জলপাইগুড়িতে
সুভাষ চন্দ্র বসু
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অন্তর্গত
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে বেশ কিছু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য ছবি এবং বিরল তথ্য
প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছেন ‘জলপাইগুড়ি নেতাজি সুভাষ মিউজিয়াম ও কালচারাল ফাউন্ডেশন’
, এই শহরে সুভাষ চন্দ্র বসুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের পঁচাত্তর বর্ষপূর্তিতে । জলপাইগুড়িতে
বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস সম্মেলন (১৯৩৯) উপলক্ষে এসেছিলেন নেতাজি । ৫ ফেব্রুয়ারি
১৯৩৯ জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রধান কার্যালয়ের পাশে , পাওয়ার হাউসে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন
জেনারেটর উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি সুভাষ বসুর ছবি আছে এখানে । আছে , এই শহরে অবস্থানকালে
বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির সামনে রাজা প্রসন্নদেব রায়কতের সঙ্গে ছবি । প্রসন্নদেব রায়কতের নামে বর্তমানে শহরে একটি মহিলা
কলেজ আছে । এই অধিবেশনে ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ , রাত সাড়ে আটটায় বক্তৃতা দিতে উঠে সুভাষ
চন্দ্র বসু ঘোষণা করেন ---- “আজ পরিষ্কারভাবে বলিবার সময় আসিয়াছে , কোন পথে আমরা চলিব
, আমরা কোন কৌশল অবলম্বন করিব , কী ভাবে চলিলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা
লাভ করিতে পারিব । আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই যে , যে সুবর্ণ সুযোগ এতদিন পরে
উপস্থিত হইয়াছে , তাহা গ্রহণ করিয়া যদি আমরা জাতীয় দাবি উপস্থিত করি এবং তাহার পশ্চাতে
আসন্ন সংগ্রামের সমস্ত আয়োজন তৈয়ারি রাখি , তাহা হইলে অতি শীঘ্র আমাদের অভীষ্ট ---
পূর্ণ স্বাধীনতা আমরা লাভ করিতে পারিব ।“ এই অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব ছিল --- “ইংরেজ
রাজশক্তিকে ছয় মাসের চরমপত্র(ULTIMATUM) প্রদান করিতে হইবে ।“
সম্মেলনটি হয়েছিল জলপাইগুড়ি টাউন রেল
স্টেশনের কাছে , বোদা রোডের পাশে , হরিজনদের বাসস্থানের জন্য চিহ্নিত ৩০ বিঘা জমিতে
, পুরসভার অনুমতিসাপেক্ষে । সম্মেলন স্থলটির নামকরণ করা হয় জেলা কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি
স্বর্গীয় জগদীন্দ্র দেব রায়কতের স্মরণে , ‘জগদীন্দ্র নগর’ হিসেবে । ৩ – ৫ ফেব্রুয়ারি
১৯৩৯ সম্মেলন হয়েছিল । নেতাজি আসেন শরৎ চন্দ্র বসু – সহ অন্যান্য প্রাদেশিক ও সর্বভারতীয়
নেতাদের নিয়ে ৪ তারিখে । ‘রাষ্ট্রপতি’ সুভাষকে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ‘গার্ড অব অনার’
দেন । তাঁকে নিয়ে শহরে শোভাযাত্রা হয় এবং তাঁদের দেখতে বিপুল জনসমাগম ঘটে । এরপর সম্মেলনস্থলে
শ্রী আশরাফউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন । রাষ্ট্রপতি সুভাষ চন্দ্র
বসুকে আর্যনাট্য সমাজ সভাঘরে পুরসভা ও অন্যান্য নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা
জ্ঞাপন করা হয় । এরপর অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ডাঃ চারুচন্দ্র সান্যাল স্বাগত ভাষণ
দেন । তারপর একে একে ভাষণ দেন শরৎ চন্দ্র বসু এবং সুভাষ চন্দ্র বসু । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য
, শহরের ‘মাদ্রাসার মাঠ’ বলে পরিচিত মাঠটিতেও নেতাজি ও অন্যান্য প্রাতঃস্মরণীয় জাতীয়
নেতারা বক্তৃতা করেছেন । পুরসভা থেকে জায়গাটি চিহ্নিত করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ।
বর্তমানে শহরে দিনবাজারে সান্যাল বাড়ির রাস্তাটির নাম রাখা হয়েছে চারুচন্দ্র সান্যাল
সরণি । তাঁর ছেলে হীরেন(মানিক) সান্যালও স্বনামধন্য বামপন্থী সাংসদ – রাজনীতিক ছিলেন
।
এই সম্মেলনের আয়োজনও ছিল সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে
মনে রাখার মত । ৩২ টি জেলার জন্য বাঁশ ও ভাবুনী দিয়ে ৩২ টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল ।
৮০০ জনের রোজ খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল । উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দের তালিকায় মুজাফফর
আহম্মদের নামটি কৌতূহলোদ্দীপক ! যাঁর নামে মুজাফফর আহম্মদ ভবন কলকাতায় , তিনি আর ইনি
কি অভিন্ন ব্যক্তি ? প্রশ্ন থেকে যায় । কারণ তালিকার অনেকেই পরে বামপন্থী দলে যোগ দিয়েছিলেন
। এই সম্মেলনে সভাপতি ছিলেন শরৎচন্দ্র বসু । সম্মেলনের খবর ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে
প্রকাশিত হয়েছিল অমৃতবাজার পত্রিকায় । লেখা হয়েছিল ---- “THE PRESIDENT TOOK HIS
SEAT ON THE DIAS WHICH WAS DECORATED WITH FLOWERS AND FOLIAGE , PICTURES OF
MAHATMA GANDHI , PANDIT JAWAHARLAL AND SJ. SUBHASH CHANDRA BOSE WERE HUNG UP
PROMINENTLY . AS ALSO SOME QUOTATIONS FROM THE POETICAL WORKS OF RABINDRANATH
TAGORE. DR. CHARUCHANDRA SANYAL , CHAIRMAN OF THE RECEPTION COMMITTTEE WELCOMED
THE DELEGATES. HIS WELCOME TO SJ. SUBHASH CHANDRA BOSE, THE PRESIDENT—ELECT OF
THE INDIAN NATIONAL CONGRESS, WAS LOUDLY CHEERED BY THE ENTIRE ASSEMBLY. “
এই সম্মেলনে সুভাষ চন্দ্র বসু বলেন
--- “বন্ধুগণ , আমি মনে করি এখানকার প্রাদেশিক সম্মেলন সাফল্যমণ্ডিত হইয়াছে , আশাতীতভাবে
সাফল্যমণ্ডিত হইয়াছে । “ এই গ্যালারিতে জেলার তৎকালীন বিশিষ্ট চা – শিল্পপতি , তারিণী
প্রসাদ রায়ের বাবু পাড়ার বাড়িতে , অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শরৎ ও সুভাষ চন্দ্র বসুর
ছবি আছে ।
ঋণ
: ‘জলপাইগুড়ি নেতাজি সুভাষ মিউজিয়াম ও কালচারাল ফাউন্ডেশন’ ।














কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.