২০০২ -এর পুজোর সময় আমরা সপরিবারে গেছিলাম হরিদ্বারে । চারটে অভিজ্ঞতা কোনওদিন ভোলার নয় ।
১) আমরা উঠেছিলাম ভোলাগিরি ধর্মশালায় । বেশ শীত । কলের জল কনকনে ঠাণ্ডা । দাঁত মাজছি , আর নীচে হর কি পউরী ঘাটে লোকের যাতায়াত দেখছি । হঠাৎ কোথা থেকে একটা হনুমান এলো । কল খুলে , আঁজলা ভরে জল খেল পেট ভরে , এবং যাওয়ার সময় প্যাঁচ ঘুরিয়ে কল বন্ধ করে গেল ! দেখলাম মানুষ ভুলে যায় , ওরা ভোলে না ! স্বচক্ষে না দেখলে এমন দৃশ্য যে বাস্তবে সম্ভব তা আমিও বিশ্বাস করতাম না ।
২) দাদা - বৌদির হোটেলের নিরামিষ রান্না । খাওয়ার শুরুটা গাওয়া ঘি দিয়ে । আর রান্নার স্বাদ ? আহা , যাহা খাইলাম তাহা জন্ম -জন্মান্তরেও ভুলিব না --- বলতেই হবে খাওয়ার পরে । দোকানের উপরে বড় বড় করে লেখা --- নৈহাটির লোকের দোকান ।
৩) মনসা পাহাড় থেকে চণ্ডী পাহাড়ে আমরা যাচ্ছি রোপওয়েতে । বাড়ির সবাই একটা বাক্সয় আর আমার সাথে অপিরিচিত এক বাঙালি আরেকটায় । ঠিক মাঝপথে গিয়ে পাওয়ার কাট । রোপওয়ে থেমে গেল । বহুউউউ নীচে সরু সুতোর মত গঙ্গা নদী বয়ে চলেছে ,আড়চোখে দেখলাম । পরিস্থিতিটা উপভোগ করার মত অবস্থায় একেবারেই ছিলাম না , বলাই বাহুল্য ;কারণ আমাদের নিয়ে বাক্সটা প্রবল হাওয়ায় তিরতির করে কাঁপছিল ! হয়ত মিনিট দু'য়েক চলাচল বন্ধ ছিল , কিন্তু আমার মনে হয়েছিল কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক যুগ !
৪) ঘুরতে বেড়িয়ে খুব পরিচিত কারও দেখা পেলে একরকম আবিষ্কারের আনন্দ হয় । একদিন আমরা 'নৈহাটির লোকের দোকানে' খাচ্ছি , হঠাৎ দেখি আমাদের সামনের টেবিলে এসে বসলেন আমার এক সহপাঠী -- বুবুনের(শুভজিৎ সাহা) বাবা - মা - বোন । কোথায় জলপাইগুড়ি আর কোথায় হরিদ্বার ! মেলালেন, তিনি মেলালেন । কাছাকাছি অভিজ্ঞতা হয়েছিল আগ্রায় । তাজমহল দেখার ঘোর তখনও কাটেনি , আমরা সবে বাইরে বেরিয়েছি । এমন সময় হঠাৎ ইলেকট্রিক ব্লু কালারের একটা মার্সিডিজের ভেতর থেকে মনে হল স্যর - স্যর বলে কেউ ডাকছে । টিন্টেড গ্লাস , তাই প্রথমে কাউকে দেখতে পাইনি । তারপর পাওয়ার উইন্ডো নেমে একজন ভদ্রলোকের মুখ বেরিয়ে এল , তারপর তিনি নিজেই বেরিয়ে এলেন । বাবার ছাত্র । জলপাইগুড়ির সোনাউল্লা হাই স্কুলে পড়েছেন , বাবা ক্লাস টিচার ছিলেন । ভদ্রলোক এখন নয়ডায় থাকেন , আমাদের বাড়ি নিয়ে যাবেনই । কিন্তু আমরা নিরুপায় , সেদিনই দিল্লি ফিরতে হবে । আবেগঘন দৃশ্যের শেষে দেখলাম ছাত্র - শিক্ষক দু'জনের চোখেই জল ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_49.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.