর 'পেরেস্ত্রোইকা' । মিখাইল গর্ভাচভ আর এই নীতি সমার্থক । মনে আছে , আমি বাবাকে বলতাম ,ওনার চকচকে টাকে ওরকম দাগ কেন ? চা পড়ে গেছিল ? ! দু'বছর আগেও ভুলে গেলে বাবার কাছে জেনে নিতাম 'গ্লাসনস্ত' কথাটির অর্থ হল মুক্ত চিন্তা আর 'পেরেস্ত্রইকা' মানে হল পুনর্গঠন । কমিউনিস্ট রাশিয়াকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করতে চেয়ে এই নীতি প্রবর্তন করেছিলেন গর্ভাচভ ।
কিন্তু আজ ? রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের কথাই শেষ কথা । চিন - উত্তর কোরিয়া-ব্রাজিল-ভারত-মায়ানমার সর্বত্র একই ছবি । যায় যদি যাক প্রাণ , হীরকের রাজা ভগবান । এর অন্যথা ঘটলেই তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে । মস্তিষ্ক প্রক্ষালক ? আহাম্মক ! মগজ ধোলাই ? আজ্ঞে, ঠিক তাই !
এল ডোরাডোর খোঁজ যেখানে পেয়েছে মানুষ , সেখানেই পরস্পরের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতেছে । অল্পেতে সাধ মেটেনা , এ স্বাদের ভাগ হবে না ! রাশিয়া আর ইউক্রেন , যে দু'টি দেশের মধ্যে লড়াই বেধেছে , তার কারণ একটাই , খনিজ সম্পদে ঠাসা এলাকাগুলির দখল নেওয়া , যা বেচে রাশিয়া বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র । ভালয় ভালয় দিয়ে দিলে ল্যাটা চুকে যেত , দিলি না তো , এবার সামলা কার্পেট বম্বিং । কিছু নিরপরাধ মানুষ অবশ্য মরবে দু'দেশেই , ওটাকে কূটনীতিতে বলে 'সমান্তরাল ক্ষতি' । সভ্যতা আমাদের শিখিয়েছে ওটুকু মেনে নিতে হয় , মানিয়ে নিতে হয় ।
ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাশিয়া গিয়েছিলেন এ বি পি আনন্দের প্রতিনিধি সুমন দে । ঘুরে দেখিয়েছিলেন , মস্কোর মেট্রো চলাচল ব্যবস্থা , যা কিনা পৃথিবীতে সবচেয়ে পুরনো পাতালরেল পরিষেবা । আজ সেই মেট্রো স্টেশনগুলিকেই বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করছেন সাধারণ মানুষ , প্রাণের দায়ে , বোমারু বিমান থেকে রক্ষা পেতে । সুমন দে 'মেট্রো টু'-এর কথাও বলেছিলেন , আদতে এটি একটি উপন্যাস । কিন্তু অনেকের মনেই স্থির বিশ্বাস এ এক চূড়ান্ত গোপনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা , যার মাধ্যমে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন প্রান্তে । কোনটা ঠিক , কতটুকু ঠিক--- কে জানে ? আমরা তো কেবল যুদ্ধের ফুটেজ দেখে যাব এবং গ্যাসের আর জিনিসপত্রের দাম মেটাতে নাকানিচোবানি খাব ।
sankhamanigoswami.blogspot.com


ইউক্রেন ও রাশিয়ার সামরিক শক্তি,
ইউক্রেন এর সামরিক শক্তি,
ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণ,
ইউক্রেন দেশের পরিচিতি,
রাশিয়া বনাম ইউক্রেন,
রাশিয়া বনাম,
ন্যাটো বনাম রাশিয়া


শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

চৌকিদার । রোমিলা গঙ্গোপাধ্যায় । ভূতের গল্প

 চৌকিদার

কিছু ঘটনা এমন থাকে যা ঘটার সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী এক অন্যধরনের পরাবাস্তব অনুভূতি সৃষ্টি করে, কিন্তু সেই একই ঘটনা পরিস্থিতি প্রকারান্তরে অন্যরকম হয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছিল বেশ কিছু বছর আগে। সবে কলেজ এর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সামনে কিছুদিন অবসরসময়।
সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত আমরা কোথাও একটা পরিবার বা গুরুজন ছাড়া ঘুরতে যেতে চাইছিলাম। যেখানে আমাদের ওপর আর কেউ থাকবেনা। আসলে বড়ো হচ্ছিলাম তাই স্বাধীনতা বোধ ও বাড়ছিল, সেখান থেকেই এই প্রবণতা।
তা, আমাদের তৎকালীন বন্ধুদের গ্রুপটি ছিল চমৎকার। ছেলে মেয়ে সহ জমজমাট গ্রুপ। আমরা বাড়িতে জানানোর পর, তারা অনেক ভেবে, একটা শর্ত দিলেন, সেটা হলো, আমরা প্রথমবার বাড়িতে জানিয়ে বাইরে নিজেদের মত করে ঘুরতে যাচ্ছি। কেউ থাকবে না, আমরা কি করবো তা দেখার জন্য, আর তাই গ্রুপ এ শুধু মাত্র বন্ধুরাই থাকবে। সেক্ষেত্রে আমাদের ই একটা দায়িত্ব নিতে হবে।
কোনও প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি এইবার যেতে পারবে না।
এই শুনে তো আমাদের মাথায় হাত!!
