শান্তিপুরের রাস উৎসব
১) শ্রীনন্দ রাখিল নাম নন্দের নন্দন
যশোদা রাখিল নাম যদু বাছাধন
উপানন্দ নাম রাখে সুন্দর গোপাল
ব্রজবালক নাম রাখে ঠাকুর রাখাল ।
২) মঞ্জুমালী নাম রাখে অভীষ্টপূরণ
কুটিলা রাখিল নাম মদনমোহন ।
মঞ্জরী রাখিল নাম কর্মব্রহ্মনাশ
ব্রজবধূ নাম রাখে পূর্ণ অভিলাষ ।
শান্তিপুরে পা রাখলেই শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম মনে পড়ে যেতে বাধ্য ।
কারণ গোটা শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে কৃষ্ণের বিভিন্ন অবতারের একাধিক মন্দির ।
শান্তিপুরের আরেক নাম ডাক – ঘর । অর্থাৎ জনসমাবেশের জায়গা । ইতিহাসবিদেরা মনে করেন
নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই শান্তিপুর নগরীর পত্তন করেন । এই শহর রাস উৎসব ও দোল
উৎসবের জন্য বিখ্যাত । কথিত আছে যে অদ্বৈত আচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী এই
দু’টি উৎসব এখানে চালু করেন । উৎসবের প্রধান আরাধ্য বিগ্রহ বড় গোসাঁই পরিবারের,
অর্থাৎ অদ্বৈত আচার্যের বংশোদ্ভূত মথুরেশ গোস্বামীর উত্তরসূরিদের হাতে সেবিত
রাধারমণ জীউ । নামের পরে ‘জি’ সম্বোধনটি সম্মানজ্ঞাপক । ‘জি’ থেকেই বাংলায় ‘জীউ’
শব্দটি এসেছে । বিগ্রহটি আদতে ওড়িশার রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রতিষ্ঠিত ‘দোল গোবিন্দ’
নামক কৃষ্ণমূর্তি ছিল । আনুমানিক ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে মান সিংহ অবিভক্ত বাংলা আক্রমণ
করলে বারো ভুঁইয়ারা এই মূর্তি রক্ষা করার ভার সঁপে দেন মথুরেশবাবুর হাতে । মথুরেশ
বিগ্রহটি শান্তিপুরে পূর্বপুরুষের ভিটেতে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন একটি নতুন
মন্দিরে রাধারমণ নামে। এর পর একবার কোনও ভাবে মূর্তিটি উধাও হয়ে যায় । রাধারমণ
একলা থাকতে না পেরেই অন্তর্হিত হয়েছেন , এমন ভাবনা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে
সম্মিলিত পারিবারিক সিদ্ধান্তে মূর্তিটি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং তার পাশেই
রাধার একটি বিগ্রহও রাখা হয় । এই যুগল মূর্তিটিই রাধারমণ ও শ্রীমতী নামে পরিচিত হয়
। শ্রীমতীর মূর্তিটি অষ্টধাতুর ।
৫৮৫ বছর
আগে ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের শ্রীহট্টের লাউড় গ্রামের বাসিন্দা কুবের
মিশ্র ও লাভাদেবীর ঘরে অদ্বৈতের জন্ম । তাঁর প্রকৃত নাম কমলাক্ষ মিশ্র । দশ বছর
বয়সেই তিনি ‘বেদ পঞ্চানন’ উপাধি লাভ করেন । তারপর বৃন্দাবনে যান । কিছুকাল পরে
গুরু মাধবেন্দ্র পুরীর নির্দেশে শান্তিপুরে আসেন । তাঁর ছয় ছেলে --- অচ্যুতানন্দ ,
কৃষ্ণ মিশ্র , গোপালদাস , বলরাম , স্বরূপ ও জগদীশ । আচার্যের দ্বিতীয় পুত্র কৃষ্ণ
মিশ্রের নামকরণ করেছিলেন মহাপ্রভু । কথিত আছে বাবা – মা গত হওয়ার পর ভারত ভ্রমণে
বেরিয়ে অদ্বৈত আচার্য অধুনা নেপালের গণ্ডকী নদী থেকে এক নারায়ণ শিলা খুঁজে পান ।
