রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০

মাটির গন্ধ

 মাটির গন্ধ

 

                                         (১)

            গিটারটা মাথার ওপর দিয়ে খুলতে খুলতে সৌরীশ বলল --- “নাহ , উই আর মিসিং সামথিং ইয়ার ! হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ার্স গন , প্রবাল ?”

--- “ঈপ্সিতারা কমন রুমে গেছে । কিন্তু তুই জিমনাসিয়ামের বারান্দায় বসে , একা একা কাকে গান শোনাচ্ছিলি ?”

--- “বলছি , এই মিঠুন , ডান দিকে সর তো একটু । এখানে বসলে মেন গেটের দিকে নজর রাখা যাবে । মনীষা আসলে দেখতে পাব । এবার তোর কথার উত্তর দিই । ওখানে গিয়ে একা একা বসে গান গাইছিলাম , কারণ আমি একটু একা থাকতে চাইছিলাম । ডু ইউ নট থিঙ্ক , আমরা আজকাল বড় বেশি কথা বলছি , সরবে এবং নীরবে , ফোনে এবং ফেসবুকে ? এত কথা শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে বড্ড হাঁপিয়ে উঠি । আজকাল সন্ধেবেলার দিকে কখনও কখনও রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম গিয়ে গর্ভগৃহের পিছনের দিকে চুপচাপ ঘণ্টাখানেক চোখ বন্ধ করে বসে থাকি । সন্ধ্যারতি হয়ে যাওয়ার পর , ওই যে পিন ড্রপ সাইলেন্স --- ওটা মন আর মগজের পক্ষে বড্ড আরামদায়ক , কপালে মায়ের হাত বোলানোর মতন । আচ্ছা মিঠুন , তোরও কী মনে হয় না , আমাদের বন্ধু-বান্ধবীদের চোখের তারাগুলো আজকাল কেমন অস্বাভাবিকরকম চঞ্চল ?”

--- “আমি তোর মত ভাবুক নই । আর তোর মত ইন্টেলেক্টও আমার চোয়ালে এসে জমা হয়নি , অতয়েব আমি ইন্টেলেকচুয়ালও নই । তবে হ্যাঁ , দ্য ফার্স্ট পার্ট অব ইওর স্পিচ ইজ কোয়ায়েট রেলেভ্যান্ট । ইয়েস , উই আর মিসিং সামথিং । কী যেন একটা , খুব কাছাকাছিই আছে , কিন্তু ধরতে পারছিনা , বুঝতে পারছিনা । মনের ভিতর কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা আছে আর  সেটাকে খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মত খুঁজতে খুঁজতেই আইপডে শ’য়ে শ’য়ে গান শোনা , গার্লফ্রেন্ডের সাথে তিস্তার স্পারে বসা আর সারাদিন ধরে ঘরে-বাইরে প্রচুর অদরকারি কাজে ডুবে থাকা আছে । এই আমাদের কথাই ধর , দু’দিন বাদে থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট বেরোবে , আস্তে আস্তে আমরা কাজের জগতে হারিয়ে যাব , হয়তো বা নিজের মধ্যে থেকেও হারিয়ে যাব । এ সি কলেজের আনাচকানাচে এভাবে মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ে বেড়ানোটাকে মিস করব ভীষণভাবে । অথচ দেখ , এখনও পর্যন্ত আমরা রিয়েলাইজই করে উঠতে পারছিনা , আল্টিমেট সুখটা ঠিক কোথায় পাওয়া যাবে , কিসে পাওয়া যাবে !”

--- “ঠিক তাই ।“ মিঠুনের কথার সূত্র ধরে প্রবাল বলল --- “অ্যাপারেন্টলি আমাদের কোনও অভাব নেই । আমাদের বাবা-মা’দের যে প্রজন্ম তাঁরা এত নিরুদ্বেগে-নিশ্চিন্তে বড় হয়ে ওঠার সুযোগ পাননি , সেদিক থেকে তো আমরা সৌভাগ্যবান । অথচ বুকের ভিতর কখনও কখনও ডিপলি ফিল করি , কোথায় যেন একটা নোঙর ফেলা বাকি । বুকের ভেতর থেকে কে যেন মাঝরাতে ফিসফিস করে বলে যায় , এই বেলা খুঁজে নাও , এই জীবন থেকে পরিপূর্ণভাবে তুমি ঠিক কী চাও । জীবনটাকে তুমি চালাবে , না জীবন তোমাকে । রাশ তোমার হাতে থাকবে , নাকি জীবনের গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে , অসহায়ভাবে মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে থাকবে যে , যাক , জীবন যেমন চায় , যেদিকে চায় , আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাক । জীবন হোক বেলাগাম ।“  

--- “এই , আমরা বড্ড বেশি দার্শনিকের মত কথা বলছি । ছাড় তো । জাঁকিয়ে শীত পড়েছে কিন্তু আজ । টেম্পারেচার কততে নামল আজকে ? শিলিগুড়িতে তো চার না পাঁচ বলল খবরে ।“ উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করেই মিঠুন আবার বলল --- “কালই তো বড়দিন । আচ্ছা , থার্টি ফার্স্টে পিকনিক করতে গেলে হয়না মূর্তি কিংবা রোহিণীতে ?” ওর গলায় আনন্দ মেশানো উত্তেজনার ছোঁয়া ।

--- “বাস পাওয়া যাবে ভেবেছিস ! কুট্টিরা কালীঝোরা যাবে বলে একমাস আগে থেকে কালুসাহেবের একটা বাস বুক করে রেখেছে । তাছাড়া এত তাড়াতাড়ি সবকিছু অরগানাইজ করা যাবেনা । চাঁদা তোলার ব্যাপার আছে , মেয়েদের বাড়িতে কনভিন্স করানোর ব্যাপার আছে । তার চেয়ে বরং কাছেপিঠে কোথাও চল । লাল মন্দির গেলে হয়না ? নদী আছে , চা বাগান আছে , দারুণ জায়গা” --- বলল শুভার্থী । এতক্ষণ ও চুপচাপ বসে বাকিদের কথা শুনছিল ।

--- “ঠেলা ভাড়া করতে হবে , বাসনকোসন , চ্যালা কাঠ আর রান্নার জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য । ঠেলাওয়ালা এই সময়ে সুযোগ বুঝে অনেক টাকা ভাড়া হাঁকবে । তাছাড়া যেতেও অনেক সময় লাগবে । তার চেয়ে বরং করলা ভ্যালি চা বাগানটা সিলেক্ট কর । কলেজের কাছেই হবে । আমরা সবাই সুবোধদার দোকানের সামনে সকালে মিট করব , তারপর একসঙ্গে যাব । এগ্রিড ?” বলল সৌরীশ ।

ওর অকাট্য যুক্তি মেনে নিয়ে সবাই মিলে করলা ভ্যালি চা বাগানেই পিকনিক করতে যাওয়া স্থির হল । কিছুক্ষণ পর নবনীতা , ঈপ্সিতা , মনামিরা কমনরুম থেকে ফিরলে ওদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট আর মেনুও ঠিক হয়ে গেল । চাঁদা ও পিকনিক স্পট নিয়ে বান্ধবীরা ওদের সঙ্গে সহমত । কেবল একটাই শর্ত , রান্নার দায়িত্ব একা মেয়েরা নেবে না , ছেলেদেরও হাত লাগাতে হবে । ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কেবল ফটো তুললেই চলবে না । হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হবে না , এই-ই ঢের । এই শর্তে কেউ অরাজি হয় ! ছেলেরা সমস্বরে বলল --- তথাস্তু !