তার একটা কারণ হলো, বেশিরভাগ প্রেমের গল্পই কারোর না কারোর বাড়িতে জানা আর সেকারণে আমরা কখনো না কখনো নাকানি - চোবানি ও খেয়েছি। তাই লুকিয়ে যাওয়া যাবে না। এই যে আমরা যাচ্ছি তার জন্য অভিভাবকরা রাজি হলেও এইটাই তাদের শর্ত যে কোনরকম ঝুট ঝামেলা তারাও চান না।
অগত্যা শেষমেষ ১২ জনের গ্রুপ থেকে আমরা মাত্র ৫ জন জোগাড় হলাম ঘুরতে যাওয়ার জন্য ।
নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো!!
অনেক চিন্তা ভাবনা হিসেব করে আমরা জায়গা ঠিক করলাম, পুরুলিয়ার অন্তর্গত এক নামকরা টুরিষ্ট স্পট। কলকাতার অফিস থেকেই বুক করে নিলাম কটেজ।
এইবার নির্দিষ্ট দিনে ট্রেন এ চেপে ঘণ্টা তিনেক তারপর ওখান থেকে লোকাল ভ্যান এ চেপে গন্তব্য এমন কিছু দূরে নয়।
আমাদের যাওয়ার দিন ঠিক হলো কোনও এক রবিবার। ভোর ৬টায় ট্রেন হাওড়া থেকে। বেলা ১১টায় পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। খুব দেরি হলে বেলা ১২টায়। মানে দুপুরের খাওয়া ওখানেই। সেই বুঝে ভালোমত খাবার অর্ডার আমরা কলকাতা থেকেই করে দিলাম। সব মিলিয়ে দু রাত্রি তিন দিনের সম্পূর্ণ সফর।
নির্দিষ্ট দিন যত এগিয়ে আসতে থাকলো উত্তেজনায় আমাদের ঘুম কমে যেতে লাগলো। শেষে এমন হলো আমরা কেউ কেউ বার পাঁচেক আমাদের ছোটো ব্যাগ টা গুছিয়ে ফেললাম। প্রায় রোজ ই ভোরবেলায় ওঠার মহড়া চলতে লাগলো। তবে আসল ঘটনা টা ঘটল যাওয়ার দিন।
নির্দিষ্ট দিনে, বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনায় কেউ ভোরবেলা উঠে shampoo করতে লাগলো তো কেউ শেষ মুহূর্তে জামা ইস্ত্রি। কেউ আবার ভোর ৬টায় কি বাস এ যাবে ভাবতে ভাবতেই সময় পার করে দিলো, তারফল যেটা হলো যখন আমরা সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বড়ো ঘড়ির নিচে জড়ো হলাম ঠিক তখন আমাদের নাকের ডগা দিয়ে আমাদের ট্রেনটি আমাদের ছাড়াই নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো।
খানিক হতভম্বের মত দাড়িয়ে যখন হুশ ফিরল, একে আমি মারি,তো ও আমায় মারে অবস্থা। কাউন্টার এ খোঁজ নিয়ে শুনলাম, রবিবার আর কোনো সরাসরি যাওয়ার ট্রেন নেই। একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আছে সেটা দুপুর ১২ টায় খড়গপুর থেকে ছাড়বে!
কপালের লিখন খন্ডায় কে!!
যাহোক থাকে কপালে বলে সেই প্যাসেঞ্জার ট্রেন এই চেপে বসলাম আমরা, কিন্তু দুর্ভোগ এর শেষ তখনও হয়নি। বরঞ্চ বলা যায় যে শুরু।
খড়গপুর পৌঁছালে জানা গেলো সেখান থেকে যে ট্রেনটি আমাদের গন্তব্যে নিয়ে যাবে সেটি রাস্তায় বিকল হয়েছে । তার কেটে গেছে(আমাদের ই মত আর কি!) কখন আসবে তার ঠিক নেই।
-আজ আমাদের দিনটাই খারাপ, ধুস!
এইভাবে কখন পৌঁছাবে বলতো!
-তোদের ও বলিহারি যাই সাত সকালে শ্যাম্পু করে কি লাভ হলো, হ্যাঁ??
রাগে গজগজ করতে থাকে উৎসব। ওই একমাত্র ট্রেন ছাড়ার আগে এসে পৌঁছেছিল আর আমরা না আসায় ট্রেন এ উঠেও নেমে এসেছে।
রাগ যে আমার ও হচ্ছিল না তা নয় কিন্তু এখন আগে প্রয়োজন গন্তব্যে পৌঁছনো।
পেটে ছুচোয় ডন মারছে। প্রায় বিকেল ৪ টে নাগাদ বিকল হয়ে যাওয়া ট্রেন এর পরিবর্তে অন্য ট্রেন এলো। ট্রেন তো এলো কিন্তু
তাতে বেজায় ভীড়। আর হবে নাই না কেনো, অনেকেই কাজ কর্ম শেষে বাড়ি ফিরছে। প্রায় সমস্ত স্টেশন থেকে লোক তুলে ও নামিয়ে আমাদের ট্রেন এগিয়ে চললো পুরুলিয়ার দিকে।
অনেক বাধা বিপত্তি কাটিয়ে (ঠায় ৩ঘণ্টা দাড়ানো তাও তো একরকম বিপত্তি!, যদিও শেষের দিকে একজন বসতে দিয়েছিলেন তবে তার মেয়াদ ১০মিনিটের বেশি ছিল না, একেকজনের জন্য। মানে একটা সিট আমরা ভাগাভাগি করে বসছিলাম) শেষ মেষ যখন স্টেশন এ এসে নামলাম তখন আমরা ছাড়া আর দু চার জন মুটে জাতীয় লোক নামলো ওই স্টেশন এ।
পুরো স্টেশন টাই কুশায়ার চাদর জড়িয়ে বসে আছে। একটাও দোকান খোলা নেই।
বাইরে এসে যা বুঝলাম, শুধু স্টেশন এর ভেতরেই নয় বাইরেও লোক সংখ্যা ভীষণরকম কম। যে দু একজন ছিল তাদের থেকে জানা গেলো, এসব অঞ্চলে খুব মাওবাদীদের উৎপাত(তখন ছিল) তাই রাত্রে কেউ বাইরে থাকেনা, এছাড়া রবিবার এমনিও তাড়াতাড়ি সব বন্ধ হয়ে যায়। সাথে এও জানলাম যে আমরা যেখানে যাবো সেখানে আজ রাত্রে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে আর এই অন্ধকারে সেখানে কেউ যাবে না। জঙ্গলে এ গাড়ি দাঁড় করিয়ে লুটপাট হয় , তারপর ফেলে রেখে চলে যায়। এক্ষেত্রে, সাথে আবার দু- দু'খান মেয়ে!!
