বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

লকডাউন ডায়েরি

 

এক

 

০১-০৪-২০২০




গতকাল রাতে অতিমারির শহরে কী কী দেখলাম :

সুনসান রাস্তায় ঘাড় গুঁজে কোনও মতে নিজেকে টেনে নিয়ে চলা তিনটে বুড়ো রিকশাওয়ালা  দেখলে মনে হয় টোকা দিলে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে  ঘড়ি বলছে সন্ধে সাতটা বাজে , কিন্তু রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছে রাত দেড়টা।

কারও সাথে বাজারের ব্যাগ দেখলেই রাস্তার দু'দিক থেকে ছুটে আসছে দলে দলে কুকুর  সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে শুধু 




চাপ চাপ অন্ধকারে ঢাকা নিস্তব্ধ তাল্পুকুর বাজারের রাস্তা ধরে যেতে যেতে হঠাৎ চমকে গেলাম কঁ কঁর কঁ আওয়াজে  দাঁড়িয়ে গেলাম , দেখতে পেলাম না কিছুই  শুধু বুঝলাম মুরগিগুলোকে বাজারে রেখেই ঝাঁপ ফেলেছেন দোকানি  এই রাস্তায় পরপর মাংসের দোকান  যত এগোলামএকই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল  চুরির ভয় নেই ? "প্রশ্ন অনেক উত্তর নেই , এই অসহ্য সময়টাকেই কাঁদতে দে মনে পড়ল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'রাজকাহিনিদেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন , দাঙ্গার আবহে , নিশুতি রাতে , জনমানবহীন মেখলিগঞ্জের হাটে খাসি ঝোলে কীভাবে ? ডিটেলের দিকে পরিচালকের নজরের অভাব আছে  চাক্ষুষ করলাম বাস্তবের সাথে কল্পনা কীভাবে মিলেমিশে যায়  কখনও বা কল্পনাকেও ছাপিয়ে যায় 




আজ সকালে কী দেখলাম :

জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে 'পদাতিক এক্সপ্রেসদাঁড়ানোর দাবিতে লড়ছেন অনেকে  আপাতত ট্রেনটির ঠিকানা আমাদের হেরিটেজ স্টেশনের চার নম্বর লাইন 




বেলা বারোটা  ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি বড় বাজারের  রাস্তায় যে 'জন বিক্রেতা বসে আছেন তাঁরা কেউ কেউ কাকুতিমিনতি করছেন আনাজ নেওয়ার জন্য  কেউ উদাসীন  কেউ রাস্তার ধারে সাজানো দোকানের অস্থায়ী ছাউনির নীচে আধশোয়া  চোখ খবরের কাগজে  আজকের রোদটা বড্ড চড়া 




অলিতেগলিতে ঘুরছে -- "হরেক মাস্ক কুড়ি টাকা  ফেরিওয়ালা , আরেকটা মাস্ক দাও , আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই , কিচ্ছু করার নেই 







এতখানি লিখে ফেলার পরে তপন সিনহার 'আতঙ্কছবির সংলাপ মনে পড়ছে :




"--- এখানে কী হচ্ছে ?

--- সাইকেল সেটিং হচ্ছে 

--- সাইকেল সুদ্ধু তুলে গঙ্গায় ফেলে দেব "

 

দুই

"ঘরে ঘরে ডাক পাঠাল , দীপালিকায় জ্বালাও আলো

জ্বালাও আলো , আপন আলো , শোনাও আলোর জয়বাণীরে "

--- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

 

