আমরা তাঁদেরকে বলতাম
শিলিগুড়ির দাদু – দিদা । বাড়ির বড়রা ডাকতেন , কাকু – কাকীমা বলে । হাতে গোনা যে
কয়েকজন বাবার সাথে রীতিমত শাসনের সুরে কথা বলতেন, আর বাবা চুপ করে শুনতেন আমাদের সামনেই , তাঁদের মধ্যে দাদু একজন ! বড়
হয়ে জানলাম ওঁরা আমাদের রক্তের সম্পর্কের কেউ নন , দেশভাগের কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন
বলে পাড়াতুতো কাকু ,
পরিবারের একজন হয়ে গেছেন । এই দাদুর একটা বড় চোঙওয়ালা গ্রামোফোন ছিল , হাতল ঘুরিয়ে
দম দিয়ে চালাতে হত । আমি গেলেই বায়না জুড়তাম --- “দাদু
, আমি ঘোরাব !” উনি স্মিত হেসে বলতেন – “ঘোরাও , কিন্তু আস্তে আস্তে
।“ মায়ের কাছে পরে শুনেছি , দাদু নিজের বউ – ছেলেকেও ও জিনিস ছুঁতে দিতেন না ।
এহেন দাদু জাগতিক নিয়মেই একদিন গত হলেন , কিন্তু গোটা দোতলা বাড়িতে একা দিদা
কিছুতেই বাড়ি ছেড়ে , ছেলের কাছে যাবেন না । তো , তখন আমি সবে একটু লায়েক হয়েছি !
একদিন দেখা করতে গিয়ে বলেই ফেললাম – “কেন জেদ করছো দিদা , একা থাকো , অসুস্থ হলে
কাউকে তো ডাকতেও পারবে না । বাড়ির মায়া ছাড়ো , দাদার কাছে চলে যাও ।“ দিদা সবটা
শুনলেন , তারপর ধীরে ধীরে বললেন – “তখন তো তোর দাদুর মায়নাকড়ি বেশি ছিল না ; তাই
অল্প অল্প করে ইট-বালি কেনা , আর রোদে পুড়ে – বৃষ্টিতে ভিজে , পালা করে আমরা দু’জন
দাঁড়িয়ে থেকে এই বাড়িটা তৈরি । এর দেওয়ালে হাত দিলে আমি তোর দাদুর ছোঁওয়া পাই ।
চোখ বোজার আগে আমি এ বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবো না রে ।“ সেদিন আর কথা খুঁজে পাইনি ।
এখন , সরস্বতী পুজোর দিন হলুদ গাঁদা রঙের নতুন শাড়ি – পাঞ্জাবী পরে যারা আঙুলে
আঙুল ছুঁইয়ে হাঁটে , তাদের মধ্যে আমি জীবন – মরণের সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধু দাদু –দিদাকে দেখতে পাই ।
১০০ শব্দের ছোট গল্প
অণুগল্প pdf
২০ শব্দের গল্প
অনুবাদ অনুগল্প
অণুগল্প অর্থ কি
অণুগল্প বৈশিষ্ট্য
অনুগল্পের উদাহরণ

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.