সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

তরোয়ালে ফিট

 

তরোয়ালে ফিট


“আমি চাই হিন্দু নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে , মানুষ শুধু , আমি চাই বি জে পি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ / আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু । আমি চাই কাশ্মীরে আর শুনবে না কেউ গুলির শব্দ / আমি চাই মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ । যদি বলো চাইছি নেহাৎ চাইছি নেহাৎ স্বর্গরাজ্য / আমি চাই একদিন হবে, একদিন হবে, এটাই গ্রাহ্য । “  ---- কবীর সুমন ।

আমরা যখন নব্বই – এর দশকে স্কুলে পড়ছি , তখনিই সুমনের মত একটা ইচ্ছে মনের ভেতর গেঁথে যাচ্ছে ---- “মরবো দেখে বিশ্ব জুড়ে যৌথ খামার ।“ ওই সময়ে মনটা – মাথাটা কাদার তালের মত থাকে তো , ভালো – মন্দ যাই –ই দেখুক – শুনুক , মনে স্থায়ী দাগ কেটে যায় । আমাদেরও গেছে । ১৯৯১ সালের ১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ছবি , শেষ ছবি , ফিনিশিং টাচ ---- ‘আগন্তুক’ । সেই ছবিতে সত্যজিতের মুখপাত্র মনমোহন মিত্রের সাথে গৃহকর্তার ব্যারিস্টার  বন্ধু নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন , আসলে তাঁকে বাজিয়ে দেখতে আড্ডার ছলে জেরা করছেন । জিজ্ঞেস করছেন --- “আপনি ধর্ম মানেন না ?” মনমোহনের মুখ দিয়ে সত্যজিৎ উত্তর দিচ্ছেন --- “যে জিনিস মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে , আমি তাকে মানিনা । রিলিজিয়ন এটা করেই । সেই একই কারণে আমি জাতও মানিনা । “ গোটা দেশ জুড়ে গো – রক্ষকদের হাতে নিয়মিত মানুষ জবাই হতে দেখে আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে , কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক মনে হয় । দশ বছর ধরে নীচু জাতের মানুষের দেহ সেতুর ওপর থেকে দড়ি দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় নদী তীরের শ্মশান ঘাটে , কারণ শ্মশানে যাওয়ার রাস্তাটি উঁচু জাতের এলাকায় পড়ে --- এই খবর দেখেও মনে হয়, এ তো আমারও মনের কথা । নব্বই দশকের শেষ লগ্নে অধ্যাপক অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেলেন ‘কল্যাণমূলক অর্থনীতি’ নিয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য । পুরস্কারে পাওয়া অর্থ দিয়ে বোলপুরে নিজেদের বাড়ির নামে একটা ট্রাস্ট তৈরি করলেন --- ‘প্রতীচী ট্রাস্ট’ । যে সংস্থা এদেশের বুনিয়াদি শিক্ষাক্ষেত্রের হাল – হকিকত সম্বন্ধে নিবিড় গবেষণা করে চলেছে দু’ দশক ধরে । আলফ্রেড নোবেলের তবু তো কিছুটা পাপ ছিল – ডিনামাইট আবিষ্কার । এই মানুষটির যে তাও নেই , একেবারে নিষ্কলঙ্ক । তাই এই মানুষটিরও মুক্ত চিন্তার প্রভাব থেকে নিজেদের সযত্নে সরিয়ে রাখা সম্ভব নয় । রাজ্যে রেকর্ড সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু , যার বেশির ভাগটাই আমাদের ছোটবেলা জুড়ে । তাঁকে সাংবাদিকেরা বি জে পি সম্পর্কে যে কোনও প্রশ্ন করলে , তিনি উত্তর শুরু করতেন দু’টি শব্দ দিয়ে – ‘অসভ্য , বর্বর’ । তার কারণও ছিল । নব্বই দশকের শুরুর দিকে(৬ ডিসেম্বর ১৯৯২) বাবরি মসজিদ ধবংসের মত ঘটনা ঘটে গেছে , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পীড়িতকে আশ্রয় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই রাজ্য (গুজরাতের গোধরা দাঙ্গা, ২০০২, কুতুবুদ্দিন আনসারি ) , রাজ্যের রাজনীতি । আর যা – ই করুক বামেরা কখনও রাজনীতি করতে গিয়ে ধর্মের তাস খেলেনি , খেলতেও দেয়নি । আত্মশ্লাঘার বিষয় তো বটেই । শিক্ষণীয়ও । তাই আমরা ছোট থেকেই ধর্মের নামে রাজনীতিকে ঘেন্না করতে শিখেছি , কারণ আমাদের কাছে কোনও বিকল্প ছিলনা । ঠিক যেমন এখন ছোটরা রাম নবমীতে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে , করতে বাধ্য হয় , কারণ তাদের বা তাঁদের অভিভাবকদের কাছে কোনও যোগ্যতর রাজনৈতিক শক্তি নেই । কিন্তু আমরা , যে রাজনীতি হিন্দু ও মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে একটা অখণ্ড রাজ্যকে জম্মু – কাশ্মীর – লাদাখ ,  তিন টুকরো করে দেয় , তার ওপর ভরসা রাখি কী করে ?

