সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

তরোয়ালে ফিট

 

তরোয়ালে ফিট


“আমি চাই হিন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে , মানুষ শুধু , আমি চাই বি জে পি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু । আমি চাই কাশ্মীরে আর শুনবে না কেউ গুলির শব্দ / আমি চাই মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ । যদি বলো চাইছি নেহাৎ চাইছি নেহাৎ স্বর্গরাজ্য / আমি চাই একদিন হবে, একদিন হবে, এটাই গ্রাহ্য । “  ---- কবীর সুমন ।

আমরা যখন নব্বই – এর দশকে স্কুলে পড়ছি , তখনিই সুমনের মত একটা ইচ্ছে মনের ভেতর গেঁথে যাচ্ছে ---- “মরবো দেখে বিশ্ব জুড়ে যৌথ খামার ।“ ওই সময়ে মনটা – মাথাটা কাদার তালের মত থাকে তো , ভালো – মন্দ যাই –ই দেখুক – শুনুক , মনে স্থায়ী দাগ কেটে যায় । আমাদেরও গেছে । ১৯৯১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ছবি , শেষ ছবি , ফিনিশিং টাচ ---- ‘আগন্তুক’ । সেই ছবিতে সত্যজিতের মুখপাত্র মনমোহন মিত্রের সাথে গৃহকর্তার ব্যারিস্টার  বন্ধু নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন , আসলে তাঁকে বাজিয়ে দেখতে আড্ডার ছলে জেরা করছেন । জিজ্ঞেস করছেন --- “আপনি ধর্ম মানেন না ?” মনমোহনের মুখ দিয়ে সত্যজিৎ উত্তর দিচ্ছেন --- “যে জিনিস মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে , আমি তাকে মানিনা । রিলিজিয়ন এটা করেই । সেই একই কারণে আমি জাতও মানিনা । “ গোটা দেশ জুড়ে গো – রক্ষকদের হাতে নিয়মিত মানুষ জবাই হতে দেখে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে , কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক মনে হয় । দশ বছর ধরে নীচু জাতের মানুষের দেহ সেতুর ওপর থেকে দড়ি দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় নদী তীরের শ্মশান ঘাটে , কারণ শ্মশানে যাওয়ার রাস্তাটি উঁচু জাতের এলাকায় পড়ে --- এই খবর দেখেও মনে হয়, এ তো আমারও মনের কথা । নব্বই দশকের শেষ লগ্নে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেলেন ‘কল্যাণমূলক অর্থনীতি’ নিয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য । পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে বোলপুরে নিজেদের বাড়ির নামে একটা ট্রাস্ট তৈরি করলেন --- ‘প্রতীচী ট্রাস্ট’ । যে সংস্থা এদেশের বুনিয়াদি শিক্ষাক্ষেত্রের হাল – হকিকত সম্বন্ধে নিবিড় গবেষণা করে চলেছে দু’ দশক ধরে । আলফ্রেড নোবেলের তবু তো কিছুটা পাপ ছিল – ডিনামাইট আবিষ্কার । এই মানুষটির যে তাও নেই , একেবারে নিষ্কলঙ্ক । তাই এই মানুষটিরও মুক্ত চিন্তার প্রভাব থেকে নিজেদের সযত্নে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয় । রাজ্যে রেকর্ড সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু , যার বেশির ভাগটাই আমাদের ছোটবেলা জুড়ে । তাঁকে সাংবাদিকেরা বি জে পি সম্পর্কে যে কোনও প্রশ্ন করলে , তিনি উত্তর শুরু করতেন দু’টি শব্দ দিয়ে – ‘অসভ্য , বর্বর’ । তার কারণও ছিল । নব্বই দশকের শুরুর দিকে(৬ ডিসেম্বর ১৯৯২) বাবরি মসজিদ ধবংসের মত ঘটনা ঘটে গেছে , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পীড়িতকে আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই রাজ্য (গুজরাতের গোধরা দাঙ্গা, ২০০২, কুতুবুদ্দিন আনসারি ) , রাজ্যের রাজনীতি । আর যা – ই করুক বামেরা কখনও রাজনীতি করতে গিয়ে ধর্মের তাস খেলেনি , খেলতেও দেয়নি । আত্মশ্লাঘার বিষয় তো বটেই । শিক্ষণীয়ও । তাই আমরা ছোট থেকেই ধর্মের নামে রাজনীতিকে ঘেন্না করতে শিখেছি , কারণ আমাদের কাছে কোনও বিকল্প ছিলনা । ঠিক যেমন এখন ছোটরা রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে , করতে বাধ্য হয় , কারণ তাদের বা তাঁদের অভিভাবকদের কাছে কোনও যোগ্যতর রাজনৈতিক শক্তি নেই । কিন্তু আমরা , যে রাজনীতি হিন্দু ও মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে একটা অখণ্ড রাজ্যকে জম্মু – কাশ্মীর – লাদাখ ,  তিন টুকরো করে দেয় , তার ওপর ভরসা রাখি কী করে ?

