বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০
ঠিকআছে?
বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০
বুদ্ধদেব
তখন রাজ্যে মাওবাদী তৎপরতা তুঙ্গে । তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে আই ই ডি বিস্ফোরণ থেকে । টিভিতে প্রতিদিন কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষাণজি কোট দিচ্ছেন । মুখ্যমন্ত্রীর জন্য দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এমন আবহে , এরকমই এক শীতের সন্ধ্যায় আমি কোনও একটা কারণে গেছি 'নন্দন' চত্বরে । নন্দনের গেটের বাঁ দিকে সিনেমার পোস্টারের যে ডিসপ্লে বোর্ড আছে , সেখানে কোনও একটা ছবির পোস্টার দেখছি মন দিয়ে । আচমকা একসঙ্গে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখি , আমার ঠিক ডান দিকের দরজা দিয়ে , আমার পাশ দিয়ে, নন্দনের ভিতরে ঢুকে গেলেন ধোপদুরস্ত বুদ্ধবাবু । এবার বাঁ দিকে অর্থাৎ নন্দনের গেটের দিকে তাকিয়ে আমার চক্ষুস্থির ! গেটের ঠিক সামনে পুলিশের ব্যারিকেড করে সবাইকে আটকে দেওয়া হয়েছে । ছোটখাটো একটা অর্ধবৃত্তাকার জনসমাবেশ ব্যারিকেডের ওপারে । মানেটা দাঁড়াল , আমি যখন তন্ময় হয়ে পোস্টারে ডুবে ছিলাম , তখন ওনার কনভয় ভিতরে ঢুকেছে , সাধারণ মানুষ , নিরাপত্তা কর্মী -- সবাই মিলে একটা হই -হট্টগোল হয়েছে , কলকাতা পুলিশের ব্যারিকেড তৈরি হয়েছে এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় , প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই আমাকে দেখেছেন এবং আমাকে সরাতে বারণ করেছেন নিরাপত্তাকর্মীদের এবং আমি কিছুই টের পাইনি ! কারণ সেদিন, ব্যারিকেডের মধ্যে সাধারণ মানুষ বলতে শুধু আমিই ছিলাম । ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খুব ভাল লেগেছিল । আমার কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ ছিল , কাজেই সরিয়ে দেওয়াটাই সেই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক হত । ওইসময়ে ওঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে ন্যূনতম ঝুঁকিও নেওয়া হচ্ছিল না । আর ওই ঘটনার পরেও আমাকে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বা ব্যাগে তল্লাশি চালানো হয়নি । ইশারাতেই প্রাক্তন মুখমন্ত্রী নিরাপত্তাকর্মীদের যা নির্দেশ দেওয়ার দিয়ে দিয়েছেন ! বাড়িতে আমাকে ডেকে সাড়া পাওয়া যায় না - এরকম প্রায়শই হয় , কিন্তু বাড়ির বাইরে সবার আমাকে বোঝার কোনও দায় তো নেই । নেতিবাচক সম্ভাবনার দিক থেকে যদি ভাবতে শুরু করি , তবে সেদিন, সেই পরিস্থিতিতে, আমাকে সন্দেহ করার হাজারএকটা স্বাভাবিক কারণ ছিল । কিন্তু উনি করেননি । থট রিডার বলেই কি ? তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন আপনি, এই প্রার্থনা করি ।
Buddhadeb Bhattacharjee
বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০
ওঁদের ভাল হোক
