আজাদি
জরা জোর সে বোলো ---
জরা হাত বাজা কে -----
আরে ডরতে কিউ হো ---
জরা আগে আও ----
আরে লে কে রহেঙ্গে ---
হ্যায় ওয়াদা হমারা ----
এন আর সি , সি এ এ , এন
পি আর বিরোধী একটি নাগরিক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি
২০২০, দেশপ্রেম দিবসে , ব্যারাকপুরের দেবশ্রী হল প্রাঙ্গণে বিকেল চারটের সময় ।
সভার সর্বকনিষ্ঠ বক্তা এবং মুখ্য আকর্ষণ কানহাইয়া কুমার মঞ্চে উঠলেন রাত আটটায় । স্বেচ্ছাসেবকদের
কথাবার্তা থেকে জানা যাচ্ছিল , বি টি রোড ধরে আসার পথে , সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসে
বারবার থেমে যাচ্ছে তাঁর গাড়ি । ওই প্রাঙ্গণে কত লোক ধরে ? আমার ধারণা নেই । সেই
বড় মাঠটায় , মাঠের সামনে রাস্তায় , মাঠের আশেপাশে সবক’টা বাড়ির ছাদে – বারান্দায় ,
এমনকি মঞ্চের পিছনের রাস্তায় তখন তিল ধারণের জায়গা নেই । যে দিকে চোখ যায় , শুধু
আবালবৃদ্ধবনিতার মাথা । সবচেয়ে চোখে পড়ার মত ছিল কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং
সমবয়স্কদের উদ্দীপনা , ‘আজাদি’ স্লোগান । উঁচু পাঁচিলের উপর বসে , দাঁড়িয়ে প্রায়
সমবয়স্ক একজন রাজনৈতিক কর্মীর বক্তব্য মন দিয়ে শুনছেন , অনেকের কাছে ‘হোয়াটস অ্যাপ
প্রজন্ম’, – এ দৃশ্য দেখেও আনন্দ । ইতিহাসের সব ক’টা বড় বিপ্লব ছাত্রদের হাত ধরে
এসেছে । সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল তিয়েন আন মেন স্কোয়ার বা ট্রাফালগার স্কোয়ারে
দাঁড়িয়ে আছি । এঁরা রাজনীতি বিমুখ ? মনে হয় না ! মনে হয় ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ
প্রজন্ম’ তাঁদের নেতা খুঁজে নিয়েছে । কানহাইয়ার ধারে কাছে ঘেঁষতে না পারলেও তাঁর
এক সহকর্মীকে খুব কাছ থেকে দেখলাম , তাঁর কথাও শুনলাম , শুনলাম তাঁর নাম কাকতালীয়
ভাবে ---- আজাদ ! ততক্ষণে রাজনৈতিক বক্তব্য শেষে ডুবকির সাথে কানহাইয়া ‘আজাদি’
আবৃত্তি শুরু করেছেন ; তিনি এক একটি পঙক্তি তাল কেটে কেটে বলছেন , আর তার পর জনতা
সমস্বরে গর্জে উঠছে – আ – জা --- দি । তাঁদের সাথে গলা না মিলিয়ে পারলাম না ---
জো তুম না দোগে-----
হাম ছিন কে লেঙ্গে---
আরে তুম ভি বোলো-----
ওহ মেহকি মেহকি----
হাম লে কে রহেঙ্গে----
হ্যায় ওয়াদা হমারা---
আ --- জা --- দি ।
ফুল ফুটুক , না ফুটুক আজ
বসন্ত । আজকের সন্ধেটা “মনে--- রেখে দেব ।“
এ দিন সভামঞ্চের আশেপাশে চোখে পড়ার মত ছিল
পুলিশি তৎপরতা । ম্যানপ্যাক হাতে উচ্চপদস্থ আধিকারিক আর মহিলা পুলিশ কর্মীতে
চারিদিক ছয়লাপ । কানহাইয়ার বক্তৃতার সময় , মঞ্চের পাশের গলিতে আমাদের কাছেই
দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক । তাঁর উর্দিতে, বুকের কাছে ছোট্ট ক্যামেরা
আটকানো , মুখ মঞ্চের দিকে ।
ঘটনাচক্রে কানহাইয়া এদিন ঢুকেছিলেন
সারেন্ডার নট বন্দ্যোপাধ্যায় রোড দিয়ে , বেরিয়ে গেলেন যে রাস্তা দিয়ে তার নাম ---
শহীদ মঙ্গল পাণ্ডে সরণি ! বুঝো সাধু যে জানো সন্ধান !
কানহাইয়া ছাড়াও এদিন বক্তাদের মধ্যে
ছিলেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় , তড়িৎবরণ তোপদার , মহম্মদ সেলিম , দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
, অভিনেতা বাদশা মৈত্র , সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী , চন্দন সেন প্রমুখ । এদিন
একটা ব্যাপার খুব দৃষ্টিকটু লাগল । স্লামডগ মিলিওনেয়ার ছবিতে অনিল কপূরের দাঁতে
দাঁত চেপে একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংলাপ ছিল
--- “দিস ইজ মাই শো , মাই শো ।“ নমস্য বক্তাদের অনেকের কথার মধ্যেই মূল আলোচ্য
বিষয় থেকে সরে গিয়ে , এই ভাবটিই প্রকট হয়ে উঠল । ওঁরা ভুলে গেলেন মঞ্চ দখলের সময়
এটা নয় ।
নির্ধারিত সময়ের সাড়ে চার ঘণ্টা পরে ,
রাত সাড়ে আটটায় , ‘বাচ্চা ছেলে’টার গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই সভার সমাপ্তি
ঘোষিত হল । মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !
--------------------
('সুখবর' কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত ।)
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_98.html
picture courtesy: getty images.

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.