প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ
করতে গিয়ে প্রথমেই বলতে ইচ্ছে করে আমার বাবা স্বর্গীয় শঙ্করদেব গোস্বামীর কথা । কিন্তু
আজ সে কথা নয় । আজ বরং বলি আমার স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের কথা যেগুলি মনে স্থায়ী
দাগ রেখে গেছে । বোধহয় সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক শেখাতে গিয়ে জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনের
শিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি শিখিয়েছিলেন ‘BODMAS’ ফর্মুলাটি । স্যরের শেখানো সার্থক , কারণ
আমি অন্তত বদমাইশি ভুলিনি ! তখন ক্লাস ফাইভ , স্যর একদিন ক্লাসে বললেন --- “হাওয়া চোখে
দেখা যায় না ।“ আমি বললাম – “ভুল স্যর , যায় ।“ স্যর বললেন , “প্রমাণ করো , নইলে শাস্তি
পাবে ।“ আমি মাঠ থেকে একমুঠো ধুলো কুড়িয়ে এনে স্যরের সামনে ফু দিয়ে উড়িয়ে বললাম , “এই
দেখুন স্যর , হাওয়া চোখে দেখা যায় !” খুব একচোট হেসে স্যর পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন । আমাদের
স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ছিলেন বিজয়দা । উঁচু ক্লাসের এক দাদা বিজয়দার সাথে দুর্ব্যবহার
করায়, বিজয়দা কেঁদে ফেলেছিলেন অপমানে । স্যরের বিষয়টি চোখে পড়াতে আমাকে বলেছিলেন সেই
দাদাকে ডেকে আনতে । সে আসার পর , সে কথাটি বলেছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার পর , এত জোরে চড়
কষালেন যে টিচার্স রুমের সামনের সিঁড়ি থেকে সেই দাদা ছিটকে পড়ল মাঠে । এই ঘটনাটি আমার
জীবনের খুব বড় শিক্ষা । স্কুলে তখন ক্লাস নাইনে পড়ি । শিবকৃষ্ণবাবু ইংরেজির ক্লাস নিতেন
। সেদিন এসে বললেন --- “আজ পড়াব না , গতকাল আমার একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে । সেটা
বলি । গ্রামের দিকে গেছিলাম , খুব জল তেষ্টা পেয়ে যাওয়াতে একটা নলকূপে প্রায় মুখ লাগিয়ে
জল খাচ্ছিলাম । এক চাষি দৃশ্যটা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করল , কী করি । বললাম । উত্তরে বলল , বাবু স্কুলে পড়ান
, আর এইটুকু বোঝেন না যে, এইভাবে জল খেতে গিয়ে
বিষম লাগতে পারে ! তোরা বল , আমি তো একটা স্কুলের শিক্ষক । আমার কী আত্মসম্মানে লাগা
উচিত , রেগে যাওয়া উচিৎ ?” আমরা বললাম , “না স্যর । কথাটা ঠিক ।“ স্যর বললেন , “ঠিক
বলেছিস , আমি রেগে যাইনি , ধন্যবাদ দিয়ে এসেছি ।“ কলেজে গিয়ে স্যর – ম্যাডামদের সাথে
সম্পর্কটা সহজ হয়ে আসে অনেক । বাংলা সাম্মানিক স্নাতক স্তরের পাঠ্যে আদি রসের ছড়াছড়ি
। ‘নীল দর্পণ’ , বৈষ্ণব পদাবলী কিংবা ‘বুড়ো শালিখের ঘাড়ে রোঁ’ , পড়াবার সময় ম্যাডামেরা
ওই অংশগুলির ব্যাপারে শুধু বলতেন --- “তোমরা পড়ে নিও ।“ (আমরা অবশ্য বলার আগেই পড়ে
নিতাম , বলা বাহুল্য !) একদিন ক্লাসে এসে তন্বীদি (মুখোপাধ্যায়) বাউন্সার ছাড়লেন ।
জিজ্ঞেস করলেন --- “তোমরা কেউ ‘এক ছোটি সি লাভ স্টোরি’ দেখেছ ?” বড়সড় ‘এ’ মার্কা ছবিটি
তখন জলপাইগুড়িতে রমরমিয়ে চলছে । ছবির বিষয়, বয়ঃসন্ধিতে যৌন চেতনার সূচনা । অল্প কয়েকজন
হাত তুলে বললাম , দেখেছি । এই ঘটনাটির পর থেকে ‘ওই’ পাঠ্যাংশগুলি কো – এড কলেজের ক্লাসে
পড়বার ও পড়াবার আড়ষ্টতা অনেকটা কেটে গিয়েছিল ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/11/pub-9792609886530610_21.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.