                                            (২)   

      ঠিক ছিল সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে সবাই কলেজের মেন গেটের সামনে সাইকেলে পৌঁছবে । রান্নার জিনিসপত্র কলেজপাড়ার এক বন্ধুর বাড়িতে রাখা থাকবে । একটা ঠেলা জোগাড় করা হয়েছে । ঠেলাওয়ালা নয় , ওরাই কলেজ থেকে করলা ভ্যালি পর্যন্ত সেটাকে ঠেলেঠুলে চালিয়ে নিয়ে যাবে ঠিক হয়েছে । ওইটুকু তো মাত্র পথ । কথামত আগে-পরে সবাই পৌঁছে গেল । স্নান করে আসতে হয়েছে বলে সবাই অল্পবিস্তর কাঁপছে । কাঁধ উঁচু করে হাতের চেটো ঘষছে । চারদিকে ঘন কুয়াশা । কথা বলতে গেলেই মুখ দিয়ে সবার ধোঁয়ামত বেরোচ্ছে । সবার মুখে হাসি । ওরা অপেক্ষা করছে উত্তমের জন্য । ওদের মুরগির ফার্ম আছে । মাংসের ব্যবস্থাটা ও-ই করবে । ছাড়িয়ে-কাটিয়ে আনতে হবে বলেই সম্ভবত ওর একটু দেরী হচ্ছে । সব রেডি , ও আসলেই সবাই বেরিয়ে পড়বে ।

       সাড়ে আটটা নাগাদ একটা বাজারের ব্যাগ সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে উত্তম যখন হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির হল , তখনও আকাশের মুখ ভার । দেখেই বোঝা যায় , আজ রোদ ওঠা মুশকিল আছে । পিকনিকের পক্ষে একেবারে আদর্শ দিন ! একটু পরে কুয়াশা কেটে যাবে কিন্তু হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাটা কমবে না । রান্না বসিয়ে , সেই আগুনেই হাত সেঁকে নেওয়া যাবে । পরপর গোল করে সাজিয়ে উনুন তৈরি করার জন্য মেন গেটের উল্টোদিকে সুবোধদার দোকানের সামনে কিছু ইট এনে রাখা ছিল । দোকানটা জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি মেন রোড থেকে একটু নীচুতে । ঢাল বেয়ে নামতে গিয়ে হিম ভেজা ঘাসে দু’একজনের পা পিছলে গেল । মনীষা গলা ছেড়ে গাইছে --- “দো নয়না অর এক কাহানি / থোড়া সা বাদল , থোড়া সা পানি / অর এক কাহানি ।” আরতি মুখার্জির এই গানটা সত্যিই মনির গলায় খোলে ভাল , মনে মনে ভাবল সৌরীশ । মিঠুন ডাকল --- “এই শুভার্থী , এদিকে আয় , জলের ড্রামটা একটু ধর , ঠেলায় তুলে দিই । সবাই যখন এসে গেছে , তখন আর দেরী করে লাভ নেই । ওখানে গিয়ে মাংসটা ধোওয়া আছে । তাছাড়া মাঝেমাঝেই যেরকম দমকা হাওয়া দিচ্ছে , তাতে উনুন জ্বালিয়ে রাখা কঠিন হবে । আয় আয় , দেরী করিস না । অ্যাই দীপঙ্কর , একদম ইয়ার ফোন বের করবি না । আরে ইয়ার , দিনটা এনজয় কর , গাছের থেকে নীচের শুকনো পাতাগুলোতে টুপটুপ করে ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ শোন । আজকে প্লিজ কানে ওটা গুঁজে রাখিস না । জিনিসটা বড্ড ইরিটেটিং বাড়ির বাইরে এলে ।“ দীপঙ্কর জিন্সের প্যান্টের ডান পকেট থেকে ইয়ার ফোনটা বের করতে গিয়েও মিঠুনের ধমক খেয়ে বাধ্য ছেলের মত সেটা আবার স্বস্থানে ঢুকিয়ে রাখল !

         ওরা রওনা দিল । ঠেলা সঙ্গে থাকবে , তাই সবাইকে সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতে হবে । উত্তম আস্তে আস্তে ঠেলার প্যাডেলে চাপ দিচ্ছে । সৌরীশ গিটার বাজিয়ে কবীর সুমনের একটা গান ধরল --- ‘কতটা পথ পেরোলে, তবে পথিক বলা যায়’ । সৌরীশ গলা ছেড়ে গাইছে , সবাই চুপ । দু’একজন মাঝে মাঝে ঠোঁট নাড়িয়ে কথাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে শুধু । মোহিতনগরের দিক থেকে শহরে কাজের খোঁজে ঢুকছে যে লোকগুলো , তারা সৌরীশের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে যাচ্ছে । জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের বাসের জানলা দিয়ে মুখ বার করে অনেকে কৌতূহলী চোখে দেখছে ছেলেমেয়েগুলোকে ।সৌরীশ সে সব কিছুই খেয়াল করছে না । নিজের মনে গাইতে শুরু করলে , বিশ্বচরাচরের সব কিছু ওর চোখের সামনে থেকে মুছে যায় ।

          একটু পরে , ওরা যখন ঢুকছে করলা ভ্যালি চা বাগানে , তখন কুয়াশা অনেকটাই কেটেছে । হাওয়ার দাপটও কমেছে খানিকটা । সামনের দিকে আদিগন্ত তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায় । চারদিকে উঁচু-নীচু ঢেউ খেলানো চা বাগান ধীরে ধীরে নেমে গেছে করলা নদীর খাতের দিকে । নদী পেরিয়ে ওপারে আবার সবুজ ঢেউয়ের বিস্তার । মাঝখান দিয়ে চা বাগানের বুক চিরে এঁকেবেঁকে অল্প গভীর খাতের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে করলা নদী । নদীর দু’পাশে বেশ খানিকটা জায়গা পর্যন্ত বালি জমে আছে । বর্ষাকালে নদী এই পর্যন্ত উঠে আসে দিব্যি বোঝা যায়  বালির ওপর পড়ে থাকা বড় গাছের শুকনো ডাল আর ছোট ছোট বোল্ডার দেখলে । নদীর তীরে বালির ওপর এখানেই ওদের রান্নার ব্যবস্থা হবে । দু’পাশে চা গাছের সারি , আর তার মাঝে চাপা রাস্তা দিয়ে এগোতে এগোতে ওরা দেখল , প্রায় প্রতিটি চা পাতার বেঁকে আসা শীর্ষবিন্দুটিতে মুক্তোর মত জমে রয়েছে শিশিরের কণা । নদীর দু’পাশেই চা বাগানের মধ্যে কিছুটা দূরে দূরে চা গাছগুলির মাথায় ছাতা ধরার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় মোটা গুঁড়ির গাছ ।

        প্রবালের ফটোগ্রাফির শখ আছে , ওর ডি এস এল আর ক্যামেরা সচল হয়ে উঠেছে । তাই ও একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছে ওদের দল থেকে । সেটা লক্ষ্য করে ঈপ্সিতা গলা তুলে ওকে ডাকল --- অ্যাই প্রবাল , তাড়াতাড়ি আয় , পরে ছবি তুলিস । আয় এখন একসঙ্গে যাই । আজ বিকেল পর্যন্ত আমরা সবাই একসাথে থাকব , একা ঘোরাঘুরি চলবে না ।

--- “যথা আজ্ঞা ম্যাডাম !” প্রবাল পিঠের ব্যাগে ক্যামেরা পুরে ফেলল । নদীর পাড়ে পৌঁছে একটু পরিষ্কার মত একটা জায়গা বেছে নিয়ে রান্নার তোড়জোড় শুরু হল । ওরা তিনটে দলে ভাগ হয়ে গেল । এক দল গেল নদীর পাড়ে মাংস ধুতে , একদল ইট সাজিয়ে পাশাপাশি দু’টো উনুন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । আর মেয়েরা বালির ওপর চাদর পেতে বসলো ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করতে । সঙ্গে ফ্লাস্কে করে সবার জন্য চা বানিয়ে এনেছে নবনীতা । সবার জন্য ডিম-পাউরুটি-মাখন আর কলা আনা হয়েছে । রান্নাটা চাপিয়ে দিয়েই জঠরাগ্নি কিছুটা প্রশমনের ব্যবস্থা করতে হবে । কেউই অত সকালে খেয়ে আসেনি , তাই সকলের পেটেই ছুঁচো দৌড়চ্ছে !

 

                                              (৩)