০৬ - ০৪ - ২০২০ তারিখে সকালে ব্যারাকপুর স্টেশনের সামনে তোলা ছবি  আগের রাতে অকাল দীপাবলি দেখেছে দেশ  আর পরের দিন আমি দেখলাম এই চত্বরের বাসিন্দাঅর্ধভুক্ত - অভুক্ত মানুষের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন দুই বন্ধু  দেখলাম বিস্কুটের প্যাকেটের একটা বড় বাক্স কীভাবে নিমেষে খালি হয়ে  যায় খিদের সামনে  ছবি দেখে মনে হতে পারে , ওঁরা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন নন , কিন্তু সেটা ঠিক নয়  বুভুক্ষু মানুষগুলিকে সেই মুহূর্তে অতিমারি কোভিড'১৯ - এর ভয়াবহতা বোঝাতে পারছিলেন না ওঁরা  এই ছবিতে প্রবীণরা নেই , কারণ তাঁরা ছড়িয়ে - ছিটিয়ে বসে - শুয়ে ছিলেন স্টেশনের মূল চত্বরটিতে  যখন লকডাউন শুরু হয় , তখন স্টেশন চত্বরের বাসিন্দা এই মানুষগুলিকে বের করে দিয়ে , গোটা এলাকাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছিল  পরে সম্ভবত মানবিকতার খাতিরে সেই বাধা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে  উপরোক্ত এই দৃশ্য দেখে আমার মনে পড়ছিল 'ছবির দেশে কবিতার দেশেবইটিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের করা একটি কবিতার অনুবাদ ---

"যে শিশু মানচিত্র  প্রতিলিপি ভালোবাসে 

তার কাছে এই বিশ্ব তার ক্ষুধার মতনই  প্রকাণ্ড 

ওহ , প্রদীপের আলোয় কতই না বিশাল এই পৃথিবী 

স্মৃতির চোখে এই পৃথিবী কতই না ছোট !" 

-- শার্ল বোদলেয়ার  (পৃষ্ঠা -- ৮৫  যে দেশ এই বইয়ের বিষয় , সেই ফ্রান্সও বাচেনি অতিমারির প্রকোপ থেকে )

স্কুলের ইতিহাস বই , গল্পের বইয়ে পড়া মহামারির স্মৃতি , মন্বন্তরের স্মৃতি 

আমি জরুরি কাজেই বেরিয়েছিলাম , কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে গেছি  আর পাঁচ জনের মত আমিও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন মেনে চলছি  ছবিও তুলেছি দূর থেকে  

 

 

তিন

 

টি ভি -তে দেখলাম রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় থুতু দিয়ে নথির পাতা ওলটাচ্ছেন  প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী  রাজ্যের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের ভাগীদার হতে একটা গোটা সন্ধেবেলা রাজভবনের সব আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন  সার্স - কোভ -  -এর এই অতিমারি চলাকালীনবর্তমান রাজ্যপাল কি পারেন না , অন্তত একটা সন্ধেবেলার জন্য সর্বসমক্ষে থুতুর বিপজ্জনক ব্যবহার বন্ধ করতে ?

 

চার

 

'গ্রাম নিয়ে ভয় মোদীর ১২ মে ২০২০

 

https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif

https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif

এই খবর অনুযায়ীপরিযায়ী শ্রমিকেরা গ্রামে ফিরলে করোনা সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী  কিন্তু আলাদা করে আমাদের মত গ্রামভিত্তিক দেশে গ্রাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া মানে , তাঁদের শিক্ষাদীক্ষা , বিচার - বিবেচনা  বিচক্ষণতা নিয়ে সরাসরি সংশয় প্রকাশ করা  যা তাঁদের পক্ষে চরম অবমাননাকর  লকডাউন চলাকালীনই খবরের কাগজে আমরা দেখেছি , কীভাবে গ্রামবাসীরা গ্রামে প্রবেশ - প্রস্থানের মূল পথটি বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে , সম্মিলিতভাবে বহিরাগতদের গতিবিধিতে কড়া নজর রেখে নিজেদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন  আমরা দেখেছি , কীভাবে বাইরে কাজ করতে যাওয়া সংশ্লিষ্ট গ্রামের বাসিন্দারা ভিন রাজ্য বা ভিন দেশ থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে ফিরে এলে , কীভাবে গ্রামবাসীরাই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের নিভৃতবাসে থাকার ব্যবস্থা করে সচেতনতার নজির তৈরি করেছেন  সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল , আজকেরই কাগজে খবর আছেলকডাউনের মধ্যে গ্রামে শর্ট ফিল্মের শুটিং করতে গিয়ে কতিপয় প্রগতিশীল মহানগরবাসী বসিরহাটের গুলাইচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দাদের এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন যে --- "...এত লোক কী করে কলকাতা থেকে গ্রামে শুটিং করতে এলেন ! ওঁদেরই অন্যদের সচেতন করার কথা  সেখানে ওঁরাই আইন ভাঙছেন !"  

