দূরত্ববিধি
করোনা-কালে আমরা শারীরিক ও যথারীতি সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রেখে চলেছি । এর মধ্যে একদিন একটা ছেলের টি-শার্টে ছাপা দেখলাম , এই ক'মাসে, এই দেশে খুব পরিচিত একটা কথা --- "দূর সে হি নমস্তে !" আর ইদানীংকালে দেখা সবচেয়ে নান্দনিক একটা মুখাবরণ দেখলাম আজকে । এক ভদ্রমহিলা সঙ্গীর সাথে বাইকে যাচ্ছিলেন পিছনে বসে , মুখে মাস্ক । স্বীকার করতেই হবে মাস্কটা অপূর্ব । ঘন কালো রঙের মাস্কের ওপর নিপুণ হাতে গোলাপি লিপস্টিক দেওয়া আধখোলা ঠোঁট আঁকা বা ছাপা, হিসেব করে ঠিক ঠোঁটের জায়গায় । নিশ্চয়ই কোনও বুটিকের কাজ । তবে যারই করা হোক না কেন, কাজটা অপূর্ব , চোখ টানবেই । মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি সত্যি তারিফযোগ্য । সবে মনে হতে শুরু করেছিল লিপস্টিক কোম্পানিগুলোর দিন গেল , আর ছেলেদেরও কপাল পুড়ল ! অর্ধেক মুখই তো এখন থেকে ঢাকা থাকবে , কার মুখ দেখবে ! উল্টোটাও কী সত্যি নয় ! কিন্তু ধন্য মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা , ঢাকা অবস্থাতেও যে মুখকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় , মাত্র ক'মাসের মধ্যে, মানুষ সেটা দেখিয়ে দিল ! ভাবতে অবাক লাগে, এ বছরের গোড়ার দিকেও বেশ কিছুদিন আমরা সারা পৃথিবী জুড়ে পর্দা-প্রথা এভাবে নবকলেবরে ফিরে আসার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি !
এ তো গেল শারীরিক দূরত্ববিধি পালনের গল্প , এবার আসি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গল্পে , যাতে আরও ভাল করে বোঝা যায় কেন অনেকের 'সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা' ---- এই কথাটিতে ঘোর আপত্তি । রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখি , এক ভদ্রমহিলার ওড়না রিক্সার চাকায় প্রায় জড়িয়ে যাব যাব করছে । গলা তুলে ওনাকে সতর্ক করলাম , উনি ওড়নাটা টেনে নিলেন , রিক্সাটা চলে গেল । সবটাই হল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে । এবার আমি সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখলাম , এক ভদ্রলোক আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছেন । সাইকেল থামিয়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম । ভদ্রলোক বললেন --- "দেখলাম , কাজটা ভালই করলেন আপনি । কিন্তু একই কাজ আমি একদিন করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছি ।"
বললাম --- "কেন ?"
ভদ্রলোক উত্তরে জানালেন ---- "সেদিন একটা মেয়ে সঙ্গীর সাথে বাইকে চড়ে যাচ্ছিল । আমি যখন দেখি , তখন আর একটু দেরী করলে বাইকের পিছনের চাকায় ওড়না জড়িয়ে যাবে । চিৎকার করে সতর্ক করলাম । মেয়েটা পোশাক সামলে নিল । বাইকটা দাঁড়াল । তারপর পুরুষ সঙ্গী মুখ খোলার আগেই মেয়েটা বলল ---- 'আমার ওড়না চাকায় জড়িয়ে গেলে আপনার কোনও অসুবিধে আছে ?' আমি তো হাঁ । রাস্তার মাঝখানে এমনভাবে জীবনে অপমানিত হইনি , বুঝলেন । তাই বলছি , পরেরবার থেকে একটু ভেবেচিন্তে লোকের উপকার করবেন ।" গল্পটা শুনে আমিও তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম । অন্যমনস্কভাবে কোনও উত্তর না দিয়েই সামনে এগিয়ে গেলাম । আর যেতে যেতে ঠিক করলাম , আগামীকাল একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হলে , আমি আমার কর্তব্যটুকু করবই । গালাগালি খেতে হলেও করব ।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.