       “এই সোডিয়াম , কেরোসিন তেলের ড্রামটা নিয়ে আয় ঠেলার উপর থেকে, কাঠগুলো ভাল জ্বলছে না , আরেকটু তেল ঢালতে হবে” -- হাঁক পাড়ল প্রবাল । ফাঁকা জায়গা বলে ওর কথার প্রতিধ্বনি হল কিছুটা । সেই শব্দে কাছেপিঠের গাছ থেকে এক ঝাঁক কিচিরমিচির করতে থাকা পাখি উড়ে গেল ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে । জায়গাটা এতই নিস্তব্ধ যে কথা বললেই তা কয়েকগুণ জোরে বাজছে কানে । তাই কারওই কথা বলতে বিশেষ ইচ্ছে করছিল না । নবনীতাও কপট রাগ দেখিয়ে , ঠোঁট ফুলিয়ে , ধুপ ধুপ করে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে প্রবালকে তেলটা দিয়ে এসে চটি পেতে বসল ওদের পাশে । নদীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নবনীতার তোম্বা হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল শুভার্থী । নবনীতা ‘সোডিয়াম’ সম্বোধনটাতে খুব চটে যায় , আর সেই কারণেই সবাই ওকে আরও বেশি করে খ্যাপায় ! ‘সোডিয়াম’ নাম কেন ? কারণ ইংরেজিতে নবনীতার নামের বানান শুরু হয় এন এ(Na) দিয়ে , যেটা সোডিয়ামের রাসায়নিক চিহ্ন । প্রবালটা একা উনুন নিয়ে পড়েছে , চাল ধুতে হবে , রান্না চাপাতে হবে একে একে । এবার ওঠা দরকার , হাতে হাতে কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার বুঝছে সবাই , কিন্তু এই অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা থেকে চোখ সরিয়ে কারওই আর উঠতে ইচ্ছে করছে না । স্তব্ধতা ভেঙে সৌরীশ হঠাৎ বলে উঠল --- “কী অদ্ভুত ব্যাপার না ,আমরা কিন্তু অনেকক্ষণ একসাথে চুপ করে বসে আছি । হল কী রে আমাদের !” হক কথা , ওরা নিজেরাও বহু চেষ্টাতে মনে করতে পারবে না , শেষ কবে একসাথে বসে স্তব্ধতার গান শুনেছে । আসলে , এটা এই জায়গাটার গুণ । এই বিরাট উন্মুক্ত প্রান্তরে ওরা সবাই আত্মস্থ হয়ে রয়েছে । মুখে কথা আসবে কী করে ? মনে মনে সবাই ভাবছিল , এতদিন এখানে আসিনি কেন । এই যে অনির্বচনীয় আনন্দের অনুভূতি , তা মনকে মাতিয়ে তোলে না , বরং শান্ত করে , একটা অভিনব কোমল পরশ বুলিয়ে দেয় । এই স্পর্শ সবার কাছেই অনাস্বাদিত । এই যে সামনে , চারপাশে , দিগন্তবিস্তৃত অফুরন্ত সৌন্দর্য , এই যে এঁকেবেঁকে, ছোট ছোট রঙবেরঙের নানা আকারের পাথরের উপর দিয়ে কুল কুল করে বয়ে যাওয়া নদী , এই যে তাকে প্রহরীর মত ঘিরে থাকা চা-গাছগুলো , আর সেই ছোট ছোট সবুজ চা পাতারই রঙের ক-ত বৈচিত্র্য , পাতার ওপর মুক্তোর মত ঝিকমিক করতে থাকা জলকণা , আশপাশের বড় গাছগুলোতে নাম না জানা কত কত পাখির কত রকমের সুরেলা ডাক , আর সেই ডাকের অপূর্ব মাদকতা , এ তো চট করে ফুরোবার নয় , থেমে যাওয়ার নয় । প্রকৃতি যেন আজ সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত করেছে তার মাতৃরূপ ।

             উনুন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে । অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাইকে উঠতেই হল । আলু-ফুলকপি কেটেকুটে আনাই হয়েছে , কলেজ পাড়ার বন্ধুটির বাড়িতে বসে মেয়েরা এসব করেছে কাল সন্ধেবেলায় । এতগুলো মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে বলে ঈপ্সিতা –নবনীতারাও আজ যেন একটু বেশি বড় বড় ভাব করছে ! রান্নাবান্নার ব্যাপারটা যত এগোবে , ছেলেরা জানে , এই ভাব তত বাড়বে ! কিন্তু আজ আর এসব নিয়ে মেয়েদের কেউ ঘাঁটাবে না । দীপঙ্কর , ঈপ্সিতাকে শুধু বলতে গিয়েছিল , বকফুল আর চাটনিটা শেষে করার কথা । ওরা ওকে ব্যসন ফেটিয়ে দেওয়ার কথা বলাতে আমতা আমতা করছে দেখে মজা পেয়ে বাঁ হাতটা তুলে মিঠুন বলল --- “চিন্তা করিস না , আমি ওটা করে দেব । এবার আয় , সবাই ব্রেকফাস্টটা সেরে নিই । প্রায় সাড়ে দশটা বাজে ।“

    

                                               (৪)   

            খাওয়াদাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় সওয়া তিনটে বাজল । ঘড়ির কাঁটা পাঁচটার ঘর পেরোলেই ঝুপ করে অন্ধকার নামবে , তাই ওরা সবাই মিলে এবার ঘুরতে বেরোল । কাছাকাছি একটা চায়ের কারখানা আছে , সেটা দেখে ওরা নদীর কোল ঘেঁষে হাঁটবে কিছু দূর অব্দি , এমনটাই ঠিক হয়েছে । এসব জায়গায় তো আর একা একা চট করে আসা হয়না , তাই যতটা পারা যায় সবাই ঘুরে দেখে নিতে চাইছে । স্থানীয় দু’জন লোক , ওরা যখন খাচ্ছিল এক পঙক্তিতে বসে , তখন দূরে বসে জুলুজুলু চোখে তাকিয়েছিল । ওদের ডেকে পেট পুরে খাইয়ে সঙ্গের জিনিসপত্র আর সাইকেল পাহারায় বসিয়ে আসা হয়েছে । এইসব আদিবাসীরা খুব বিশ্বাসী হয় , তাই জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই । হাঁটতে হাঁটতে সবাই রান্নার প্রশংসা করছে । করবেই , কারণ প্রত্যেকেই কব্জি ডুবিয়ে আঙুল চেটে খেয়েছে । মেয়েরা বাড়িতে কত রান্না করে , সবাই জানে ! কিন্তু আজকের পরীক্ষায় ওরা একেবারে ডিসটিঙ্কশন পেয়ে পাশ করেছে । সঠিক স্বাদ বজায় রেখে এতগুলো মানুষের জন্য রান্না করা কি চাট্টিখানি কথা ! আসলে মনটা আনন্দে থাকলে , তাজা থাকলে , সব কাজই ভালভাবে উতরে যায় । চায়ের কারখানায় কাণ্ড-কারখানা দেখে ওদের তাক লেগে গেল । এক জায়গায় ছোটখাটো একটা পাহাড়ের মত স্তূপ করে রাখা বাগান থেকে আনা চা পাতা , আর এক জায়গায় ওরা দেখল একটা কনভেয়ার বেল্টের উপর দিয়ে চা পাতা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটা বাক্স মতন যন্ত্রে । পাতাগুলো সেখান থেকে কুচিকুচি হয়ে বেরিয়ে আসছে । ওদের সবার গায়ে গরম জামা , সোয়েটার , চাদর । অথচ ওদের দেখে খারাপ লাগল , যারা কারখানায় কাজ করছে , তারা প্রত্যেকেই পাতলা-শতচ্ছিন্ন জামাকাপড় পরে রয়েছে । অথচ লোকগুলো এত পরিশ্রম আর কষ্টের মধ্যেও হাসতে ভোলেনি । কাজ করতে করতেই রসিকতা করছে পরস্পরের সাথে । সকালবেলা ঘুম ঘুম চোখে যে উষ্ণ তরলে সবাই সরু করে ঠোঁট ছোঁয়ায় , সেটা গৃহস্থের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার পথে যে কত মানুষের শ্রম লুকিয়ে থাকে !

            কারখানা থেকে বেরিয়ে ওরা নদীর ধারে বালির ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় একটা সরু বাঁকে , নদীর জল একটু কম দেখে , নদী পেরিয়ে গেল ওপারে । বাঁ হাতে চটিজোড়া নিয়ে পায়ের পাতা ডোবা , হাড় হিম করা ঠাণ্ডা জলের মধ্যে দিয়ে নদী পেরোতে গিয়ে ওদের সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল । এ পাশটায় লোকজনের যাতায়াত আরও কম , তাই পাখির সমাবেশ আরও বেশি । চা-বাগানের মাঝে বড় গাছগুলিতে শ’য়ে শ’য়ে পাখির কলরবে জায়গাটা ভরে আছে । এত সুরেলা , এত মধুর সিম্ফনি ওরা কেউ আগে শোনেনি । প্রবাল চা-গাছগুলোর মাথায় বসে থাকা ছোট ছোট নানা রঙের পাখির ছবি তুলতে তুলতে ভাবছিল , প্রকৃতিতে যে এত রঙ আছে , রঙের এত বৈচিত্র্য আছে , তা-ই তো জানা ছিলনা এতদিন । সেই লাইনটা মনে পড়ে যায় --- দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া , ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া , একটি ধানের… , থুড়ি চা পাতার ওপর , একটি শিশিরবিন্দু !   