নামীদামী মানুষেরা ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের , একান্ত পারিবারিক আনন্দের মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেন । তার থেকে কিছু বাছাই ছবি খবরের কাগজে প্রকাশিতও হয় । ব্যক্তিগত ভাবে আমার বিষয়টা পছন্দ নয় , কিন্তু তাতে ওঁদের কিস্যু এসে যায় না । অধিকাংশের কাছেই এই বিশ্বায়নের যুগে টাকা কামাই করতে নেমে , রুচি কিংবা ঔচিত্য নিয়ে কথা বলা বা ভাবা আর খ্যামটা নাচতে নেমে ঘোমটা টানা সমার্থক মনে হয় । যাঁরা এই ছবিগুলি দেন , তাঁরাও নিজেদের কাজের স্বপক্ষে যুক্তি সাজাতেই পারেন । যেসব সেলেব বিটিরা বেবি বাম্প দেখিয়ে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করছেন , কিংবা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি সর্বসমক্ষে তুলে দিচ্ছেন , তাঁরা বলতেই পারেন , তাঁরা নিজেদের বর্তমানকে খুব সচেতন ভাবে বিক্রি করছেন ভবিষ্যতকে আরামপ্রদ করার জন্য । এই ট্রেন্ডই এখন বাজারে ইন ! কিন্তু মুশকিল হল ,সবার জীবন তো আর সিনেমার মত ঝলমলে-স্বপ্নের মত হয়না , অনেকেরই সারা জীবন ধরে দুঃসহ কিছু দুঃস্বপ্ন বয়ে বেড়াতে হয় । তাঁরাও বাবুই পাখির মত বাসা বুনতে চান , আর এই বিজ্ঞাপনগুলির দিকে চাতক পাখির মত তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকেন । তাঁরাও নিয়মিত সেলেবদের অনুকরণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক ওইরকম ছবি পোস্ট করতে চান , কিন্তু সংসারের জাঁতাকলে তাঁদের জীবনটা চাক্কি পিসিং অ্যান্ড পিসিং হয়ে যায় । আকাশছোঁয়া চাহিদা প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তোলে । তখন তাঁদের বুকে একধরণের জ্বালা ধরে । সেটা কেউ সামলাতে পারেন , কেউ পারেন না । সাদা-কালো জীবনে সাদা-কালো দুর্যোগ নেমে আসে । তখন তাঁদের সম্বিৎ ফেরে, অনেক ক্ষতির পর । আমি মনে করি এই ধরণের ছবি বা মুহূর্ত দেদার বিক্রির ব্যাপারে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকা দরকার । কেন ? বিষয়টা জলপাইগুড়ির লেখক সমরেশ মজুমদার খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছিলেন তাঁর কালজয়ী 'কালপুরুষ' উপন্যাসে । অনিমেষ আর মাধবীলতার তখন প্রেমপর্ব চলছে । মাধবীলতা একদিন অনিমেষদের বয়েজ হোস্টেলে এসেছে একটা কাজে । তাঁকে এগিয়ে দেওয়ার সময় অনেক জোড়া উৎসুক চোখের সামনে, হস্টেল থেকে বেরোতে বেরোতে অনিমেষ বলে --- তুমি অনেকগুলো তৃষ্ণার্ত বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিলে লতা । এখানে আর এসো না ।
জীবনের কিছু মুহূর্তের ক্ষেত্রেও সচিত্র শেয়ার অপশন থাকা উচিত নয় বলে মনে করি । আমার ধারণা তাতেই সবার মঙ্গল !
Celebrity status paragraph
মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০
গিরগিটি
চিত্রতারকারা বাজার পড়ে গেলে অনেকেই রাজনীতিতে যোগ দেন । সম্ভবত ওঁদের প্রভাবশালী হয়ে থাকার অভ্যেস হয়ে যায় , তাই নিজের পরিচিতির পুরনো ক্ষেত্রে কল্কে না পেয়ে , রাজনীতিতে যোগ দেন । এ অবশ্য একেবারেই আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা , অনেকে একমত না-ই হতে পারেন । আজ কাগজে দেখলাম , মহারাষ্ট্রে শিবসেনায় যোগ দিয়েছেন উর্মিলা মাতন্ডকর । শিবসেনার মুখপাত্র ও বিশিষ্ট নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন --- উর্মিলা এখন থেকে শিবসৈনিক । উনি সেনার মহিলা শাখাকে শক্তিশালী করবেন । এটুকু পড়ে খুব হাসি পেল । একটা পুরনো ঘটনা মনে পড়ে গেল । ১৯৯৫ সাল । রামগোপাল ভার্মার 'রঙ্গিলা' রিলিজ করেছে । এক বান্ধবী মায়ের সাথে গিয়ে ছবিটা দেখবে জানিয়েছিল । পরদিন পড়তে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম --- কী রে , দেখলি ? কেমন লাগল ? মায়ের সাথে গিয়ে ছবিটা দেখতে কেমন লাগবে , সেটা জানতাম ! জেনেশুনেই প্রশ্নটা করেছিলাম ! 