 

সুতরাং গ্রাম নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা অমূলক  অপমানজনক  

 

 

পাঁচ

 

 

"এই যে ঊনসত্তরের " ----- বিশ্ব জুড়ে মানব ইতিহাসের বৃহত্তম লকডাউন চলাকালীন মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রক্তকরবী' এই সম্বোধনটি  সারা বিশ্ব থেকে  রাজ্য , অষ্টপ্রহর করোনা ভাইরাসের ব্যাপ্তি এবং মোকাবিলা সম্পর্কে কতগুলো সংখ্যা নাচছে চোখের সামনে  পেট্রোল পাম্পে তেল ভরার সময় যেমন মনিটরে চোখের পলকে কতগুলো সংখ্যা বদলে যায় , ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে একদম সেরকম  মোট করোনা আক্রান্ত - করোনার প্রকোপে মৃত এবং সর্বোপরি অতিমারির আবহেও করোনাজয়ী --- এই তিন ধরণের পরিসংখ্যানের মধ্যে সর্বক্ষণ থাকতে থাকতে কেন যেন মনে হচ্ছে , আসলে ওই সম্বোধনের মতই আমাদের আদতে কোনও ব্যক্তিপরিচয় নেই , নাম -পদবি নেই , আমরা এখন শুধুমাত্র কতগুলো সংখ্যা  সবার অলক্ষ্যে কেউ যেন যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ছড়াটি আবৃত্তি করে চলেছে ---- হারাধনের দশটি ছেলে , রইল বাকি... ... ...! 

 

ছয়

 

 

" এমন কল / যাতে রাজকার্য হয়ে যায় জল  এর সাহায্যে , রাজভক্তি প্রকাশে নারাজ যে , / তাকে করে তোলা একনিষ্ঠ রাজভক্ত , মোটে নয় শক্ত  " ---- হীরক রাজার দেশে , সত্যজিৎ রায় 

 

সম্ভাবনার সূত্র মেনে কল্পনাপ্রবণ মন বলছে ,  গ্রহের দাদা পাল্টাচ্ছে , কোভিড'১৯ - এর হাত ধরে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে ক্ষমতা অক্ষ  বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে এই জল্পনা , যে অতিমারি করোনা ভাইরাস আসলে জৈব মারণাস্ত্র  গোলাগুলি চলবে না , তবু মড়ক লাগার মত লোক মরবে , মরছেও  এই ভাইরাস ছড়ানো কোথা থেকে শুরু হয়েছিল , প্রথম কোন দেশ এই প্রাণঘাতী আক্রমণ সামলে নিয়েছে , প্রতিষেধক তৈরির কাঁচামালের জন্য কোন দেশের কাছে গোটা বিশ্বের নতজানু হতে হবে ------ সব প্রশ্নের একটাই উত্তর -- চিন  অপরাধী কখনও অপরাধের সাক্ষ্য রাখে না  তাই যে ডাক্তার প্রথম এর অস্তিত্বের কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন , তিনি ইতিহাসের নিয়ম মেনে এই রোগেই মারা গেছেন  পরপর কতগুলি ঘটনার কথা মনে করি  ১। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করল চিনসরাসরি খোদার ওপর খোদকারি করতে চেয়ে  ২। প্রকাশ্যে এল অলিম্পিকে চিনের চমকপ্রদ সাফল্যের নেপথ্যের কাহিনি  কাগজেনির্মম ক্রীড়া প্রশিক্ষণের সময় , যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া নাবালকের  ছবি প্রকাশিত হল  জানা গেল , রাষ্ট্র হিসেবে চিন নজর রাখে কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে  যদি তেমন কোনও খবর থাকে , তবে সাড়ে তিন বছর বয়স থেকে তাকে বড় করার দায়িত্ব পুরোপুরি নিয়ে নেয় চিন  বাবা -মা' মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে , জোর খাটিয়ে  সারা বিশ্ব জুড়ে , বিশেষ করে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে চিনা পণ্যের সমান্তরাল বাজারঅর্থনীতির ক্ষতি তো করছিলই  কিন্তু যাদের কোনও কিছুতেই তর সয়না , তাদের গোটা বিশ্বের বাজারের দখল চাই এবং একবারেতুড়ি মেরে চাই  সেই কারণেই নবরূপে করোনা ভাইরাসের মারাত্মক বিস্তার ঘটছে ---- এমনটা যদি কল্পনা করে নিই , তবে আশা করা যায় ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়াতে হবে না ! 