    কিন্তু হঠাৎ এত কথা আসছে কেন ? কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লির ‘ফিট ইন্ডিয়া’ অভিযান মঞ্চে বলেছেন –-- “ষাট – সত্তর – আশির দশকে যারা স্কুলে পড়তেন , তাঁদের পড়ানো হত ‘ত’ – এ তরোয়াল । কিন্তু দুর্ভাগ্য , কিছু সীমিত ভাবনার মানুষ দেশের ঐতিহ্যকে বেলাইন করেছেন । কিছু বুদ্ধিমান মানুষের মনে হল , ‘ত’ – এ তরোয়াল শেখানো হলে শিশুদের মনে হিংসার প্রবৃত্তি জন্ম নেবে । তখন থেকে ‘ত’ – এ তরমুজ পড়ানো শুরু হল । এর ফলে শরীর চর্চার ক্ষতি হয়েছে ।“ বি জে পি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা , গত কয়েক দশকে কংগ্রেস জমানায় বামপন্থার প্রভাবে ভারতের ‘চিরাচরিত ঐতিহ্য’ ধীরে ধীরে মুছে গিয়েছে । ইতিহাসকেও বিকৃত করা হয়েছে । তা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে ।

 

   কী করে বিনা বাক্যব্যয়ে এসব কথা মেনে নিই ! লিও  টলস্টয়- এর ‘ওয়র অ্যান্ড পিস’ পড়িনি ঠিকই , কিন্তু প্রাথমিক স্তরে কিছু প্রবাদ বাক্য তো মুখস্থ করেছিলাম , যেমন ---‘দ্য পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোরড’ । তরবারির চাইতে কলমের জোর বেশি । এই শিক্ষায় শরীর চর্চার কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি । নিয়মিত মাঠে যেতাম , খেলতাম । সর্বোপরি নীচু ক্লাসে এবং মাধ্যমিকে আলাদা একটা বিষয়ই ছিল – ‘শারীর শিক্ষা’ । সে বিষয়েও রীতিমত পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হত । তবে হ্যাঁ , প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নেচে ‘দেশের সাহসিকতার ঐতিহ্য’ অথবা ‘ফিটনেসের পরীক্ষা’ দিতে হয়নি কখনও । সেই প্রশ্নই ছিলনা । এমন কোনও কীর্তিকলাপে লিপ্ত হলে স্কুল সোজা টি সি ধরিয়ে দিত হাতে ।

 

গত ৫ অগস্ট ২০১৯ সংসদে জাতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত পাশ হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়ার কথা বলছে মোদী সরকার । অনেকেরই মনে প্রশ্ন, এমন গায়ের জোরে লোকের উপকার করা যায় না কি ! করা হলেও তা কি আদৌ কার্যকরী হবে ?  নব্বই দশকে স্কুলে , উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আমাদের পাঠ্য ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ ভাবনা --- ‘লোকহিত’ । সেখানে শুরুতেই তিনি লিখছেন ---“ ‘এই লোকসাধারণের জন্য কিছু করা উচিত’ হঠাৎ এই ভাবনা আমাদের মাথায় চাপিয়াছে । এই কারণে , ভাবনার জন্যই ভাবনা হয় । আমরা পরের উপকার করিব মনে করিলেই উপকার করিতে পারি না । উপকার করিবার অধিকার থাকা চাই । ছোটোর উপকার করিতে হইলে কেবল বড়ো হইলে চলিবে না --- ছোটো হইতে হইবে, ছোটোর সমান হইতে হইবে । মানুষ কোনো দিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না , কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে ।“ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক – সামাজিক পরিস্থিতির বিচারে কথাগুলো ভীষণ প্রাসঙ্গিক , এবং শিক্ষণীয় মনে হয় না ? দেশেরই একটা অংশকে গায়ের জোরে পরস্পরের থেকে র‍্যাডক্লিফের মত আলাদা করে দিয়ে , অ- সমান করে দিয়ে, তাঁদের ভালো করার কথা বলা হচ্ছে ! লেখক আরও বলছেন --- “হিত করিবার একটিমাত্র ঈশ্বরদত্ত অধিকার আছে , সেটি প্রীতি । মানুষকে সকলের চেয়ে নত করিবার উপায় --- তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না করা ।“ প্রীতি না করার ফল , বিতর্কিত বিল পাশের ২৩ দিন পর , জম্মু- কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে দেওয়া রিপোর্টে পরিষ্কার ---স্বাভাবিক, শান্ত কাশ্মীরের প্রশাসনিক পরিসংখ্যান । ৫৩১ টি পাথর ছোড়ার ঘটনা , ৫০ টি রাস্তা রোকো , আহত ৯১ , এদের মধ্যে ৭১ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী ।