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আরো যুক্ত হলো যে কোনও থাকার জায়গা, হোম স্টে/হোটেল কিচ্ছু নেই আশেপাশে।
কলকাতায় বেড়ে ওঠা আমরা তখন এমনিই ঠান্ডায় কাবু। তায় থাকার জায়গার এমন অবস্থা শুনে সবাই একেবারে চুপসে গেলাম।
প্রায় এক ঘন্টা চেষ্টা করে কালু(ভালো নাম এক খানা ছিল কিন্তু সেটা ভুলে গেছি)আর উৎসব আমাদের দলের দুজন একটা অটো জাতীয় গাড়ি নিয়ে এলো।
বললো, ওই লোকটা ৫০০টাকার বিনিময়ে আমাদের সরকারি বাংলো তে পৌঁছে দেবে।
৫০০ টাকা!!
প্রায় ৯-১০বছর আগে ৫০০টাকা মানে আমাদের একদিনের পুরো ঘোরার ও খাবার টাকা। দিনের আলোয় ওই রাস্তা যেতে ৫ জনের ৫০টাকা লাগে।
শুনেই তো আমি আর জুনা বসে পড়লাম। বলে কি!!
মানে একেকজনের ১০০!! তবে কিছুক্ষনেই বুঝলাম, রাজি না হয়ে উপায় নেই। এইভাবে বসে থেকে তো রাত কাটানো যাবে না।
তারপর ওই শীতেও কিন্তু মশা রা ছুটি নেয়নি
উল্টে কলকাতার রক্ত দেখে ফিস্টি বসিয়ে দিয়েছে। আমি মশা তাড়াতে তাড়াতে ভাবছিলাম ঠান্ডায় কি ম্যালেরিয়া হয়!!
এইসব ভাবতে ভাবতেই অটো মতো গাড়িতে চেপে বসলাম আমরা। উঠেই দেখে নিলাম,আমাদের কারও ফোনে পর্যাপ্ত ব্যাটারী নেই। থাকবে কি করে, সেই সকালে বেরিয়েছিল তারপর যে ট্রেন এ এসেছি তাতে চার্জিং পয়েন্ট আশা করাই অন্যায়।
অন্ধকার রাত্রির সৌন্দর্য্য চিরদিন ই অন্যরকম। আবেদনময়ী। আর তখন বয়স কম, সবকিছুর মধ্যেই আমরা রোমান্টিসিজমের ব্যাপার খুঁজে পাই।কিন্তু সে রাত্রি ছিল আলাদা, পরবর্তীকালে অন্ধকার অনেক দেখেছি কিন্তু এমন ঘুটঘুটে নিকষ কালো রাত্রি আমি অন্তত খুবএকটা দেখিনি জীবনে। বস্তুতঃ, সেইবার প্রথম দেখেছিলাম। সেরাত্রে, চাঁদ উঠে থাকলেও তার দেখা পাইনি আমরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকালয় ছাড়িয়ে বাদার(একধরনের জলাভূমি) পথ ধরল অটো। যা রাস্তা তাতে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছিল, অন্ধকারে তো গর্ত দেখা যায়না, তাই লাফানোর পরিমাণ ও কমছিল না। কিছুদূর যাওয়ার পর অটোচালক নানা কথা বলতে আরম্ভ করলো। মানে ওখানে কি কি হয়, কেমন করে খুন করে, রাহাজানি করে এইসব।
বিষয়টা আমাদের ঠিক ভালো না ঠেকলেও কিছু করার নেই। জয় বলার চেষ্টা করলো যে ওর পিসেমশাই পুলিশ তবে সেটা চালক এর কানে গেলো কিনা বুঝলাম না। এদিকে অটো চলছে তো চলছেই।
আমরা ভাবছি, অন্ধকারে রাস্তা কি বেশি মনে হয়। এত সময় তো লাগার কথা নয়।
প্রায় ৩০মিনিট বেশ জোরে চলার পর সামনে একদম হটাৎ করেই একটা লাইট দেখা গেলো। দুপাশে ঘনও জঙ্গল।আমরা সবাই হাত ধরাধরি করে বসে রয়েছি। যাই হয়ে যাক কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না।
তখন বয়সটাই অন্যরকম, সম্পর্ক ভেজাল বিহীন, আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের গ্রাস করতে পারেনি।
তা কাছে আসতে বোঝা গেলো একটা লোক হাতে আলো নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গাড়ি থামাতে বলছে। চালকের খুব একটা ইচ্ছা ছিল না কিন্তু লোকটা একেবারে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাই থামতেই হলো।
লোকটা আঞ্চলিক ভাষায় বললো, ও গেস্ট হাউসের চৌকিদার। বিকেলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিল বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু পথে সেটা বিগরেছে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছে, একা যেতে সাহস পাচ্ছিলেন না।এখন এই রাস্তায় গাড়ি যেতে দেখে থামালো। এই কথোপকথন আঞ্চলিক ভাষায় হলেও যেহেতু বাংলা জাতীয় তাই আমরা বুঝতে পারছিলাম।
