পাঞ্চজন্য । অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
সৌরভ গাঙ্গুলীর খেলা
২০০৪ সাল । ১২ নভেম্বর ।
পিসতুতো দাদা হঠাৎ সন্ধেবেলা ফোন করে বললেন – “ইডেনে ভারত – পাকিস্তান ওয়ান ডে
ম্যাচ আছে কাল । দেখতে যাবি ?” এ প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলে রাখা দরকার । আমার
ক্রিকেট দেখা সৌরভে শুরু এবং শেষ । সৌরভ গাঙ্গুলী সে সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের
অধিনায়ক । ভারত - ইংল্যান্ড ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ ফাইনালে (২০০২) লর্ডসের বারান্দায়
দাদার খালি গায়ে জার্সি ওড়ানো দেখে ফিদা হয়ে গিয়েছি ! সেই সৌরভ বাড়ির মাঠে ,
ক্রিকেটের নন্দন কাননে পাকিস্তানের সাথে খেলবেন , আর সুযোগ পেয়েও আমি যাবনা – তাও
কী হয় ! সিলিঙে মাথা ঠুকে যাওয়ার মত লাফ মেরেছিলাম প্রস্তাবটা শুনে । সেবার ‘বোর্ড
অব ক্রিকেট কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া’র প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে ভারত – পাকিস্তান
টেস্ট ম্যাচ এবং ওয়ান ডে ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল । ৮ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল ২০০৫
এই উপলক্ষে আবার ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান । যাইহোক পরদিন সকাল সকাল বড়দার অফিস থেকে টিকিট
নিয়ে , বড়দারই দেওয়া গাড়িতে রওনা হলাম অফিস পাড়া থেকে । বুকপকেটে মহার্ঘ্য টিকিট ,
আর ধবধবে সাদা তোয়ালে বিছানো অ্যামবাসাডরের পিছনের সিটে বসে হাবভাব পাল্টে গিয়েছিল
বোধহয় ! ড্রাইভার মাঝপথে বললেন --- "আপনি ষোল নম্বর গেট দিয়ে ঢুকবেন , আর ঢোকার আগে
জলের পাউচ কিনে নেবেন প্রয়োজনমত । ভিতরে কিন্তু জলের বোতল পাবেন না ।" তা – ই করলাম
। ধাপে ধাপে টিকিট পরীক্ষকদের নির্দেশ মত এগিয়ে যে সিটটা পেলাম , তার চেয়ে ভাল
জায়গা গোটা মাঠে থাকতে পারেনা । সামনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা যাতায়াত করার জন্য
। তারপর কোমর সমান রেলিঙ , আর তার ঠিক নীচে ভারতীয় দলের সাজঘর । বেপরোয়া হলে
আরামসে লাফ দিয়ে তার সামনে নামা যায় । খেলা শুরু হতে তখনও বেশ খানিকক্ষণ দেরী ।
পাশেই দেখলাম বাঁ হাত দিয়ে রেলিঙ ধরে একটি মেয়ে নীচে শরীর ঝুঁকিয়ে দিয়েছে । তাকে
অটোগ্রাফ দিচ্ছেন হরভজন সিং । মাঠের পাশে আমার ডান দিকে জায়ান্ট ডিসপ্লে বোর্ড আর
সামনে বাঁ দিকে বিরাট মাপের টি ভি ক্যামেরা । দর্শকাসনের মধ্যেই আমার ডান দিকে
কিছুটা দূরে একটা লোহার সিঁড়ি উঠে গিয়েছে একটি কাচঘরের দিকে । একে ওকে জিজ্ঞেস করে
জানলাম ওটা প্রেসবক্স । মাঠে বব উলমার পাকিস্তান টিমের গা ঘামাচ্ছেন । সেই বব ,
যিনি কিছুদিন পর খুন হয়ে যাবেন হোটেল রুমে । আমার পিছনে একটু উঁচুর দিকে এসে বসলেন
অরুণলাল । আরও একটু ওপরের দিকে ঘোরাফেরা করছেন শিবশঙ্কর পাল । আমারই বয়সী একটি
ছেলে প্রবীণ ক্রিকেটারের দিকে বাঁ হাতটা উঁচু করে বলল – “হাই অরুণ ।“ ভীষণ কানে
লাগলো সম্বোধনটা । অরুণলাল দেখলাম ডান হাত উঁচিয়ে স্মিত হেসে সহজভাবেই উত্তর দিলেন
। মনের ভিতর থেকে কে যেন একটা বলে উঠলো – মিসফিট মিসফিট , মিস্টেক মিস্টেক । হিথায়
তুকে মানাইছে না রে , ইক্কেবারে মানাইছে না । মাঠের দিকে চোখ ফেরালাম । কানায়
কানায় ভরে উঠেছে ইডেন । এবার খুব কষ্ট করে রেলিঙের কাছে পৌঁছতে হল । চোখের সামনে ,
থুড়ি নীচে রাহুল দ্রাবিড় , সচিন তেন্ডুলকর ! স্বপ্নেও ভাবিনি এঁদের এত কাছ থেকে
দেখবো । মোটামুটি সবাই একে একে বেরিয়ে এলেন । কিন্তু তিনি কই ? কয়েক মুহূর্ত পরেই
সাজঘরের সামনের ভিড়টায় একটা চাঞ্চল্য দেখা গেলো । তারপরেই আমার চোখের ড্রোন শটে
