---- কাকা , টিউবের আলোটা এখন ঠিক আছে না ? কাল রাতে চোকটা ঠিক করলাম তো । এর চেয়ে আর কত ভাল আলো দেবে বলো , এইটার বয়স কম হল নাকি ? তাও সাত-আট বছর তো হবেই । দোকান খোলার সময়কার , তাই না কাকা ?
খোকনের এক নাগাড়ে প্রশ্নের উত্তরে রামলোচন শুধু বললেন --- হুম । তারপর হাতে খানিকটা শেভিং ফোম ঢেলে এগিয়ে গেলেন পরাশরবাবুর দিকে । উনি এই দোকানের নিয়মিত খদ্দের । ব্যাঙ্কে কাজ করেন , আর দু'দিন বাদে বাদে দাঁড়ি শেভ করান এবং গোঁফ ছাঁটান । ব্যস্ত মানুষ , দাঁড়ি কাটতে কাটতেও একাধিক ফোন আসে , রামলোচনকে হাত থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । এবার টিউবটা পাল্টাতেই হবে , ভাবতে ভাবতে পরাশরের গালে ফোম লাগাচ্ছিল সে । পরাশর চোখ বন্ধ করে আরাম করছিলেন , কিংবা কিছু চিন্তা করছিলেন । কারণ হঠাৎ হাত তুলে রামলোচনকে বললেন --- থামো , দু'মিনিট দাঁড়াও , একটা ফোন করে নিই । গালে ফোম লাগানো , তাই পরাশর সেভ করা নাম্বারটা ডায়াল করে , লাউডস্পিকার মোডটা অন করলেন। কয়েক সেকেন্ড রিং হওয়ার পরে ওপাশ থেকে কেউ ফোনটা ধরল
---- হ্যালো
---- হ্যাঁ শশাঙ্ক , আমি পরাশর বলছি । আমার ডেস্ক খুলে দেখো , কাল একটা কার লোন অ্যাপ্রুভ করেছি । ছ'লাখ সাতচল্লিশ হাজারের । ওটা বার করো । আর কাস্টমারের সি আই এফটা খুলে দেখতো , আগে কোনও লোন আছে কিনা , ক্লোজ করেছে কিনা ? আমার যেন মনে হচ্ছে একটা টু হুইলারের লোন ছিল । দেখো ভাল করে । তারপর আমাকে জানাও । নির্দেশটা দিয়ে পরাশর রামলোচনকে আবার কাজ শুরু করতে ইশারা করলেন । ক্ষুরের ব্লেড পাল্টাতে পাল্টাতে রামলোচন জিজ্ঞেস করল
---- আজ আপনার ছুটি ?
হ্যাঁ । বাড়ির কতগুলো কাজ আছে , তাই ছুটি নিয়েছি । পরাশর উত্তর শেষ করার আগেই তাঁর ফোন বেজে উঠল । টানা পাঁচ মিনিট চুপ করে , পরপর ইতিবাচক ভঙ্গীতে ঘাড় নেড়ে যাওয়ার পর পরাশরের মুখে হাসি ফুটল ।
--- আরে টু হুইলারের লোন নেওয়ার সময় আমিই ছিলাম তো , আমার মনে আছে । ব্যাঙ্কের লোক হয়ে যদি এসব করে , কাকে আর কী বলব বলো ? একটা লোন ক্লোজ না করে , আরেকটার জন্য অ্যাপ্লাই করেছে ! ঠিক আছে শোন , লোনটা বাতিল করো , বড় সাহেবকে জানাও আর পার্টিকে খবর দাও ।
ফোনটা ছেড়ে হাসি হাসি মুখে রামলোচনের দিকে তাকালেন পরাশর
---- আচ্ছা রামলোচন, যে সব বাবুরা মোটা মাসমাইনের চাকরি করে , সেই সব অফিসের বাইরে প্রতিদিন কাবুলিওয়ালাদের ভিড় হয় কেন বলতো ?
রামলোচন চেষ্টা করে কিছু না বোঝার হাসি হাসল । এ কথার উত্তর দেওয়া তাকে মানায় না ।
পরাশর আবার বললেন --- যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ , ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ --- বুঝেছো । রামলোচন আবার গুটখা খাওয়া দাঁত বের করে হাসল । সব কথার উত্তর দিতে নেই । মাথার চুল পাকিয়ে, দশ বছর দোকান চালিয়ে , এটুকু সে শিখেছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.