তারপরই নিজেই উঠে বসলো চালকের পাশে আর আমাদের থেকে জেনে নিল কোথায় যাবো।
তারপর চালক কে যা বললো, সেটা বুঝতে পেরে আমাদের আরও ঠাণ্ডা লাগতে লাগলো।
যা বুঝলাম তা হলো, আমাদের বাংলো যাওয়ার রাস্তা অন্যদিকে,এইদিকে অনেক বেশি জঙ্গল আর এখানে দিনের আলোতেও লোক বেশি আসেনা।
চালক জেনে বুঝেই আমাদের এই রাস্তায় এনেছে।
ওদের নিজেদের মধ্যে বচসা হতে হতেই ধমকে চৌকিদার গাড়ির দিক নির্দেশ করতে লাগলো। কথা বলার ভঙ্গিমা শুনে বুঝতে পারলাম লোকটির যথেষ্ট জানাশোনা আছে। যদিও এই অটোর চালক চৌকিদার কে চেনে না তবে তাদের অনেক কমন কানেকশন আছে বলেই মনে হোল।
আরও বেশ কিছুটা চলার পর আসতে আস্তে জঙ্গলে ফাকা হতে লাগলো। শেষ অবধি একটা বিশাল গেট ওয়ালা কম্পাউন্ড এর সামনে অটো এসে দাড়ালো ।
ফলক এ নাম দেখে বুঝলাম যে এই সেই জায়গা!
ভাড়া মিটিয়ে এ ভীষণ ক্লান্ত আমরা চৌকিদারকে আসতে বলে তার অপেক্ষা না করেই ভিতরে ঢুকে গেলাম। তারপর রিসেপশন থেকে নির্দিষ্ট কটেজ এর চাবি নিয়ে পৌঁছানোর সময় ও আর কোথাও তাকে দেখলাম না।
রাত্রে আর দেরি না করে খেতে চলে গেছিলাম আমরা। দুর্দান্ত রান্না । এসে স্নান করে, তারপর খেয়ে কিন্তু ক্লান্তি দুর হয়ে গেছিলো আমাদের।
খেয়েদেয়ে অনেক রাত্রে প্রায় ১১ টায়, চৌকিদার কে খুঁজতে গেলাম।
যারা ঘুরতে গেছেন তারা একমত হবেন যে সাধারণত শুক্রবার যেকোনো ঘোরার জায়গায় ভীড় হয় বেশি। রবিবার সেরোম ভীড় থাকেনা। বেশিরভাগ মানুষই ফিরে চলে যান, সোমবার থেকে কাজের জগতে ফিরতে হয় তাদের। তাই এইসময় স্টাফ এর সংখ্যা কম ই থাকে।
আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে অনেক বিঘা জায়গা নিয়ে ছোটো জঙ্গলে, পার্ক, কটেজ ছড়িয়ে রয়েছে। তো, রিসেপশন অফিস এ গিয়ে যিনি ছিলেন তাকে বলতে তিনি বুঝতেই পারলেন না কার কথা বলছি।
দেখা হলে আমরা অনেক ধন্যবাদ দিতাম ওনাকে। বুঝতে পারছিলাম কি ভীষণ বিপদ থেকে বাঁচলাম, ওনার জন্য। ফেরার পথে চারপাশ টা ভালো করে দেখতে দেখতে এলাম, যদি দেখা পাই কিন্তু অনেক কোথাও দেখা গেলো না। ওইসময় আমাদের ওনার নাম জিজ্ঞেস করার কথা মনে হয়নি। রীতিমত ভয় পেয়ে গেছিলাম আমরা। সেই নিয়েও আফসোস হচ্ছিল।
সেইরাত্রে আমরা বেশ কিছুক্ষন আড্ডা মেরে রাত ১২টায় সম্ভবত শুতে গেলাম। সারা রাত এ আমার আর ঘুম ভাঙ্গেনি।
একটু বেলার দিকে বেরোনোর সময় অফিস গেলাম আর তখন ই শুনলাম অন্য একটি ঘটনা।
ম্যানেজার ভদ্রলোক সকালে ছিলেন , আমাদের দেখে উনি কুশল জিজ্ঞাসা করে জানতে চাইলেন কাল কার খোঁজ করছিলাম।
সবিস্তারে বল্লাম ঘটনা টা।
সব শুনে উনি বললেন, গণেশ পূততুন্দু সাথে আমাদের বলা চৌকিদার এর মিল আছে। কিন্তু তিনি তো বেশ কিছুদিন নিখোঁজ। বন্ধুর বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন তবে আর আসেন নি। পুলিশ ও খুঁজেছে, তা আজ প্রায় দেড় মাস - দু মাস হলো। ওনার সাইকেল পাওয়া যায় জঙ্গলে মধ্যে একটা রাস্তায় যেখানে লোকজন বড়ো একটা যায়না। কিন্তু ওনাকে পাওয়া যায়নি। তারপর, উনি একটা পুরনো ফটো দেখালেন,গ্রুপ ফটো।
তাতে যাকে গণেশ নামে দেখলেন তিনিই আমাদের দেখা কালকের চৌকিদার!