'রঙ্গিলা' 'আমাদের সময়ের' অন্যতম সাহসী ছবি । বিকিনি অবশ্য তার আগে শর্মিলা ঠাকুরও পড়েছেন , কিন্তু 'রঙ্গিলা'র মধ্যে একটা আলাদা ব্যাপার ছিল । যাইহোক , বান্ধবীটি যুগপৎ কপট রাগ এবং লজ্জা মুখে টেনে , অতি সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল --- শুধু অসভ্যতা ! তখন সবে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের হুজুগ উঠেছে এবং মহারাষ্ট্রে বালা সাহেব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা উগ্র হিন্দু দল হিসেবে , এসব 'পশ্চিমি সংস্কৃতি'র প্রবল বিরোধিতা করছে । আর্চিজের দোকানে প্রেম নিবেদনের কার্ড বিক্রির অপরাধে হামলা চালাচ্ছে , পার্কে প্রেমিক - প্রেমিকাদের হেনস্থা করছে , মারধর করছে । মেয়েরা সংক্ষিপ্ত কিংবা অতি সংক্ষিপ্ত পোশাক পড়লে তাঁদের আচ্ছা করে সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতির পাঠ নিতে বাধ্য করছে ঘাড় ধরে । 'রঙ্গিলা' সম্পর্কে শিবসেনার তখনকার অবস্থান কী ছিল , এখন আর স্পষ্ট মনে নেই , তবে অনুমান করতে পারি ।
চোখ বন্ধ করে টাইম মেশিনে ১৯৯৫ সালে চলে গেলাম । মনে মনে কল্পনা করলাম সেই সময়ে দাঁড়িয়ে শিবসেনা উর্মিলাকে দলে টানার জন্য ডাকছে --- আয় , খুকু আয় ! কিন্তু কষ্ট করেও দৃশ্যটা মানসপটে তৈরি করতে পারলাম না । অথচ ২৫ বছর পরে দৃশ্যটা কষ্টকল্পনা নয় , গসিপ নয় , পুরোদস্তুর খবর ! সত্য সেলুকাস , বড় বিচিত্র এই দেশ !
সূত্র ঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ০১ - ১২ - ২০২০
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/12/pub-9792609886530610_3.html
রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০
কলেজবেলার কলজে । কলেজ জীবনের অভিজ্ঞতা
স্কুল থেকে কলেজ --- শাসন- শৃঙ্খলার নিগড় থেকে হঠাৎ মুক্তি , অনেকটা অপ্রত্যাশিত স্বাধীনতা । খুব ভারসাম্য বজায় রেখে চলার সময় সবার জন্য , পদস্খলন হলেই ক্ষতি । এই ব্যালান্স রেখে চলার মধ্যেই বেশ কিছু মজার - শেখার মত গল্প তৈরি হয় , যা মনে, ভবিষ্যতের গর্ভে, মণিমুক্তোর মত স্মৃতি হিসেবে থেকে যায় । কলেজে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকদের উদ্দেশে চাপা গলায় মন্তব্য করা , বা সোজাসাপ্টা ভাবে বললে আওয়াজ দেওয়া সেকালেও ছিল, একালেও আছে এবং থাকবে । বাবা আর আমার একই কলেজ --- এ সি কলেজ , জলপাইগুড়ি , কিন্তু আলাদা ঠিকানায় । বাবা যখন পড়তেন, তখন কলেজ ছিল রেসকোর্স পাড়ায় । একজন ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন ,যাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের কথা বাবার কাছে অনেকবার শুনেছি । পদবী বটব্যাল , নাম ভুলে গেছি । অনেকেই ওঁর পড়ানোর ভক্ত ছিলেন । শুধু অতি খর্বকায় বলে অনেক ছাত্রছাত্রী আড়ালে ওঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন । এখনকার মত ছাত্রছাত্রীদের বেয়াড়াপনা তখনও মাত্রাছাড়া হয়নি , কিন্তু সবসময়ই আলুর ঝুড়িতে দু'একটা আংশিক নষ্ট আলু তো থাকে ! একদিন বটব্যাল স্যরের পাস কোর্সের ক্লাস চলছে । পড়ানোর সময় তিনি কোনও প্রসঙ্গে 'শর্ট' শব্দটি উচ্চারণ করায় , একজন ছাত্র মুখ লুকিয়ে স্যরের উদ্দেশে মন্তব্য ছুঁড়ল --- "স্যর , ইউ আর টুউউউউউ শর্ট !" বটব্যাল স্যর বইয়ে মুখ গুঁজে ছিলেন । মুখ তুলে অজানা উদ্দেশে সপ্রতিভ ভাবে পত্রপাঠ উত্তর দিলেন ---- "ইয়েস , ডায়মন্ডস আর অলওয়েজ শর্ট !" মুখে আত্মবিশ্বাস মাখা স্মিত হাসি । কী চমৎকার উত্তর ! পাশাপাশি একজন দক্ষ শিক্ষক বেয়াড়া ছাত্রকে কীভাবে সামলান , সেটাও শেখার মত ।
আমার মা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়েছেন । অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য , ভূদেব চৌধুরীর মত সাহিত্যের ইতিহাসের দিকপাল মানুষেরা পড়াতেন তখন । রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের সহকারী হিসেবে , মা কিছুদিন কাজও করেছেন , সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত তখনকার উদীয়মান খ্যাতনামাদেরও দেখেছেন । যাইহোক , বহু মানুষেরই সামাজিক-আঞ্চলিক কারণে উচ্চারণে কিছু আপাত ত্রুটি থাকে , যা অন্যদের কাছে হাস্যকর মনে হয় । ভূদেব চৌধুরীরও এমন উচ্চারণগত ত্রুটি ছিল । উনি বাংলা পড়ানোর সময় 'ও'-কারের বাহুল্য দেখা যেত । তো একদিন বৈষ্ণব পদাবলীর গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ পড়াতে পড়াতে তন্ময় হয়ে একটি পদের ব্যাখ্যায় উনি বললেন ---- "তখন মা কইলেন , হাঁ কোর, হাঁ কোর...!" এই না শুনে, মায়ের এক সহপাঠী চাপা গলায় মন্তব্য করলেন --- "তোর মুখে কাঁকর !" স্বাভাবিক ভাবেই ভয়ঙ্কর রেগে গিয়েছিলেন ভূদেব চৌধুরী । যৌবনের তারল্যে যে সহপাঠী এই আওয়াজ দিয়েছিলেন , পরবর্তীকালে তিনি খ্যতনামা অধ্যাপক হন !
আমি কলেজে পড়ার সময় একইভাবে একটা দারুণ মজার ঘটনা ঘটেছিল । আমাদের পাস কোর্সের বাংলা বইয়ে 'রক্তকরবীর তিনজন' বলে একটি প্রবন্ধ পাঠ্য ছিল । রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী' নাটকে , বিশু পাগল - কিশোর আর রঞ্জনের মধ্যে কে নন্দিনীকে বেশি ভালবাসত , তা নিয়ে আলোচনাই ছিল মূল বিষয় । এখনও মনে আছে সঙ্গীতা ম্যাডাম বেশ ভাল করে মূল নাটকের সঙ্গে এই প্রবন্ধের তুলনামূলক আলোচনা করে, আমাদের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন ---- "তাহলে বলো , নন্দিনীকে কে সবচাইতে বেশি ভালবাসতো ?" এক বন্ধু পিছন থেকে মাথা নীচু করে বেশ চেঁচিয়ে বলল --- "ম্যাডাম , সলমন খান !" তখন শহরে সঞ্জয় লীলা ভন্সালির 'হাম দিল দে চুকে সনম' রমরমিয়ে চলছে , যার সঙ্গে আবার মৈত্রেয়ী দেবীর 'ন হন্যতে'র গল্পের আশ্চর্যজনক মিল ! তার সঙ্গে জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে সলমন খান - বিবেক ওবেরয় -ঐশ্বর্য রাই(বচ্চন)কে নিয়ে ফিল্মি গসিপ । ফলে ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে গোটা ক্লাসে হাসির রোল উঠল । ম্যাডামও হেসে ফেললেন ! সবারই তো একটা কলেজবেলা থাকে !