           এর মধ্যে কখন যে দিনের আলো নিভে এসেছে কেউই খেয়াল করেনি । এখনই কালো পর্দার মত অন্ধকার নেমে আসবে আর চা-গাছগুলোকে ঘিরে এল ই ডি আলোর মত থোকায় থোকায় জোনাকি জ্বলে উঠবে । এই জায়গাটা তখন সেজে উঠবে অন্য এক রূপে । দু’একটা জোনাকি ইতিমধ্যেই এদিক-ওদিক থেকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে । তার সঙ্গেই খুব মৃদু হলেও শুরু হয়েছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক । এবার ওদের ফিরতে হবে । আবার সেই বাগানের ঢাল বেয়ে নেমে আসা , আবার সেই নদী পেরনো । এপারে এসে ওরা বালির ওপরে চটি হাতে খালি পায়েই হাঁটছিল । ভিজে পায়ে চটি পরে বালির ওপর দিয়ে হাঁটা যায়না । টুকটাক কথা বলতে বলতে ওরা বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেছে , চিন্তা করছে ওই লোক দু’টো এখনও ওদের জিনিসপত্রের কাছে বসে আছে কিনা তাই নিয়ে । এমন সময় সৌরীশ হঠাৎ পিছন ফিরে দৌড়ে গেল নদীর দিকে । ডান হাত দিয়ে জলের সামনে থেকে কী যেন একটা খামচে তুলে নিয়ে , দৌড়েই ফিরে এল আবার । সৌরীশ অল্প হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের সামনে এসে মুঠো খুলল । বন্ধুরা দেখল সৌরীশের হাতে এক তাল ভেজা মাটি । কেউ কোনও প্রশ্ন করার আগেই ও হাতের মুঠো মুখের খুব কাছে এনে, চোখ বন্ধ করে জোরে একবার শ্বাস নিল । তারপর বলে উঠল --- “এই গন্ধটাই তো হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম এতদিন ধরে ।“  সৌরীশের কথায় এক অদ্ভুত তৃপ্তির সুর ফুটে উঠল, যা ওর বন্ধুরা আগে কোনওদিন শোনেনি । অথচ সবাই নিমেষে অনুভব করল , সৌরীশের কথাটা কোথায় যেন লুকিয়ে ছিল সবার বুকের ভিতরে ।

                                          ----------------






রোমান্টিক গল্প


প্রেমের গল্প

ভালো গল্প


রোমান্টিক গল্প

প্রেমের গল্প

গল্প লেখা

ভালো গল্প

হাসির গল্প

জীবনের গল্প

সাইকেলের গল্প

পাখির গল্প



শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০

আলোর সেতু

আমার ছোটবেলা কেটেছে জলপাইগুড়ি শহরে । সেখানকার সওদাগর পট্টিতে দেওয়ালির দিন খুব সুন্দর করে, বিশেষ শৈলীতে দোকান সাজানো হত সন্ধেবেলায় । দু'টো করে কলাগাছ কাছাকাছি দাঁড় করিয়ে, তাদের মধ্যে কলার খোল দিয়ে একাধিক সেতু তৈরি করে , তার উপরে অনেকগুলো মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে, বসিয়ে দেওয়া হত । এখনও হয় শুনেছি । এইভাবে প্রত্যেকটা দোকানের সামনে, একাধিক কলাগাছ দিয়ে, আলোর তোরণ তৈরি করা হয় । গোটা এলাকা এইভাবে সেজে ওঠে । আঁধার ঘনালে কলাগাছের নরম সবুজ পাতার উপরে মাটির প্রদীপের সোনালি আলো পড়ে , এলাকার পরিবেশ মায়াবী হয়ে ওঠে । যাঁরাই দীপাবলির দিন সওদাগর পট্টির কোনও দোকানে আসেন , তাঁদের মিষ্টিমুখ করানো হয় , লাড্ডু বিতরণ করা হয় । সবমিলিয়ে সন্ধের আবহটা, দোকানের সামনের রঙ্গোলীর মতই রঙিন হয়ে ওঠে । 




দীপাবলি রচনা

দীপাবলী রচনা


দীপাবলী


দীপাবলীর

দীপাবলীতে


দীপাবলির শুভেচ্ছা ছবি








বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০

শীত

পাতলা চাদর , শীতের আদর 

নরম ঘুম মেখে 

সকাল এল পা টিপে 

তার কপালে হাত রেখে । 




বাংলা কবিতার ছন্দ

বাংলা কবিতা রোমান্টিক

বাংলা কবিতা

বাংলা কবিতা ক্যাপশন

বাংলা কবিতার লাইন



বাংলা কবিতা প্রেমের



বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০

চুক্তি

বিয়ে মানে কী ? ভাল থাকার সামাজিক চুক্তি , ভাল রাখারও । শুধু প্রেম আর চারটে দেওয়াল দিয়ে কী সংসার হয় ? হয়না । আবার সব রকম স্বাচ্ছন্দ্য থাকা সত্ত্বেও প্রেমহীন সম্পর্ক কম নেই । সার্কাস হোক বা জীবন , কিংবা জীবন নামক সার্কাসে সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, সেটা হল ভারসাম্য । নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দু'টো ঘটনা বলি । এক পাড়াতুতো দিদি , এক পাড়াতুতো দাদার প্রেমে পড়ল । তখন আমি প্রাইমারিতে পড়ি । একদিন সেই দিদি রঁদিভুতে বেরিয়েছে , আমি শেষ বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে । সেই দিদির বাবা হঠাৎ আমাকে বললেন , দিদিকে ডেকে নিয়ে আসতে । কোথায় ওরা প্রেম করছিল জানতাম , ডেকে নিয়ে এলাম । দিদি তাঁর বাবার সামনে এসে দাঁড়াতেই, এক বিরাশি সিক্কার চড় আছড়ে পড়ল তাঁর গালে , আমার সামনেই , রাস্তার ওপরে । শেষে বাবা এসে থামানোতে, দিদির বাবার হুঁশ ফিরল । বেকার ছেলের সাথে প্রেম ! এত সাহস ! এত পিরিতি ! আর কেন কে জানে , বোধহয় পৃথিবীর সব জায়গাতেই, পরিচিত ছেলে কিংবা মেয়েদের প্রেম করতে দেখলে কিছু পরিচিত লোক দায়িত্বসহকারে সেই খবর অভিভাবকদের জানানোর জন্য , এবং আপডেট দিতে থাকার জন্য , মনে মনে হাঁকপাঁক করতে থাকে । সেই দিদির ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল নিশ্চয়ই ! নইলে চট করে অত বড় মেয়ের গায়ে হাত দেওয়ার মত মানুষ ওই ভদ্রলোক ছিলেন না । কিন্তু যা হয় , তাই হল । দিদিটি ধনুর্ভঙ্গ পণ করে বসল, সেই দাদাকেই বিয়ে করবে । করল । দাদার তখন ষ্টেশনারী গুডসের একটা ছোট্ট দোকান । সিকি শতাব্দী পরে সেই দোকান পাঁচ গুণ বড় হয়েছে । ওঁদের ছেলে এখন ভোটাধিকারপ্রাপ্ত নাগরিক । এককথায়, অসম পারিবারিক, আর্থিক, সামাজিক অবস্থানে যে সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল , সেটা টিকে গেছে । যতদূর জানি , ওঁরা সত্যিই খুব ভাল আছে । আমিও তাইই চাই ।

আরেক দাদার গল্প বলি । ব্যাঙ্কে কাজ করতেন আর পর্বতারোহণ করতেন । আর অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার হিসেবে পত্র-পত্রিকায় ছবি দিতেন । আনন্দবাজার সংস্থার বিভিন্ন কাগজে , পত্রিকায় ওঁর ছবি বেরিয়েছে । আমি ছবি তোলার প্রাথমিক বিষয়গুলো জেনেছি ওঁর কাছ থেকে , ছবি ডেভেলপ করার যন্ত্র দেখেছি আবার স্লিপিং ব্যাগ - আইস এক্সও দেখেছি ওঁর কাছে । যাইহোক , এমন মানুষ যে ঝুঁকি নিতে ভালবাসবেন , সেটা বলাই বাহুল্য । সেই দাদা একটা দুঃসাহসিক কাজ করলেন । বিয়ের পর একদিন ব্যাঙ্কের নিশ্চিন্তের চাকরিটা দিলেন ছেড়ে । গেল গেল রব উঠল । অকারণে নয় , আপাতদৃষ্টিতে এমন সিদ্ধান্ত যে আত্মঘাতী হওয়ার নামান্তর । দাদা কিন্তু হাল ছাড়লেন না । ছবি তোলার নেশাটাকেই পেশা করলেন । তারপর জীবন গিয়াছে চলে কুড়ি বছরের পার । সেই দাদা সংসারটা ভালই চালিয়ে নিচ্ছেন এখনও , তিন কুড়ি বয়সেও । ওঁর নিজের কথায় --- "এই চলার পথে আমি জিরো দেখেছি , কিন্তু ও তো(বৌদি) আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি ।" কথাটা দারুণ লেগেছিল, মনে... ... ... ... রেখে দিয়েছি ! আবার স্ত্রীর আর্থিক চাহিদা মেটাতে জেরবার হয়ে , এবং লাগাতার গঞ্জনায় আমার দুই বন্ধু , খুব কাছের বন্ধু , আত্মঘাতী হয়েছে । এঁদের মধ্যে একজন হাইস্কুল টিচার ছিল , পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কেলে মাইনে পেত । অবসরে লিটল ম্যাগাজিন বের করত , আমিও লিখেছি সেখানে । দু'জনেই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ফেসবুকে এবং পরিচিত মহলে কিছু কথা বলেছিল , তাই এতসব জেনেছি । নইলে পারিবারিক কথা সাগ্রহে সংগ্রহ করবার রুচি আমার নেই । তাই সব দেখে শুনে আমার মনে হয় , বিয়ে নামক সারা জীবনের চুক্তিটা কার ক্ষেত্রে, কখন , কীভাবে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে , সেটা আগাম বলা খুউব কঠিন , কার্যত অসম্ভব । লাগলে তুক , না লাগলে তাক ! কিছুটা আন্দাজ করা যায় বড়জোর !