সেই শিলা তিনি শান্তিপুরে এনে সেবা করতেন । মারা যাওয়ার আগে পুত্র বলরামের হাতে
তিনি এই পুজোর ভার দিয়ে যান । কমলাক্ষ মিশ্র ছিলেন ভক্তি যোগের পথিকৃৎ । চৈতন্য
চরিতামৃত , চৈতন্য মঙ্গল এবং চৈতন্য ভগবতে ভক্তি আন্দোলনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা
বিশদে আলোচিত হয়েছে । কমলাক্ষের মৃত্যু ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে । ১২৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান ।
জয়
শান্তিপুরনাথ অদ্বৈত গোসাঁই ।
যাহার
কৃপায় পাই , চৈতন্য – নিতাই ।।
বাংলায় ‘অচিন্ত্য ভেদ অভেদ বেদান্তবাদ’ বা একেশ্বরবাদ এবং
গৌরীয় বৈষ্ণবতত্ত্বের জনক ছিলেন চৈতন্যদেব । তাঁর পিতৃদত্ত নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র ।
জন্ম নবদ্বীপে ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ১৪ জুন ১৫৩৪
খ্রিস্টাব্দে । অর্থাৎ তিনি বেঁচেছিলেন আটচল্লিশ বছর । তিনি ভক্তিযোগের মত বৈষ্ণব
তত্ত্বের প্রসারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন । তাঁর ভক্তেরা পরিচিত গৌরীয় বৈষ্ণব
হিসেবে । চৈতন্যদেবকে গৌর বা গৌরাঙ্গ নামে সম্বোধন করা হয় তাঁর ফর্সা রঙের জন্য ।
আর নিম গাছের নীচে জন্ম বলে , তাঁকে ডাকা হয় নিমাই বলে । গোটা বাংলা অহিংস ঈশ্বর
প্রেম ভক্তি আন্দোলনে ভেসে গিয়েছিল তাঁর হাত ধরেই । অদ্বৈতাচার্য একাধারে তাঁর
শিক্ষাগুরু ও ভক্তি আন্দোলনে তাঁর সহকর্মী ছিলেন ।
রাসযাত্রার
দিন রাস মঞ্চে বা হাওদায় বসিয়ে রাধারমণ ও শ্রীমতী মূর্তির সাথেই বিভিন্ন মন্দিরে পূজিত কৃষ্ণের
অন্যান্য বিগ্রহগুলি নিয়ে শহর পরিক্রমা করা হয় । এছাড়া আনুমানিক আড়াইশো বছর আগে বড়
গোস্বামী পরিবারের চালু করা একটি প্রথা নিষ্ঠাসহ পালন করা হয় । এই প্রথানুযায়ী
একটি ছোট মেয়েকে ‘রাই – রাজা’ হিসেবে সিংহাসনে বসিয়ে রাধা রূপে পুজো করা হয় এবং
রাই- কে নিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয় । রাস উৎসবের আরও একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পটেশ্বরী
কালী পুজো । উৎসবের সময় তিন দিন ধরে এই পুজো চলে । কাপড়ের উপর হাতে আঁকা , অর্থাৎ
পটে আঁকা প্রতিকৃতি বলে দেবীর এই নাম । এখানকার অন্যতম প্রাচীন মন্দির এই পটেশ্বরী
মন্দির । ষোড়শ শতকে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় । বাংলায় রামায়ণ প্রণেতা কবি কৃত্তিবাস
ওঝার নামটিও ওতপ্রোতভাবে শান্তিপুরের সাথে জড়িয়ে আছে । তাঁর জন্ম ফুলিয়াতে । কৃত্তিবাসের
‘শ্রীরাম পাঁচালি’ই কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে পরিচিত । নবদ্বীপের পরের দিন কার্তিক
পূর্ণিমায় রাস উৎসব হয় এখানে । রাস চলে চার দিন ধরে । তৃতীয় দিন রাতে বেরোয় ‘ভাঙা –
রাস’ যাত্রা । এই সময়ে রাধারমণ ও রাধার লৌকিক বিয়ের আয়োজন করা হয় । এই বিয়ের