আমরা কিরম একটা ঘোরে চলে গেছিলোম এসব শুনে। উনি বলে যাচ্ছিলেন, এখানকার অনেক স্থানীয় মানুষ লুকিয়ে মাওবাদীদের সমর্থন করে। ওরা সাধারণ মানুষ বিশেষত টুরিষ্ট দের সুযোগ পেলে ধরেও নিয়ে যায়। পরে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করে।
যদি সেসব কিছু নাও হয় তাও লুঠপাট বা অন্যধরনের অত্যাচার তো আছেই। কাল আমরা খুব বড়ো বিপদ এর হাত থেকে বেঁচে গেছি।"
মনে মনে ভাবছিলাম কাল যিনি আমাদের নিজে থেকে পৌঁছে দিলেন তিনি দরজা অবধি এসে, এইখানে কেনো আসবেন না!!!
নাহ ব্যাপারটা কিছুতেই মেলাতে পারা গেলো না।আর উনি তো কাল ও বলেছিলেন যে ওনার ফেরার পথে সাইকেল খারাপ হয়ে গেছিলো। বললাম সেটাও।
শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ম্যানেজার শুধু বললেন, 'আপনারা শহরে থাকেন। বয়সে অনেক ছোট, আজ ও জঙ্গলে এ অনেক এমন ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা বাস্তবে দেওয়া মুশকিল।
আজ তো বেরোবেন দেখুন কোনোভাবেই আর যেনো ৬টার বেশি দেরি করবেন না।
গনেশদা কিন্তু রোজ রোজ বাঁচাতে আসবে না।'
আমরা আর যে দুদিন ছিলাম, ৬টার অনেক আগেই চলে এসেছি
তারপর ওই গ্রাউন্ড এর ভেতরেই ঘুরেছি। আজ ও যখন ই ঘটনাটা মনে পরে, এক অচেনা জগতে হারিয়ে যাওয়া গণেশ পুতুতুন্ড কে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই ।

httpssankhamanigoswami.xyz







ভূতের গল্প ,

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প, বিখ্যাত ভূতের গল্প, ভয়ের গল্প, https://www.somewhereinblog.net/blog/s_rezowana/29465956, https://bengali.momspresso.com/parenting/rumaar-ddaayyeri/article/styi-bhuuter-glp, 

পুপুর বড় শাশুড়ি মা । অমৃতা বিশ্বাস সরকার । ভূতের গল্প

পুপুর বড় শাশুড়ি মা

১)
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে পা দিতে না দিতেই পুপু পড়লো মহা বিপদে...সারাদিন কেউ যেন তাকে চোখে চোখে রাখে...সে কি করছে,কি খাচ্ছে,কোথায় যাচ্ছে-সব একজন কেউ নজরে রাখছে কিন্তু পুপু তাকে দেখতেই পাচ্ছেনা...এত বড় বাড়িতে আর কারুর দিকেই যেন তার নজর নেই...শুধু পুপুর উপর নজর রাখাই তার কাজ যেন...এইদিকে পুপুর তো একেই মন খারাপ নিজের বাড়ি ছেড়ে আসতে হয়েছে তাকে এই বাড়িতে...বাবা-মা-ভায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়...আর রাগ হয় রমেশ মানে তার স্বামীর ওপর...কি দরকার ছিল তাকে বিয়ে করার...একটা বিয়ে বাড়িতে তাকে দেখে রমেশ ও তার বাড়ির লোকজন সব যেন গলে গেলো...উল্টো দিকে রমেশের এত বড় বাড়ি,বড় ব্যবসা,বনেদী ব্যাপার দেখে তার বাড়ির লোকজনও আর না করেনি এই বিয়েতে...পুপুর আপত্তি থাকলেও সেটা টিকলোনা...তার ভাই রুপুটাও মহা পাজী...বলে কিনা : দিদি,তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর...তোদের ওই বাড়িতে গিয়ে তাহলে আমি মাছ ধরবো!...শুনেই রাগে সারা শরীর জ্বলে গেছিল পুপুর...রুপুর কানটা মুলতে যেতেই লাফিয়ে পরে হাসতে হাসতে পালিয়ে গেল...আর তারপর বিয়ে হয়ে চলে এলো সে এই চাঁপাদীঘিতে...একদম পছন্দ হয়নি জায়গাটা পুপুর....কি রকম জঙ্গুলে জায়গা রে বাবাঃ!! শুধু গাছ আর গাছ,পুকুর,বাগান,গরু,বাছুর,মুরগি,ধান,চাল,ক্ষেত,চাষ-বাস এইসব নিয়েই এরা দিন কাটিয়ে দেয়...তাকে কোনো কাজ করতে হয়না,পায়ের উপর পা দিয়েই বসে থাকে কিন্তু তাতে একটুও ভালো লাগে না পুপুর...কিছু করতে পারলে হয়তো সময়টা কাটতো...বই পড়ে,ঘুমিয়ে আর গল্প করে এদের সাথে আর কাহাতক সময় কাটানো যায়? তার বরটাও যেন কি রকম...পুপুর সব কথা মেনে নেয়...সব কিছুতেই সায় দেয়...একটু ঝগড়া করলেও না হয় সময় কাটতো তার....ধুস্!পাতি হয়ে গেল পুপুর জীবনটা যেন...আর সব হয়েছে রমেশের জন্য...তাই ভারী রাগ করে সে রমেশের ওপর…একদিন ইচ্ছে করে সব ছেড়ে পালিয়ে যাবে...সেটারই চেষ্টা করতে থাকে সে...একদিন সুযোগও মেলে...রাতের বেলায় যখন সবাই ঘুমাচ্ছিল তখন চুপিসারে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে পুপু...সিঁড়ি দিয়ে সোজা নেমে আসে নীচে.…শীতের রাত-সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন...দারোয়ানটাও সদর দরজার সামনে বসে ঘুমাচ্ছে...পুপু খুব সাবধানে সদর দরজাটা খুলে সবে এক পা বাড়িয়েছে বাড়ির বাইরে...তখনই হঠাৎ কোথা থেকে একটা ঠান্ডা হাওয়া এসে তাকে ঘিরে ধরে...পুপু নিজের গায়ের চাদরটা ভালো করে মাথা দিয়ে জরিয়ে এগিয়ে যেতে চায় আর ঠিক সেই সময় তার হাতটা কেউ চেপে ধরে আর সে শুনতে পায় একটা খ্নখ্নে গলায় কেউ বলছে : কোথায় যাচ্ছিস্ রে ছুড়ি?আয় ভেতরে আয় বলছি!
