স্টান্টবাজি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়ে সন্দীপ । ওদের ক্লাস হয় সন্ধ্যাবেলায় । প্রতিদিনই যাদবপুর
থেকে শিয়ালদাগামী ট্রেন ধরতে ধরতে সাড়ে আটটা-ন’টা বেজে যায় । আজ ভ্যাপসা গরম পড়েছে
বলে দরজায় দাঁড়িয়ে ফুরফুরে হাওয়াটা গায়ে মাখতে বেশ লাগছে । ঢাকুরিয়ার পর দু’টো স্টেশন,
বালিগঞ্জ আর পার্ক সার্কাসে প্ল্যাটফর্ম উল্টোদিকে পড়বে বলে আর সরে দাঁড়ানোর প্রয়োজন
হবে না । দরজার সামনে কিছু ছাত্রছাত্রী আর অফিসফেরত নিত্যযাত্রী । আর ট্রেনের মেঝেতে
দুধের ক্যান নিয়ে বসে আছে দুই গোয়ালা । উল্টোদিকে মেঝেতেই , দু’দিকে বড় বড় মুখবন্ধ
ড্রাম নিয়ে লুঙ্গি পড়ে বসে আছে নিপাট নিরীহ গোছের একজন শীর্ণকায় লোক । ঢাকুরিয়া স্টেশন
ছাড়তেই কোন জাদুতে যেন সে ঢুলুনি থামিয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াল । সন্দীপ ফুটবোর্ডের
রডটা ধরে দাঁড়িয়েছিল । তাকে খুব ভদ্রভাবে একটু সরে দাঁড়াতে বলল লোকটা । তারপর সে যেটা
করল, তা দেখার জন্য আদৌ মানসিকভাবে তৈরি ছিলনা সন্দীপ । এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি , কালো
রঙের ড্রামগুলোর হাতলে নারকেলের দড়ি বাঁধা । লোকটা চলন্ত ট্রেন থেকেই দড়ি ধরে এক এক
করে তিনটে ড্রামই নামিয়ে দিল । লাইনের ধার থেকে সেগুলো তুলে নেওয়ার জন্য আগে থেকে তৈরি
হয়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েকটা লোক । লুঙ্গি পড়া লোকটা মোবাইল থেকে কার সঙ্গে যেন দুর্বোধ্য
ভাষায় কথা বলল । তারপর সন্দীপকে বিলকুল হতভম্ব করে দিয়ে মাঝখানের হাতলটা ধরে কামরার
তলায় , চাকার কাছে , কিসের ওপরে পা দিয়ে কে জানে , দ্রুত বেগে ছুটে চলা ট্রেন থেকেই
অবিশ্বাস্য পারদর্শিতায় নেমে গেল । আর পাঁচজনের ভিড়ে মিশে থাকা সাধারণ চেহারার লোকটার
মধ্যে যে এত এলেম লুকিয়ে আছে , কল্পনাও করতে পারেনি সন্দীপ । সন্দীপের পিছনে যে বয়স্ক
ভদ্রলোক দাঁড়িয়েছিলেন , তিনি এতক্ষণে মুখ খুলে মেপে মেপে দু’টো শব্দ উচ্চারণ করলেন
---- “চোলাই মদ ।“
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_30.html



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.