অনুষ্ঠানই রাস । রাধিকাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যেই শোভাযাত্রা । এই অনুষ্ঠানের
খরচ জোগাতেন অদ্বৈতাচার্যের শিষ্য খাঁ পরিবার । এই অনুষ্ঠানকে বলে ভাঙা রাস ।
কারণ, পুরাণমতে দ্বাপর যুগে স্বয়ং মহাদেব ছদ্মবেশে রাস অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ায় ভেঙে
গিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের রাস । কারণ এই আয়োজনে কৃষ্ণ ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের উপস্থিতি
অবাঞ্ছিত ছিল । ধরা পড়ে গিয়ে মহাদেব কথা দিয়েছিলেন কলি যুগে সব ভক্তদের রাস দেখার
সুযোগ করে দেবেন । বৈষ্ণবদের বিশ্বাস , অদ্বৈতাচার্যই শান্তিপুরে প্রথম রাস উৎসবের
সূচনা করেন । আর তাই ভক্তদের কাছে তিনি মহাদেবের প্রতিনিধি । দ্বাপরের অসমাপ্ত রাস
কলিতে নতুন ভাবে শুরু হল বলেই এই অনুষ্ঠানের নাম ভাঙা রাস । অদ্বৈতাচার্যের সময়
রাস ছিল অনাড়ম্বর । এখন শান্তিপুরের রাস উৎসবটির চারটি পর্যায় --- প্রথম রাস ,
দ্বিতীয় রাস , ভাঙা রাস এবং বিয়ের
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কুঞ্জভঙ্গ বা ঠাকুর নাচ । এখানে কুঞ্জ মানে বিয়ের আসর । সারা
রাত শোভাযাত্রার পর বিভিন্ন গোস্বামী বাড়ির বিগ্রহ এনে আবার রাস মঞ্চে বসানো হয় ।
দুপুর পর্যন্ত চলে কীর্তন , তরজা গান । তারপর রাস কুঞ্জ ভেঙে বংশের বর্তমান
প্রজন্মের প্রতিনিধিরা নাচের তালে তালে ঠাকুরকে আবার মন্দিরে নিয়ে আসেন । এই
একদিনই মহিলারা রাধারমণ জীউকে স্পর্শ করার সুযোগ পান । এর পরে মন্দিরে ঠাকুরের
আবার অভিষেকের মধ্যে দিয়ে উৎসবের ইতি ।
ইতিহাসের গন্ধমাখা বেশ কিছু জায়গা চট করে দেখে নেওয়া যায় শান্তিপুরে ঘুরতে
এলে । সেই তালিকায় অবশ্যই প্রথমে থাকবে কমলাক্ষ গোস্বামীর বাড়ি । অদ্বৈত অঙ্গনে বড়
গোস্বামী বাড়ির ফটকের সামনে দু’পাশে ও মাথায় মোট তিনটি করজোড়ে থাকা গরুড়ের মূর্তি
রয়েছে । বাড়ির প্রধান আরাধ্য বিগ্রহ রাধারমণ জীউ ও শ্রীমতী । এছাড়া রয়েছে সুভদ্রা –
বলভদ্র – জগন্নাথ মূর্তি , ষড়ভুজ মহাপ্রভুর মূর্তি , গৌর আনা ঠাকুর অদ্বৈতাচার্য –
তাঁর প্রথম পুত্র অচ্যুতানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যের স্ত্রী সীতা দেবীর কাঠের তৈরি
মূর্তি । বড় গোস্বামীকে এই কারণে সীতানাথও বলা হয় । এই বাড়িতে অযোধ্যাপতি রঘুনাথ
বা রামচন্দ্র জীউয়ের একটি সবুজ মূর্তি আছে । রামনবমীতে তাঁর পুজো হয় । নিত্য পূজিত
হন রাধাবৃন্দাবনচন্দ্র জীউ , রাধাগৌরাঙ্গরায় জীউ , মদনমোহন জীউ , রাধাগোপালরাই জীউ
। রয়েছে নন্দগোপালের বিগ্রহও । দেবতার বেশে এই বিগ্রহ আসলে যেন বাড়ির ছোট্ট-
দুষ্টু- পেটুক ছেলেটি ! তিনি বর্ণিত হন খুব পরিচিত ছবিতে --- “তালের বড়া খেয়ে নন্দ
নাচিতে লাগিলো ।“ এই বাড়ির কাছেই বড়বাজার এলাকায় এখানকার বৃহত্তম রাধা শ্যামচাঁদ