     কাশ্মীরের মানুষদের বিক্ষুব্ধ মনোভাবের যেটুকু খবর বাইরে আসছে , তার সাথে মিলিয়ে নেওয়া যায় এই লাইনটি --- “হিতৈষী যে সুদটি আদায় করে সেটি মানুষের আত্মসম্মান; সেটিও লইবে আবার কৃতজ্ঞতাও দাবি করিবে, সে যে শাইলকের বাড়া হইল ।“ “সেইজন্য, লোকহিত করায় লোকের বিপদ আছে ।“ হিন্দু প্রধান, মুসলিম প্রধান অঞ্চল হিসেবে টুকরো হয়েছে জম্মু- কাশ্মীর । অনেকে অতীতের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে , যুক্তি সাজিয়ে বলছেন, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের একেবারে সঠিক পদক্ষেপ । সাধারণ নাগরিকদের বাইরে, তাদের মধ্যে বিরোধী দলের কিছু কিছু নেতারাও আছেন । এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের পর্যবেক্ষণ – “এক মানুষের সঙ্গে আর- এক মানুষের , এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর- এক সম্প্রদায়ের তো পার্থক্য থাকেই , কিন্তু সাধারণ সামাজিকতার কাজই এই --- সেই পার্থক্যটাকে রূঢ়ভাবে প্রত্যক্ষগোচর না করা ।“  “কুস্তির সময়ে কুস্তিগিরদের গায়ে পরস্পরের পা ঠেকে , তাহার হিসাব কেহ জমাইয়া রাখে না ; কিন্তু সামাজিকতার স্থলে কথায় কথায় কাহারো গায়ে পা ঠেকাইতে থাকিলে তাহা ভোলা শক্ত হয় । সমাজের অপমানটা গায়ে লাগে না , হৃদয়ে লাগে ।“ শুধু কাশ্মীর নয় , সারা দেশেই, বস্তুত সারা বিশ্বেই ক্রমশ বেড়ে চলা সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছবির সঙ্গে কথাগুলো যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় । ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের বিপক্ষে মোক্ষম যুক্তি হতে পারে শুধু এই একটি লাইন --- “আমাদের সমাজ লোকসাধারণকে যে শক্তিহীন করিয়া রাখিয়াছে এইখানে সে নিজের শক্তিকে অপহরণ করিতেছে । পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠে --- এইখানেই মানুষের পতন ।“ তাহলে এই পরিস্থিতির থেকে পরিত্রাণের পথ কী ? উত্তর --- “সেই শক্তি দিতে গেলেই তাহাদের হাতে এমন একটি উপায় দিতে হইবে যাহাতে ক্রমে তাহারা পরস্পর সম্মিলিত হইতে পারে – সেই উপায়টিই তাহাদের সকলকেই লিখিতে পড়িতে শেখানো ।“ একদিকে সন্ত্রাসবাদ, আরেক দিকে সন্ত্রাস দমনে নির্বিচারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন – এই সাঁড়াশি চাপের মাঝে পড়ে দশকের পর দশক ধরে যে অঞ্চলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্রছাত্রী আসা যাওয়া বন্ধ থাকে বছরের বেশিরভাগ সময়ে, যেমন এখন , সেখানে স্বাভাবিক পারস্পরিক মেলামেশা ও পড়াশোনা কী ভাবে সম্ভব, দেবা ন জানন্তি , কু তো মনুষ্যাঃ । যাদের স্কুল – কলেজে যাওয়ার বয়েস , তাঁদের ইটের জবাব ছররা গুলিতে দিলে যে সেই পরিবেশ তৈরি করা অসম্ভব সে কথা হলফ করে বলা যায় । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কি তরোয়াল চালনার চর্চায় ফিট থাকার নিদান দিয়ে হিংসার সংস্কৃতিকেই উস্কে দিলেন না ? তাহলে আর হিংসার আশ্রয় নেওয়া উপত্যকার জেন ওয়াই – কে দোষারোপ করা কেন ?  পাশ করার তাগিদেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলো আমাদের, মগজে একরকম গেঁথে নিতে হয়েছিল । হয়ত বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন খুব সচেতনভাবেই চেয়েছিলেন আমরা গোঁড়ামিমুক্ত ভাবনাচিন্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠি । বামপন্থী মতাদর্শ আর রবি ঠাকুরের সমাজ ভাবনা কোথাও যদি মিলে যায় , মিশে যায় তাহলেও বোধহয় দেশীয় ঐতিহ্য নষ্ট করা এবং ইতিহাস বিকৃত করার দায়ে বাম সরকারকে দায়ী করা চলে না । পরিণত বয়সে এসে মনে হয় , ‘লোকহিত’ পড়ে অপকার কিছু হয়নি । বরং অতীতের শিক্ষা বর্তমান সময়কে বুঝতে সাহায্যই করছে ।

    উচ্চ মাধ্যমিকেই ইংরেজিতে পাঠ্য ছিল একটি নাটক – ‘প্রোগ্রেস’ । এস টি জি আরভিনের লেখা নাটকের নামটি আসলে বিদ্রূপাত্মক । নাট্যকার এই নাটকে সমানে প্রশ্ন করেন , ব্যঙ্গ করেন, সেই সমস্ত রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞানীদের , যারা মনে করেন যুদ্ধের জন্য , যুদ্ধের আতঙ্ক তৈরির জন্য মারণাস্ত্র তৈরি করে তাঁরা বিজ্ঞানের বিরাট অগ্রগতি ঘটাচ্ছেন । নাটকে দু’টি চরিত্র --- মিসেস মেলডন এবং তাঁর ভাই প্রফেসর হেনরি কুরি । মিসেস মেলডনের একমাত্র ছেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছে । তাঁর স্বামীও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন । যুদ্ধ মেলডনের জীবনকে নিঃসঙ্গ ও দুর্বিষহ করে তুলেছে । তাঁর ভাই কুরি, সেই ধরনের বিজ্ঞানী যারা যুদ্ধের জিগিরকে প্রশ্রয় দেন এবং এই পরিস্থিতির ফায়দা লোটেন কাঞ্চন মূল্যে । মেলডন যতটা সংবেদনশীল , কুরি ঠিক ততটাই অমানবিক ।

    মিসেস মেলডন , প্রফেসর কুরির  ভয়ঙ্কর আবিষ্কারের কথা শুনে চরম আতঙ্কিত হন , বারে বারে প্রাণঘাতী বোমা আবিষ্কারের মূল সূত্রগুলি নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে অনুরোধ করেন । কিন্তু কুরি সে সব কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেন না । মরিয়া হয়ে মেলডন চরম সিদ্ধান্ত নেন , একটি ছুরি আমূল গেঁথে দেন ভাইয়ের পিঠে । কুরি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েন । মারা যান । বিয়োগান্তক নাটকে যবনিকা পতন হয় ।

  এই নাটকে কুরির একটি স্মরণীয় সংলাপ --- “উইথ আ সিঙ্গল বম্ব , উই কুড ওয়াইপ আউট দ্য পপুলেশন অব আ সিটি অ্যাজ আ বিগ অ্যাজ ম্যানচেস্টার ।“ খবরের কাগজে প্রতিদিন দেশ এবং বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের যুদ্ধোন্মাদনা দেখে এই সংলাপ মনে পড়ে না ? প্রসঙ্গত নাটকটি প্রকাশ্যে আসে ১৯১৯ সালে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের বছর । আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগে । এখনও নাটকের মূল বার্তাটি কতখানি প্রাসঙ্গিক তা সংবাদ মাধ্যমে নজর রাখলেই বোঝা যায় । রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের বিরোধিতায় এখন এদেশে যারা এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন , তাঁদের ‘আরবান নকশাল’ তকমায় দাগিয়ে দেওয়া হয় ।

 

    এমন সব ধ্রুপদী সাহিত্য যখন পাঠ্য ছিল তখন আমরা গোকুলে বাড়ছিলাম । তাই যস্মিন দেশে যদাচার বলে আজ হঠাৎ অসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া আমদের পক্ষে সম্ভব নয় । নশ্বর দেহ পঞ্চভূতে মিলিয়ে গেলেও নয় ।

 

                                ------------------------------------

(১৮ অক্টোবর , ২০১৯ 'উত্তরবঙ্গ সংবাদ'-এ উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে, সম্পাদিত রূপে প্রকাশিত ।)

