মন
বাড়িতে আগাছা পরিষ্কার করত নেপাল ভাই , বাড়ি তালমা মোড়ের কাছে । দুপুরবেলার খাওয়াটা আমাদের বাড়িতেই সারত । মা যা-ই দিন , ভাতের সঙ্গে নেপাল ভাইয়ের দু'টো জিনিস লাগবেই ---- এক খাবলা নুন আর গোটা তিনেক ঝাল লঙ্কা , যে দু'টোর কোনওটাই আমাদের খাওয়া অভ্যেস নেই । আমি অবাক হতাম , জিজ্ঞেস করতাম এগুলো এত বেশি খাও কেন ? দীর্ঘদিন লেগে থাকার পরে একদিন নেপাল ভাই রহস্যটা ফাঁস করল ---- "খাবারে স্বাদ পাইনা বলে ।" পরের প্রশ্ন , "কেন পাও না ?" নেপাল ভাই আবার চুপ । এবার মা-কে জিজ্ঞেস করলাম । মা বললেন , "নিত্যনতুন পদ খাওয়ার ক্ষমতা ওদের নেই বাবা । তাই এভাবে খাওয়া অভ্যেস হয়ে গেছে ।" জীবনের পাঠ নেওয়ার শুরুর সময় সেটা । কথাটা মনে ধরেছিল ।
বছর দু'তিন আগের কথা । সন্ধেবেলা পাশ দিয়ে গান করতে করতে খালি রিক্সা নিয়ে যাচ্ছেন একজন । নচিকেতার 'নীলাঞ্জনা' । দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ভদ্রলোক কোনও গানের অনুষ্ঠানে গেলে বিরাট সুনাম কুড়োবেন । রাস্তাতেই ওনাকে দাঁড় করালাম । গান শুনলাম প্রাণভরে । যাওয়ার সময় বলে গেলেন , "আমি শুধু নচিকেতার গান গাই দাদা । ওনাকে গান শোনানোর খুব ইচ্ছে আছে ।" উনি চলে যাওয়ার পরে মনে হল , ইশ , ওনার গান যদি রেকর্ড করে রাখতাম ! ওনার গলা যন্ত্রে ধরে না রাখতে পারি , মনে রেখে দিয়েছি ।
সেদিন চটি ঠিক করছি স্টেশনের সামনে । মুচির সঙ্গে গল্পও চলছে । পাশ দিয়ে হুউশ করে একটা রয়াল এনফিল্ড গেল । স্বভাব অনুযায়ী আমি যথারীতি রাজকীয় যানটির চরিত্র বিশ্লেষণ শুরু করলাম । একটা তথ্যে ভুল ধরিয়ে দিয়ে মুচি বললেন , দেশে তাঁর ছেলের কাছেও এ জিনিস একটা আছে । ছেলে ব্যবসা করে । ব্যবসায়িক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে দিল্লি থেকে আনিয়েছে , দাম কমও পড়েছে হাজার চারেক । আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তিরিশ টাকা এগিয়ে দিতেই বললেন ---- "আমি দুই পাটি সেলাই করার জন্য টাকাটা চেয়েছিলাম । দিন , ওই পাটিটা দিন ! এত অন্যমনস্ক হলে চলবে বাবু ?"
বুঝতে শুরু করেছি , জীবনদার কাছে নাড়া বাঁধলে অনেক কিছু শেখা যায় ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_50.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.