পিছন থেকে দাদা ! বড় বড় পা ফেলে দৃপ্ত ভঙ্গীতে এগিয়ে যাচ্ছেন মাঠের দিকে । মনে হল
ওঁর ডাকনামটা সত্যিই সার্থক । আচরণ এবং গুণে উনি সত্যিই মহারাজ । এরই মাঝে একটু তাল কাটল । ক্যামেরার ভিড়ের মাঝখান
দিয়ে সিঁধ কেটে বত্রিশ পাটি বিকশিত করে করমর্দন করতে এগিয়ে আসছে একজন । সাজঘর আর
মাঠের সীমানার দড়ির মাঝখানে এলেবেলে লোকের চলে আসার সম্ভাবনা বোধহয় কম । জানিনা
উনি কোন কেউকেটা ছিলেন । একেবারে সামনে চলে এসেছিলেন ভদ্রলোক । না দেখার কথাই না ।
তবু সৌরভ ওনার উপস্থিতি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেলেন । আমার নিজস্ব ড্রোন
শটে ভদ্রলোকের চুপসে যাওয়া মুখের যে ছবি ধরা পড়লো , তা ভোলার মত নয় ! আমি দাদার
পিছনে , ডিসপ্লে বোর্ডে দাদা আমার সামনে । সৌরভ দড়ির কাছে প্রণাম করার জন্য ঘাসে
ডান হাত ছোঁয়ালেন । তারপর যেই মাথা তুললেন , কানায় কানায় পূর্ণ ইডেন থেকে স্রেফ
কানে তালা লেগে যাওয়ার মত একটা প্রচণ্ড সম্মিলিত গর্জন শোনা গেলো । মনে হল এই
রোমাঞ্চটুকু চেটেপুটে নেওয়ার জন্যই তো ইডেনে আসা । খেলা শুরু হল ।
সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি কোথায়কলকাতার বেহালায় । বেহালা , মানে ভায়োলিন , মানে করুণ সুর ! তাহলে খুলেই বলি ঃ
এই গপ্পের একটা দ্বিতীয় অধ্যায়ও আছে ।
এখন ভাবলে মজা লাগে , কিন্তু সেদিন লাগেনি । মধ্যাহ্নভোজের বিরতি যখন হল , তখন
আমার পেটেও ছুঁচো দৌড়চ্ছে । সদ্য পরিচিত এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে নীচে নেমে বিজলি
গ্রিলের কাউন্টারে খাবারের যা দাম দেখলাম , তাতে খিদে বেমালুম হাওয়া হয়ে গেল ।
ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন সেরে ইডেনের আনাচকানাচ দেখতে বের হলাম । আমার বসার ব্লকটার
থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছি । হঠাৎ ডানদিকে তাকিয়ে আমার চক্ষুস্থির !
গরাদবিহীন জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা বড় হল ঘরে , দুই টিমের খেলোয়াড়রা একসাথে
বুফেতে লাঞ্চ সারছেন । এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না । ভীষণ আগ্রহে ঘরের বেশ কাছে
চলে গিয়েছিলাম । এমন সময় সুগঠিত চেহারার লম্বা মতন একজন ভদ্রলোক পিছন থেকে ডেকে
বললেন --- “এখানে কী করছেন ?” কড়া গলা শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে সত্যি কথাটাই বললাম
--- “ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি ।“ ভদ্রলোক
চোয়াল কঠিন করে আবার কী একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন । তারপর ঝাড়া পাঁচ মিনিট ধরে
চলল আমার সম্পর্কে দুনিয়ার যাবতীয় প্রশ্নের র্যাপিড ফায়ার রাউন্ড ---- কী নাম ,
কোথায় বাড়ি , কী করেন ইত্যাদি ইত্যাদি ।
একটু থেমে আরও কড়া গলায় বললেন – “টিকিট দেখি ।“ এক পলক চোখ বুলিয়ে ভ্রূ
কুঁচকে সিঁড়ির দিকে আঙুল তুলে কঠোর নির্দেশের সুরে বললেন – “সোজা ওই ব্লকে যাবেন ।“
মিনমিন করে শুধু বলতে পেরেছিলাম – “এদিক দিয়ে আসিনি তো । কী করে যাব ?” ভদ্রলোকের
চাউনিতে উত্তর পেয়ে আর কথা বাড়াইনি সেদিন !
সৌরভ অর্থ: প্রসঙ্গত ,সৌরভ অর্থ সুগন্ধ । যে কারণে লেখাটির শিরোনাম ইডেনের সৌরভ
------------------------
সৌরভ গাঙ্গুলির ছবি।
ছবি ঃ আন্তর্জালhttps://sankhamanigoswami.blogspot.com
সৌরভ অর্থ
সৌরভ গাঙ্গুলি সাক্ষাৎকার
সৌরভ গাঙ্গুলীর খেলা
সৌরভ গাঙ্গুলির পরিবার
সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি কোথায়
সৌরভ গাঙ্গুলীর ইতিহাস
সৌরভ গাঙ্গুলির ছবি।
সৌরভ গাঙ্গুলির স্ত্রী

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.