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_0.html









প্রবন্ধ রচনা

প্রবন্ধ

বাংলা প্রবন্ধ

ব্যক্তিগত প্রবন্ধ


                                                                       ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ


আজাদি। কানহাইয়া কুমার

 

আজাদি

 

জরা জোর সে বোলো ---

জরা হাত বাজা কে -----

আরে ডরতে কিউ হো ---

জরা আগে আও ----

আরে লে কে রহেঙ্গে ---

হ্যায় ওয়াদা হমারা ----

 

এন আর সি , সি এ এ , এন পি আর বিরোধী একটি নাগরিক মঞ্চ থেকে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি ২০২০, দেশপ্রেম দিবসে , ব্যারাকপুরের দেবশ্রী হল প্রাঙ্গণে বিকেল চারটের সময় । সভার সর্বকনিষ্ঠ বক্তা এবং মুখ্য আকর্ষণ কানহাইয়া কুমার মঞ্চে উঠলেন রাত আটটায় । স্বেচ্ছাসেবকদের কথাবার্তা থেকে জানা যাচ্ছিল , বি টি রোড ধরে আসার পথে , সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসে বারবার থেমে যাচ্ছে তাঁর গাড়ি । ওই প্রাঙ্গণে কত লোক ধরে ? আমার ধারণা নেই । সেই বড় মাঠটায় , মাঠের সামনে রাস্তায় , মাঠের আশেপাশে সবক’টা বাড়ির ছাদে – বারান্দায় , এমনকি মঞ্চের পিছনের রাস্তায় তখন তিল ধারণের জায়গা নেই । যে দিকে চোখ যায় , শুধু আবালবৃদ্ধবনিতার মাথা । সবচেয়ে চোখে পড়ার মত ছিল কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এবং সমবয়স্কদের উদ্দীপনা , ‘আজাদি’ স্লোগান । উঁচু পাঁচিলের উপর বসে , দাঁড়িয়ে প্রায় সমবয়স্ক একজন রাজনৈতিক কর্মীর বক্তব্য মন দিয়ে শুনছেন , অনেকের কাছে ‘হোয়াটস অ্যাপ প্রজন্ম’, – এ দৃশ্য দেখেও আনন্দ । ইতিহাসের সব ক’টা বড় বিপ্লব ছাত্রদের হাত ধরে এসেছে । সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল তিয়েন আন মেন স্কোয়ার বা ট্রাফালগার স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে আছি । এঁরা রাজনীতি বিমুখ ? মনে হয় না ! মনে হয় ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ প্রজন্ম’ তাঁদের নেতা খুঁজে নিয়েছে । কানহাইয়ার ধারে কাছে ঘেঁষতে না পারলেও তাঁর এক সহকর্মীকে খুব কাছ থেকে দেখলাম , তাঁর কথাও শুনলাম , শুনলাম তাঁর নাম কাকতালীয় ভাবে ---- আজাদ ! ততক্ষণে রাজনৈতিক বক্তব্য শেষে ডুবকির সাথে কানহাইয়া ‘আজাদি’ আবৃত্তি শুরু করেছেন ; তিনি এক একটি পঙক্তি তাল কেটে কেটে বলছেন , আর তার পর জনতা সমস্বরে গর্জে উঠছে – আ – জা --- দি । তাঁদের সাথে গলা না মিলিয়ে পারলাম না ---

জো তুম না দোগে-----

হাম ছিন কে লেঙ্গে---

আরে তুম ভি বোলো-----

ওহ মেহকি মেহকি----

হাম লে কে রহেঙ্গে----

হ্যায় ওয়াদা হমারা---

আ --- জা --- দি ।

ফুল ফুটুক , না ফুটুক আজ বসন্ত । আজকের সন্ধেটা “মনে--- রেখে দেব ।“

   এ দিন সভামঞ্চের আশেপাশে চোখে পড়ার মত ছিল পুলিশি তৎপরতা । ম্যানপ্যাক হাতে উচ্চপদস্থ আধিকারিক আর মহিলা পুলিশ কর্মীতে চারিদিক ছয়লাপ । কানহাইয়ার বক্তৃতার সময় , মঞ্চের পাশের গলিতে আমাদের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক । তাঁর উর্দিতে, বুকের কাছে ছোট্ট ক্যামেরা আটকানো , মুখ মঞ্চের দিকে ।

       ঘটনাচক্রে কানহাইয়া এদিন ঢুকেছিলেন সারেন্ডার নট বন্দ্যোপাধ্যায় রোড দিয়ে , বেরিয়ে গেলেন যে রাস্তা দিয়ে তার নাম --- শহীদ মঙ্গল পাণ্ডে সরণি ! বুঝো সাধু যে জানো সন্ধান !

        কানহাইয়া ছাড়াও এদিন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় , তড়িৎবরণ তোপদার , মহম্মদ সেলিম , দীপঙ্কর ভট্টাচার্য , অভিনেতা বাদশা মৈত্র , সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী , চন্দন সেন প্রমুখ । এদিন একটা ব্যাপার খুব দৃষ্টিকটু লাগল । স্লামডগ মিলিওনেয়ার ছবিতে অনিল কপূরের দাঁতে দাঁত চেপে  একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংলাপ ছিল --- “দিস ইজ মাই শো , মাই শো ।“ নমস্য বক্তাদের অনেকের কথার মধ্যেই মূল আলোচ্য বিষয় থেকে সরে গিয়ে , এই ভাবটিই প্রকট হয়ে উঠল । ওঁরা ভুলে গেলেন মঞ্চ দখলের সময় এটা নয় ।  

         নির্ধারিত সময়ের সাড়ে চার ঘণ্টা পরে , রাত সাড়ে আটটায় , ‘বাচ্চা ছেলে’টার গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই সভার সমাপ্তি ঘোষিত হল । মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন !

 

                            --------------------

('সুখবর' কাগজে উত্তর সম্পাদকীয় হিসেবে প্রকাশিত ।)

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_98.html


picture courtesy: getty images.