    কিন্তু হঠাৎ এত কথা আসছে কেন ? কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির ‘ফিট ইন্ডিয়া’ অভিযান মঞ্চে বলেছেন –-- “ষাট – সত্তর – আশির দশকে যারা স্কুলে পড়তেন , তাঁদের পড়ানো হত ‘ত’ – এ তরোয়াল । কিন্তু দুর্ভাগ্য , কিছু সীমিত ভাবনার মানুষ দেশের ঐতিহ্যকে বেলাইন করেছেন । কিছু বুদ্ধিমান মানুষের মনে হল , ‘ত’ – এ তরোয়াল শেখানো হলে শিশুদের মনে হিংসার প্রবৃত্তি জন্ম নেবে । তখন থেকে ‘ত’ – এ তরমুজ পড়ানো শুরু হল । এর ফলে শরীর চর্চার ক্ষতি হয়েছে ।“ বি জে পি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা , গত কয়েক দশকে কংগ্রেস জমানায় বামপন্থার প্রভাবে ভারতের ‘চিরাচরিত ঐতিহ্য’ ধীরে ধীরে মুছে গিয়েছে । ইতিহাসকেও বিকৃত করা হয়েছে । তা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে ।

 

   কী করে বিনা বাক্যব্যয়ে এসব কথা মেনে নিই ! লিও  টলস্টয়- এর ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ পড়িনি ঠিকই , কিন্তু প্রাথমিক স্তরে কিছু প্রবাদ বাক্য তো মুখস্থ করেছিলাম , যেমন ---‘দ্য পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোরড’ । তরবারির চাইতে কলমের জোর বেশি । এই শিক্ষায় শরীর চর্চার কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি । নিয়মিত মাঠে যেতাম , খেলতাম । সর্বোপরি নীচু ক্লাসে এবং মাধ্যমিকে আলাদা একটা বিষয়ই ছিল – ‘শারীর শিক্ষা’ । সে বিষয়েও রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হত । তবে হ্যাঁ , প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নেচে ‘দেশের সাহসিকতার ঐতিহ্য’ অথবা ‘ফিটনেসের পরীক্ষা’ দিতে হয়নি কখনও । সেই প্রশ্নই ছিলনা । এমন কোনও কীর্তিকলাপে লিপ্ত হলে স্কুল সোজা টি সি ধরিয়ে দিত হাতে ।

 

গত ৫ অগস্ট ২০১৯ সংসদে জাতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত পাশ হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়ার কথা বলছে মোদী সরকার । অনেকেরই মনে প্রশ্ন, এমন গায়ের জোরে লোকের উপকার করা যায় না কি ! করা হলেও তা কি আদৌ কার্যকরী হবে ?  নব্বই দশকে স্কুলে , উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আমাদের পাঠ্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ ভাবনা --- ‘লোকহিত’ । সেখানে শুরুতেই তিনি লিখছেন ---“ ‘এই লোকসাধারণের জন্য কিছু করা উচিত’ হঠাৎ এই ভাবনা আমাদের মাথায় চাপিয়াছে । এই কারণে , ভাবনার জন্যই ভাবনা হয় । আমরা পরের উপকার করিব মনে করিলেই উপকার করিতে পারি না । উপকার করিবার অধিকার থাকা চাই । ছোটোর উপকার করিতে হইলে কেবল বড়ো হইলে চলিবে না --- ছোটো হইতে হইবে, ছোটোর সমান হইতে হইবে । মানুষ কোনো দিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না , কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে ।“ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক – সামাজিক পরিস্থিতির বিচারে কথাগুলো ভীষণ প্রাসঙ্গিক , এবং শিক্ষণীয় মনে হয় না ? দেশেরই একটা অংশকে গায়ের জোরে পরস্পরের থেকে র‍্যাডক্লিফের মত আলাদা করে দিয়ে , অ- সমান করে দিয়ে, তাঁদের ভালো করার কথা বলা হচ্ছে ! লেখক আরও বলছেন --- “হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে , সেটি প্রীতি । মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় --- তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না করা ।“ প্রীতি না করার ফল , বিতর্কিত বিল পাশের ২৩ দিন পর , জম্মু- কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে দেওয়া রিপোর্টে পরিষ্কার ---স্বাভাবিক, শান্ত কাশ্মীরের প্রশাসনিক পরিসংখ্যান । ৫৩১ টি পাথর ছোড়ার ঘটনা , ৫০ টি রাস্তা রোকো , আহত ৯১ , এদের মধ্যে ৭১ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী ।