২)
নিজের মনে গুনগুন করে একটা হিন্দি ছবির গান গাইছিল পুপু বিকেলবেলায় ছাদে ঘুরতে ঘুরতে...তখনই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়া তাকে ছুঁয়ে গেল...পুপুর এখন এইসব গা সওয়া হয়ে গেছে...পুপু জানে যে তার বড়-শাশুড়িমা এসে গেছেন...বড়-শাশুড়িমা মানে তার শাশুড়ির শাশুড়ি...যেদিন রাতে পুপু বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল সেদিনই এঁনার সাথে তার প্রথম আলাপ হয়...তার আগে নাকি পুপুকে চোখে চোখে রাখতেন উনি...পুপুকে নাকি প্রথম দিন দেখেই উনি বুঝে গেছিলেন 'এ বউ সুবিধার না...পালালো বলে'...আর তাই দায়িত্ব নিয়ে তিনি পাহারা দিতেন পুপুকে...চোখের আড়াল করতেন না...তার এত সাধের সংসার পুপুর জন্য ভেঙে যাবে,কষ্ট পাবে তার প্রিয় নাতি সেটা তিনি কি করে হতে দেবেন!...তাই তো সেদিন কোনো উপায় না দেখে নিজেই নেমে এলেন বাড়ির বাগানের আম গাছটা থেকে,পুপুর পথ আটকালেন...পুপু নেহাত সাহসী মেয়ে তাই ভয় পায়নি...অন্য কেউ হলে অক্বা পেত...চোখের আড়াল থেকে সাদা থান দেখে পুপু বললো : এসেছেন তো অনেকক্ষন..বলেই ফেলুন যা বলবেন?
বড় শাশুড়ি মা : ওলো, অ কি গান গাইছিস রে নাত বউ? এ আবার গান‌ নাকি?
পুপু : এই গান গুলোই চলে আজকাল...আপনি তো অনেকদিন‌ আগেই আমাদের টাটা করে চলে গেছেন তাই জানেন না
বড় শাশুড়ি মা : কি? আমি জানি না?তুই কতটুকু জানিস রে ছুড়ি? এ সব গান নাকি? ছোঃ ছোঃ!...গান তো ছিল আমাদের সময়...কি সব গান...আহাঃ ...একটা গাই শোন তবে..
পুপু : থাক! আপনি আর দয়া করে গান ধরবেন না...আমি ছাড়া অন্য‌ কেউ শুনলে ভিমরি খাবে...তাছাড়া আপনার যা গলার ছিড়ি !!!
বড় শাশুড়ি মা : কি বললি? আমার গলা ভালো না তো কি তোর গলা ভালো?গাস এবার গান...দেবো গলায় নিম পাতা ঢেলে
পুপু হেসে ফেলে...তার এই বড় শাশুড়ি মাকে রাগাতে তার ভারী ভালো লাগে...খুনসুটি করে ওনার সাথে খুব মজা লাগে...তার সময়টাও কাটে বেশ...যখন-তখন, সময়-অসময়ে, যেখানে-সেখানে এঁনার আসাটা ভারী উপভোগ করে সে...পুপু শুনেছে নিজের শাশুড়ির থেকে যে জীবিতকালে নাকি খুব রাশভারী মহিলা ছিলেন,দাপুটে ও ছিলেন‌ বেশ,সব কিছু চোখে চোখে রাখা তাঁর অভ্যাস ছিল...সেই স্বভাব গত হওয়ার পর ও ছাড়তে পারেনি...সব বিষয়ে নাকটা তাঁকে গলাতেই হবে...বিশেষ করে পুপুর ব্যাপারে...পুপু কিছু বলেনা কাউকে...সে জানে যে ওনার কোনো বাজে উদ্দেশ্য নেই...পুপুকে হাসতে দেখে রাগ করে চলে যান তিনি...তবে একটু পরে ফিরে আসেন...
বড় শাশুড়ি মা : বলছি একটু সেজে গুজে থাকবি,স্বামী এলে আসে পাশে ঘুরবি...গানের গলা তো ভালো...গান শোনাবি
পুপু : টুইস্ট করবো তারপর
বড় শাশুড়ি মা : আ্যঁ!
পুপু : টুইস্ট...একটি নাচ...নাচবেন?
বড় শাশুড়ি মা : কেন রে আপদি? আমি কি বাজারে নাকি?