শেষ গল্পটা কলকাতায় এসে এক বন্ধুর কাছে শোনা । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের ক্লাস চলাকালীন ওই বাংলার ক্লাসেই শিক্ষক কিছু একটা ব্যাখ্যা করার পর , সে কতকটা স্বগতোক্তির ঢঙেই অস্ফুটে বলে উঠেছিল ---- "লে হালুয়া !" দুর্ভাগ্যবশত শিক্ষকমশাই সেটা শুনতে পেয়ে বলে উঠেছিলেন ---- "দে !" 😊
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/12/pub-9792609886530610_9.html
কলেজ জীবনের অভিজ্ঞতা
কলেজ নিয়ে লেখা
কলেজের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা দিনলিপি
কলেজ নিয়ে কিছু কথা
কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ
কলেজ নিয়ে কিছু কথা
বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০
দিয়োগো আর্মান্দো মারাদোনা
অনেকদিন আগে 'আজকাল'-এর ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাশিস দত্তের মুখে একটা গল্প শুনেছিলাম । স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে , ভুল হলে বিদগ্ধ পাঠক ধরিয়ে দেবেন । দেবাশিসবাবু সেবার বিদেশের কোথাও ফুটবল বিশ্বকাপ কভার করতে গেছেন । রাতে, হোটেলে বসে খবর পেলেন , কাছের একটা স্টেডিয়ামে মারাদোনা একা প্র্যাকটিস করছেন । একজন সাংবাদিকের কাছে এমন মুহূর্ত একটা সুবর্ণ সুযোগ । দেবাশিসবাবু যথারীতি পৌঁছে দেখলেন স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ । টপকালেন ! মারাদোনার কাছে তাঁকে যে যেতেই হবে । কাগজে, বিশ্বকাপ চলার সময় এক্সক্লুসিভ নিউজ করার সুযোগ কেউ ছাড়ে ! মারাদোনার কাছে কোনক্রমে পৌঁছনোর পর , ফুটবলের রাজপুত্র তাঁকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই একটু অবাক হলেন । আরেকবার অবাক হলেন যখন এই বঙ্গসন্তান ওই মুহূর্তে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন ! কিমাশ্চর্যম অতঃপরম , মারাদোনা আধঘণ্টা সময় দিতে রাজি হলেন ! 'আজকাল'-এ পরদিন সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হল ।
না , সেটা গল্প নয় । গল্প হল , এই আধঘণ্টায় বল মারাদোনার শরীর থেকে মাটিতে পড়েনি ! এই গোটা সময়টা জুড়ে, সারা শরীরে ফুটবলের এই বিস্ময় , বলটা খেলিয়ে গেছেন অবিরত । কয়েক বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন । তাঁর পায়ের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়েছিল । নিখাদ জাদুতে বাঁধানো সেই পদচিহ্ন উদ্দেশ্য করে প্রণাম জানাই ।
মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০
তিলোত্তমা
মেয়েদের অনেকগুলো জীবন । বাপের বাড়ির জীবন - শ্বশুরবাড়ির জীবন, বিয়ের আগের জীবন-বিয়ের পরের জীবন , চল্লিশের আগের জীবন এবং চল্লিশের পরের জীবন । নিজেকে দেখতে সুন্দর লাগুক , সবাই ফিরে ফিরে দেখুক , কে না চায় । মেয়েরাও চায় , ছেলেরাও চায় । কিন্তু মেয়েদের চাওয়াটা বিয়ের পরে, ব্যতিক্রম ছাড়া পাল্টে যায় সন্তান ধারণ করতে গিয়ে । এ নিয়ে মেয়েদের মধ্যে একটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে । তাকে কী আর আগের মত