     কাশ্মীরের মানুষদের বিক্ষুব্ধ মনোভাবের যেটুকু খবর বাইরে আসছে , তার সাথে মিলিয়ে নেওয়া যায় এই লাইনটি --- “হিতৈষী যে সুদটি আদায় করে সেটি মানুষের আত্মসম্মান; সেটিও লইবে আবার কৃতজ্ঞতাও দাবি করিবে, সে যে শাইলকের বাড়া হইল ।“ “সেইজন্য, লোকহিত করায় লোকের বিপদ আছে ।“ হিন্দু প্রধান, মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে টুকরো হয়েছে জম্মু- কাশ্মীর । অনেকে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে , যুক্তি সাজিয়ে বলছেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারে সঠিক পদক্ষেপ । সাধারণ নাগরিকদের বাইরে, তাদের মধ্যে বিরোধী দলের কিছু কিছু নেতারাও আছেন । এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণ – “এক মানুষের সঙ্গে আর- এক মানুষের , এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর- এক সম্প্রদায়ের তো পার্থক্য থাকেই , কিন্তু সাধারণ সামাজিকতার কাজই এই --- সেই পার্থক্যটাকে রূঢ়ভাবে প্রত্যক্ষগোচর না করা ।“  “কুস্তির সময়ে কুস্তিগিরদের গায়ে পরস্পরের পা ঠেকে , তাহার হিসাব কেহ জমাইয়া রাখে না ; কিন্তু সামাজিকতার স্থলে কথায় কথায় কাহারো গায়ে পা ঠেকাইতে থাকিলে তাহা ভোলা শক্ত হয় । সমাজের অপমানটা গায়ে লাগে না , হৃদয়ে লাগে ।“ শুধু কাশ্মীর নয় , সারা দেশেই, বস্তুত সারা বিশ্বেই ক্রমশ বেড়ে চলা সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছবির সঙ্গে কথাগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় । ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের বিপক্ষে মোক্ষম যুক্তি হতে পারে শুধু এই একটি লাইন --- “আমাদের সমাজ লোকসাধারণকে যে শক্তিহীন করিয়া রাখিয়াছে এইখানে সে নিজের শক্তিকে অপহরণ করিতেছে । পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠে --- এইখানেই মানুষের পতন ।“ তাহলে এই পরিস্থিতির থেকে পরিত্রাণের পথ কী ? উত্তর --- “সেই শক্তি দিতে গেলেই তাহাদের হাতে এমন একটি উপায় দিতে হইবে যাহাতে ক্রমে তাহারা পরস্পর সম্মিলিত হইতে পারে – সেই উপায়টিই তাহাদের সকলকেই লিখিতে পড়িতে শেখানো ।“ একদিকে সন্ত্রাসবাদ, আরেক দিকে সন্ত্রাস দমনে নির্বিচারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন – এই সাঁড়াশি চাপের মাঝে পড়ে দশকের পর দশক ধরে যে অঞ্চলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রছাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়ে, যেমন এখন , সেখানে স্বাভাবিক পারস্পরিক মেলামেশা ও পড়াশোনা কী ভাবে সম্ভব, দেবা ন জানন্তি , কু তো মনুষ্যাঃ । যাদের স্কুল – কলেজে যাওয়ার বয়েস , তাঁদের ইটের জবাব ছররা গুলিতে দিলে যে সেই পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব সে কথা হলফ করে বলা যায় । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কি তরোয়াল চালনার চর্চায় ফিট থাকার নিদান দিয়ে হিংসার সংস্কৃতিকেই উস্কে দিলেন না ? তাহলে আর হিংসার আশ্রয় নেওয়া উপত্যকার জেন ওয়াই – কে দোষারোপ করা কেন ?  পাশ করার তাগিদেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলো আমাদের, মগজে একরকম গেঁথে নিতে হয়েছিল । হয়ত বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন খুব সচেতনভাবেই চেয়েছিলেন আমরা গোঁড়ামিমুক্ত ভাবনাচিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠি । বামপন্থী মতাদর্শ আর রবি ঠাকুরের সমাজ ভাবনা কোথাও যদি মিলে যায় , মিশে যায় তাহলেও বোধহয় দেশীয় ঐতিহ্য নষ্ট করা এবং ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে বাম সরকারকে দায়ী করা চলে না । পরিণত বয়সে এসে মনে হয় , ‘লোকহিত’ পড়ে অপকার কিছু হয়নি । বরং অতীতের শিক্ষা বর্তমান সময়কে বুঝতে সাহায্যই করছে ।

