রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০

বাস্তবানুগ ?

 



            সত্যজিৎ রায়ের 'গণশত্রু' ছবির দৃশ্য । ছোটমুখে বড় কথা হবে , কিন্তু ছবির এই অংশটা আমার ভীষণ দুর্বল মনে হয় । ছবিতে এই দু'জন সহোদর । বড় ভাই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর ছোট ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় । দু'জনেই একই শহরের কৃতী মানুষ । কিন্তু বড় ভাই আদর্শবাদী , আপসহীন মানুষ । আর ছোটভাই জীবনে চলার পথে নীতি-আদর্শের তোয়াক্কা করেন না । 'ঘরে-বাইরে' উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন , পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে , যাঁদের স্বভাব জেতা । ছোটভাই ঠিক সেই ধরণের মানুষ । গল্প যে শহরকে ঘিরে আবর্তিত হয় , তিনি সেই শহরের পুরপিতা । শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্দিরের পরিচালন সমিতির হোতা । সেই মন্দিরের চরণামৃতের জলে জীবাণু ধরে ফেলেন বিজ্ঞানমনস্ক , পেশায় শহরের নামকরা ডাক্তার বড়ভাই । অবিলম্বে মন্দির এবং চরণামৃতের তথা জলের উৎস বন্ধ করার এবং তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় মেরামত করার পক্ষে সওয়াল করে , উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণসহ প্রবন্ধ লিখে পাঠান শহরের জনপ্রিয় দৈনিকে । পুরপিতা ভাই , শেষ মুহূর্তে কাগজের সম্পাদকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে , সেই প্রবন্ধের প্রকাশ আটকে দেন । দাদার কাছে এই কাজের কারণ ব্যাখ্যা করে ধর্মের দোহাই দেন , মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগার কথা বলেন । কিন্তু অচিরেই বেরিয়ে আসে প্রবন্ধ প্রকাশের বিরুদ্ধে আসল কারণটি --- মন্দিরের প্রণামী বাবদ আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া । মানুষের জীবন বাঁচানো আগে , না মন্দির আগে , এই প্রশ্নে দুই ভাইয়ে সংঘাত বাধে । বিবাদ গড়ায় শহরের সবচেয়ে বড় দুর্গা মণ্ডপে আয়োজিত বিতর্কসভায় । সেই বিতর্ক সভারই দৃশ্য এটি । গল্পটা সবার জানা । তবু বললাম , এই দৃশ্যটি আমার ভাল না লাগার কারণ ব্যাখ্যা করার মুখবন্ধ হিসেবে । 

            সত্যজিৎ রায়কে আমরা বাস্তবানুগ ছবি নির্মাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করি । কিন্তু ছবির এই অংশটি কী খুব বাস্তবসম্মত ? শহরের পুরপিতা , তাঁর প্রথিতযশা, ডাক্তার দাদার সঙ্গে দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তর্ক করবেন সর্বসমক্ষে? তাঁর বক্তব্য রাখা বন্ধ করে দেবেন গায়ের জোরে ? বাস্তবের রাজনীতিকেরা এত বোকা নন আমাদের দেশেও । একটা দুগ্ধপোষ্য শিশুও বোঝে এভাবে কণ্ঠরোধ করতে গেলে বিপক্ষেরই সুবিধা হয় । যেমনটা আমরা দেখি এই ছবিতে । কিন্তু চিত্রনাট্যের অঙ্ক মেলাবার জন্য সত্যজিৎ রায় অবাস্তব দৃশ্যের অবতারণা করবেন কেন ? তিনি তো মিস্টার পারফেকশনিস্ট । বুদ্ধি তাঁর শানিয়ে নেওয়া , কিছুই দৃষ্টি এড়ায় না । তাহলে এত মোটা দাগের দৃশ্য কেন তাঁর ছবিতে ?

             সত্যজিৎ রায় যদি বেঁচে থাকতেন , অবশ্যই আমি তাঁকে নিজের বক্তব্য জানিয়ে চিঠি লিখে উত্তরের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে বসে থাকতাম । তিনি যেমন মানুষ ছিলেন , আমার ধারণা , প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হলে তিনি খুশিই হতেন ।  


Ganashatru


https://g.co/kgs/Co8rWx



ফিচার প্রতিবেদন


ফিচার সংবাদ

ফিচার নিউজ


ফিচার পাতা

ফিচার লেখা


news feature article


news feature story


news feature example



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...