জীউয়ের মন্দির । এটি ১১০ ফুট উঁচু ও ৬৮ ফুট চওড়া । মন্দিরটি বাংলার আটচালা
নির্মাণশৈলীতে তৈরি । মূল বিগ্রহটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭২৬ খ্রিস্টাব্দে । মন্দিরটির
প্রতিষ্ঠাতা ধনী রামগোপাল খাঁ চৌধুরী ও তাঁর চার ভাই । এটির নির্মাণে সেকালেই খরচ
হয়েছিল প্রায় দু’লাখ টাকা ! পাঁচটি খিলান রয়েছে গর্ভগৃহের সামনে । সেগুলিতে
টেরাকোটা ও চুনাপাথরের অপূর্ব কারুকাজ দেখা যায় । কারুকাজের মধ্যেই মন্দিরের
প্রতিষ্ঠার সালটি উৎকীর্ণ – ১৬৪৮ শকাব্দ । মন্দিরটি রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের
তত্ত্বাবধানে রয়েছে । পরের গন্তব্য খাঁ পাড়ায় বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বাড়ি । গৃহদেবতা
শ্যামসুন্দর জীউ । বিজয়কৃষ্ণ, অদ্বৈত বংশের দশম প্রজন্ম । এখানকার প্রতিটি বৈষ্ণব
মন্দির ও বাড়িতে নিজস্ব রাসমঞ্চ বা হাওদা রয়েছে । ঘুরতে ঘুরতে কিছুক্ষণের বিরতিতে
চেখে দেখা যায় এখানকার স্বনামধন্য মিষ্টি নিখুঁতি । পরিবেশনের আগে মিষ্টির ওপর
গোলমরিচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয় ।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের অপূর্ব মিশেল ঘটেছে আনুমানিক তিনশো কুড়ি বছরের পুরনো
জলেশ্বর শিব মন্দিরে । এটি মতিগঞ্জ এলাকার বেজ পাড়ায় । চারচালা মন্দিরের খিলানের
উপরের দিকে শিব মন্দিরের সারির মধ্যে শিবলিঙ্গ উৎকীর্ণ টেরাকোটার কারুকাজে ।
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে রাজা রুদ্রের ছোট ছেলে রামকৃষ্ণের মা আঠেরো শতকের
প্রথমদিকে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । কেউ বলেন সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নদীয়ার
রাজা রাঘব রায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন । আগে এটি রানির শিব বা রুদ্রকান্ত নামে
পরিচিত ছিল । পরে একবার অনাবৃষ্টির সময়ে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বৃষ্টি হওয়ার জন্য
শিবলিঙ্গে প্রচুর গঙ্গাজল ঢেলেছিলেন বলে কথিত আছে । কাকতালীয় ভাবে তারপর সত্যিই
বৃষ্টি হয় । সেই থেকে লোকমুখে মন্দিরটি হয়ে যায় জলেশ্বর শিব মন্দির । প্রবেশদ্বার
দু’টিকে ঘিরে সারিবদ্ধ কুলুঙ্গির মধ্যে টেরাকোটার কারুকাজে খোদাই করা আছে –
কৃষ্ণলীলা , ভীষ্মের শরশয্যা , রামায়ণের বিভিন্ন ঘটনা , বিষ্ণু , কালীর মত পৌরাণিক
ও সমকালীন বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা । এত সূক্ষ্ম ভাস্কর্য ধারণ করে আছে যে মন্দিরটি ,
তার রক্ষণাবেক্ষণের চূড়ান্ত অভাব মনকে পীড়া দেয় ।
এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া যায় অদ্বৈতাচার্য সেবিত বিগ্রহ রাধা মদনগোপাল
জীউয়ের মন্দিরে । তাঁর ছেলে কৃষ্ণ মিশ্রের বংশধররাই এই পাড়ার বাসিন্দা ও