সুন্দর লাগছে , এখনও কী ছেলেরা তাকে দেখে মুগ্ধ হয় --- এই কথাটা চল্লিশ এবং তদূর্ধ্বরা মনে মনে বারবার যাচাই করে নেন । এই প্রক্রিয়ার সাথে আত্মবিশ্বাসের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে । আমি রূপে তোমায় ভোলাবো না , ভালবাসায় ভোলাব --- কথাটা শুনতে ভাল , বাস্তবে নয় । আজকাল কাজটা তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়ে গেছে । ফেসবুকে , ইন্সটাগ্রামে , হোয়াটসঅ্যাপে ছবি আপলোড করলেই হল । তারপর শুধু দেখার অপেক্ষা কত জনে 'লাইক' করে , কত জনে ভালবাসার রক্তিম চিহ্ন এঁকে দেয় ! তিলোত্তমাও কোনও ব্যতিক্রমী চরিত্রের মেয়ে নয় । স্কুলে পড়ার সময় থেকে বিয়ের আগে অবধি অনেক ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে । ডাকসাইটে সুন্দরী , বিদুষী , রূপচর্চায় পারদর্শী তিলোত্তমা সেইসব প্রস্তাব ফুঁৎকারে উড়িয়ে অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছে । তিলোত্তমা এখনও সাজতে ভালবাসে । তার বিশ্বাস , নিজেকে সুন্দর রাখলে মন ভাল থাকে । তিলোত্তমা এখন এক ষোড়শীর জননী , তৎসত্ত্বেও শারীরচর্চা এবং ডায়েটিং করে পঁচিশ বছর আগের খুকি-খুকি , কচি-কচি ভাবটা অনেকটা ধরে রাখতে পেরেছে । বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় আসবাব , পূর্ণদৈর্ঘ্যের আয়নাটার সামনে ঘরের দরজা বন্ধ করে দাঁড়ালে , তিলোত্তমা সেটা নিজেই ভাল বোঝে । তিলোত্তমা এখন হাওড়ার একটা গার্লস কলেজে পড়ায় , আর অবসরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রচুর ছবি দেয় , প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পোশাকে , বিভিন্ন ভঙ্গিমায় । অচেনা , অল্প চেনা তো বটেই , পুরনো বন্ধুরাও ওর রূপের তারিফ করে । দু'দিন আগে টপ আর হট প্যান্ট পরে , একটু সাজুগুজু করে, ছবি আপলোড করার পরে ওর পরিচিত মহলে ঝড় বয়ে গেছে । অধিকাংশই যে বাঁকা হাসি হেসেছে , সেটা তিলোত্তমা জানে এবং থোড়াই কেয়ার করে । কলেজে দু'টো ক্লাসের ফাঁকে , টিচার্স রুমে বসে ও ফেসবুক মেসেঞ্জার চেক করছিল । পরপর স্তুতি , দু'একটা কুপ্রস্তাব পেরিয়ে এসে একটা মেসেজে হঠাৎ চোখ আটকে গেল তিলোত্তমার । পাঠিয়েছে অনিমেষ বসু । কোন অনিমেষ ? তিলোত্তমার ফ্রেন্ডলিস্টে অনেকগুলো অনিমেষ আছে । অন্যগুলোর মত মার্ক অ্যাজ রেড করতে গিয়েও থমকে গেল তিলোত্তমা । মেসেজটা খুলল । আর তারপরেই মনটা ভাল হয়ে গেল ওর । যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়ার সময় অনি ওর ব্যাচমেট ছিল । একটু ব্যথা কেসও হয়েছিল । তারপর বহুদিন যোগাযোগ নেই । সেই অনি বাংলা হরফে সুন্দর করে লিখেছে --- আমার যৌবনের বৃন্দাবন কলকাতায় তো আমার সঙ্গে থাকলি না , অন্তত বার্ধক্যের বারানসী জলপাইগুড়িতে আমার কাছাকাছি থাকিস । আমি ধুপগুড়ি কলেজে পড়াই এখন । লেখার শেষে দু'টো দাঁত বের করা হাসির ইমোজি ।
ঠোঁটে স্মিত হাসি ধরে রেখে আরেকবার আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালেন তিলোত্তমা মিত্র । এখনও তাঁকে বিগতযৌবনা বলা যায় না তাহলে !