    উচ্চ মাধ্যমিকেই ইংরেজিতে পাঠ্য ছিল একটি নাটক – ‘প্রোগ্রেস’ । এস টি জি আরভিনের লেখা নাটকের নামটি আসলে বিদ্রূপাত্মক । নাট্যকার এই নাটকে সমানে প্রশ্ন করেন , ব্যঙ্গ করেন, সেই সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞানীদের , যারা মনে করেন যুদ্ধের জন্য , যুদ্ধের আতঙ্ক তৈরির জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করে তাঁরা বিজ্ঞানের বিরাট অগ্রগতি ঘটাচ্ছেন । নাটকে দু’টি চরিত্র --- মিসেস মেলডন এবং তাঁর ভাই প্রফেসর হেনরি কুরি । মিসেস মেলডনের একমাত্র ছেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছে । তাঁর স্বামীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । যুদ্ধ মেলডনের জীবনকে নিঃসঙ্গ ও দুর্বিষহ করে তুলেছে । তাঁর ভাই কুরি, সেই ধরনের বিজ্ঞানী যারা যুদ্ধের জিগিরকে প্রশ্রয় দেন এবং এই পরিস্থিতির ফায়দা লোটেন কাঞ্চন মূল্যে । মেলডন যতটা সংবেদনশীল , কুরি ঠিক ততটাই অমানবিক ।

    মিসেস মেলডন , প্রফেসর কুরির  ভয়ঙ্কর আবিষ্কারের কথা শুনে চরম আতঙ্কিত হন , বারে বারে প্রাণঘাতী বোমা আবিষ্কারের মূল সূত্রগুলি নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে অনুরোধ করেন । কিন্তু কুরি সে সব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেন না । মরিয়া হয়ে মেলডন চরম সিদ্ধান্ত নেন , একটি ছুরি আমূল গেঁথে দেন ভাইয়ের পিঠে । কুরি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েন । মারা যান । বিয়োগান্তক নাটকে যবনিকা পতন হয় ।

  এই নাটকে কুরির একটি স্মরণীয় সংলাপ --- “উইথ আ সিঙ্গল বম্ব , উই কুড ওয়াইপ আউট দ্য পপুলেশন অব আ সিটি অ্যাজ আ বিগ অ্যাজ ম্যানচেস্টার ।“ খবরের কাগজে প্রতিদিন দেশ এবং বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যুদ্ধোন্মাদনা দেখে এই সংলাপ মনে পড়ে না ? প্রসঙ্গত নাটকটি প্রকাশ্যে আসে ১৯১৯ সালে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছর । আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে । এখনও নাটকের মূল বার্তাটি কতখানি প্রাসঙ্গিক তা সংবাদ মাধ্যমে নজর রাখলেই বোঝা যায় । রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিরোধিতায় এখন এদেশে যারা এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন , তাঁদের ‘আরবান নকশাল’ তকমায় দাগিয়ে দেওয়া হয় ।

 

    এমন সব ধ্রুপদী সাহিত্য যখন পাঠ্য ছিল তখন আমরা গোকুলে বাড়ছিলাম । তাই যস্মিন দেশে যদাচার বলে আজ হঠাৎ অসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া আমদের পক্ষে সম্ভব নয় । নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে মিলিয়ে গেলেও নয় ।

 

                                ------------------------------------

(১৮ অক্টোবর , ২০১৯ 'উত্তরবঙ্গ সংবাদ'-এ উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে, সম্পাদিত রূপে প্রকাশিত ।)

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_0.html









প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ

বাংলা প্রবন্ধ

ব্যক্তিগত প্রবন্ধ


                                                                       ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...