 

কিন্তু চিনের এই বিপজ্জনক উত্থান কীভাবে মোকাবিলা করছেন , এই গ্রহের বর্তমান দাদা(রা) ? সেই মানুষকেই গিনিপিগ বানিয়ে  'এমআরএন. --- ১২৭৩নামের টিকা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে সোমবার(১৬ - ০৩ - ২০২০) , দুই সন্তানের জননী জেনিভার হ্যালারের দেহে  গিনিপিগের শরীরে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ছবিও দেখেছি সবাই  অথচ জানিনা ফল কী হবে ! ওই মহিলা আদৌ বাঁচবেন কি না তারও নিশ্চয়তা নেই  আর আমেরিকায় হওয়া এই বিপজ্জনক পরীক্ষায় সহযোগী হিসেবে জড়িয়ে রয়েছে ভারতও  মনোমোহন মিত্র এমন খবর জানলে হয়ত বলতেন ----- সভ্য হল তারা , সভ্যতার চরম সঙ্কটের সময় যারা মানুষকেই গিনিপিগ বানিয়ে ছাড়ে আর তার নির্লজ্জ প্রচারও করে  সাবাশ ! 

ভাগ্যিস সেন্টিনেলরা আমাদের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয়না  আমার ধারণা এই বিপর্যয় যদি কাটিয়ে ওঠা যায় , তবে দেখা যাবে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাতি তারাই  

 

সাত

 

 

সত্যজিৎ রায়ের চারুলতা , নির্জন দুপুরের একাকীত্ব কাটাতে বাড়ির বিভিন্ন দিকের জানলার খড়খড়ি ফাঁক করে , দূরবীন দিয়ে চোখ রাখতেন বিচিত্র সব পসরা বিক্রির হাঁক দিতে দিতে যাওয়া বিভিন্ন ফেরিওয়ালার ওপর লকডাউন চলাকালীন আমাদের অবস্থাটাও হয়েছে ঠিক তেমনই বারান্দায় এসে দাঁড়ালেই নতুন এক ধরনের ফেরিওয়ালাকে দেখা যাচ্ছে , যাঁদের সাথে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ওঁরা সাইকেল নিয়ে অলিগলিতে ঘুরছেন সাইকেলের হাতলের সঙ্গে ইংরেজিটিঅক্ষরের মত ত্রিস্তরীয় বাতা লাগানো প্রতিটি  স্তরেই ঝুলছে রঙবেরঙের একাধিক মাস্ক মাস্কগুলি পারস্পরিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখছে না , প্রায় একে অন্যের ঘাড়ে চড়ে বসেছে ! ধীরে ধীরে প্যাডেলে চাপ দিতে দিতে , সাইকেল আরোহী হাঁকছেন --- “হরেক মাস্ক কুড়ি টাকা ! হরেক মাস্ক কুড়ি টাকা ! এক দাম , দামাদামি করবেন না কিছু কম হবেনা , কিছু বেশিও হবেনা !” এই দৃশ্য দেখে অতিমারির আবহে , কবীর সুমনের গানটি সামান্য পাল্টে গাইতে ইচ্ছে করছে --- মাস্কওয়ালা , আরেকটা মাস্ক দাও ; আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই , কিচ্ছু করার নেই মুখবর্মও বিক্রি হচ্ছে একইভাবে