সেলুন
---- কাকা , টিউবের আলোটা এখন ঠিক আছে না ? কাল রাতে চোকটা ঠিক করলাম তো । এর চেয়ে আর কত ভাল আলো দেবে বলো , এইটার বয়স কম হল নাকি ? তাও সাত-আট বছর তো হবেই । দোকান খোলার সময়কার , তাই না কাকা ?
খোকনের এক নাগাড়ে প্রশ্নের উত্তরে রামলোচন শুধু বললেন --- হুম । তারপর হাতে খানিকটা শেভিং ফোম ঢেলে এগিয়ে গেলেন পরাশরবাবুর দিকে । উনি এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের । ব্যাঙ্কে কাজ করেন , আর দু'দিন বাদে বাদে দাঁড়ি শেভ করান এবং গোঁফ ছাঁটান । ব্যস্ত মানুষ , দাঁড়ি কাটতে কাটতেও একাধিক ফোন আসে , রামলোচনকে হাত থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । এবার টিউবটা পাল্টাতেই হবে , ভাবতে ভাবতে পরাশরের গালে ফোম লাগাচ্ছিল সে । পরাশর চোখ বন্ধ করে আরাম করছিলেন , কিংবা কিছু চিন্তা করছিলেন । কারণ হঠাৎ হাত তুলে রামলোচনকে বললেন --- থামো , দু'মিনিট দাঁড়াও , একটা ফোন করে নিই । গালে ফোম লাগানো , তাই পরাশর সেভ করা নাম্বারটা ডায়াল করে , লাউডস্পিকার মোডটা অন করলেন। কয়েক সেকেন্ড রিং হওয়ার পরে ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা ধরল
---- হ্যালো
---- হ্যাঁ শশাঙ্ক , আমি পরাশর বলছি । আমার ডেস্ক খুলে দেখো , কাল একটা কার লোন অ্যাপ্রুভ করেছি । ছ'লাখ সাতচল্লিশ হাজারের । ওটা বার করো । আর কাস্টমারের সি আই এফটা খুলে দেখতো , আগে কোনও লোন আছে কিনা , ক্লোজ করেছে কিনা ? আমার যেন মনে হচ্ছে একটা টু হুইলারের লোন ছিল । দেখো ভাল করে । তারপর আমাকে জানাও । নির্দেশটা দিয়ে পরাশর রামলোচনকে আবার কাজ শুরু করতে ইশারা করলেন । ক্ষুরের ব্লেড পাল্টাতে পাল্টাতে রামলোচন জিজ্ঞেস করল
---- আজ আপনার ছুটি ?
হ্যাঁ । বাড়ির কতগুলো কাজ আছে , তাই ছুটি নিয়েছি । পরাশর উত্তর শেষ করার আগেই তাঁর ফোন বেজে উঠল । টানা পাঁচ মিনিট চুপ করে , পরপর ইতিবাচক ভঙ্গীতে ঘাড় নেড়ে যাওয়ার পর পরাশরের মুখে হাসি ফুটল ।
--- আরে টু হুইলারের লোন নেওয়ার সময় আমিই ছিলাম তো , আমার মনে আছে । ব্যাঙ্কের লোক হয়ে যদি এসব করে , কাকে আর কী বলব বলো ? একটা লোন ক্লোজ না করে , আরেকটার জন্য অ্যাপ্লাই করেছে ! ঠিক আছে শোন , লোনটা বাতিল করো , বড় সাহেবকে জানাও আর পার্টিকে খবর দাও ।
ফোনটা ছেড়ে হাসি হাসি মুখে রামলোচনের দিকে তাকালেন পরাশর
---- আচ্ছা রামলোচন, যে সব বাবুরা মোটা মাসমাইনের চাকরি করে , সেই সব অফিসের বাইরে প্রতিদিন কাবুলিওয়ালাদের ভিড় হয় কেন বলতো ?
রামলোচন চেষ্টা করে কিছু না বোঝার হাসি হাসল । এ কথার উত্তর দেওয়া তাকে মানায় না ।
পরাশর আবার বললেন --- যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ , ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ --- বুঝেছো । রামলোচন আবার গুটখা খাওয়া দাঁত বের করে হাসল । সব কথার উত্তর দিতে নেই । মাথার চুল পাকিয়ে, দশ বছর দোকান চালিয়ে , এটুকু সে শিখেছে ।
রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০
বাস্তবানুগ ?
