আমার এক বন্ধু ১৯৯৮ সালে আত্মহত্যা করেছিল । যেদিন ঘটনাটা ঘটে , তার আগের দিন সন্ধে থেকে রাত সাড়ে দশটা অবধি আমাদের বাড়িতে ও জমিয়ে আড্ডা দিল । মায়ের সাথে গল্প করলো । মা খেয়ে যেতে বললেন , খেলোনা । চলে গেলো । জলপাইগুড়িতে রাত সাড়ে দশটা মানে তখন অনেক রাত । কারও বাড়িতে গেলে কেউ খুব দরকার না থাকলে সাধারণত অত দেরী করত না । যাইহোক , খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম । তারপর হঠাৎ পরদিন অন্ধকার কাটতে না কাটতে মাথার কাছের ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠলো । ওই সহপাঠীর বাবা কাঁপা কাঁপা গলায় জানালেন , ও বাড়িতে নেই , পাড়ায় নেই , কোথাও নেই । ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । দেরী না করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । যাওয়ার পথে আরও কয়েকজন সহপাঠীকে ডেকে নিলাম । সকাল ন'টা পর্যন্ত গোটা শহর চষে ফেলেও ওর কোনও খোঁজ পাওয়া গেলোনা । অগত্যা কোতোয়ালিতে গিয়ে মিসিং ডায়েরি করা হল । তারপর আমরা ফিরে আসছি , এমন সময় সদর গার্লসের সামনের ব্রিজে ওর চটি জোড়া দেখলাম , আগের দিন ওটা পরেই ও আমাদের বাড়িতে এসেছিল । আবার ছুটলাম থানায় এটা জানাতে । মনে আছে কোতোয়ালির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের ঘরে দল বেঁধে ঢুকে আমরা নির্দেশ দেওয়ার সুরে বলেছিলাম ,---“ডুবুরি নামানোর ব্যবস্থা করুন !” সেই আধিকারিক আমাদের কিছু একটা বোঝাতে যেতেই এক সহপাঠী চিৎকার করে টেবিলের কাচের ওপর চাপড় মেরে বলেছিল ,---- “আপনি বলুন ডুবুরি নামাবেন কি না ।“ সেই নেপালি ভদ্রলোক অত্যন্ত সহৃদয় ছিলেন বলতে হবে । হাজতে না ঢুকিয়ে আমাদের আবেগটাকে সম্মান দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে শান্ত স্বরে শুধু বলেছিলেন , ----“ ঠিক আছে , চলো দেখি কোথায় চটি দেখেছো ।“
মূলত এই মানুষটির আন্তরিক চেষ্টায় আড়াই দিন পর তিস্তা উদ্যানের সামনের সেতুটির কাছে ওর ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া , বিকৃত 'বডি' পাওয়া গেল । ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী , আমাদের বাড়ি থেকে বেরোনো আর ওর করলা নদীতে ডুবে মৃত্যুর সময়ের পার্থক্য সাড়ে তিন ঘণ্টা । অথচ আমি কিচ্ছু বুঝিনি , বিন্দুমাত্র আভাস পাইনি ওর মনে কী চলছে । এখনও বারবার ওর শেষ কথাগুলো মনে করার চেষ্টা করি । তাতে মনে হয় সেদিন একটা কথাই কানে লেগেছিল একটু ---- “সব কাছের লোক , কাছের হয়না ।“
আমি শ্মশানে যাইনি । যার সাথে এফ ডি আই স্কুলের দোতলার হল ঘরের সামনে , সিঁড়িতে বসে টিফিন ভাগ করে খেতাম , তাঁর ওই চেহারাটা আর দেখতে চাইনি । একই সঙ্গে পুরস্কার আর তিরস্কার জোটার এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা যেন কারও না হয় । প্রসঙ্গত , এই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে সদর হাসপাতালে ওর অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছিল এবং তখনও সেলাই কাটা হয়নি । ঘটনার দিনও ওদের বাড়ির সদর দরজার তালা বন্ধই ছিল । মানেটা দাঁড়ায় ও পাঁচিল টপকে বের হয়েছিল । ওই অবস্থায় সেটা কীভাবে সম্ভব , সেটাও আমার কাছে এখনও একটা বড় প্রশ্ন ।
পুনশ্চ ঃ আমাদের আরও একজন সহপাঠী বছর দুয়েক আগে কোচবিহারের রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছে । সেদিন অন্য এক সহপাঠী কোনও একটা কাজে গিয়ে ওই রাস্তাতেই বাসে ফিরছিল । (আমরা সবাই-ই স্কুলে এক ক্লাস , এক সেকশন , অধিকাংশ সময়ে এক বেঞ্চও । ) আসার পথে ও বাসের জানলা দিয়ে দেখে একটা গাড়ির সামনের দিকটা বিচ্ছিরিভাবে দুমড়ে মুচড়ে গেছে । শোনে ,একজন ঘটনাস্থলেই মৃত । ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস , জলপাইগুড়িতে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরে জানতে পারে , ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে আমাদেরই আরেক সহপাঠী ছিল , সে - ই মারা গেছে ।
কী বলব একে ? নিয়তি ? জানিনা । ভালো থাকিস তোরা । প্রণাম নিস ।
Extrasensory perception
https://g.co/kgs/qaEhwi
বুদ্ধিতে যার ব্যাখ্যা চলে না
extra sensory perception in bengali
extrasensory meaning in bengali
telepathy meaning in bengali
esp

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.