ফিচার প্রতিবেদন


ফিচার সংবাদ

ফিচার নিউজ


ফিচার পাতা

ফিচার লেখা


news feature article


news feature story


news feature example





সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

অশৌচ

 

বছর দেড়েক আগেকার ঘটনা । প্রতিদিনের মত বাবা সন্ধেবেলা হাঁটতে বেরিয়েছেন । সাধারণত ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে আসেন । কিন্তু সেদিন আড়াই ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও আসছেন না । এবং এই সময়টায় মোবাইল ব্যবহারে বাবার ভীষণ অনীহা । এটা বাবার একা থাকার সময় । এদিকে বাড়িতে উৎকণ্ঠায় আমাদের আধমরা অবস্থা । তৃতীয়বার হারা উদ্দেশ্যে খুঁজতে বেরোবার ঠিক আগে বাবা ফিরে এলেন । গেট দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতে মায়ের অনিবার্য প্রশ্নবাণ ধেয়ে এলো --- “কোথায় গিয়েছিলে ? এত দেরী হল কেন ?” বাবা শান্তভাবে বাইরের দরজাটার ছিটকিনি তুলে মায়ের মুখোমুখি হয়ে , স্মিত হেসে উত্তর দিলেন --- “শ্মশানে গিয়েছিলাম । এখানকার ব্যবস্থাপনা কেমন , দেখে এলাম । কয়েকদিন পরেই তো যেতে হবে । তখন তো আর দেখতে পাব না কীভাবে কী হয় !” উত্তর শুনে মা – ভাই কাঁদো কাঁদো । কিন্তু আমি হেসে ফেলেছিলাম মৃত্যু সম্পর্কে বাবার এই অদ্ভুত উদাসীনতা দেখে । মুখে যে যাই বলুক , মৃত্যু সম্পর্কে সবার মনেই অল্পবিস্তর ভয় থাকে । মরতে কে চায় হঠকারী ছাড়া ? আমি তো চাই না এখনও পর্যন্ত । “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে / মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই । … … … তা যদি না পারি তবে , বাঁচি যত কাল / তোমাদেরই মাঝখানে লভি যেন ঠাঁই । / তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল / নব নব সঙ্গীতের কুসুম ফুটাই । / হাসিমুখে নিয়ো ফুল , তারপরে হায় / ফেলে দিয়ো ফুল , যদি সে ফুল শুকায় ।“ (‘প্রাণ’ , ‘কড়ি ও কোমল’ , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) । বাবা নিজে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বলেই বারবার বলতেন – “ভালো মন্দ যাহাই আসুক , সত্যেরে লও সহজে ।“ ছোট থেকে বাবার মুখে কথাটা শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল । সেই কারণেই বোধহয় সেদিন হেসে ফেলেছিলাম । বাবা বৈদ্যুতিক চুল্লি সেদিনের আগে দেখেননি ।

      কিন্তু একান্ত পারিবারিক গল্প হঠাৎ বলছি কেন ? সেটা এবার বলবো । ২৪ অক্টোবর বাবা চিরদিনের মত আগুনের গুহায় ঢুকে গেলেন । ক’দিন আমরা কৃচ্ছ্রসাধন করলাম । কয়েকদিন যানবাহনে ঘোরাফেরার সময় অভিনব অভিজ্ঞতা হল । প্রথম দিন আমি একা অটোর পিছনের সিটে বসেছি , আরও দু’জনের জায়গা খালি । লক্ষ্য করছিলাম থামাবার জন্য হাত দেখিয়েও যেই আমার দিকে চোখ যাচ্ছে , সবাই কবীর সুমনের ভাষায় --- “তাক করে উদাসীন , আকাশকুসুম টিক টিক …”  করে ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলেন । অটোওয়ালার ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন না । এরকম কয়েকবার হওয়ার পর , কিছুটা অপরাধ বোধ থেকেই ওনাকে বললাম --- “আমি কি সামনে গিয়ে বসবো ? আমার মনে হচ্ছে আপনি অনেকগুলো ভাড়া মিস করছেন ।“ ভদ্রলোক মুখে হাসি টেনে বললেন – “আপনি পিছনেই বসুন ।“ এরপর পাঁচ মিনিটও হয়নি , একজন অভিজাত চেহারা ও পোশাকের মধ্যবয়স্ক মহিলা অটো থামালেন , তারপর উঠতে গিয়ে আমাকে দেখে পরিষ্কার করে বললেন --- “তোমার অটোতে অশৌচ আছে । যাব না ।“ স্বাভাবিক ভাবে আমার খুব কান্না পাওয়া উচিত ছিল , কিন্তু পেল না । বরং বেদম হাসি পেলো । শেষ পর্যন্ত সিটও খালি থাকলো না অবশ্য ।

        অশৌচ মানে অপরিষ্কার , অপরিচ্ছন্ন , অপবিত্র । নিজের পবিত্রতা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই । তবে চুল – দাঁড়ি – নখ ছাড়া তো মোটামুটি পরিচ্ছন্নই ছিলাম ! এই কয়েকদিনের জন্য সমাজ যে পোশাক ঠিক করে দেয় , সেটাই পরেছিলাম । তা সত্ত্বেও আমি পরিত্যজ্য হলাম কেন ? যে হিন্দু সমাজ এই সময়ে কিছু নিয়ম পালনের কথা বলে , সেই সমাজই আবার আংশিক ভাবে ব্যক্তিবিশেষ কে বর্জনও করবে --- এটা স্বাভাবিক ? এ তো সমাজ কর্তাদের চূড়ান্ত স্ববিরোধিতা । যখন মানুষের মন খুব দুর্বল থাকে , তখন নিয়মের নিগড়ে তাঁকে মানসিকভাবে বারবার আঘাত করার বিভিন্ন রীতি বর্জনীয় বলে মনে হয়েছে প্রতি পদে । অবশ্য এই কয়েকদিনে বিভিন্ন জায়গায় আশাতীত ভালো ব্যবহারও যে পেয়েছি , সেই কথাটা না বললে অন্যায় হবে ।

        কয়েকদিনের জন্য হলেও ‘দ্য আনটাচেবল’ হয়ে বাঁচতে কেমন লাগে , সেটা কিছুটা বুঝলাম । আজ বাদে কাল ন্যাড়া মাথায় চুল গজিয়ে যাবে , আমি মিশে যাব জনারণ্যে । কিন্তু অস্পৃশ্য হওয়ার অভিজ্ঞতা আমৃত্যু মনে থাকবে ।

          সমস্ত পারলৌকিক কাজে ‘প্রেত’ শব্দটা বারবার ঘুরেফিরে আসে কেন ? আমাদের বাবাকে ‘প্রেত’ ভাবতে যাব কেন ? এ তো চরম মানসিক অত্যাচার । মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা । ক্লাস ফাইভে এক বছর হিন্দি ছিল , আর সেভেন – এইট দু’বছর সংস্কৃত । যে সব মন্ত্রগুলো বললাম , তার বেশির ভাগেরই মানে পুরোপুরি বুঝলাম না , সঠিক উচ্চারণও করলাম না । শুধু অনুকরণ করে ঠোঁট নাড়িয়ে গেলাম । কেন ? কেউ কেউ বিছানায় বসার উপক্রম করতেই চেয়ার এগিয়ে দিলেন ! কেন ? সবচেয়ে বড় কথা , অশৌচান্তে সমাজস্বীকৃত আয়োজনের ব্যবস্থা করতে বেশ পরিশ্রম করতে হয় । প্রায় অনাহারে থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত পরিবারের পক্ষে সে কাজ সম্পূর্ণ সুস্থভাবে করা কী আদৌ সম্ভব ? এখন এত কথা বলছি , কারণ অপ্রিয় সত্যি কথাটা হল --- “প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো টাকার ব্যাপার / প্রতিবাদ করতে গেলেও খাবারদাবার ।“

