বিখ্যাত মানুষদের একটু অন্যভাবে আবিষ্কারের মধ্যে একটা আলাদা মজা থাকে । ২০০৫ সাল । এক প্রৌঢ় প্রতিদিন শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমাদের সঙ্গে লোকাল ট্রেনে ওঠেন , একদম ফুটবোর্ডের ওপর দাঁড়ান । ট্রেন চলতে শুরু করলে শুধু দরজার মাঝখানের হাতলটা বন্ধুর গলার মত জড়িয়ে ধরেন । তাঁর অর্ধেক শরীর বেরিয়ে থাকে ট্রেনের বাইরে , মোবাইলে মুহুর্মুহু ফোন আসে , ঝুলতে ঝুলতেই, বুক পকেট থেকে বাঁ হাত দিয়ে ফোন ধরেন এবং ঢাকুরিয়া আসলে নেমে যান । প্রতিদিন । কলকাতায় লোকাল ট্রেনের দরজায় এভাবে ঝুলে যাতায়াতের প্রবণতা বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে একটু কম দেখা যায় , তাই ওনার এই তরুণ মনটাকে , মনে মনে বাহবা দিতাম । আমি সাধারণত ট্রেনের শেষ কামরায় উঠতাম , উনিও তাই । একদিন আমার কাছ থেকে জলও চেয়ে খেলেন । টুকটাক কথাবার্তা হত । তারপর একদিন টিভি দেখতে বসে দেখি, এক খবরের চ্যানেলে আলোচকদের প্যানেলে উনি বসে ! এই পুজোর মরসুমেই । সঞ্চালক দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ভদ্রলোকের নাম বললেন --- বিশিষ্ট পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী । আমি থ !
মানে, এত বড় পণ্ডিত মানুষদের মধ্যে একটু রাশভারী ব্যাপার থাকে , কিন্তু আমরা যে দিনের পর দিন নিজের চোখে দেখেছি মানুষটা কী রোমাঞ্চপ্রিয় , মানুষটা কতটা ঝুঁকি নিতে ভালবাসেন , রোজ । এই ধরণের মানুষেরা সাধারণত অন্যদের ট্রেনের ফুটবোর্ডে দাঁড়াতে বারণ করবেন , এবং নিজে কক্ষনও দাঁড়াবেন না , এঁদের কাছে যেতে মানুষের ভয় লাগবে , --- এটাই স্বাভাবিক , এই ছবিটাই পরিচিত । নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ।
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/10/pub-9792609886530610_7.html

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.