কানহাইয়া কুমার

Kanhaiya Kumar

Indian Politician

https://g.co/kgs/fmfT2y

কানহাইয়া কুমার কা ভাষণ


kanhaiya kumar in west bengal


kanhaiya kumar news







প্রেমপত্র । রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

 

প্রেমপত্র

 

সুজন এখন একাদশ শ্রেণি । রোজ আড্ডা দিতে বেরোয় বিকেলবেলায় । তিস্তার স্পারে গিয়ে বন্ধুদের সাথে সবে শেখা সিগারেটে টান দেওয়ার রোমাঞ্চ উপভোগ করে । স্পারের ঝোপঝাড়ে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলা আর ঝিঁঝিঁ পোকার কোরাস শুরু হওয়ার পর , বাড়ি ফেরার আগে, চিবনোর জন্য মৌরির প্যাকেটও রাখে প্যান্টের পকেটে , যাতে মুখ দিয়ে তামাকের উগ্র গন্ধ বের না হয় । মা টের পেলেই বলা শুরু করবে,--- “তুই আবার ওইসব ছাইপাঁশ খেয়েছিস ? চারিদিকে এত ক্যানসার হচ্ছে তবুও ! আর পাঁচজনের মত সুজনও জ্ঞানপাপী । ক্ষতি হবে জেনেও বুকে ধোঁয়া টানে , বুকের অন্য আগুনকে নেভানোর জন্য । ওর বাবা কিছু ব্যাপারে খুব কড়া । বাবার বেঁধে দেওয়া নিয়ম হল , বিকেল চারটের পর বাড়িতে থাকবে না , আর সন্ধে ছ’টা , বড়জোর সাড়ে ছ’টার পর আর বাড়ির বাইরে থাকবে না । সুজন ভালমত জানে, এই নিয়মের অন্যথা হলে কপালে জবরদস্ত ঝাড় আছে । তাই কিছু ব্যাপারে নিজের স্বার্থেই সে নিপাট ভাল ছেলে । আজও বাড়ির গেট খোলার আগে সে রিস্টওয়াচ দেখে নিয়েছে । পাক্কা ছ’টা দশ । কিন্তু গেটের সামনের ঘরের লাইট জ্বলছে কেন ? কেউ এসেছে নিশ্চয়ই । ওই ঘরেই তো সাইকেলটা ঢোকাতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেজিয়ে রাখা পাল্লাটা ঠেলতেই চমকে উঠল সুজন । বাবা বসে , মুখ গম্ভীর , চোয়াল শক্ত আর চোখ সরাসরি ওর দিকে । সুজনের তলপেট গুড়গুড় করতে শুরু করেছে । কিছু বলা বা করার আগেই নির্দেশ এলো --- “বোস ।“ সুজন ঢোঁকটা পুরো গেলার আগেই ওর বাবা একটা ডাকে আসা খাম ধরিয়ে দিলেন হাতে । বললেন – “আজ বিকেলে এটা এসেছে , তুই বেরোবার পরে । দেখ , কাউকে ভাল লাগতেই পারে , সেটা দোষের কিছু না । কিন্তু আপাতত এসব নিয়ে মেতে না উঠে, পড়াশোনাটা ঠিকমত কর । সারাজীবনে ভাল মেয়ে অনেক দেখবি , প্রেম করারও অনেক সময় পাবি । আমার অভিজ্ঞতা বলে , চিরকাল জগতে সব সামাজিক গোলমালের মূল কারণ দু’টো । নারী আর অর্থ । আপাতত, এই গোলযোগে তোর না জড়ালেও চলবে । আমার তা-ই মনে হয় । আর তুই নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখিস । সে বয়স তোর হয়েছে । এবং অবশ্যই , মনে করে, চিঠিটা পড়া হয়ে গেলে ছিঁড়ে ফেলে দিস ।“ সুজনের হতভম্ব ভাবটা কাটার আগেই এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে, ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ওর বাবা । ছিঁড়ে ফেলতে বলার তো একটাই কারণ থাকতে পারে । আর কেউ যাতে এই চিঠির কথা না জানে । আর কেউ বলতে , সুজনের পিঠোপিঠি বোন মুনমুন । একবার এটার কথা জানলে ও জ্বালিয়ে মারবে , শুধু তা-ই নয় , নিজের বন্ধু মহলে রাষ্ট্র করবে এই চিঠির কথা , সেটা সুজন বিলক্ষণ জানে । কিন্তু এমন কী আছে চিঠিতে , যে পড়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে ? ভ্রূ কুঁচকে চিঠিটা খুলল সুজন । রুল টানা নোট খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা ---- “আপনার ছেলে আজকাল বড্ড মৌটুসির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে । প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে মৌটুসিকে ভালবাসে । মৌটুসি আমার । অবিলম্বে ওর পিছু না ছাড়লে ফল খুউব খারাপ হবে । ইতি, জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী ।“ এ-এ-এহ ! বীরপুরুষ একেবারে । যদি হিম্মত থাকে, তবে সামনে এসে ডুয়েল লড় ! দুধ কা দুধ , পানি কা পানি হয়ে যাবে । তা না , যত রাজ্যের খচরামো । আর দেখ , হুমকিও দিয়েছে প্রায় সাধুভাষায় । কোনও আনাড়ি রোমিওর হাতের কাজ যে এটা নয়, সেটা বুঝতে অসুবিধে হয়না । কিন্তু একী ! হাতের লেখাটা যে বড্ড চেনা চেনা লাগে । হাতের লেখা যতই বিকৃত করার চেষ্টা করো বাবা , সুজন বসুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয় । দিনের পর দিন তোর পাশে বসে ক্লাস করছি , আর তোর হাতের লেখা চিনব না ? শারলক হোমস , ফেলুদা , ব্যোমকেশ বক্সী , কিরীটী রায় গুলে খাওয়া সুজনকে এত ভ্যাবলারাম ভাবলি তুই । কিন্তু তাই বলে, তুই ! শালা , একটু আগেই যে ঘাড়ে হাত রেখে দিব্যি গল্প করলি । একবার মুখ ফুটে এই কথাগুলোই  বলে দেখতে পারতিস । সরে যেতাম তোদের মাঝখান থেকে । তা না করে , এইভাবে পিছন থেকে ছুরি মারলি ভাই । ইউ টু , ব্রুটাস ? শালা এসকেপিস্ট ।