         আজকাল বিয়ের বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পত্রের নীচে অনেকে পরিষ্কার লিখে দেন --- “দয়া করে সঙ্গে কোনও উপহার আনবেন না ।“ ব্যক্তিগতভাবে আমার এটা ভীষণ অপমানজনক মনে হয় নিমন্ত্রিতের পক্ষে । নেমন্তন্ন যখন করলেনই , তখন তিনি আসবেন কি না , খাবেন কি না , উপহার আনবেন কি না ---- সেটা তাঁর উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভালো । নইলে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় । আমার তো যে কোনও উপহার পেতে দারুণ লাগে , দিতেও । কিন্তু তাই বলে শ্রাদ্ধবাসরে উপহার ! আগে অন্যদের ক্ষেত্রে দেখেছি , এবার আমাদের বেলায় ঘটলো । অনেকেরই শ্রাদ্ধের খাবারে অরুচি থাকে । বেশিরভাগ নিমন্ত্রিত রজনীগন্ধার মালা , স্টিক , বড়জোর সঙ্গে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যান । জলপাইগুড়িতে বড় হয়েছি , বরাবর এমনটাই দেখেছি , করেছি । দক্ষিণবঙ্গে আজকাল দেখছি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও অনেকে উপহার নিয়ে আসেন । এসেছেন । এই আবহে কি উপহার মানায় ? সর্বোপরি ব্যাপারটা কী লেনদেনের পর্যায়ে চলে যায় না ? ফোন করে নেমন্তন্ন ও নগদ উপহার – দু’টোই সমানভাবে বর্জনীয় বলে মনে করি । না হলে এই দুইয়ের চাপে পড়ে সামাজিকতার পরিসরটা মাঝখান থেকে ভ্যানিশ হয়ে যায় । হবিষ্যান্ন কিনে আনার সময় না – ই থাকতে পারে , তাতে অসুবিধে নেই । কিন্তু এ বাবদ মূল্য ধরে দেওয়াটা বড্ড গায়ে লাগে । আর এমন একটা উদ্দেশ্যে এটা করা হয় , যে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রিফিউজও করা যায় না কড়া ভাবে । ওই মুহূর্তে সেটা করলে অন্যেকে অপমান করা হয় , স্বর্গতকেও । রাজদ্বারে শ্মশানে চ য তিষ্ঠত স বান্ধব । কেউ কাউকে ধন্য করছে না , দয়া করছে না , করুণা করছে না , কৃতার্থ করছে না বা উদ্ধারও করছে না --- এই কথাটা মনে রাখা দরকার ।  

         অনেকে হয়ত বলবেন , তা এতই যখন হাসি পায় , তখন এত সব সামাজিক রীতি মানলেন কেন ? সবকিছু হেসে উড়িয়ে দিলেই তো পারতেন । তাঁরা ঠিকই বলবেন । আসলে এমন একটা ঘটনার অভিঘাতে কয়েকদিন তর্ক করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম । কয়েকটা দিন কেটেছে যন্ত্রচালিতের মতন । উঠতে বললে উঠেছি , বসতে বললে বসেছি । এখন ক্রমেই পিতৃবিয়োগের শোকও সহনীয় হয়ে উঠছে । একটা সম্বোধন জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে শুধু --- বাবা ।

                      -------------------------


https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_98.html



'চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম' ওয়েবজিনে প্রকাশিত




অশৌচ পালনের নিয়ম


অশৌচ কত প্রকার


অশৌচ শব্দের অর্থ


তরোয়ালে ফিট

 

তরোয়ালে ফিট


“আমি চাই হিন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে , মানুষ শুধু , আমি চাই বি জে পি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু । আমি চাই কাশ্মীরে আর শুনবে না কেউ গুলির শব্দ / আমি চাই মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ । যদি বলো চাইছি নেহাৎ চাইছি নেহাৎ স্বর্গরাজ্য / আমি চাই একদিন হবে, একদিন হবে, এটাই গ্রাহ্য । “  ---- কবীর সুমন ।

আমরা যখন নব্বই – এর দশকে স্কুলে পড়ছি , তখনিই সুমনের মত একটা ইচ্ছে মনের ভেতর গেঁথে যাচ্ছে ---- “মরবো দেখে বিশ্ব জুড়ে যৌথ খামার ।“ ওই সময়ে মনটা – মাথাটা কাদার তালের মত থাকে তো , ভালো – মন্দ যাই –ই দেখুক – শুনুক , মনে স্থায়ী দাগ কেটে যায় । আমাদেরও গেছে । ১৯৯১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ছবি , শেষ ছবি , ফিনিশিং টাচ ---- ‘আগন্তুক’ । সেই ছবিতে সত্যজিতের মুখপাত্র মনমোহন মিত্রের সাথে গৃহকর্তার ব্যারিস্টার  বন্ধু নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন , আসলে তাঁকে বাজিয়ে দেখতে আড্ডার ছলে জেরা করছেন । জিজ্ঞেস করছেন --- “আপনি ধর্ম মানেন না ?” মনমোহনের মুখ দিয়ে সত্যজিৎ উত্তর দিচ্ছেন --- “যে জিনিস মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে , আমি তাকে মানিনা । রিলিজিয়ন এটা করেই । সেই একই কারণে আমি জাতও মানিনা । “ গোটা দেশ জুড়ে গো – রক্ষকদের হাতে নিয়মিত মানুষ জবাই হতে দেখে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে , কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক মনে হয় । দশ বছর ধরে নীচু জাতের মানুষের দেহ সেতুর ওপর থেকে দড়ি দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় নদী তীরের শ্মশান ঘাটে , কারণ শ্মশানে যাওয়ার রাস্তাটি উঁচু জাতের এলাকায় পড়ে --- এই খবর দেখেও মনে হয়, এ তো আমারও মনের কথা । নব্বই দশকের শেষ লগ্নে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেলেন ‘কল্যাণমূলক অর্থনীতি’ নিয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য । পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে বোলপুরে নিজেদের বাড়ির নামে একটা ট্রাস্ট তৈরি করলেন --- ‘প্রতীচী ট্রাস্ট’ । যে সংস্থা এদেশের বুনিয়াদি শিক্ষাক্ষেত্রের হাল – হকিকত সম্বন্ধে নিবিড় গবেষণা করে চলেছে দু’ দশক ধরে । আলফ্রেড নোবেলের তবু তো কিছুটা পাপ ছিল – ডিনামাইট আবিষ্কার । এই মানুষটির যে তাও নেই , একেবারে নিষ্কলঙ্ক । তাই এই মানুষটিরও মুক্ত চিন্তার প্রভাব থেকে নিজেদের সযত্নে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয় । রাজ্যে রেকর্ড সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু , যার বেশির ভাগটাই আমাদের ছোটবেলা জুড়ে । তাঁকে সাংবাদিকেরা বি জে পি সম্পর্কে যে কোনও প্রশ্ন করলে , তিনি উত্তর শুরু করতেন দু’টি শব্দ দিয়ে – ‘অসভ্য , বর্বর’ । তার কারণও ছিল । নব্বই দশকের শুরুর দিকে(৬ ডিসেম্বর ১৯৯২) বাবরি মসজিদ ধবংসের মত ঘটনা ঘটে গেছে , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পীড়িতকে আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই রাজ্য (গুজরাতের গোধরা দাঙ্গা, ২০০২, কুতুবুদ্দিন আনসারি ) , রাজ্যের রাজনীতি । আর যা – ই করুক বামেরা কখনও রাজনীতি করতে গিয়ে ধর্মের তাস খেলেনি , খেলতেও দেয়নি । আত্মশ্লাঘার বিষয় তো বটেই । শিক্ষণীয়ও । তাই আমরা ছোট থেকেই ধর্মের নামে রাজনীতিকে ঘেন্না করতে শিখেছি , কারণ আমাদের কাছে কোনও বিকল্প ছিলনা । ঠিক যেমন এখন ছোটরা রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে , করতে বাধ্য হয় , কারণ তাদের বা তাঁদের অভিভাবকদের কাছে কোনও যোগ্যতর রাজনৈতিক শক্তি নেই । কিন্তু আমরা , যে রাজনীতি হিন্দু ও মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে একটা অখণ্ড রাজ্যকে জম্মু – কাশ্মীর – লাদাখ ,  তিন টুকরো করে দেয় , তার ওপর ভরসা রাখি কী করে ?