সত্যজিৎ রায়কে আমরা বাস্তবানুগ ছবি নির্মাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করি । কিন্তু ছবির এই অংশটি কী খুব বাস্তবসম্মত ? শহরের পুরপিতা , তাঁর প্রথিতযশা, ডাক্তার দাদার সঙ্গে দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তর্ক করবেন সর্বসমক্ষে? তাঁর বক্তব্য রাখা বন্ধ করে দেবেন গায়ের জোরে ? বাস্তবের রাজনীতিকেরা এত বোকা নন আমাদের দেশেও । একটা দুগ্ধপোষ্য শিশুও বোঝে এভাবে কণ্ঠরোধ করতে গেলে বিপক্ষেরই সুবিধা হয় । যেমনটা আমরা দেখি এই ছবিতে । কিন্তু চিত্রনাট্যের অঙ্ক মেলাবার জন্য সত্যজিৎ রায় অবাস্তব দৃশ্যের অবতারণা করবেন কেন ? তিনি তো মিস্টার পারফেকশনিস্ট । বুদ্ধি তাঁর শানিয়ে নেওয়া , কিছুই দৃষ্টি এড়ায় না । তাহলে এত মোটা দাগের দৃশ্য কেন তাঁর ছবিতে ?
সত্যজিৎ রায় যদি বেঁচে থাকতেন , অবশ্যই আমি তাঁকে নিজের বক্তব্য জানিয়ে চিঠি লিখে উত্তরের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে বসে থাকতাম । তিনি যেমন মানুষ ছিলেন , আমার ধারণা , প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হলে তিনি খুশিই হতেন ।
Ganashatru
https://g.co/kgs/Co8rWx
শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০
শীতের সকাল
কাশফুলে ছুটির আবেগ , দোলে ছুটি, ছুটি ছুটি ঢেউ...
কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport
### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...
-
" ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প সে অনেকদিন আগের কথা ----- ১৯৫৫ - ৫৬ সাল হবে । আমি সে সময় কলেজের ছাত্র । তখন জলপাইগুড়ি বাবু পাড়া পাঠাগারের ...
-
তনয়ের জন্য পাত্রী দেখছেন তার বাবা । রোববার কাগজ এলে গোটা সকালবেলাটা তার কেটে যায় পুত্রের জন্য সম্ভাব্য পাত্রী নির্বাচনে ...
-
Thinking aloud --- উচ্চস্বরে ভাবা । কানে, প্রায় অদৃশ্য হেডফোন গুঁজে কথা বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে চলার কথা বা মোবাইলের পর্দায় নিমগ...
-
পুষ্পাঞ্জলি ট্র্যাভেলস ডুয়ার্সে এখন পর্যটকদের যে দলটা আসে কলকাতা থেকে, তাঁদেরকে নিয়ে ঘোরেন সৈকত । পরিভাষায় তিনি ট্যুর অপারেট...
-
ট্রিপল টি --- টি , টিম্বার আর টোব্যাকো জলপাইগুড়ি জেলা তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির অভিজ্ঞান ছিল একসময় । সে রাম নেই...
-
অফিস থেকে বেরোতে আজ বড্ড দেরী হয়ে গেছে রাপ্তীর । মেন লাইনে এই সময়ে , এত রাতে লেডিজ কম্পার্ট্মেন্ট প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় ...
-
শিমুল ফুলের উপকারিতা,শিমুল গাছের ফুল,bombax ceiba,red cotton tree,cotton tree,shimul flower,shimul flower drawing,shimul flower in bengali,s...
-
আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ(ARCHAEOLOGICAL SURVEY OF INDIA / A.S.I) সম্পর্কে আমার খুব এক...
-
শতবর্ষে সত্যজিৎ ---- একটি জীবন , একটি প্রতিষ্ঠান সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ২ মে ১৯২১ সালে এবং মৃত্যু ২৩ এপ্রিল ১৯৯২ – এ । ছ...
-
Graffiti Visual art genre https://g.co/kgs/2181h1 graffiti art graffiti art drawings graffiti drawings graffiti artist Barrackpor...