নিজের মনে এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সুজনের একবার মনে হল এখনিই একবার বেরিয়ে গিয়ে হতচ্ছাড়ার কলার খামচে ধরে । এখনও ওরা স্পারেই আছে । তারপরেই বুঝল, কোনও লাভ নেই তাতে । ওই ইয়েটা কিচ্ছু স্বীকার করবে না , বন্ধুদের সামনে ভাল মানুষ সাজবে । তুমি তো আবার বাবা অল স্কোয়ার , পড়াশোনায় ভাল , তার ওপর আবার কুইজ থেকে ছবি আঁকা , সব প্রতিযোগিতায় নিয়মিত পুরস্কার জেতো । শিলিগুড়ি আকাশবাণীতে শ্রুতিনাটক করো । সর্বোপরি , রমণীমহলে তোমার তো আবার বিশেষ সমাদর রয়েছে । যেখানে যাও গোপিনীরা ছেঁকে ধরে , আর আমরা দূরে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষি ! আমার কথা কে বিশ্বাস করবে বলো ? কব্জির জোরে যে আমি পারবোনা , সেটা তুমি খুব ভাল করে জানো । তাই ভেবেচিন্তে এই রাস্তা নিয়েছ । মোটের ওপর, কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে , সুজন বুঝল চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলে বিষয়টা ভুলে যাওয়া ছাড়া , তার সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই আপাতত । তাহলে কী মৌটুসিই ওকে দিয়ে এসব করিয়েছে ? কাল সুরঞ্জনা একবার বলছিল বটে – “মৌটুসি কাকুর নাম করে বলল , ওনার ছেলে আমার পিছনে খুব লাইন মারছে আজকাল । রোজ বিকেলে ও যখন ছাদে পায়চারি করে , তুই নাকি ওদের বাড়ির চারপাশে সাইকেল নিয়ে চক্কর কাটিস ? তোর হাঁ মুখ নাকি বন্ধই হয় না ? ও কিন্তু খুব বিরক্ত এটা নিয়ে ।“ তা সুজনের কী দোষ ? এ তো যৌবনের তাড়না । একটা লেখাপড়ায় ভাল , মোটামুটি চটকদার মেয়ে যদি একসাথে পড়তে যাওয়ার সময় সর্বদা স্কিন টাইট জিন্স – টপ পরে , ঠোঁটে লিপ গ্লস দিয়ে ঘুরে বেড়ায় , তবে কোন ছেলে লাট খাবে না ? তবে, সুজন বসু সংযমী মানুষ , ঠিক সময় নিজেই নিজের রাশ টানত । এসব করার কোনও দরকার ছিলনা ।  ইনফ্যাচুয়েশন আর লাভ – এর ফারাক সে বোঝে । মাঝখান থেকে ওকে নিয়ে বাবার চিন্তা বাড়ল । এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই খাম- সহ চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে বাড়ির নালায় ফেলে দিল সুজন । আর ঠিক করল, আজ থেকে মৌটুসি আর ‘জনৈক শুভানুধ্যায়ী’র সাথে কথা বলা বন্ধ । চিরতরে ।

 

      তারপর , জীবন গিয়েছে চলে তাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার । সুজন নিজেকে দেওয়া কথা রাখতে পারেনি । ওই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ওর রাগ পড়ে গিয়েছিল । ওই দুই বন্ধু – বান্ধবীর সাথেও  সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল । ওরা এখন ঘোর সংসারী মানুষ , আলাদাভাবে ! ওদের প্রেমটাও জমেনি । দু’জনেরই বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে এসেছে সুজন । এখন তো ওদের ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে গেছে । পুরনো দিনের অনেক ঘটনা নিয়ে এখন সবার চোখের সামনেই খোলামেলা আলোচনা , হাসিঠাট্টা হয় ওদের মধ্যে, ফেসবুকে । শুধু চিঠির ব্যাপারটা সুজন বিল্কুল হজম করে গেছে । কিচ্ছু বুঝতে দেয়না ওই দু’জনকে । অন্য বন্ধুদের তো নয়ই । এখন ওরা পরিণতবয়স্ক । কিছুটা বোধহয় পরিণতমনস্কও । কারণ ফেসবুকে ওই দুই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারতে মারতে সেদিনের ঘটনার কথা মনে পড়লে এখন সুজনের হাসি পায় ।

      হ্যাঁ । সাংবাদিক এবং পাকা গিন্নি মৌটুসি আর খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক ‘জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী’ দু’জনেই এখন রয়েছে অধ্যাপক সুজন বসুর ফ্রেন্ড লিস্টে । শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আরকী ! তিনজনেই এখন কলকাতা ও শহরতলিতে থাকে । কোনও একটা জায়গা বেছে নিয়ে মাসে একবার নিয়ম করে আড্ডা মারে । মৌটুসির ঠোঁট এখনও রাঙা হয় , তবে খয়েরের কল্যাণে । ও এখন ভীষণ ভাবে পানাসক্ত ! বলে , সবই মেয়ের চিন্তায় । ওর মেয়ে এবার ক্লাস টেনে উঠল ।

                                 ---------------------

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/05/pub-9792609886530610_10.html


প্রেমের গল্প

ভালোবাসার গল্প

গল্প

জীবনের গল্প


ভালবাসার গল্প









প্রেমিকাকে লেখা প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমপত্র প্রতিশব্দ

