শনিবার, ৯ মে, ২০২০

ফুলের রাজ্যে কিছুক্ষণ


      কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে । দুর্গা দুর্গা বলে একদিন সকাল সকাল বেরিয়ে ই এম ইউ লোকাল ট্রেনে চেপে সোজা রানাঘাট স্টেশনে এসে নামলাম । স্টেশনের বাইরে দোকানের সাইনবোর্ডে ঠিকানা লেখা – রথতলা , রানাঘাট , নদীয়া । স্টেশন থেকে ম্যাজিক ভ্যানে করে চাপড়া বাজারে নামলাম । আসার পথে দু’টি জিনিস আলাদা করে চোখে পড়ল--- ১) ফুলের খেত আর ২) কিছুদূর অন্তর অন্তর খেতে নাড়া পোড়ানোর ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারি বিজ্ঞপ্তি । কাগজে দেখেছি এই নাড়া পোড়ানো দিল্লি , উত্তরপ্রদেশ , হরিয়ানা , পঞ্জাবের ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ । এ রাজ্যেও রাতে দূরপাল্লার ট্রেনে যাতায়াতের সময় নিশ্ছিদ্র অন্ধকার খেতের মাঝখানে নাড়া পোড়ানোর আগুন দেখেছি । যাইহোক দেখেশুনে বুঝলাম , এই চাপড়া বাজারে চাষিরা তাঁদের ফসল পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন । স্বাভাবিক ভাবেই গোটা এলাকা সরগরম । আমি ফুলের খেত দেখতে এসেছি জেনে এক খুচরো ফুল বিক্রেতা বলে দিলেন , পুরাতন চাপড়া গ্রামের পুকুর পাড়ে যান , বাহারি ফুল দেখতে পাবেন । কিন্তু সে জায়গায় পৌঁছে প্রথমেই একটু দমে গেলাম । একেবারে গ্রামের  কেন্দ্রস্থলে, স্বর্গীয় নির্জনতা ভেঙে, তারস্বরে ডি জে বক্স বাজাচ্ছে এক পিকনিক পার্টি । তাদেরকে পাশ কাটিয়ে আমি ফুল দেখতে এগিয়ে গেলাম । তারপর প্রকৃতির অকৃত্রিম রূপ দেখে কাশ্মীর সম্বন্ধে আমির খস্রুর সেই  বিখ্যাত স্বগতোক্তি মনে পড়ে গেল --- “গার ফিরদৌস বারুয়ে জমিন অস্ত , হামিনঅস্ত , হামিনঅস্ত ।“ ---- ধরণীতে যদি স্বর্গ বলে কিছু থেকে থাকে , তবে তা এখানেই , এখানেই । আমি পার্সি জানিনা । উদ্ধৃতিটা মনে থাকার একমাত্র কারণ , ‘হামি’ শব্দটা ফিরে ফিরে আসা ! কিন্তু সত্যিই , কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক , কে বলে তা বহুদূর । কাছেপিঠেই তো আছে স্বর্গছেঁড়া এক গ্রাম। সুধী বঙ্গজন, এখানে আর পিকনিক , ডি জে বক্স আনবেন না । কিছু জায়গা থাক না নিজেদের মত । গ্রামে বিজ্ঞপ্তি দেখে জানলাম , ২০১৫ সালে এই গ্রামটিকে নির্মল গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে । তাই আলপথ ধরে , অনভ্যস্ত পায়ে , ভারসাম্য বজায় রাখতে রাখতে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করা যায় । এই পরিবেশে দাঁড়িয়ে যদি কারও ফুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে , তবে বুঝতে হবে , শুধু চেহারা ছাড়া মানুষের কোনও গুণই তার মধ্যে নেই । এক চাষি ভাইকে দেখলাম , জমিতে বড় বড় চিনির দানার মত ইউরিয়া সার দিতে । সেদিকে তাকাতে গিয়ে আমার পা চটি – সহ কাদায় ঢুকে গেল ! তা যাক , একটু মাটি লাগুক শরীরে । মাটি থেকে বড্ড দূরে সরে গেছি ।   
        এবার ফেরার পালা । রাস্তায় চোখে পড়ল , চাপড়া জুনিয়র হাই স্কুল । এখানে আসার সময় চাপড়া বাজারে দেখেছিলাম , বিন – এর একটা ছোটখাটো পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন একজন ! সেই বিন নাইলনের বস্তায় বন্দী হচ্ছে , শহরে ছড়িয়ে পড়বে বলে । চাপড়া গ্রামের ত্রিসীমানায় কিন্তু হোটেল – রেস্তরাঁ নেই । ও পর্ব স্টেশনের বাইরেই সেরে আসতে হবে । ভাল ভাল হোটেল আছে অনেক , অল্প দামে উদরপূর্তি করার জন্য । গ্রামের ভিতর দিয়ে আসতে আসতে একটা বাড়ির গোবর দিয়ে নিকনো উঠোনের একপাশে বিরাট উঁচু টাওয়ার , নন আয়োনাইজড রেডিয়েশনের সতর্কবাণী – সহ । আরেকটা বাড়ির উঠোনে মুরগির খাঁচার ওপর মশারি টাঙানো । গ্রামের রাস্তার পাশে চায়ের দোকানের বেঞ্চের ওপর ভাঁজ করে রাখা খবরের কাগজ । যাঁর টোটোতে স্টেশনে ফিরলাম , তাঁরও ফুলের খেত আছে । আমার সাথেই বিরাট ফুলের বস্তা নিয়ে এলেন , যাবেন মায়াপুর । এখানে যাতায়াতের বাহনগুলির নামও মজার – ম্যাজিক ভ্যান , টুকটুকি ! আমি ০২-০২-২০২০ তারিখে গিয়েছিলাম । দেখলাম, ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশেই একটা ছাদহীন মালগাড়ি দাঁড়িয়ে । উৎকট পচা গন্ধ আসছে গোটা গাড়িটা থেকে । এতটাই , যে অনেক মেয়ে – মহিলার বিবমিষা জাগছে ।
        বুঝলাম , আমার প্যারাডাইস লস্ট । চলো মন নিজ নিকেতনে ।   



















































flower field painting,flower field,flower field acrylic painting,flower field watercolor painting,flower field painting easy,flower field video,flower field drawing,flower fields in india,flower fields carlsbad,flower field embroidery,flower field cinematic,flower field canvas painting,flower field oil pastels flower fields of mysore,chapra flower garden,west bengal,ফুলের ছবি,ফুলের বাগান,ফুলের নাম,ফুলের টব তৈরি















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...