বংশপরম্পরায় মন্দিরের সেবায়েত । অদ্বৈতাচার্যই সেবিত বিগ্রহের নামে এই বাড়ির
নামকরণ করেন । তাঁর সেবিত বিগ্রহ ছাড়াও পূজিত হন বিষ্ণু শালগ্রাম শিলা ।
আচার্যদেবের ব্যবহার করা খুন্তি ও খড়ম এই মন্দিরে আছে । এরপর দেখে নেওয়া যায় পাগলা
গোস্বামী বাড়ির গৃহদেবতা কৃষ্ণরায় জীউয়ের মন্দির ।
তবে শান্তিপুর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আমবাগানের মধ্যে বাবলায় অদ্বৈত
পাটে না আসলে । অদ্বৈতাচার্য , মহাপ্রভু , নিত্যানন্দের সাধন – ভজন স্থান ছিল এটি
। সন্ন্যাস গ্রহণের পর চৈতন্যদেব দশ দিন এখানে ছিলেন । এখানে আছে এই তিন প্রভুর
বিশ্রাম কক্ষ । (সেবায়েত – ৯২৩২৭৭৫০৫০ , বিজয়কৃষ্ণ সেবা সমিতি -- ৯৭৩২৮১২৭০০) । এই
আশ্রমেই যবন হরিদাসকে দীক্ষা দিয়েছিলেন অদ্বৈতাচার্য । কথিত আছে কেলে নামে একটি
কুকুর প্রাঙ্গণের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে মাটি আঁচড়াতে থাকে । জায়গাটি খুঁড়ে
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, অদ্বৈতাচার্যের নামাঙ্কিত একটি ধাতব হাঁড়ি , কাঠের পাদুকা ও
কমণ্ডলু পান । এগুলি মন্দিরের বেদীর নীচে তিনি প্রোথিত করেন । তাই এটি বিজয়কৃষ্ণ
গোস্বামীর মন্দির নামে পরিচিত । এখানেই
চৈতন্যদেব অদ্বৈতাচার্যের কাছে শ্রীমদ্ভাগবত ও বেদের পাঠ নিয়ে ‘বিদ্যাসাগর’
উপাধি পান । এখানেই মাধবেন্দ্র পুরী অদ্বৈতাচার্যকে দীক্ষা দেন । এখানে লাউড়ের
রাজা দিব্য সিংহ শাক্ত ধর্ম ত্যাগ করে অদ্বৈতাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং
‘লাউড়িয়া কৃষ্ণদাস’ নামে পরিচিত হন । সে সময়ে গঙ্গা পাটের পাশ দিয়ে বইত । এখন পানা
পুকুর ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না । এখানে অদ্বৈতাচার্যের কাঠের মূর্তি , রাধাকৃষ্ণ
মূর্তি ও নারায়ণ শিলা আছে । এখানে দোল উৎসব ও অদ্বৈতের আবির্ভাব তিথি মাকড়ি সপ্তমী
উপলক্ষে উৎসব হয় ।
ফুলিয়ার তাঁতের শাড়ি জগদ্বিখ্যাত । তাই শান্তিপুরে এসে একবারটি তাঁতি পাড়ায়
ঢুঁ না মারলেই নয় ! এ পাড়ায় এসে পড়লে নিরন্তর স্বয়ংক্রিয় ও হাতে বোনা তাঁত যন্ত্রের
ছন্দোবদ্ধ শব্দ সিম্ফনির মত কানে এসে বাজে । বিশেষ করে, এখানকার কুটীরশিল্প হাতে
বোনা তাঁতের শাড়ির কর্মশালা দেখা একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা । একটা শাড়ি তৈরিতে
কতজন মানুষের শ্রম জড়িয়ে থাকে দেখলে অবাক লাগে ।
রাধারমণ জীউ ও শ্রীমতী
রঘুনাথ / রাম
রাধা শ্যামচাঁদ জীউ মন্দির
জলেশ্বর শিব মন্দিরে টেরাকোটার কারুকাজ ।
নিখুঁতি
শান্তিপুরের রাস যাত্রা
শান্তিপুরের তাঁত শিল্প
শান্তিপুরের রাস উৎসব
শান্তিপুরের রাস
শান্তিপুর রাস যাত্রা
শান্তিপুর রাস উৎসব
শান্তিপুরের রাসের
শান্তিপুরের ভাঙ্গা রাস
রাস পূর্ণিমা 2020






























কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.