আধুনিক প্রেমপত্র






হাসির প্রেমপত্র

প্রেমপত্র লেখার পদ্ধতি

সুন্দর প্রেমপত্র

কষ্টের প্রেমপত্র

বাংলা রোমান্টিক প্রেমপত্র

বিখ্যাত প্রেমপত্র

প্রেমিককে লেখা প্রেমপত্র

রোমান্টিক লাভ লেটার

বাংলা রোমান্টিক লাভ লেটার

প্রেমের লাভ লেটার

সেরা প্রেম পত্র

লাভ লেটার পিক    


রোমান্টিক লাভ লেটার

সুন্দর প্রেমপত্র

ভালোবাসার রোমান্টিক চিঠি

প্রেমিকার কাছে রোমান্টিক চিঠি







মিষ্টি প্রেমের চিঠি

শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি

প্রথম প্রেমের চিঠি

একটি প্রেমের চিঠি


শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২০

শিক্ষক দিবস

প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রথমেই বলতে ইচ্ছে করে আমার বাবা স্বর্গীয় শঙ্করদেব গোস্বামীর কথা । কিন্তু আজ সে কথা নয় । আজ বরং বলি আমার স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের কথা যেগুলি মনে স্থায়ী দাগ রেখে গেছে । বোধহয় সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক শেখাতে গিয়ে জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনের শিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি শিখিয়েছিলেন ‘BODMAS’ ফর্মুলাটি । স্যরের শেখানো সার্থক , কারণ আমি অন্তত বদমাইশি ভুলিনি ! তখন ক্লাস ফাইভ , স্যর একদিন ক্লাসে বললেন --- “হাওয়া চোখে দেখা যায় না ।“ আমি বললাম – “ভুল স্যর , যায় ।“ স্যর বললেন , “প্রমাণ করো , নইলে শাস্তি পাবে ।“ আমি মাঠ থেকে একমুঠো ধুলো কুড়িয়ে এনে স্যরের সামনে ফু দিয়ে উড়িয়ে বললাম , “এই দেখুন স্যর , হাওয়া চোখে দেখা যায় !” খুব একচোট হেসে স্যর পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন । আমাদের স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন বিজয়দা । উঁচু ক্লাসের এক দাদা বিজয়দার সাথে দুর্ব্যবহার করায়, বিজয়দা কেঁদে ফেলেছিলেন অপমানে । স্যরের বিষয়টি চোখে পড়াতে আমাকে বলেছিলেন সেই দাদাকে ডেকে আনতে । সে আসার পর , সে কথাটি বলেছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার পর , এত জোরে চড় কষালেন যে টিচার্স রুমের সামনের সিঁড়ি থেকে সেই দাদা ছিটকে পড়ল মাঠে । এই ঘটনাটি আমার জীবনের খুব বড় শিক্ষা । স্কুলে তখন ক্লাস নাইনে পড়ি । শিবকৃষ্ণবাবু ইংরেজির ক্লাস নিতেন । সেদিন এসে বললেন --- “আজ পড়াব না , গতকাল আমার একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে । সেটা বলি । গ্রামের দিকে গেছিলাম , খুব জল তেষ্টা পেয়ে যাওয়াতে একটা নলকূপে প্রায় মুখ লাগিয়ে জল খাচ্ছিলাম । এক চাষি দৃশ্যটা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করল ,  কী করি । বললাম । উত্তরে বলল , বাবু স্কুলে পড়ান , আর এইটুকু বোঝেন না  যে, এইভাবে জল খেতে গিয়ে বিষম লাগতে পারে ! তোরা বল , আমি তো একটা স্কুলের শিক্ষক । আমার কী আত্মসম্মানে লাগা উচিত , রেগে যাওয়া উচিৎ ?” আমরা বললাম , “না স্যর । কথাটা ঠিক ।“ স্যর বললেন , “ঠিক বলেছিস , আমি রেগে যাইনি , ধন্যবাদ দিয়ে এসেছি ।“ কলেজে গিয়ে স্যর – ম্যাডামদের সাথে সম্পর্কটা সহজ হয়ে আসে অনেক । বাংলা সাম্মানিক স্নাতক স্তরের পাঠ্যে আদি রসের ছড়াছড়ি । ‘নীল দর্পণ’ , বৈষ্ণব পদাবলী কিংবা ‘বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ’ , পড়াবার সময় ম্যাডামেরা ওই অংশগুলির ব্যাপারে শুধু বলতেন --- “তোমরা পড়ে নিও ।“ (আমরা অবশ্য বলার আগেই পড়ে নিতাম , বলা বাহুল্য !) একদিন ক্লাসে এসে তন্বীদি (মুখোপাধ্যায়) বাউন্সার ছাড়লেন । জিজ্ঞেস করলেন --- “তোমরা কেউ ‘এক ছোটি সি লাভ স্টোরি’ দেখেছ ?” বড়সড় ‘এ’ মার্কা ছবিটি তখন জলপাইগুড়িতে রমরমিয়ে চলছে । ছবির বিষয়, বয়ঃসন্ধিতে যৌন চেতনার সূচনা । অল্প কয়েকজন হাত তুলে বললাম , দেখেছি । এই ঘটনাটির পর থেকে ‘ওই’ পাঠ্যাংশগুলি কো – এড কলেজের ক্লাসে পড়বার ও পড়াবার আড়ষ্টতা অনেকটা কেটে গিয়েছিল ।

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_21.html


5th  September

Teachers' Day

ফিচার প্রতিবেদন


ফিচার সংবাদ

ফিচার নিউজ


ফিচার পাতা

ফিচার লেখা


news feature article


news feature story


news feature example





বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২০

স্টান্টবাজি

 

