সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

সুযোগ

               শান্তনু বসু নিপাট ভদ্রলোক গোছের মানুষ । একটা কাগজের অফিসে কাজ করে , অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখতে যায় আর অনেকগুলো পূজাবার্ষিকী পড়ে । বয়স ছত্রিশ , এখনও বিয়ে করেনি । কিন্তু করার ইচ্ছে আছে ষোলো আনা । শান্তনু আসলে দুধুভাতু টাইপের লোক । যারা মনে মনে ভাবে অনেককিছু , কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে উঠতে পারে না , শান্তনু তাদের দলে । শখ আছে , কিন্তু সাহস নেই । অফিসের অবিবাহিতা কলিগ পারমিতার সঙ্গে দিব্যি বন্ধুত্ব , শান্তনুর খুবই ইচ্ছে করে বিয়ের কথাটা পাড়তে, কিন্তু সাহসে কুলোয় না । যদি পত্রপাঠ প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ! তাহলে আমও যাবে , ছালাও যাবে । বিয়েটাও হবেনা , সান্নিধ্যটাও হয়ত চিরকালের মত হাতছাড়া হবে , নয়ত আর আগের মত থাকবে না । শান্তনুর বন্ধুরা বেশিরভাগই বিয়ে করে ফেলেছে আর ওকে করার জন্য নিয়মিত খোঁচাচ্ছে । কিন্তু বন্ধুদের সাথে শান্তনুর স্বভাবে একটা মূলগত তফাৎ আছে । আড্ডায় বন্ধুদের স্ত্রীদের নিয়ে সরস আলোচনা কিংবা দেখাসাক্ষাৎ হলে তাঁদের সঙ্গে ফ্লার্ট করা শান্তনুর না পসন্দ , কোথায় যেন একটা বাধে । ওর এই মার্কামারা ভালোমানুষি নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে , ও গা করে না । আর হ্যাঁ , শান্তনুর একটুআধটু লেখালিখি করার অভ্যেসও আছে । দু'একটা গল্প পত্রপত্রিকায় ছাপাও হয়েছে । আজকাল নেটে ওয়েব সিরিজ দেখতে বসো , কিংবা পূজাবার্ষিকী পড়তে বসো , সব জায়গাতেই অধিকাংশ গল্পে রগরগে কনটেন্টের ছড়াছড়ি । কিছুটা তার প্রভাবেই হয়ত , কল্পনাবিলাসী শান্তনু বসুর মাথায় দু'তিন দিন ধরে একটা প্রশ্ন  ঘুরছে । ব্যোমকেশ , সত্যবতী আর অজিত এক বাড়িতে থাকে । ব্যোমকেশ বিভিন্ন কেস সল্ভ করতে বেরিয়ে যায় , কখনও বা কয়েকদিনের জন্য উধাও হয়ে যায় , বন্ধুর ভরসায় বৌকে বাড়িতে রেখে । কেন ? এতটা আস্থা কেন বন্ধুর উপর ? অজিত কী একেবারে তার মতই হাঁদারাম গড়গড়ি ? বৌঠানের প্রতি কোনও দুর্বলতা তৈরি হয়না কখনও ? সত্যবতীও কী একেবারে পতিঅন্তপ্রাণ ? রবীন্দ্রনাথ অব্দি 'নষ্টনীড়' উপন্যাসে একাকীত্বে ভোগা বৌদির , দেওরের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার কথা ভাবতে পারলেন সেই যুগে বসে , আর শরদিন্দু এতগুলো ব্যোমকেশ কাহিনী , অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে গল্প লেখার পরেও , এই সহজ সম্ভাবনাটা নিয়ে নাড়াঘাঁটা করলেন না কেন ? বিষয়টা শান্তনুকে বেশ ভাবাচ্ছে । ওদের সন্ধের ঠেকে অনেক বন্ধুকেই তো বলতে শুনেছে , অমুকের বউকে দারুণ লাগে । এমনকি বন্ধুর জন্য প্রেমের প্রস্তাব বয়ে নিয়ে গিয়ে , নিজের কেস ফাইল করে আসার ঘটনাও ওদের বন্ধুদের বৃত্তেই ঘটেছে । তাহলে অজিত-সত্যবতী নয় কেন ? 

             কথায় বলে , যেখানে বাঘের ভয় , সেখানে সন্ধে হয় । শান্তনু যখন এই অলস ভাবনায় মেতে ছিল , তখন ভাগ্যদেবী নিশ্চয়ই অলক্ষ্যে হেসেছিলেন ! নইলে এমনটা হবে কেন ? অনীক নতুন বিয়ে করেছে কিছুদিন হল । অনীকের বৌ , নবনীতার জন্মদিনে , ওদের বাড়িতে আজ শান্তনুর নেমন্তন্ন সন্ধেবেলায় । অফিস সেরে , একটা গিফট কিনে , সন্ধে নামতেই শান্তনু পৌঁছে গেল অনীকের বাড়িতে । আর কী দুর্ভাগ্য , কলিং বেলটা টেপার ঠিক আগে ঝুপ করে লোডশেডিং হল । শান্তনু একবার গলা খ্যাঁকারি দিয়ে লোহার গেটটা ধরে নাড়াতেই নবপরিণীতা নবনীতা বেরিয়ে এল । অভ্যর্থনা জানিয়ে গেট খুলে দিয়ে ঘরে বসতে বলল । তখনও ঘরে একটা ইমারজেন্সি লাইট কিংবা মোমবাতিও জ্বালানো হয়নি । শান্তনুর অস্বস্তি কিছুটা কমিয়ে মিনিট দুয়েক পরে নবনীতা একটা বড় মোম জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকল । নবনীতা বুদ্ধিমতী , নিজেই গল্প করা শুরু করল । পরিবেশটা সবে শান্তনু একটু উপভোগ করতে শুরু করেছে , এমন সময়ে অনাহূত অতিথির মত অনীকের ফোন এলো শান্তনুর মোবাইলে 

--- তুই এসে গেছিস ?

--- হ্যাঁ , তোদের বাড়িতেই বসে আছি , নবনীতার সঙ্গে গল্প করছি । 

--- লোডশেডিঙে বাড়িতে বসে কী করবি ? শোন , আমি পাড়ার মোড়ে আছি , চলে আয় । 

শান্তনুর এই মুহূর্তে পাড়ার মোড়ে যাওয়ার একেবারেই ইচ্ছে ছিল না , কিন্তু অনীক যদি আবার উল্টোপাল্টা কিছু ভাবে , এই ভেবে শান্তনু ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল । কিছুক্ষণ পরে , পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে অনীকের সাথে বিস্বাদ চা খাওয়ার সময়ে , ওর মুখে বেশ একটা নিশ্চিন্তির ভাব লক্ষ্য করল । শান্তনু মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল , যে গল্পে বাস্তবের সব বিবাহিত পুরুষ ব্যোমকেশ বক্সী , সেই গল্পে অজিতদের কোনও চান্স নেই ! 

                                   ------------------------------------------------      






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.

কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন adventure sport

  ### কেরালার বৃহত্তম জিপলাইন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, সেখানে এ...