রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২০

ইডেনের সৌরভ । সৌরভ গাঙ্গুলীর খেলা

পাঞ্চজন্য । অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা

সৌরভ গাঙ্গুলীর খেলা


২০০৪ সাল । ১২ নভেম্বর । পিসতুতো দাদা হঠাৎ সন্ধেবেলা ফোন করে বললেন – “ইডেনে ভারত – পাকিস্তান ওয়ান ডে ম্যাচ আছে কাল । দেখতে যাবি ?” এ প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলে রাখা দরকার । আমার ক্রিকেট দেখা সৌরভে শুরু এবং শেষ । সৌরভ গাঙ্গুলী সে সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক । ভারত - ইংল্যান্ড ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ ফাইনালে (২০০২) লর্ডসের বারান্দায় দাদার খালি গায়ে জার্সি ওড়ানো দেখে ফিদা হয়ে গিয়েছি ! সেই সৌরভ বাড়ির মাঠে , ক্রিকেটের নন্দন কাননে পাকিস্তানের সাথে খেলবেন , আর সুযোগ পেয়েও আমি যাবনা – তাও কী হয় ! সিলিঙে মাথা ঠুকে যাওয়ার মত লাফ মেরেছিলাম প্রস্তাবটা শুনে । সেবার ‘বোর্ড অব ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া’র প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে ভারত – পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচ এবং ওয়ান ডে ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল । ৮ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল ২০০৫ এই উপলক্ষে আবার ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান ।  যাইহোক পরদিন সকাল সকাল বড়দার অফিস থেকে টিকিট নিয়ে , বড়দারই দেওয়া গাড়িতে রওনা হলাম অফিস পাড়া থেকে । বুকপকেটে মহার্ঘ্য টিকিট , আর ধবধবে সাদা তোয়ালে বিছানো অ্যামবাসাডরের পিছনের সিটে বসে হাবভাব পাল্টে গিয়েছিল বোধহয় ! ড্রাইভার মাঝপথে বললেন --- "আপনি ষোল নম্বর গেট দিয়ে ঢুকবেন , আর ঢোকার আগে জলের পাউচ কিনে নেবেন প্রয়োজনমত । ভিতরে কিন্তু জলের বোতল পাবেন না ।" তা – ই করলাম । ধাপে ধাপে টিকিট পরীক্ষকদের নির্দেশ মত এগিয়ে যে সিটটা পেলাম , তার চেয়ে ভাল জায়গা গোটা মাঠে থাকতে পারেনা । সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা যাতায়াত করার জন্য । তারপর কোমর সমান রেলিঙ , আর তার ঠিক নীচে ভারতীয় দলের সাজঘর । বেপরোয়া হলে আরামসে লাফ দিয়ে তার সামনে নামা যায় । খেলা শুরু হতে তখনও বেশ খানিকক্ষণ দেরী । পাশেই দেখলাম বাঁ হাত দিয়ে রেলিঙ ধরে একটি মেয়ে নীচে শরীর ঝুঁকিয়ে দিয়েছে । তাকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন হরভজন সিং । মাঠের পাশে আমার ডান দিকে জায়ান্ট ডিসপ্লে বোর্ড আর সামনে বাঁ দিকে বিরাট মাপের টি ভি ক্যামেরা । দর্শকাসনের মধ্যেই আমার ডান দিকে কিছুটা দূরে একটা লোহার সিঁড়ি উঠে গিয়েছে একটি কাচঘরের দিকে । একে ওকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটা প্রেসবক্স । মাঠে বব উলমার পাকিস্তান টিমের গা ঘামাচ্ছেন । সেই বব , যিনি কিছুদিন পর খুন হয়ে যাবেন হোটেল রুমে । আমার পিছনে একটু উঁচুর দিকে এসে বসলেন অরুণলাল । আরও একটু ওপরের দিকে ঘোরাফেরা করছেন শিবশঙ্কর পাল । আমারই বয়সী একটি ছেলে প্রবীণ ক্রিকেটারের দিকে বাঁ হাতটা উঁচু করে বলল – “হাই অরুণ ।“ ভীষণ কানে লাগলো সম্বোধনটা । অরুণলাল দেখলাম ডান হাত উঁচিয়ে স্মিত হেসে সহজভাবেই উত্তর দিলেন । মনের ভিতর থেকে কে যেন একটা বলে উঠলো – মিসফিট মিসফিট , মিস্টেক মিস্টেক । হিথায় তুকে মানাইছে না রে , ইক্কেবারে মানাইছে না । মাঠের দিকে চোখ ফেরালাম । কানায় কানায় ভরে উঠেছে ইডেন । এবার খুব কষ্ট করে রেলিঙের কাছে পৌঁছতে হল । চোখের সামনে , থুড়ি নীচে রাহুল দ্রাবিড় , সচিন তেন্ডুলকর ! স্বপ্নেও ভাবিনি এঁদের এত কাছ থেকে দেখবো । মোটামুটি সবাই একে একে বেরিয়ে এলেন । কিন্তু তিনি কই ? কয়েক মুহূর্ত পরেই সাজঘরের সামনের ভিড়টায় একটা চাঞ্চল্য দেখা গেলো । তারপরেই আমার চোখের ড্রোন শটে পিছন থেকে দাদা ! বড় বড় পা ফেলে দৃপ্ত ভঙ্গীতে এগিয়ে যাচ্ছেন মাঠের দিকে । মনে হল ওঁর ডাকনামটা সত্যিই সার্থক । আচরণ এবং গুণে উনি সত্যিই মহারাজ । এরই মাঝে একটু তাল কাটল । ক্যামেরার ভিড়ের মাঝখান দিয়ে সিঁধ কেটে বত্রিশ পাটি বিকশিত করে করমর্দন করতে এগিয়ে আসছে একজন । সাজঘর আর মাঠের সীমানার দড়ির মাঝখানে এলেবেলে লোকের চলে আসার সম্ভাবনা বোধহয় কম । জানিনা উনি কোন কেউকেটা ছিলেন । একেবারে সামনে চলে এসেছিলেন ভদ্রলোক । না দেখার কথাই না । তবু সৌরভ ওনার উপস্থিতি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেলেন । আমার নিজস্ব ড্রোন শটে ভদ্রলোকের চুপসে যাওয়া মুখের যে ছবি ধরা পড়লো , তা ভোলার মত নয় ! আমি দাদার পিছনে , ডিসপ্লে বোর্ডে দাদা আমার সামনে । সৌরভ দড়ির কাছে প্রণাম করার জন্য ঘাসে ডান হাত ছোঁয়ালেন । তারপর যেই মাথা তুললেন , কানায় কানায় পূর্ণ ইডেন থেকে স্রেফ কানে তালা লেগে যাওয়ার মত একটা প্রচণ্ড সম্মিলিত গর্জন শোনা গেলো । মনে হল এই রোমাঞ্চটুকু চেটেপুটে নেওয়ার জন্যই তো ইডেনে আসা । খেলা শুরু হল ।

সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি কোথায়কলকাতার বেহালায় । বেহালা , মানে ভায়োলিন , মানে করুণ সুর ! তাহলে খুলেই বলি ঃ
         এই গপ্পের একটা দ্বিতীয় অধ্যায়ও আছে । এখন ভাবলে মজা লাগে , কিন্তু সেদিন লাগেনি । মধ্যাহ্নভোজের বিরতি যখন হল , তখন আমার পেটেও ছুঁচো দৌড়চ্ছে । সদ্য পরিচিত এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে নীচে নেমে বিজলি গ্রিলের কাউন্টারে খাবারের যা দাম দেখলাম , তাতে খিদে বেমালুম হাওয়া হয়ে গেল । ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন সেরে ইডেনের আনাচকানাচ দেখতে বের হলাম । আমার বসার ব্লকটার থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছি । হঠাৎ ডানদিকে তাকিয়ে আমার চক্ষুস্থির ! গরাদবিহীন জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা বড় হল ঘরে , দুই টিমের খেলোয়াড়রা একসাথে বুফেতে লাঞ্চ সারছেন । এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না । ভীষণ আগ্রহে ঘরের বেশ কাছে চলে গিয়েছিলাম । এমন সময় সুগঠিত চেহারার লম্বা মতন একজন ভদ্রলোক পিছন থেকে ডেকে বললেন --- “এখানে কী করছেন ?” কড়া গলা শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে সত্যি কথাটাই বললাম --- “ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি ।“  ভদ্রলোক চোয়াল কঠিন করে আবার কী একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন । তারপর ঝাড়া পাঁচ মিনিট ধরে চলল আমার সম্পর্কে দুনিয়ার যাবতীয় প্রশ্নের র‍্যাপিড ফায়ার রাউন্ড ---- কী নাম , কোথায় বাড়ি , কী করেন ইত্যাদি ইত্যাদি ।  একটু থেমে আরও কড়া গলায় বললেন – “টিকিট দেখি ।“ এক পলক চোখ বুলিয়ে ভ্রূ কুঁচকে সিঁড়ির দিকে আঙুল তুলে কঠোর নির্দেশের সুরে বললেন – “সোজা ওই ব্লকে যাবেন ।“ মিনমিন করে শুধু বলতে পেরেছিলাম – “এদিক দিয়ে আসিনি তো । কী করে যাব ?” ভদ্রলোকের চাউনিতে উত্তর পেয়ে আর কথা বাড়াইনি সেদিন !

সৌরভ অর্থ: প্রসঙ্গত ,সৌরভ অর্থ সুগন্ধ । যে কারণে লেখাটির শিরোনাম ইডেনের সৌরভ
                     ------------------------








সৌরভ গাঙ্গুলির ছবি।
ছবি ঃ আন্তর্জাল



https://sankhamanigoswami.blogspot.com 


সৌরভ অর্থ

সৌরভ গাঙ্গুলি সাক্ষাৎকার

সৌরভ গাঙ্গুলীর খেলা

সৌরভ গাঙ্গুলির পরিবার

সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি কোথায়

সৌরভ গাঙ্গুলীর ইতিহাস

সৌরভ গাঙ্গুলির ছবি।

সৌরভ গাঙ্গুলির স্ত্রী






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...