পুপু : আজকাল সবাই নাচে...আপনিও নাচুন না
বড় শাশুড়ি মা : তুই নাচবি না ওই সব বাজারি নাচ বলে দিলাম
পুপু : এই যে বুড়ি বেশী বললে আপনার নাতিকেও নাচাবো
বড় শাশুড়ি মা : তোর মুখে নুড়ো জ্বেলে দেবো
এই বলে রেগে গিয়ে উঁনি চলে গেলেন..আর পুপু হাসতে হাসতে নীচে নিজের ঘরে নেমে এলো
৩)
ঘরে এসে পুপু দেখে যে রাগ করে উনি তার ঘরেই বসে আছেন তার খাটের ওপর...এই ঘরটা নাকি তাঁর ছিল...ওঁনার মৃত্যুর পর তার আদরের নাতি এই ঘরটায় থাকতে আসে...তাতে অবশ্য এঁনার কোনো অসুবিধা নেই...নাতি কাছাকাছি আছে তাতেই এঁনার বেশ আমোদ হয়...পুপুকে দেখে রাগ দেখিয়ে তিনি দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন...পুপু তার রাগ কমানোর জন্য তার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করে...শেষে আমের আচারের লোভ দেখিয়ে সেদিনের মত তাঁর রাগ কমে....পুপুকে তার শাশুড়ি মায়ের ঘর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর জন্য আচার ও নিয়ে আসতে হয়....খাটের ওপর পা ছড়িয়ে বসে আয়েস করে আচার খেতে খেতে পুপুর সাথে কথা বলতে থাকেন
পুপু : ঠাকুরদার সাথে বিয়েটা হয়েছিল কিভাবে?
বড় শাশুড়ি মা : সে অনেক কথা...আমাদের বাড়ির পুরুত ঠাকুর আর এদের বাড়ির পুরুত ঠাকুর ছিলেন দুই ভাই...আমার বাবা আমার জন্য ছেলের খোঁজ করছিলেন আর এরা খুঁজছিল তোর ঠাকুরদার জন্য মেয়ে....বিয়ে করে আসি যখন তখন আমার বয়স ১২ আর ওনার ২২
পুপু : বাপরে!!!এত বড়?
বড় শাশুড়ি মা : তখন তাই হত রে নাতবউ...তা আমি ওনাকে পেতুম খুব ভয়...একঘরেও থাকুত না...তা বিয়ের ২মাস পর তিনি পড়াশোনার জন্য চলে যান দিল্লি...
পুপু : আপনাকে একা ফেলে?
বড় শাশুড়ি মা : ওমা!!! একা কোই রে পাগলি! বাড়িতে কত লোকজন ছিল..আমার শ্বশুর-শাশুড়ি,দেওর,জা,ননদরা,কাজের লোকজন...কত লোক...সংসার মানে কি আর শুধু কপোত-কপোতি‌ রে?সবাইকে নিয়েই সংসার...যত লোকজন তত ভালোবাসা,তত দায়িত্ব,তত একে ওপরের সুখে-দুঃখে থাকা...তোরা আজকালকার মেয়েরা বুঝবিনা...সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে পারাটাই যে কৃতিত্ব রে
পুপু অবাক হয়ে শোনে...এই ভদ্রমহিলা তার থেকে কত আগের প্রজন্মের...কিন্তু কি অবলীলায় একটা চরম সত্য কথা বলে গেলেন...আলাদা আলাদা যে কেউ থাকতে পারে তবে একসাথে থাকার ভেতর যে ভালোলাগাটা আছে সেটার স্বাদ পাওয়া যায়না
বড় শাশুড়ি মা : তারপর হঠাৎ একদিন একটা চিঠি এলো আমার নামে...আমার ছোট দেওর লুকিয়ে দিয়ে গেল আমায়...দেখি তোর ঠাকুরদা লিখেছেন...আমি তো লজ্জায় মিশে গেলাম...রাতে সবাই শুয়ে পড়লে পর আসতে আসতে দরজাতে খিল এঁটে চিঠিটা পড়লাম...
পুপু : তারপর?
বড় শাশুড়ি মা : চিঠি পড়তে পড়তে কেমন জানি একটা মায়া পরে গেল ওনার ওপর...নিজের বাড়ি ছেড়ে এত দূরে পরে আছেন...কি খান না খান কে জানে,কোথায় থাকেন,শরীর খারাপ হলে কে দেখে...এইসব ভেবে চোখে জল চলে এলো সেই প্রথম ওনার জন্য...তারপরের দিন আমিও সবাইকে লুকিয়ে একটা চিঠি লিখে আমার দেওরকে দিয়ে পোষ্ট করিয়ে দিলাম...এই রকম ভাবে আমাদের চিঠি পর্ব চলতে থাকলো সবাইকে লুকিয়ে...
পুপু : বলুন প্রেম পর্ব
বড় শাশুড়ি মা ‌লজ্জা পেয়ে বললেন : ওই হলো
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো আর রমেশ এসে ঘরে ঢুকলো...রমেশকে আসতে শুনেই বড় শাশুড়ি মা হাওয়াতে মিলিয়ে গেলেন...আচারের বাটি পরে রইলো খাটের ওপর...
রমেশ : পুপু
পুপু : বলো
রমেশ : আমাকে ব্যবসার কাজে কদিনের জন্য বাইরে যেতে হবে...আজকে রাতেই বেড়িয়ে যেতে হবে...
পুপুর খুব খারাপ লাগলো,তাকেও তো যেতে বলতে পারতো রমেশ তার সাথে...রমেশ তার দিকে এগিয়ে আসে...তার হাতটা ধরে বলে : রাগ করো না,তোমাকেও নিয়ে যেতে ইচ্ছে ছিল কিন্তু ওখানে কাজের অনেক চাপ থাকবে...তোমাকে সময় দিতেই পারবোনা..একা একা তুমি কি করবে? তার থেকে বরং এখানে সবার সাথে থাকা ভালো তোমার...
