রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০

শিয়ালদায় এক রাত Sealdah station

পাঞ্চজন্য । অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা 






Page navigation


অনেক চেষ্টা করেও সেদিন বাড়ি ফেরার শেষ ট্রেনটা ধরতে পারলাম না । যুগপৎ হতাশ ও ক্লান্ত হয়ে প্ল্যাটফর্মে চোখ বুজে বসেছিলাম । খেয়ালই করিনি আশেপাশে আর একটিও লোক নেই । আর পি এফের এক কনস্টেবলের গলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ খুলতেই হল । বাইরে বেরিয়ে যেতে হবে । যাওয়ার পথে বারবার চারপাশটা দেখছিলাম । সদা ব্যস্ত শিয়ালদা স্টেশনের এমন পাণ্ডববর্জিত রূপ আগে কখনও দেখিনি । আমি বেরোতেই মেন কলাপ্সেবল গেটেও তালা পড়ে গেল । বাইরে সিঁড়ির কাছে যে যার মত শোয়ার ব্যবস্থা করে নিয়েছে কাগজ অথবা কাপড় বিছিয়ে । কোনওমতে শেডের নীচে একফালি বসার জায়গা পেলাম । আমার মতন আরও কয়েকজন আশেপাশে বসে আছেন । একটু পরে বাইকে করে দু’টো লোক এসে কয়েক মুহূর্ত থেমে , কেন কে জানে সবার মুখের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে গেল । যে বাইক চালাচ্ছিল , তার পরনে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি , গলায় মোটা সোনার হার । পিছনে একটা যান্ত্রিক শব্দ পেয়ে প্ল্যাটফর্মের গেটের কাছে গিয়ে দেখি , ঝাড়া – সাবান জল দিয়ে ধোয়া ও মোছার কাজ শুরু হয়েছে একপাশ থেকে । মেন লাইনে প্রথম ট্রেন শুনলাম ভোর তিনটের পরে । আর চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না । হাঁটতে বের হলাম । বিদ্যাপতি সেতুর নীচে মাত্র একটা পানের দোকান খোলা । বৈঠকখানা বাজারের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম । শুনেছিলাম বাজারের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো বেশি রাতের দিকে ঢুকতে শুরু করে । তাই বোধহয় বেশ কিছু মুটে চোখে পড়লো । মোবাইলে দেখলাম সওয়া একটা বাজে । খিদেয় পেট চুই চুই করছে । সন্ধানী চোখ শুঁটকি মাছের দোকানগুলোর কাছে ঠিক একটা রুটি – তড়কার দোকান খুঁজে বের করল । দু‘জন মাতাল আর তিন জন মুটে বেঞ্চে বসে রাতের খাওয়া সারছে । গরম গরম ডিম – তড়কা আর রুটি নিয়ে বসে গেলাম ওদের পাশে । “সমস্ত মেহনতি মানুষ এক হও” --- স্লোগানটা মনে পড়ে যাচ্ছিল । কিন্তু আমি তো নেহাতই সৌখিন মজদুরি করি ! একবারে কুড়ি কিলো ওজনও আমি ওদের মত অনায়াসে মাথায় বয়ে নিয়ে যেতে পারব না । তাই পাশে বসেও আসলে আমি ওদের থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে । একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আরও একটু এগোলাম নামী গয়নার দোকানগুলোর দিকে । সেই সময়েই রাস্তার ডানদিকে চোখে পড়লো মহিলাকে । আলোআঁধারিতে একটা বন্ধ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন । পাশে একটা সুটকেস । আর কেউ নেই । পরনে পাটভাঙা দামী তাঁতের শাড়ি এবং রীতিমত অভিজাত চেহারা । এইসময়ে এইজায়গায় একদম বেমানান । এই এলাকায় রাত একটু গভীর হওয়ার দিকে এগোলেই যাঁদের ঢল নামে বন্ধ দোকানের সামনে , তাঁদের মত অপুষ্ট , বহুকাল অনিদ্রায় ভোগা চেহারা নয় , সস্তা লিপস্টিক নয় , রুজ নয় । স্বল্প প্রসাধনে স্নিগ্ধরূপা । এবং মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মত সুন্দরী । চোখ ফেরাতে পারছিলাম না হাঁটতে হাঁটতে । স্বাভাবিক প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরছিল – রাতদুপুরে ইনি এভাবে এখানে কেন ? ঠিক সামনেটা দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে চোখাচোখি হল । তিনি একটি বিশেষ ইঙ্গিত করে চোখ টিপলেন । যা বোঝার বুঝে গেলাম ! অথবা অনেক কিছুই বুঝলাম না , জানলাম না । ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল , কারণ সামনে একদল কুকুর তাদের এলাকায় অনুপ্রবেশকারীর দিকে প্রবল গর্জনে ছুটে আসছে । এই সময়ে পিছন ফিরে দৌড়লেই সর্বনাশ । ওরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়বে । ভয়- উত্তেজনা চেপে শান্তভাবে স্টেশনের দিকে হাঁটা লাগালাম । এবার সামনে আরেকটা হার্ডল। এক পুলিশ অফিসার বাইক নিয়ে যেতে যেতে আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন । কিছু বললেন না , কিন্তু টের পেলাম পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আগাপাশতলা জরিপ করলেন । বিদ্যাপতি সেতুর নীচটা দিয়ে যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে দেখলাম বাইক স্ট্যান্ড করে স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকেই চেয়ে আছেন । স্টেশনের সিঁড়িতে এসে বসার পাঁচ – দশ মিনিটের মধ্যেই খবরের খোঁজে পুলিশ আধিকারিকদের সাথে কথা বলতে শুনলাম দু‘একজন সাংবাদিককে । তার পরেই একের পর এক ঢুকতে শুরু করল দৈনিক খবরের কাগজের গাড়িগুলো । বেশ কয়েকটা করে প্যাকেট নামছে , আর ঠেলাওয়ালা এবং কাগজের প্রতিনিধির সঙ্গে ঢুকে যাচ্ছে মেপে ফাঁক করা গেট দিয়ে শিয়ালদার ভিতরে । ব্রাউন কাগজে মোড়া প্রত্যেকটা প্যাকেটের ওপর কাগজের নাম , স্টেশনের নাম বড় বড় হরফে লেখা । কিছুক্ষণ পরে স্টেশনে ঢুকে দেখি , দক্ষিণ ও প্রধান শাখায় কাকভোরের প্রথম ট্রেনগুলি বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য তৈরিআর প্রতিটি ই এম ইউ লোকাল ট্রেনের স্টেশনের দিকের প্রতিটি দরজার একটা দিকে মেঝে থেকে ছাদ অবধি তৈরি হয়েছে একাধিক কাগজের প্যাকেটের স্তম্ভ । কামরার বাকি অংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন গোয়ালারা । সিটের নীচে কাপড় দিয়ে ঢাকা ছানার প্লেট আর দরজার সামনে দুধের মস্ত ধাতব পিপে । এটা হল আপলোড করার পর্ব । পরে একাধিক বার দেখেছি প্রতিটি স্টেশনে পণ্যগুলি ডাউনলোড করার জন্য রাত জেগে বসে থাকে একটা বিরাট টিম । কয়েক সেকেন্ডে হাতে হাতে নেমে যায় জিনিসগুলি । তারপর শুরু হয় বণ্টনের জন্য ধাপে ধাপে তৈরি হওয়া । যেমন কাগজের ভিতরে অবিশ্বাস্য দ্রুত হাতে লিফলেট ঢোকানো । ভোর তিনটের পরপর যখন ট্রেন ছাড়ল , তখন দু‘চোখ ঘুমে বুজে আসছে । একটা সিট পুরো ফাঁকা , জানলা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসছে । সহযাত্রীকে গন্তব্য বলে শুয়ে পড়লাম । এই তো জীবন কালীদা ! আর কী চাই !


Sealdah station

Page navigation




স্টারি নাইট উলফ । শিল্পী : ভ্যান গঘ ।

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_39.html




<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-9792609886530610"
     crossorigin="anonymous"></script>


ফিচার প্রতিবেদন

ফিচার নিউজ



ফিচার পাতা


ফিচার সংবাদ


ফিচার রাইটিং


ফিচার লেখা




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...