স্কুল থেকে কলেজ --- শাসন- শৃঙ্খলার নিগড় থেকে হঠাৎ মুক্তি , অনেকটা অপ্রত্যাশিত স্বাধীনতা । খুব ভারসাম্য বজায় রেখে চলার সময় সবার জন্য , পদস্খলন হলেই ক্ষতি । এই ব্যালান্স রেখে চলার মধ্যেই বেশ কিছু মজার - শেখার মত গল্প তৈরি হয় , যা মনে, ভবিষ্যতের গর্ভে, মণিমুক্তোর মত স্মৃতি হিসেবে থেকে যায় । কলেজে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকদের উদ্দেশে চাপা গলায় মন্তব্য করা , বা সোজাসাপ্টা ভাবে বললে আওয়াজ দেওয়া সেকালেও ছিল, একালেও আছে এবং থাকবে । বাবা আর আমার একই কলেজ --- এ সি কলেজ , জলপাইগুড়ি , কিন্তু আলাদা ঠিকানায় । বাবা যখন পড়তেন, তখন কলেজ ছিল রেসকোর্স পাড়ায় । একজন ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন ,যাঁর অগাধ পাণ্ডিত্যের কথা বাবার কাছে অনেকবার শুনেছি । পদবী বটব্যাল , নাম ভুলে গেছি । অনেকেই ওঁর পড়ানোর ভক্ত ছিলেন । শুধু অতি খর্বকায় বলে অনেক ছাত্রছাত্রী আড়ালে ওঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন । এখনকার মত ছাত্রছাত্রীদের বেয়াড়াপনা তখনও মাত্রাছাড়া হয়নি , কিন্তু সবসময়ই আলুর ঝুড়িতে দু'একটা আংশিক নষ্ট আলু তো থাকে ! একদিন বটব্যাল স্যরের পাস কোর্সের ক্লাস চলছে । পড়ানোর সময় তিনি কোনও প্রসঙ্গে 'শর্ট' শব্দটি উচ্চারণ করায় , একজন ছাত্র মুখ লুকিয়ে স্যরের উদ্দেশে মন্তব্য ছুঁড়ল --- "স্যর , ইউ আর টুউউউউউ শর্ট !" বটব্যাল স্যর বইয়ে মুখ গুঁজে ছিলেন । মুখ তুলে অজানা উদ্দেশে সপ্রতিভ ভাবে পত্রপাঠ উত্তর দিলেন ---- "ইয়েস , ডায়মন্ডস আর অলওয়েজ শর্ট !" মুখে আত্মবিশ্বাস মাখা স্মিত হাসি । কী চমৎকার উত্তর ! পাশাপাশি একজন দক্ষ শিক্ষক বেয়াড়া ছাত্রকে কীভাবে সামলান , সেটাও শেখার মত ।
আমার মা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়েছেন । অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য , ভূদেব চৌধুরীর মত সাহিত্যের ইতিহাসের দিকপাল মানুষেরা পড়াতেন তখন । রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের সহকারী হিসেবে , মা কিছুদিন কাজও করেছেন , সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত তখনকার উদীয়মান খ্যাতনামাদেরও দেখেছেন । যাইহোক , বহু মানুষেরই সামাজিক-আঞ্চলিক কারণে উচ্চারণে কিছু আপাত ত্রুটি থাকে , যা অন্যদের কাছে হাস্যকর মনে হয় । ভূদেব চৌধুরীরও এমন উচ্চারণগত ত্রুটি ছিল । উনি বাংলা পড়ানোর সময় 'ও'-কারের বাহুল্য দেখা যেত । তো একদিন বৈষ্ণব পদাবলীর গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ পড়াতে পড়াতে তন্ময় হয়ে একটি পদের ব্যাখ্যায় উনি বললেন ---- "তখন মা কইলেন , হাঁ কোর, হাঁ কোর...!" এই না শুনে, মায়ের এক সহপাঠী চাপা গলায় মন্তব্য করলেন --- "তোর মুখে কাঁকর !" স্বাভাবিক ভাবেই ভয়ঙ্কর রেগে গিয়েছিলেন ভূদেব চৌধুরী । যৌবনের তারল্যে যে সহপাঠী এই আওয়াজ দিয়েছিলেন , পরবর্তীকালে তিনি খ্যতনামা অধ্যাপক হন !
আমি কলেজে পড়ার সময় একইভাবে একটা দারুণ মজার ঘটনা ঘটেছিল । আমাদের পাস কোর্সের বাংলা বইয়ে 'রক্তকরবীর তিনজন' বলে একটি প্রবন্ধ পাঠ্য ছিল । রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী' নাটকে , বিশু পাগল - কিশোর আর রঞ্জনের মধ্যে কে নন্দিনীকে বেশি ভালবাসত , তা নিয়ে আলোচনাই ছিল মূল বিষয় । এখনও মনে আছে সঙ্গীতা ম্যাডাম বেশ ভাল করে মূল নাটকের সঙ্গে এই প্রবন্ধের তুলনামূলক আলোচনা করে, আমাদের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন ---- "তাহলে বলো , নন্দিনীকে কে সবচাইতে বেশি ভালবাসতো ?" এক বন্ধু পিছন থেকে মাথা নীচু করে বেশ চেঁচিয়ে বলল --- "ম্যাডাম , সলমন খান !" তখন শহরে সঞ্জয় লীলা ভন্সালির 'হাম দিল দে চুকে সনম' রমরমিয়ে চলছে , যার সঙ্গে আবার মৈত্রেয়ী দেবীর 'ন হন্যতে'র গল্পের আশ্চর্যজনক মিল ! তার সঙ্গে জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে সলমন খান - বিবেক ওবেরয় -ঐশ্বর্য রাই(বচ্চন)কে নিয়ে ফিল্মি গসিপ । ফলে ছাত্রছাত্রী নির্বিশেষে গোটা ক্লাসে হাসির রোল উঠল । ম্যাডামও হেসে ফেললেন ! সবারই তো একটা কলেজবেলা থাকে !
শেষ গল্পটা কলকাতায় এসে এক বন্ধুর কাছে শোনা । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের ক্লাস চলাকালীন ওই বাংলার ক্লাসেই শিক্ষক কিছু একটা ব্যাখ্যা করার পর , সে কতকটা স্বগতোক্তির ঢঙেই অস্ফুটে বলে উঠেছিল ---- "লে হালুয়া !" দুর্ভাগ্যবশত শিক্ষকমশাই সেটা শুনতে পেয়ে বলে উঠেছিলেন ---- "দে !" 😊
https://sankhamanigoswami.blogspot.com/2020/12/pub-9792609886530610_9.html
কলেজ জীবনের অভিজ্ঞতা
কলেজ নিয়ে লেখা
কলেজের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা দিনলিপি
কলেজ নিয়ে কিছু কথা
কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ
কলেজ নিয়ে কিছু কথা
















