টেলিপ্যাথি
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে পরিস্থিতি বুঝে মেয়েরা যে সিদ্ধান্ত
নিতে শিখে যায় , অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটা বিলক্ষণ বুঝেছে অর্ঘ্য । কচি বয়সের প্রেমিকা পাপাইকে
কী একটা বলতে বাড়ির বাইরে ডেকেছিল অর্ঘ্য । সন্ধে নেমে এসেছে , দরকারি কথাটা বলার পরেও
এটাসেটা বলে পাপাইকে কথায় আটকে রাখছিল অর্ঘ্য , শুধুমাত্র আলো- অন্ধকারে পাপাইয়ের সাথে
কথা বলতে ভাল লাগছিল বলেই । পাপাই কী বুঝল কে জানে , হঠাৎ বলে উঠল --- “আমি তো একটা
মেয়ে । এইভাবে ভর সন্ধেবেলা পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা ভাল দেখায় না । তোর কথা যদি
শেষ হয়ে গিয়ে থাকে , তবে এবার আমি বাড়িতে ঢুকব ।“
অফিসের কাজে সেবার ঝটিকা সফরে যেতে হয়েছে
দার্জিলিঙে । যেদিন যাওয়া , সেদিনই শিলিগুড়িতে ফেরা । বন্ধুরা পইপই করে বলেছিল অন্ধকার
নেমে আসার আগে রওনা দিতে । কাজের চাপে সেই সন্ধেই হল । একটা শেয়ারের ট্রেকারে উঠল অর্ঘ্য
। কোনওমতে চাপাচাপি করে ছ’জন বসার ব্যবস্থা । অর্ঘ্যর জায়গা হল ড্রাইভারের পাশে । শেষ
মুহূর্তে এক সুবেশ – সুন্দরী ভদ্রমহিলা উঠে বসলেন ঠিক অর্ঘ্যর পাশে । বাকিদের সাথে
কথাবার্তায় বোঝা গেল ভদ্রমহিলা নিত্যযাত্রী । সুন্দরীদের এমন সান্নিধ্য অর্ঘ্য উপভোগই
করে , কিন্তু ঠাসাঠাসি করে বসায় কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল । ভদ্রমহিলা বেশ কয়েকটা
চিপসের প্যাকেট নিয়ে উঠেছিলেন । টুক টুক করে খেতে খেতে কথা বলছিলেন বাকিদের সাথে ।
অর্ঘ্যর চোখ স্থির গাড়ির জোরালো হেডলাইট পড়া পাহাড়ি পাকদণ্ডী রাস্তার দিকে । আচমকা
ভদ্রমহিলা চিপসের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলেন --- “নিন না ।“
--- “না না, ঠিক আছে ।“
--- “নিন ।“ জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত কয়েকটা
চিপস খেতেই হল । কার্সিয়াং পার হওয়ার পর একটা পেট্রোল পাম্পে গাড়ি থামল । ভদ্রমহিলা
অর্ঘ্যর সাথেই দাঁড়িয়ে আলাপ সারছিলেন । গাড়িতে উঠবার সময় পিছনের একজন সামনে আসতে চাইল
, ড্রাইভারের পাশে । অর্ঘ্যর কোনও সমস্যা নেই তাতে , কিন্তু সেই তরুণী দৃঢ়ভাবে আপত্তি
করলেন । সুকনার কাছে মহিলা নেমে গেলেন । তারপর থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত অবাক হয়ে
অর্ঘ্য দেখল , এতক্ষণ যারা ‘দিদি – দিদি’ করে কথা বলছিল , তারাই বাছাই করা বিশেষণে
রসালো আলোচনায় মেতে উঠল ।
সেবার ইউনিভার্সিটির ও এ টি-তে ‘সংস্কৃতি’
চলছে । সিগারেট খেতে নতুন বিল্ডিঙয়ের কাছে অন্ধকার মত একটা জায়গা দেখে এগিয়ে গেল অর্ঘ্য
। হালকা হওয়াও দরকার । কাজটা সেরে সিগারেট ধরাতে গিয়ে লাইটারের আলোয় দেখল সুনেত্রাকে
। ওর দিকেই তাকিয়ে আছে , হাতছানি দিয়ে ডাকছে । কাছে যেতেই অর্ঘ্য টের পেল সুনেত্রা
মদ খেয়েছে । সুনেত্রা আধুনিকা , সুন্দরী , বিদুষী । ইউনিভার্সিটির বহু ছেলের মনে ওর
জন্য ব্যথা আছে । অর্ঘ্যরও কী নেই ? অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়াতে অর্ঘ্য আবিষ্কার করল
সুনেত্রা আজ লিপগ্লস দিয়েছে । কতক্ষণ এভাবে তাকিয়েছিল , মনে নেই অর্ঘ্যর । হঠাৎ সুনেত্রা
দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে দু’হাত দিয়ে অর্ঘ্যর ঘাড় টেনে ধরল , ঠোঁটে মিশিয়ে দিল ঠোঁট ।
স্বর্গীয় সুখে ডুবে যেতে যেতে অর্ঘ্যর মনে হল , মেয়েরা সব টের পায় কী করে !
------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Don't forget to like, comment, share and subscribe to my Blog. Thank you.