স্টান্টবাজি

 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ে সন্দীপ । ওদের ক্লাস হয় সন্ধ্যাবেলায় । প্রতিদিনই যাদবপুর থেকে শিয়ালদাগামী ট্রেন ধরতে ধরতে সাড়ে আটটা-ন’টা বেজে যায় । আজ ভ্যাপসা গরম পড়েছে বলে দরজায় দাঁড়িয়ে ফুরফুরে হাওয়াটা গায়ে মাখতে বেশ লাগছে । ঢাকুরিয়ার পর দু’টো স্টেশন, বালিগঞ্জ আর পার্ক সার্কাসে প্ল্যাটফর্ম উল্টোদিকে পড়বে বলে আর সরে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হবে না । দরজার সামনে কিছু ছাত্রছাত্রী আর অফিসফেরত নিত্যযাত্রী । আর ট্রেনের মেঝেতে দুধের ক্যান নিয়ে বসে আছে দুই গোয়ালা । উল্টোদিকে মেঝেতেই , দু’দিকে বড় বড় মুখবন্ধ ড্রাম নিয়ে লুঙ্গি পড়ে বসে আছে নিপাট নিরীহ গোছের একজন শীর্ণকায় লোক । ঢাকুরিয়া স্টেশন ছাড়তেই কোন জাদুতে যেন সে ঢুলুনি থামিয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াল । সন্দীপ ফুটবোর্ডের রডটা ধরে দাঁড়িয়েছিল । তাকে খুব ভদ্রভাবে একটু সরে দাঁড়াতে বলল লোকটা । তারপর সে যেটা করল, তা দেখার জন্য আদৌ মানসিকভাবে তৈরি ছিলনা সন্দীপ । এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি , কালো রঙের ড্রামগুলোর হাতলে নারকেলের দড়ি বাঁধা । লোকটা চলন্ত ট্রেন থেকেই দড়ি ধরে এক এক করে তিনটে ড্রামই নামিয়ে দিল । লাইনের ধার থেকে সেগুলো তুলে নেওয়ার জন্য আগে থেকে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েকটা লোক । লুঙ্গি পড়া লোকটা মোবাইল থেকে কার সঙ্গে যেন দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলল । তারপর সন্দীপকে বিলকুল হতভম্ব করে দিয়ে মাঝখানের হাতলটা ধরে কামরার তলায় , চাকার কাছে , কিসের ওপরে পা দিয়ে কে জানে , দ্রুত বেগে ছুটে চলা ট্রেন থেকেই অবিশ্বাস্য পারদর্শিতায় নেমে গেল । আর পাঁচজনের ভিড়ে মিশে থাকা সাধারণ চেহারার লোকটার মধ্যে যে এত এলেম লুকিয়ে আছে , কল্পনাও করতে পারেনি সন্দীপ । সন্দীপের পিছনে যে বয়স্ক ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন , তিনি এতক্ষণে মুখ খুলে মেপে মেপে দু’টো শব্দ উচ্চারণ করলেন ---- “চোলাই মদ ।“  

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_30.html









মানিব্যাগ

 

মানিব্যাগ

 

       সওয়া আটটা নাগাদ দার্জিলিং মেল সবে এসে পৌঁছেছে নিউ জলপাইগুড়িতে । জলপাইগুড়ি যাওয়ার লোকাল ট্রেন এন জে পি- হলদিবাড়ি সেই সাড়ে ন’টায় । যারা দুদ্দাড় করে ব্যস্ত হয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেল , অচ্যুত তাদের দলে ভিড়ল না । হাতে অনেক সময় আছে , সবাই নেমে যাক , তারপর ধীরেসুস্থে নামলেই চলবে । বাথরুম থেকে বেরিয়ে অচ্যুত দেখল কামরা ফাঁকা হয়ে গেছে । সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও প্রাণী চোখে পড়ছে না , এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত তাকালে । ট্রেন থেকে নামার আগে বার্থের উপর-নীচ শেষবারের মত চোখ বুলিয়ে নামা অচ্যুতের বরাবরের অভ্যেস । নিয়মমাফিক সেই কাজটা করতে গিয়ে চোখে পড়ল , উল্টোদিকের আপার বার্থে একটা মোটা মানিব্যাগ পড়ে । এই ভদ্রলোকের সাথে ট্রেনেই আলাপ হয়েছে , উনিও জলপাইগুড়িই যাবেন । আজকাল ছেলেদের মানিব্যাগ মোটা হয় দু’টি কারণে ---যদি বেশি টাকা থাকে আর যদি গুটখার প্যাকেট ভরা থাকে । অচ্যুত দেখল প্রথমটাই ঠিক । মানিব্যাগটায় প্রচুর বড় নোট । এখনও তাড়াতাড়ি গিয়ে খুঁজলে ভদ্রলোককে জলপাইগুড়ির ট্রেনে পাওয়া গেলেও যেতে পারে । আর তিনি যদি বাস ধরার জন্য বেরিয়ে গিয়ে থাকেন , তবে আর কিছু করার নেই । ব্যাগটা রেল পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে । এসব ভাবতে ভাবতেই পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে এগোল অচ্যুত । ভাগ্য ভাল , খুব বেশি খুঁজতে হল না । স্বাভাবিকভাবেই নিজের অন্যমনস্কতাকে দুষে ভদ্রলোক ব্যাগটা ফিরে পেয়ে যারপরনাই খুশি হলেন , বারবার করে ধন্যবাদ দিলেন , ঠিকানা বিনিময় করলেন ।

          বাড়ি ফিরে স্নান করে খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম দিল অচ্যুত । তারপর ঘুম থেকে উঠে, গেল তাপসদের বাড়ি । তাপস ওর ছোটবেলার বন্ধু । তাপসের ঘরে ঢুকেই বেজায় অবাক হল অচ্যুত । সকালের সেই ভদ্রলোক ওর ঘরে বসে । উনি তাপসের বিশেষ পরিচিত , বন্ধুস্থানীয় । ভদ্রলোক নিজেই সবিস্তারে সকালের ঘটনা খুলে বললেন তাপসকে । সবটা শুনে কপট গাম্ভীর্য বজায় রেখে তাপস অচ্যুতকে বলল --- “তুই একটা ইডিয়েট ! ব্যাগটা ফেরত দেওয়ার আগে কয়েকটা নোট সরিয়ে রাখতে পারলি না ! তাহলে বিকেলের ফিস্টটা বেশ জমিয়ে হত !”

             কথা শেষ হতেই হো হো করে হেসে উঠল তিনজনই । আর অচ্যুত বুঝল , পৃথিবীটা সত্যিই গোল । নইলে এই ভদ্রলোকের সাথে আজই, এত বড় একটা শহরে দেখা হওয়া , পরিচয় হওয়া --- এ যে একেবারে সমাপতনের ঠাকুরদা ! এমনটা হয় বলেই আমরা অবাক হওয়ার আনন্দটা পেতে ভুলে যাই না ।

                                      ----------------------

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_37.html






কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...