    কিন্তু হঠাৎ এত কথা আসছে কেন ? কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির ‘ফিট ইন্ডিয়া’ অভিযান মঞ্চে বলেছেন –-- “ষাট – সত্তর – আশির দশকে যারা স্কুলে পড়তেন , তাঁদের পড়ানো হত ‘ত’ – এ তরোয়াল । কিন্তু দুর্ভাগ্য , কিছু সীমিত ভাবনার মানুষ দেশের ঐতিহ্যকে বেলাইন করেছেন । কিছু বুদ্ধিমান মানুষের মনে হল , ‘ত’ – এ তরোয়াল শেখানো হলে শিশুদের মনে হিংসার প্রবৃত্তি জন্ম নেবে । তখন থেকে ‘ত’ – এ তরমুজ পড়ানো শুরু হল । এর ফলে শরীর চর্চার ক্ষতি হয়েছে ।“ বি জে পি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা , গত কয়েক দশকে কংগ্রেস জমানায় বামপন্থার প্রভাবে ভারতের ‘চিরাচরিত ঐতিহ্য’ ধীরে ধীরে মুছে গিয়েছে । ইতিহাসকেও বিকৃত করা হয়েছে । তা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে ।

 

   কী করে বিনা বাক্যব্যয়ে এসব কথা মেনে নিই ! লিও  টলস্টয়- এর ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ পড়িনি ঠিকই , কিন্তু প্রাথমিক স্তরে কিছু প্রবাদ বাক্য তো মুখস্থ করেছিলাম , যেমন ---‘দ্য পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোরড’ । তরবারির চাইতে কলমের জোর বেশি । এই শিক্ষায় শরীর চর্চার কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি । নিয়মিত মাঠে যেতাম , খেলতাম । সর্বোপরি নীচু ক্লাসে এবং মাধ্যমিকে আলাদা একটা বিষয়ই ছিল – ‘শারীর শিক্ষা’ । সে বিষয়েও রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হত । তবে হ্যাঁ , প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নেচে ‘দেশের সাহসিকতার ঐতিহ্য’ অথবা ‘ফিটনেসের পরীক্ষা’ দিতে হয়নি কখনও । সেই প্রশ্নই ছিলনা । এমন কোনও কীর্তিকলাপে লিপ্ত হলে স্কুল সোজা টি সি ধরিয়ে দিত হাতে ।

 

গত ৫ অগস্ট ২০১৯ সংসদে জাতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত পাশ হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়ার কথা বলছে মোদী সরকার । অনেকেরই মনে প্রশ্ন, এমন গায়ের জোরে লোকের উপকার করা যায় না কি ! করা হলেও তা কি আদৌ কার্যকরী হবে ?  নব্বই দশকে স্কুলে , উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আমাদের পাঠ্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ ভাবনা --- ‘লোকহিত’ । সেখানে শুরুতেই তিনি লিখছেন ---“ ‘এই লোকসাধারণের জন্য কিছু করা উচিত’ হঠাৎ এই ভাবনা আমাদের মাথায় চাপিয়াছে । এই কারণে , ভাবনার জন্যই ভাবনা হয় । আমরা পরের উপকার করিব মনে করিলেই উপকার করিতে পারি না । উপকার করিবার অধিকার থাকা চাই । ছোটোর উপকার করিতে হইলে কেবল বড়ো হইলে চলিবে না --- ছোটো হইতে হইবে, ছোটোর সমান হইতে হইবে । মানুষ কোনো দিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না , কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে ।“ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক – সামাজিক পরিস্থিতির বিচারে কথাগুলো ভীষণ প্রাসঙ্গিক , এবং শিক্ষণীয় মনে হয় না ? দেশেরই একটা অংশকে গায়ের জোরে পরস্পরের থেকে র‍্যাডক্লিফের মত আলাদা করে দিয়ে , অ- সমান করে দিয়ে, তাঁদের ভালো করার কথা বলা হচ্ছে ! লেখক আরও বলছেন --- “হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে , সেটি প্রীতি । মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় --- তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না করা ।“ প্রীতি না করার ফল , বিতর্কিত বিল পাশের ২৩ দিন পর , জম্মু- কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে দেওয়া রিপোর্টে পরিষ্কার ---স্বাভাবিক, শান্ত কাশ্মীরের প্রশাসনিক পরিসংখ্যান । ৫৩১ টি পাথর ছোড়ার ঘটনা , ৫০ টি রাস্তা রোকো , আহত ৯১ , এদের মধ্যে ৭১ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী ।

     কাশ্মীরের মানুষদের বিক্ষুব্ধ মনোভাবের যেটুকু খবর বাইরে আসছে , তার সাথে মিলিয়ে নেওয়া যায় এই লাইনটি --- “হিতৈষী যে সুদটি আদায় করে সেটি মানুষের আত্মসম্মান; সেটিও লইবে আবার কৃতজ্ঞতাও দাবি করিবে, সে যে শাইলকের বাড়া হইল ।“ “সেইজন্য, লোকহিত করায় লোকের বিপদ আছে ।“ হিন্দু প্রধান, মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে টুকরো হয়েছে জম্মু- কাশ্মীর । অনেকে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে , যুক্তি সাজিয়ে বলছেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারে সঠিক পদক্ষেপ । সাধারণ নাগরিকদের বাইরে, তাদের মধ্যে বিরোধী দলের কিছু কিছু নেতারাও আছেন । এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণ – “এক মানুষের সঙ্গে আর- এক মানুষের , এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর- এক সম্প্রদায়ের তো পার্থক্য থাকেই , কিন্তু সাধারণ সামাজিকতার কাজই এই --- সেই পার্থক্যটাকে রূঢ়ভাবে প্রত্যক্ষগোচর না করা ।“  “কুস্তির সময়ে কুস্তিগিরদের গায়ে পরস্পরের পা ঠেকে , তাহার হিসাব কেহ জমাইয়া রাখে না ; কিন্তু সামাজিকতার স্থলে কথায় কথায় কাহারো গায়ে পা ঠেকাইতে থাকিলে তাহা ভোলা শক্ত হয় । সমাজের অপমানটা গায়ে লাগে না , হৃদয়ে লাগে ।“ শুধু কাশ্মীর নয় , সারা দেশেই, বস্তুত সারা বিশ্বেই ক্রমশ বেড়ে চলা সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছবির সঙ্গে কথাগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় । ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের বিপক্ষে মোক্ষম যুক্তি হতে পারে শুধু এই একটি লাইন --- “আমাদের সমাজ লোকসাধারণকে যে শক্তিহীন করিয়া রাখিয়াছে এইখানে সে নিজের শক্তিকে অপহরণ করিতেছে । পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠে --- এইখানেই মানুষের পতন ।“ তাহলে এই পরিস্থিতির থেকে পরিত্রাণের পথ কী ? উত্তর --- “সেই শক্তি দিতে গেলেই তাহাদের হাতে এমন একটি উপায় দিতে হইবে যাহাতে ক্রমে তাহারা পরস্পর সম্মিলিত হইতে পারে – সেই উপায়টিই তাহাদের সকলকেই লিখিতে পড়িতে শেখানো ।“ একদিকে সন্ত্রাসবাদ, আরেক দিকে সন্ত্রাস দমনে নির্বিচারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন – এই সাঁড়াশি চাপের মাঝে পড়ে দশকের পর দশক ধরে যে অঞ্চলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রছাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়ে, যেমন এখন , সেখানে স্বাভাবিক পারস্পরিক মেলামেশা ও পড়াশোনা কী ভাবে সম্ভব, দেবা ন জানন্তি , কু তো মনুষ্যাঃ । যাদের স্কুল – কলেজে যাওয়ার বয়েস , তাঁদের ইটের জবাব ছররা গুলিতে দিলে যে সেই পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব সে কথা হলফ করে বলা যায় । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কি তরোয়াল চালনার চর্চায় ফিট থাকার নিদান দিয়ে হিংসার সংস্কৃতিকেই উস্কে দিলেন না ? তাহলে আর হিংসার আশ্রয় নেওয়া উপত্যকার জেন ওয়াই – কে দোষারোপ করা কেন ?  পাশ করার তাগিদেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলো আমাদের, মগজে একরকম গেঁথে নিতে হয়েছিল । হয়ত বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন খুব সচেতনভাবেই চেয়েছিলেন আমরা গোঁড়ামিমুক্ত ভাবনাচিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠি । বামপন্থী মতাদর্শ আর রবি ঠাকুরের সমাজ ভাবনা কোথাও যদি মিলে যায় , মিশে যায় তাহলেও বোধহয় দেশীয় ঐতিহ্য নষ্ট করা এবং ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে বাম সরকারকে দায়ী করা চলে না । পরিণত বয়সে এসে মনে হয় , ‘লোকহিত’ পড়ে অপকার কিছু হয়নি । বরং অতীতের শিক্ষা বর্তমান সময়কে বুঝতে সাহায্যই করছে ।

    উচ্চ মাধ্যমিকেই ইংরেজিতে পাঠ্য ছিল একটি নাটক – ‘প্রোগ্রেস’ । এস টি জি আরভিনের লেখা নাটকের নামটি আসলে বিদ্রূপাত্মক । নাট্যকার এই নাটকে সমানে প্রশ্ন করেন , ব্যঙ্গ করেন, সেই সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞানীদের , যারা মনে করেন যুদ্ধের জন্য , যুদ্ধের আতঙ্ক তৈরির জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করে তাঁরা বিজ্ঞানের বিরাট অগ্রগতি ঘটাচ্ছেন । নাটকে দু’টি চরিত্র --- মিসেস মেলডন এবং তাঁর ভাই প্রফেসর হেনরি কুরি । মিসেস মেলডনের একমাত্র ছেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছে । তাঁর স্বামীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । যুদ্ধ মেলডনের জীবনকে নিঃসঙ্গ ও দুর্বিষহ করে তুলেছে । তাঁর ভাই কুরি, সেই ধরনের বিজ্ঞানী যারা যুদ্ধের জিগিরকে প্রশ্রয় দেন এবং এই পরিস্থিতির ফায়দা লোটেন কাঞ্চন মূল্যে । মেলডন যতটা সংবেদনশীল , কুরি ঠিক ততটাই অমানবিক ।

