শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

টান

 #টান



বাড়িতে একা যেসব নিঃসঙ্গ - নির্বান্ধব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নানান অসহায়তার কথা আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে পড়ি , সুরজিতবাবু তেমনই একজন । উনি আর ওনার স্ত্রী ছাড়া বাড়িতে তৃতীয় কোনও প্রাণী নেই । সুরজিতবাবুর ছেলে অনেকদিন থেকে গুজরাতের স্থায়ী বাসিন্দা , কালেভদ্রে কলকাতায় আসে । এই বয়সেও সুরজিতবাবুর আত্মসম্মানবোধ প্রবল , কেউ আলগা সহানুভূতি দেখাতে আসলে বিরক্ত হন । কেউ ছেলের নামে কটু কথা বললেও তাঁর গায়ে লাগে , যদিও নিজেই বুঝতে পারেন ছেলের কাছে তাঁর বাবা-মায়ের গুরুত্ব কমে গেছে অনেকখানি । সে এখন ব্যস্ত মানুষ , কাজের মানুষ । কিন্তু ব্যস্ততা তো একদিন সুরজিতবাবুর জীবনেও ছিল , ব্যস্ততা সামলেও সংসারের প্রতি কর্তব্যে তিনি তো কোনও অবহেলা করেননি । এখন কী মানুষের জীবনে ব্যস্ততা অনেকটা বেড়ে গেছে ? হবেও বা । এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই বারান্দায় বসে সকালের চা-টা খাচ্ছিলেন দু'জনে । রাস্তা দিয়ে পরিচিত মানুষেরা যায় , কুশল সংবাদ বিনিময় হয় , ভালই লাগে । আর সুরজিতবাবুর স্ত্রী অপরাজিতা লক্ষ্য রাখেন সবজিওয়ালাদের ওপর । বাড়িতে বাজার করে রান্না করার লোক আছে , তবুও টুকটাক আনাজপাতি কেনেন , কোনও দরকার ছাড়াই রান্না করেন , নিঃসঙ্গতা কাটাতেই বোধহয় । এ পাড়ায় একটা মুসলিম সব্জিওয়ালা আসে , নাম আলি । ওর কাছে নানা রকমের তাজা শাক-সবজি সস্তায় পেয়ে যায় সবাই , তাই এই পাড়ায় ওর কদর বেশি । আলি সামনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে , এরপর অপরাজিতার কাছে আসবে । হঠাৎ সুরজিত-অপরাজিতা দু'জনেই দেখলেন মোবাইলে একটা ফোন আসার পরেই আলি শশব্যস্ত হয়ে উঠল । নিজের ভ্যান , ভ্যানে রাখা সবজি ফেলে বড় রাস্তার দিকে দৌড়ল , আক্ষরিক অর্থেই । তারপর দেখলেন সামনের বাড়ির বিপুলবাবু , তাঁর স্ত্রী আর মেয়ে মিলে সব আনাজ নিজেদের বাড়ির ভিতর নিয়ে গেলেন আর ভ্যানটা লোহার গেটের সাথে একটা শিকল দিয়ে তালা দিয়ে রাখলেন , যাতে চুরি না হয়ে যায় কিছু । অপরাজিতা স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন
--- ব্যাপারটা কী হল কিছু বুঝলে ?
--- কোন ব্যাপার ? প্রশ্নটা বুঝেও স্ত্রীর সাথে একটু রসিকতা করতে ইচ্ছে হল সুরজিতবাবুর !
--- আলি আচমকা কোথায় দৌড়ে গেল ?
--- ওর বউটা পোয়াতি , পরশু বলছিল । সম্ভবত হাসপাতাল থেকে কেউ ফোন করেছিল । ভাল খবরই বোধহয় , নইলে সব ফেলে ওরকম পড়িমরি করে ছুটত না । আয়ুষ্মান জন্মানোর দিনটা মনে নেই ? অফিসে যেতে গিয়েও মাঝরাস্তা থেকে ফিরে এসেছিলাম । তোমার বড়দার কাছে ওর জন্মের খবরটা শুনে আনন্দে-উত্তেজনায় আমার হাত-পা কাঁপছিল । কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না । সেই ছেলে এখন এত ব্যস্ত, যে ফোনে বাপের খবর নেওয়ার সময় পায় না ।
--- এই সক্কালবেলায় আমার ছেলেটাকে দুষো না তো । কাল বরং বিপুলবাবুর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে , তুমি একবাক্স সন্দেশ এনে দিয়ো , আলিকে দেবো । অন্যমনস্ক হওয়ার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন অপরাজিতা । সকালবেলার নরম আলোয় তখন তাঁর দু'চোখ ভরা টলটলে জল চিকচিক করছে ।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...