কলকাতা শহরতলিতে স্পেশ্যাল ই এম ইউ লোকালে জোর করে ওঠা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে । খবর হচ্ছে । বেশিরভাগ ঝামেলার খবরই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার । যাঁরা নিয়মিত এখন স্পেশ্যাল ট্রেনে যান , তাঁদের সংক্রমণের ভয় , আর এক শ্রেণির মানুষের কর্মস্থলে দেরী হওয়ার ভয় এবং তার চেয়েও বেশি যাতায়াতের খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয় । দুই পক্ষই নিরুপায় । আরও বেশি অসহায় বোধহয় রেল । তাঁদের তো শ্যাম রাখি , না কুল রাখি অবস্থা । শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিরুপায় মানুষগুলির উপর লাঠি চালাতে হচ্ছে । যাঁদের উপর লাঠি চলছে , যাঁরা মূলত অবরোধ করছেন , এমনিতে তাঁরা খুব অল্প সংখ্যকই আমাদের পাশে বসেন , বেশিরভাগই বসেন ট্রেনের মেঝেতে । ভুল করে সিটে বসে পড়লে বাবুরা হয় স্পষ্ট করে বলেন , নয়ত এমন মুখভঙ্গি করেন, যে সিটে না বসলেই ভাল হয় । অথচ এই শ্রেণির যাতায়াতের কথা ভেবেই কিন্তু ট্রেনে যাতায়াতের খরচ, এ দেশে মাত্রাতিরিক্ত কম । এই সত্যটাই স্পষ্ট হচ্ছে লোকাল ট্রেনে জোর করে উঠতে যাওয়ার খবরে । এক রসিক পাঠক আনন্দবাজার পত্রিকার দেওয়াল লিখনে লিখেছিলেন --- গরিব লোকের জন্য ন্যানো / বড়লোকেরা চড়ছে কেন ? এই খবরে আমার সেই ছড়াটা মনে পড়ছে । নিশ্চিত ভাবে জানিনা , তবে যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন , অবরোধ করছেন , তাঁদের মনের কথা বোধহয় কতকটা এরকমই । আমার সীমিত অভিজ্ঞতা থেকে কলকাতার লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের তিন ভাগে ভাগ করতে পারি --- শিয়ালদা মেন লাইনের যাত্রী , বনগাঁ লাইনের যাত্রী এবং শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার যাত্রী । কারওর প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা , অবজ্ঞা প্রকাশ না করেই বলছি , এঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র মেন লাইনের যাত্রীরা । লাইন করে উঠবেন(পারলে) , লাইন করে দাঁড়াবেন , এবং লাইন করে নামবেন, এমনটাতেই এঁরা যাতায়াতে অভস্ত । আর দক্ষিণ শাখার যাত্রীদের মাথায় মূলত দু'টো কথা থাকে -- উঠতে হবে এবং নামতে হবে , তা সে যে করেই হোক । কেউ ভুল বুঝবেন না , এটা ব্যঙ্গোক্তি নয় । যা মনে হয়েছে , তা-ই লিখছি । কারণটা বোধহয় আর্থ-সামাজিক অবস্থান । আমার এই ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি , নিজেদের অতীত ভুলে অনেকে উন্নাসিকের মত বলেন --- ওদিকটা তো ছিল মূলত উদ্বাস্তু কলোনি , তাই ওদের এমন বেয়াড়া স্বভাব । আমার মনে হয়না এই ব্যাখ্যা ঠিক । উদ্বাস্তুরা সবদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন , এভাবে বিশেষ একটি শাখার যাত্রীদের আলাদা করা যায় না । তিনটি শাখার যাত্রীদের আচরণের পার্থক্যের কারণটা বোধহয় মানুষের স্বভাবজনিত । যে স্বভাবের কারণে মানুষ মেট্রো রেলের প্ল্যাটফর্মে পানের পিক ফেলে না , লোকাল ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের দেওয়ালে ফেলে । এখন ট্রেনে উঠতে না পেরে বেশিরভাগ অবরোধের খবর দক্ষিণ শাখা থেকেই আসছে বটে , তবে আমার বিশ্বাস সামাজিক কারণেই শুধুমাত্র একদিকে এই সমস্যা আটকে থাকবে না । বরং যত দিন যাবে , দিকে দিকে এই সমস্যা দেখা দেবে । পেট বড় বালাই । শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদ অনেক পরে আসে । ভুঁড়ি ঠাণ্ডা তো মুড়ি ঠাণ্ডা ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_6.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.