    মিসেস মেলডন , প্রফেসর কুরির  ভয়ঙ্কর আবিষ্কারের কথা শুনে চরম আতঙ্কিত হন , বারে বারে প্রাণঘাতী বোমা আবিষ্কারের মূল সূত্রগুলি নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে অনুরোধ করেন । কিন্তু কুরি সে সব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেন না । মরিয়া হয়ে মেলডন চরম সিদ্ধান্ত নেন , একটি ছুরি আমূল গেঁথে দেন ভাইয়ের পিঠে । কুরি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েন । মারা যান । বিয়োগান্তক নাটকে যবনিকা পতন হয় ।

  এই নাটকে কুরির একটি স্মরণীয় সংলাপ --- “উইথ আ সিঙ্গল বম্ব , উই কুড ওয়াইপ আউট দ্য পপুলেশন অব আ সিটি অ্যাজ আ বিগ অ্যাজ ম্যানচেস্টার ।“ খবরের কাগজে প্রতিদিন দেশ এবং বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যুদ্ধোন্মাদনা দেখে এই সংলাপ মনে পড়ে না ? প্রসঙ্গত নাটকটি প্রকাশ্যে আসে ১৯১৯ সালে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছর । আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে । এখনও নাটকের মূল বার্তাটি কতখানি প্রাসঙ্গিক তা সংবাদ মাধ্যমে নজর রাখলেই বোঝা যায় । রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিরোধিতায় এখন এদেশে যারা এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন , তাঁদের ‘আরবান নকশাল’ তকমায় দাগিয়ে দেওয়া হয় ।

 

    এমন সব ধ্রুপদী সাহিত্য যখন পাঠ্য ছিল তখন আমরা গোকুলে বাড়ছিলাম । তাই যস্মিন দেশে যদাচার বলে আজ হঠাৎ অসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া আমদের পক্ষে সম্ভব নয় । নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে মিলিয়ে গেলেও নয় ।

 

                                ------------------------------------

(১৮ অক্টোবর , ২০১৯ 'উত্তরবঙ্গ সংবাদ'-এ উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে, সম্পাদিত রূপে প্রকাশিত ।)

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_0.html









প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ

বাংলা প্রবন্ধ

ব্যক্তিগত প্রবন্ধ


                                                                       ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ


আজাদি। কানহাইয়া কুমার

 

আজাদি

 

জরা জোর সে বোলো ---

জরা হাত বাজা কে -----

আরে ডরতে কিউ হো ---

জরা আগে আও ----

আরে লে কে রহেঙ্গে ---

হ্যায় ওয়াদা হমারা ----

 

এন আর সি , সি এ এ , এন পি আর বিরোধী একটি নাগরিক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি ২০২০, দেশপ্রেম দিবসে , ব্যারাকপুরের দেবশ্রী হল প্রাঙ্গণে বিকেল চারটের সময় । সভার সর্বকনিষ্ঠ বক্তা এবং মুখ্য আকর্ষণ কানহাইয়া কুমার মঞ্চে উঠলেন রাত আটটায় । স্বেচ্ছাসেবকদের কথাবার্তা থেকে জানা যাচ্ছিল , বি টি রোড ধরে আসার পথে , সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসে বারবার থেমে যাচ্ছে তাঁর গাড়ি । ওই প্রাঙ্গণে কত লোক ধরে ? আমার ধারণা নেই । সেই বড় মাঠটায় , মাঠের সামনে রাস্তায় , মাঠের আশেপাশে সবক’টা বাড়ির ছাদে – বারান্দায় , এমনকি মঞ্চের পিছনের রাস্তায় তখন তিল ধারণের জায়গা নেই । যে দিকে চোখ যায় , শুধু আবালবৃদ্ধবনিতার মাথা । সবচেয়ে চোখে পড়ার মত ছিল কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং সমবয়স্কদের উদ্দীপনা , ‘আজাদি’ স্লোগান । উঁচু পাঁচিলের উপর বসে , দাঁড়িয়ে প্রায় সমবয়স্ক একজন রাজনৈতিক কর্মীর বক্তব্য মন দিয়ে শুনছেন , অনেকের কাছে ‘হোয়াটস অ্যাপ প্রজন্ম’, – এ দৃশ্য দেখেও আনন্দ । ইতিহাসের সব ক’টা বড় বিপ্লব ছাত্রদের হাত ধরে এসেছে । সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল তিয়েন আন মেন স্কোয়ার বা ট্রাফালগার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে আছি । এঁরা রাজনীতি বিমুখ ? মনে হয় না ! মনে হয় ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ প্রজন্ম’ তাঁদের নেতা খুঁজে নিয়েছে । কানহাইয়ার ধারে কাছে ঘেঁষতে না পারলেও তাঁর এক সহকর্মীকে খুব কাছ থেকে দেখলাম , তাঁর কথাও শুনলাম , শুনলাম তাঁর নাম কাকতালীয় ভাবে ---- আজাদ ! ততক্ষণে রাজনৈতিক বক্তব্য শেষে ডুবকির সাথে কানহাইয়া ‘আজাদি’ আবৃত্তি শুরু করেছেন ; তিনি এক একটি পঙক্তি তাল কেটে কেটে বলছেন , আর তার পর জনতা সমস্বরে গর্জে উঠছে – আ – জা --- দি । তাঁদের সাথে গলা না মিলিয়ে পারলাম না ---

জো তুম না দোগে-----

হাম ছিন কে লেঙ্গে---

আরে তুম ভি বোলো-----

ওহ মেহকি মেহকি----

হাম লে কে রহেঙ্গে----

হ্যায় ওয়াদা হমারা---

আ --- জা --- দি ।

ফুল ফুটুক , না ফুটুক আজ বসন্ত । আজকের সন্ধেটা “মনে--- রেখে দেব ।“

   এ দিন সভামঞ্চের আশেপাশে চোখে পড়ার মত ছিল পুলিশি তৎপরতা । ম্যানপ্যাক হাতে উচ্চপদস্থ আধিকারিক আর মহিলা পুলিশ কর্মীতে চারিদিক ছয়লাপ । কানহাইয়ার বক্তৃতার সময় , মঞ্চের পাশের গলিতে আমাদের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক । তাঁর উর্দিতে, বুকের কাছে ছোট্ট ক্যামেরা আটকানো , মুখ মঞ্চের দিকে ।

       ঘটনাচক্রে কানহাইয়া এদিন ঢুকেছিলেন সারেন্ডার নট বন্দ্যোপাধ্যায় রোড দিয়ে , বেরিয়ে গেলেন যে রাস্তা দিয়ে তার নাম --- শহীদ মঙ্গল পাণ্ডে সরণি ! বুঝো সাধু যে জানো সন্ধান !

        কানহাইয়া ছাড়াও এদিন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় , তড়িৎবরণ তোপদার , মহম্মদ সেলিম , দীপঙ্কর ভট্টাচার্য , অভিনেতা বাদশা মৈত্র , সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী , চন্দন সেন প্রমুখ । এদিন একটা ব্যাপার খুব দৃষ্টিকটু লাগল । স্লামডগ মিলিওনেয়ার ছবিতে অনিল কপূরের দাঁতে দাঁত চেপে  একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংলাপ ছিল --- “দিস ইজ মাই শো , মাই শো ।“ নমস্য বক্তাদের অনেকের কথার মধ্যেই মূল আলোচ্য বিষয় থেকে সরে গিয়ে , এই ভাবটিই প্রকট হয়ে উঠল । ওঁরা ভুলে গেলেন মঞ্চ দখলের সময় এটা নয় ।  

         নির্ধারিত সময়ের সাড়ে চার ঘণ্টা পরে , রাত সাড়ে আটটায় , ‘বাচ্চা ছেলে’টার গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই সভার সমাপ্তি ঘোষিত হল । মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !

 

                            --------------------

('সুখবর' কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত ।)

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_98.html


picture courtesy: getty images.



কানহাইয়া কুমার

Kanhaiya Kumar

Indian Politician

https://g.co/kgs/fmfT2y

কানহাইয়া কুমার কা ভাষণ


kanhaiya kumar in west bengal


kanhaiya kumar news







কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...