প্রসঙ্গত , সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী নোনা চন্দনপুকুর এলাকায় কোভিড১৯ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে গোটা রাজ্যে চারটি ঘোষিত হটস্পটের অন্যতম , উত্তর চব্বিশ পরগনায় অন্তরীণ আছি আমরা

আট

 

 

২০ জুলাই ২০১২ সকালে বাবার টেম্পোরারি পেসমেকার খোলার পর বিকেলে হঠাৎ পরিস্থিতি অতি সঙ্কটজনক হল  চোখ ঘোলাটে , সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে , নিঃশ্বাস - প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ  কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (সম্ভবত ) ডাক্তার মিরাজ মণ্ডল ছুটে এলেন  হ্যাঁচকা টানে সবুজ পর্দা দিয়ে আই সি সি  - তে বেডের চারদিক ঘিরিয়ে দিলেন  আমাকে বললেন বাইরে বেরিয়ে যেতে  কিন্তু আমি কথা শুনিনি  সিস্টারদের টেবিল থেকে একটা ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ নিলেন আর পাশের স্বাস্থ্যকর্মীকে ঠিক দুটি শব্দে নির্দেশ দিলেন ----- মনিটর , ক্যুইক  বাবার ফতুয়াটা গলা পর্যন্ত উঠিয়ে বাঁ হাতের তর্জনী হৃৎপিণ্ডের ওপর রাখলেন একবার , তারপর সূচটা আমূল ঢুকিয়ে দিলেন ভিতরে  তারপর খুব আস্তে আস্তে টানতে লাগলেন , আর কালচে তরল বেরিয়ে আসতে লাগলো  একবার এরকম করার পরই মনিটর লাগানো হল  ছবিটা পুরোপুরি দেখতে পেলাম সামনে  ততক্ষণে সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা এসে গেছেন  আস্তে আস্তে সঙ্কট কেটে গেল  বাবাকে নতুন জীবন দিলেন ডাক্তার মিরাজ মণ্ডল  তিনি আমাদের কাছে দেবতুল্য নন , সাক্ষাৎ দেবতা  

 

বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া অনেক ভাল , অবিশ্বাস দিয়ে শুরু করলে সমস্যা জটিলতর হয়  সেদিন মিরাজবাবু এই তথাকথিত ঝুঁকিটা না নিলে কী হত ,  আর ভাবতে চাইনা  

 

দেবানন্দের গাইড ছবিটার , যার কাহিনিকার সম্ভবত সমরেশ বসু , শেষ দিকটা মনে পড়ছে  নায়ক একটি খরাপীড়িত গ্রামে গা ঢাকা দিতে আসে সাধুর ভেক ধরে  ঘটনাচক্রে স্থানীয় মানুষ ধরে নেয় তাঁর কোন অলৌকিক ক্ষমতা আছে  সবাই মিলে তাঁর পায়ে পড়ে আর্জি জানায় , তিনি যেন ভগবানকে বলেকয়ে একটু বৃষ্টি নামিয়ে দেন  নায়ক প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা করে যে , সে মহাপুরুষ নয় আদৌ , এসব অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর নেই  কিন্তু ভক্তবৃন্দ  কোনও কথা মানতে নারাজ  চাপে পড়ে নায়ক অনশন শুরু করে এই ভেবে যে ,  যদি তাঁর জন্য 'টা প্রাণ বাঁচে ,  তবে তাই সই  কাকতালীয়ভাবে শেষে সত্যিই বৃষ্টি নামে , এবং নায়ক মারা যায়  লোকে ধরে নেয় এই মহান মানুষটির আত্মত্যাগের জন্যেই  যাত্রা তারা বেঁচে গেল  এই ছবি একটা মানবিক উত্তরণের গল্প বলে  একজন সাধারণ ভ্রমণসঙ্গী , অনেকের কাছে জীবনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন  আমরা এই উত্তরণের গল্পে ভরসা রাখবো  

https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/09/pub-9792609886530610.html


 








লকডাউন ডায়েরি



my lockdown diary 2020

lockdown diary essay



lockdown diary writing


বাংলা নিবন্ধ


 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...