হিসেবনিকেশ
কর্মফল বলে সত্যিই কি কিছু হয় ? প্রশ্নটা গত কয়েকদিন ধরে কুরে কুরে খাচ্ছে অতীশকে । সপ্তাহ তিনেক আগে
জন্মেছে অতীশ –পারমিতার একমাত্র পুত্রসন্তান নীল । নামটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল , কিন্তু
এখন ওর মনে হচ্ছে , যন্ত্রণার রঙও তো নীল । ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে নীল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন
শিশু । সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করবার পরেও এমনটা হল কেন, ভেবে কুল পাচ্ছে না অতীশ ।
আর যত ভাবছে, ততই যেন ওর গলা টিপে ধরছে এই প্রশ্নটা ।
পৃথিবীতে একেবারে দাগী অপরাধী খুব কম । লৌহকপাটের অন্তরালে যাদেরকে যেতে হয়,
তাদের অধিকাংশই তাৎক্ষণিক উত্তেজনার বশে মারাত্মক অপরাধ ঘটিয়ে বসে । তাদের কথা জানা
যায়, পড়া যায় । কিন্তু তাছাড়াও প্রতিদিন এই দুনিয়ার আনাচকানাচে এমন অনেক অপরাধ নীরবে-
নিভৃতে ঘটে চলে যার হদিশ কেউ রাখেনা , অথচ কারও কারও জীবনে যে অপরাধের ফল হয় সুদূরপ্রসারী
।
সে প্রায় বিশ- পঁচিশ বছর আগেকার কথা । অতীশ
তখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র । কয়েকজন বন্ধু মিলে তিস্তায় গেছে স্নান করতে । দীপঙ্করের
ভাই সৌমেনও গেছিল ওদের সাথে । বাচ্চা ছেলে, সাঁতার জানে না, জলে নামতেও ভয় পায় । সেদিনও
পেয়েছিল । কাঁদছিল । অন্য বন্ধুরা তা দেখে বলেছিল, ও যখন এত ভয় পাচ্ছে, তখন কী দরকার
ওকে জোর করবার । ও বরং পাড়ে বসে থাক, সাইকেলগুলো দেখবে । আপত্তি করেছিল অতীশ , বাধ্য
করেছিল সৌমেনকে জলে নামতে । কোনও কারণ ছাড়াই সেদিন কেমন যেন রোখ চেপে গিয়েছিল অতীশের
। জেদ ধরে বলেছিল, জলে ওকে নামতে হবেই । হাত- পা ছুঁড়ে বাঁচার তাগিদেই সাঁতার শিখে
যাবে । কেউ কেউ পারে হয়ত , কিন্তু সৌমেন পারেনি । সবাই যখন নদীতে সাঁতার কাটার আনন্দে
মাতোয়ারা , তখন ওদের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে খাবি খাচ্ছিল সে । ডুবেই যেত সৌমেন সেদিন, যদি
না শেষ মুহূর্তে ব্যাপারটা চোখে পড়ত তাপসের । নদী থেকে তুলে, সঙ্গে সঙ্গে পেট থেকে
পাম্প করে জল বের করা এবং তারপর তড়িঘড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় সেযাত্রায় প্রাণে
বেঁচে গেছিল সৌমেন । আসল ক্ষতিটা বোঝা গিয়েছিল দু’দিন পরে , সুস্থ- স্বাভাবিক ছেলেটার
মধ্যে নানারকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে । হাসপাতালের মনোবিদ নানারকমভাবে পরীক্ষা করে
জানিয়েছিলেন , ভীষণ ভয়ে এমনটা হয়েছে । চিকিৎসা করালে আস্তে আস্তে কমে যাবে সমস্যাটা
। কিন্তু তা হয়নি, সৌমেন সারা জীবনের মত পাল্টে গিয়েছিল । দীপঙ্কর কিছু বলে ওঠার আগেই
সেদিন অন্য বন্ধুরা প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অতীশের ওপরে । সুব্রত যখন প্রচণ্ড রাগে ওর
কাঁধ দু’টো ধরে ঝাঁকাচ্ছিল , তখন অতীশ কোনওমতে শুধু বলতে পেরেছিল --- “আমি সত্যিই বুঝতে
পারিনি রে, এরকমটা হবে ।“
ওর কথা সেদিন কেউ বিশ্বাস করেনি । অতীশ নিজে
কি নিজের কথা বিশ্বাস করেছিল ? রুক্ষ স্বভাব আর রূঢ় ব্যবহারের জন্য বন্ধুরা কিছুটা
ভয়ই পেত ওকে । আর সেটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করত
অতীশ । সেদিন, ওর বেলাগাম স্বভাবেরই ফল ভুগতে হয়েছিল ছোট্ট সৌমেনকে । ভাল ছাত্র
অতীশের ঘটনাটা ভুলে যেতেও বেশি সময় লাগেনি । তার জীবন তরতরিয়ে এগিয়ে চলছিল আর পাঁচজন
সফল মানুষের মত । তারপর আচমকা এই বিনামেঘে বজ্রপাত ।
জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে সবাইকে নিজের কৃতকর্মের
হিসেব মিটিয়ে যেতে হয় । কে যেন বলেছিল ওকে । তখন এক কান দিয়ে শুনে, কথাটা আরেক কান
দিয়ে বের করে দিয়েছিল । কিন্তু আজ যেন কথাটার সারমর্ম চোখের জলের বিনিময়ে বুঝতে শিখল
অতীশ চক্রবর্তী , কলকাতা শহরের দুঁদে ক্রিমিনাল ল'ইয়ার ।
অণুগল্প অর্থ কি
অণুগল্প বৈশিষ্ট্য
অনুগল্পের উদাহরণ
অণুগল্পের ইতিহাস
বনফুলের অণুগল্প
২০ শব্দের অনুগল্প
অনুগল্প লেখার নিয়ম
১০০ শব্দের ছোট গল্প
অণুগল্প pdf
২০ শব্দের গল্প
অনুবাদ অনুগল্প
সামাজিক অনুগল্প
রোমান্টিক অনুগল্প
৫০ শব্দের গল্প
ছোট গল্পের বৈশিষ্ট্য
অণুগল্প
অণুগল্প কাকে বলে

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.