২৩ অক্টোবর ২০১২ , মহাষ্টমীর রাতে দিকশূন্যপুরে চলে গিয়েছিলেন নীললোহিত । শ্রদ্ধা জানাবার জন্য ওঁর দেহ রবীন্দ্র সদনে রাখা ছিল । সেই লাইনে যখন দাঁড়ালাম , তখন তা নন্দনের গেট ছুঁয়েছে । আমার সামনের স্থূলকায় , পাজামা - পাঞ্জাবি পরিহিত ভদ্রলোকের হাতে ধরা পুষ্পস্তবকে বড় বড় করে লেখা -- 'নবজাগরণ' , তাঁর সামনের হাতে - মুখে শ্বেতি , জামা প্যান্ট পরা ভদ্রলোকের হাতের ফুলের তোড়ায় লেখা --- 'গণশক্তি' । কিছুক্ষণ পর 'নবজাগরণ' কাউকে ফোনে বললেন --- "এই রোদে দাঁড়াতে পারবোনা , ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা করো ।" 'গণশক্তি' আমার সামনেই ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে একটু একটু করে এগিয়ে চললেন এবং শ্রদ্ধা জানালেন । আমার খুব প্রিয়, কমল হাসান অভিনীত 'পুষ্পক' ছবিতে বিশিষ্ট উদ্যোগপতির মৃত্যুতে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের একটা দৃশ্য ছিল । কেন জানিনা সেটা মনে পড়ে গেল । "চোখ খোলা, তবু চোখ বুজে আছি -- কেউ তা দেখেনি ।" কবির পাশ থেকে চেঁচিয়ে একজন বললেন -- "এবার আমাদের এগোতে হবে । বডি ডিকম্পোজ করতে শুরু করেছে ।" মনে হল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যদি 'বডি' হয়ে যান , তবে আমার কী দশা হবে ! মানে যতক্ষণ বাঁচি , ততক্ষণ আছি । তারপর আর নেই , কিস্যু নেই । এক ভদ্রলোক নাবালক পুত্রকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন । সে প্রিয় লেখককে শেষ দেখা দেখবে বলে বায়না ধরেছিল । একথা শুনে তার বাবা দূরে সরে গেলেন । সাহিত্য আকাদেমি থেকে ওঁকে তখন বের করে আনা হয়েছে । বেরিয়ে আসছেন স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ও । হঠাৎ পিছন থেকে একজন ভদ্রলোক বললেন --- "স্বাতীদি , আবার আসবেন কিন্তু ।" ওই মুহূর্তে খুব তাৎপর্যপূর্ণ কথা , কিন্তু কথাটা বললেন মাত্র একজন । এক সময়ে যে কাগজের
কর্মী ছিলেন , সেই অফিসেও ওনার দেহ নিয়ে যাওয়া হল । আরও অনেকের সাথে আমিও ছবি তুলছিলাম
। শববাহী শকটের দরজার কাচ ভাঙা ছিল , খেয়াল করিনি । পাশেই বসেছিলেন ওনার ছেলে । ওই সময়েও একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষকে সতর্ক করে বললেন --- "আস্তে । হাত কেটে যাবে ।"
sunil gangopadhyay

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.