পুপুর কেন জানিনা খুব অভিমান হলো...রমেশকে একটা কথা বলতেও ইচ্ছে করলোনা...চুপ করেই থাকলো...স্যুটকেস গুছিয়ে রমেশ যখন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেল তখনও রমেশের দিকে তাকিয়ে দেখলো না...রাতে যখন একা একা বিছানাতে শুয়ে ছিল তখন রমেশের কথা চিন্তা করতে করতে চোখের কোনায় নিজের অজান্তেই একটু জল চলে এলো...খুব অবাক হলো পুপু...রমেশকে তো তার তেমন ভালো লাগে না তাহলে ও চলে যেতে এত খারাপ লাগছে কেন তার? কানের পাশ থেকে শুনতে পেলো তার বড় শাশুড়ি মা বলছেন‌ : ওলো! প্রেমে পড়েছিস্ যে আমার নাতির...
৪)
প্রায় মাসখানেক হয়ে গেল রমেশ বাইরে গেছে...খুব কাজের চাপ তার ওইখানে...রাতে নিয়ম করে ফোন করে সে পুপুকে...তবে ৫মিনিটের বেশী কথা বলতে পারেনা...ক্লান্ত থাকে,কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পরে...পুপুর ও রমেশকে বলে ওঠা হয়না তার‌ না বলা কথা গুলো...সেদিন ছাদে ঘুরছিল পুপু আনমনে...বড় শাশুড়ি মাও ছিলেন...নানা কথা বলে পুপুর মন ভালো করার চেষ্টা করেন তিনি...পুপু যে রমেশের চলে যাওয়ার পর থেকেই কষ্টে আছে সেটা তিনি ভালোই বোঝেন...তাই তাঁর এখন একমাত্র কাজ পুপুকে সঙ্গ দেওয়া ও তাকে ভুলিয়ে রাখা...কিন্তু পুপুর মন তাতে সাময়িক ভালো থাকলেও একেবারে ভালো হয়ে যায়না...হঠাৎ বৃষ্টি এলো তেড়ে...পুপু ভিজতে থাকলো...তার মনে হলো বৃষ্টি তার সমস্ত কষ্ট দূর করে দেবে...বড় শাশুড়ি মা তাকে বারবার নিচে নামতে বলেন,পুপু শোনে না,ভিজতেই থাকে...তার ফলে মাঝরাতে এলো তার প্রচন্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর....সবাই ঘুমাচ্ছে,তা ছাড়া পুপুর ইচ্ছেও করলো না কাউকে ডাকতে...নিজেকে কষ্ট দিয়ে যেন রমেশের ওপর শোধ নিতে চাইলো সে...তবে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তার বড় শাশুড়ি মা...বারবার পুপুর গায়ে মাথায় হাত দিয়ে দেখতে থাকলেন,বিছানার চারিদিকে ঘুরতে থাকলেন আর বাড়ির বাকিরা পুপুর খোঁজ না নিয়ে নাকে তেল‌ দিয়ে ঘুমাচ্ছে বলে তাদের সকলকে আঙুল মটকে মটকে শাপ দিতে থাকলেন...কোনো রকমে রাতটা কাটলো...সকালবেলায় পুপুকে ডাকতে এসে তার এই হাল দেখে তার শাশুড়ি মা ঘাবরে গেলেন,নামী ডাক্তার এলেন,অনেক টেস্ট ও ওষুধ দিয়ে গেলেন...তবে পুপুর শরীর যে খারাপের সে খারাপই থেকে গেল...তখন রাত কটা পুপুর খেয়াল নেই,হঠাৎ একটা হাতের ছোঁয়াতে পুপুর ঘুম ভেঙে গেল...চোখ খুলে দেখে রমেশ...পুপু আর কিছু না দেখে জরিয়ে ধরে রমেশকে....রমেশ পুপুকে জরিয়ে ধরে তার মাথায় হাত বুলোতে থাকে...পুপু ঘুমিয়ে পরে...এর ঠিক দুদিনের মাথায় পুপু একদম সুস্থ হয়ে যায়..রমেশ ও পুপু ঘরে বসে গল্প করছিল,তখন পুপু জিজ্ঞাসা করে : তুমি সেদিন চলে এলে যে?
রমেশ : তোমার জন্য মন কেমন করছিল আর তা ছাড়া....
পুপু : কি?
রমেশ : ঠাকুমাকে দেখলাম ....
পুপু : মানে?
রমেশ : ঠাকুমাকে দেখলাম স্বপ্নে...আমাকে বললেন যে তোমার খুব শরীর খারাপ,আমি যেন তোমার কাছে ফিরে যাই তক্ষুনি...তার বলার ভেতর কি ছিল কি জানি...আমিও আর দেরী না করে যে ফ্লাইটটা আগে পেলাম সেটা নিয়েই তোমার কাছে চলে এলাম...আর এসে দেখি তোমার এই হাল!
পুপুর মনটা কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় ভরে যায় তার বড় শাশুড়ি মা থুড়ি তার ঠাকুমার জন্য...তাকে তিনি যে কতটা ভালোবাসেন সেটা বুঝতে পারে পুপু...সত্যিই সংসার সবাইকে নিয়েই হয়.…তাতেই বড় সুখ...চোখের কোন দিয়ে পুপু দেখতে পায় তাদের ঠাকুমা তাদের দিকে মায়া ভরা চোখে চেয়ে আছেন ও মিটিমিটি হাসতে হাসতে আমের আচার খাচ্ছেন।

a famous sketch by Satyajit Ray from GGBB




ভূতের গল্প বাংলা, ভূতের গল্প , ভূতের গল্প শোনাও তো, ভূতের গল্প বই, ভূতের গল্প দাও, https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/belablog/30227703,https://bengali.momspresso.com/parenting/rumaar-ddaayyeri/article/styi-bhuuter-glp,https://blog.rokomari.com/book-review/chondrahoto/

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...